কোন কোম্পানি কিংবা ব্যাংক অথবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে মূলধন বিনিয়োগ করার শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি

প্রশ্ন: কোন কোম্পানি কিংবা ব্যাংক অথবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে মূলধন বিনিয়োগ করার শরীয়ত সম্মত পদ্ধতি কি? (বর্তমান ফিতনার যুগে বিষয়টি বিষণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ)
▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলাম একটি শাশ্বত, সার্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ জীনব ব্যবস্থা। সৃষ্টি জগতে এমন কোন দিক ও বিভাগ নেই, যেখানে ইসলাম নিখুঁত ও স্বচ্ছ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেনি। মহান আল্লাহ বলেন, مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ “আমরা এ কিতাবে কোন কিছুই অবর্ণিত রাখিনি”। (সূরা মায়েদাহ ৫/৩৮)। জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে মানুষকে উপার্জনের নানাবিধ পথ বেছে নিতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের গুরুত্ব ইসলামে অনস্বীকার্য। সততা ও ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে বৈধ পথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করতে ইসলাম বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছে। কারণ হালাল উপার্জন দু’আ কবুলের আবশ্যিক পূর্বশর্ত। আর হালাল উপার্জনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো বৈধ পন্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য করা। হালাল ব্যবসা-বাণিজ্য জীবিকা নির্বাহের সর্বোত্তম মাধ্যম হওয়ায় রাসূল (ﷺ), খুলাফায়ে রাশেদীন, আশারায়ে মুবাশশারা সহ অধিকাংশ সাহাবী ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পক্ষান্তরে কারূণ, হামান, আবু জাহল, উতবা-শায়বা, উবাই ইবনে খালফ প্রমুখ কাফের মুশরিকরা ধোঁকা, প্রতারণামূলক সূদভিত্তিক হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। বস্ত্ততঃ হালাল-হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যের রূপরেখা সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরূরী।
.
হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সূদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাক্বারাহ; ২/২৭৫)। অপর আয়াতে বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَنْ تَكُوْنَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ।(সূরা নিসা; ২৯)। আল্লাহ আরো বলেন, فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ- যখন সালাত শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর। (সূরা জুম‘আ; ১০)। সুতরাং জীবিকা উপার্জনের উত্তম পেশা হিসাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উল্লিখিত আয়াতে সালাতের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের পরই ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
.
▪️ইসলামে যে কোনো কোম্পানি বা ব্যাংকে মূলধন বিনিয়োগ করা সংক্রান্ত ব্যবসাকে শরীয়তের পরিভাষায় বায়‘এ মুযারাবাহ বলা হয়। অর্থাৎ বায়‘এ মুযারাবাহ হচ্ছে, একজনের অর্থ নিয়ে অপরজন ব্যবসা করবে। এ পদ্ধতিতে উভয়ের সম্মতিক্রমে লাভ-ক্ষতি বণ্টনের হার তাদের মাঝে চুক্তিহারে বন্টিত হবে। শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে বায়‘এ মুযারাবাহ একটি বৈধ ব্যবসা। প্রখ্যাত সাহাবী উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) [মৃত: ৩৫ হি.]-এর মাল নিয়ে আব্দুর রহমানের দাদা ব্যবসা করতেন। লাভ তাদের মধ্যে চুক্তি মতে ভাগ হত। প্রখ্যাত সাহাবী ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) [মৃত: ২৩ হি.] থেকেও একই মর্মে বর্ণিত হয়েছে। (মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/২৫৩৪-৩৫; ইরওয়া ৫/২৯২, হা/১৪৬৯-এর আলোচনা; বুলূগুল মারাম হা/৯০৫)।
.
▪️ইসলামে যে কোনো কোম্পানি বা ব্যাংকে অর্থ বিনিয়োগ বৈধ হওয়ার জন্য কুরআন সুন্নার আলোকে সালাফদের থেকে শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) ইসলাম সুওয়াল জাওয়াব, ওয়েবসাইটে যেকয়টি শর্ত উল্লেখ করেছেন আমি সেগুলো সহজ ভাষায় দালিলিক ভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ তুলে ধরার চেষ্টা করছি আলহামদুলিল্লাহ,ইসলামে যে কোনো কোম্পানি বা ব্যাংকে অর্থ বিনিয়োগ বৈধ হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তাবলী পূর্ণ হওয়া অপরিহার্য:
.
(১)। (العلم بمجال الاستثمار وأنه مباح) “বিনিয়োগের খাতের ব্যাপারে অবগত হওয়া যে, এটি বৈধ খাত।”
.
বিনিয়োগের ক্ষেত্র বৈধ হওয়া বলতে যা বুঝায় তা হচ্ছে, কোম্পানি যেভাবে বিনিয়োগের খাত ঘোষণা দিয়েছে এবং সম্পদে বিনিয়োগ করছে সেটা বৈধ খাত কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। এমন কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা জায়েয নেই যে কোম্পানির তৎপরতা অজ্ঞাত। হতে পারে কোম্পানি সুদি খাতে বিনিয়োগ করে, স্টক এক্সচেঞ্জে বা অন্য কোথাও হারাম লেনদেন করে, জুয়ার আসরে, বা মদের বারে বিনিয়োগ করে কিংবা হারাম পণ্যের ব্যবসায় খাটায়। এগুলো সবই নিষিদ্ধ এই মর্মে দলিল হচ্ছে, মহান আল্লাহ বলেন, حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ তোমাদের প্রতি মৃতপ্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত হারাম করা হয়েছে। (সূরা মায়েদাহ; ৫/৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ ‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ কিছুই নয়। অতএব এগুলো থেকে বিরত থাক, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা মায়েদাহ; ৫/৯০)। আল্লাহ তা‘আলা যেসব দ্রব্য হারাম করেছেন, সেসব দ্রব্যের ব্যবসাও হারাম করেছেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে মক্কা বিজয়ের বছর এবং মক্কা থাকাবস্থায় বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মদ, মৃত দেহ, শূকর ও প্রতিমা বেচা-কেনাকে হারাম করেছেন। তখন বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি কি মনে করেন যে, লোকেরা মৃত পশুর চর্বি দ্বারা নৌকায় প্রলেপ দেয়, তা দিয়ে চামড়ায় বার্ণিশ করে এবং লোকেরা তা চকচকে করার কাজে ব্যবহার করে? তখন তিনি বললেন, না, তা হারাম। অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেন, কারণ মহান আল্লাহ তাদের জন্য চর্বি হারাম করেছেন অথচ তারা একে গলিয়ে নেয় এবং তা বিক্রি করে ও তার মূল্য ভক্ষণ করে। (সহীহ বুখারী ২২৩৬, মুসলিম ১৫৮১, আবু দাঊদ ৩৪৮৬, নাসায়ী ৪২৫৬, তিরমিযী ১২৯৭, ইবনু মাজাহ ২১৬৭, আহমাদ ১৪৪৯৫, ইরওয়া ১২৯০)
.
(২)। (عدم ضمان رأس المال) “মূলধনের গ্যারান্টি না দেয়া”।
.
কোম্পানি থেকে মূলধনের গ্যারান্টি প্রদান না করা। অর্থাৎ ব্যবসায় লোকসান হলে কোম্পানি মূলধন ফেরত দেয়ার দায় না নেয়া; যদি না এক্ষেত্রে কোম্পানির কোন কসুর বা অবহেলা না ঘটে এবং কোম্পানিই এই লোকসানের কারণ না হয়। আর যদি মূলধন গ্যারান্টিযুক্ত হয়, তাহলে সেটি আসলে একটি ঋণের চুক্তি হিসাবে গণ্য হবে আর ঋণের সাথে যদি লাভের শর্ত করা হয় তাহলে এটি সূদ হিসাবে বিবেচিত হবে। কারণ ব্যবসা লাভ-ক্ষতি উভয়ের সঙ্গে জড়িত। কখনো আংশিক ক্ষতি, আবার কখনো সম্পূর্ণটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া মানে শুধু লভ্যাংশের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে, যা স্পষ্ট সূদ এবং শরীয়তে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন ও সূদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাক্বারাহ; ২/২৭৫)। তিনি আরো বলেন, يَمْحَقُ اللهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ، ‘আল্লাহ সূদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। (বাক্বারাহ; ২/২৭৬)। তাছাড়া রাসূল (ﷺ) সূদ গ্রহণকারী, সুদ প্রদানকারী, সুদের লেখক,এবং সুদের সাক্ষীসহ সকলকে অভিশাপ দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম হা/১৫৯৮; ইবনে মাজাহ হা/২২৭৯; মিশকাত হা/২৮০৭)
.
(৩)। (أن يكون الربح محددا متفقا عليه) “লাভ নির্ধারিত ও উভয়পক্ষের ঐক্যমত্যপূর্ণ হওয়া।”
.
লভ্যাংশের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আবশ্যকতা; অর্থাৎ উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে সেই নির্ধারণ লাভের সর্বাংশব্যাপী আনুপাতিক হতে হবে। মূলধনের থেকে নয়; বিনিয়োগের চুক্তিতে দেখতে হবে এতে কোম্পানির লভ্যাংশ কতটুকু এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ কতটুকু। উদাহরণস্বরূপ; বিনিয়োগকারী পাবে এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক বা লাভের ২০%; কিন্তু একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা মূলধনের একটি নির্দিষ্ট শতাংশের ভিত্তিতে নয়। মনে রাখতে হবে, লাভের অনুপাত অজ্ঞাত হওয়া সঠিক নয়। এমন অজ্ঞতা শরিয়তের দৃষ্টিতে লেনদেনকে বাতিলকারী। নবী (ﷺ) বলেন; إِنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ নিশ্চয় হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর উভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়। অনেক মানুষই সেগুলোর বাস্তবতা জানে না। যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে, আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে, সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। (বুখারী, হা/৫২, ২০৫১; মুসলিম, হা/১৫৯৯)। রাসূল (ﷺ) আরো বলেন, دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيْبَةٌ ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু সত্য হল স্বস্তি এবং মিথ্যা হল সন্দেহপূর্ণ।’ (তিরমিযী, হা/২৫১৮; নাসাঈ; হা/৫৭১১, সনদ সহীহ

হয়)।
.
(৪)। পাশাপাশি আরো একটি শর্ত হচ্ছে, যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন সেই কোম্পানিকে অবশ্যই সুদী ঋণ নেওয়া কিংবা সুদী একাউন্টে অর্থ রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি কোম্পানি এমনটি করে তাহলে কোম্পানির শেয়ারগুলো মিশ্র হয়ে যাবে। মিশ্র শেয়ার হারাম হওয়ার ব্যাপারে ইসলামী ফিকহ একাডেমি থেকে সিদ্ধান্ত ইস্যু হয়েছে। (বিস্তারিত জানতে ইসলাম সও ফয়াল-জবাব পরফাতাওয়া নং-৩৭৪০৩৩)
.
চতুর্থ শর্তের ক্ষেত্রে কোন কোম্পানি সুদী ঋণ দেয় কিনা কিংবা সুদী একাউন্টে অর্থ রাখে কিনা সেটা জানার জন্য আপনি ঐ কোম্পানির বাৎসরিক রিপোর্ট দেখবেন। পূর্বোক্ত তথ্যগুলো সেক্ষেত্রে পাওয়া যাবে যদি কোন কোম্পানি ভাল এবং সিরিয়াস হয় এবং এর বাৎসরিক রিপোর্ট থাকে। সুতরাং কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগে ইচ্ছুক প্রত্যেক ব্যক্তিকে আমরা উপদেশ দিব তিনি যেন কোম্পানির বিগত বছরগুলোর অর্থনৈতিক রিপোর্ট চান। রাষ্ট্রগুলো সকল কোম্পানিকে অর্থনৈতিক রিপোর্ট দিতে ও রিপোর্টটি প্রকাশ্য রাখতে বাধ্য করে। এর থেকে পরিস্কার হয়ে যায় যে, কোম্পানি অমুক অমুক খাতে বিনিয়োগ করার দাবীর সত্যতা কতটুকু এবং আসলে কি কোম্পানি সুদী বন্ডে অর্থ রাখে কিংবা হারাম খাতে বিনিয়োগ করে; নাকি করে না।
.
উপরোক্ত এই ৪ টি শর্তাবলি পূর্ণ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হলে যেকোন কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগ করা কোন ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির জন্য বৈধ হবে না।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, ومن شرط صحة المضاربة: تقدير نصيب العامل؛ لأنه يستحقه بالشرط، فلم يقدر إلا به”.ثم قال: “وإن قال: خذه مضاربة، ولك جزء من الربح، أو شركة في الربح، أو شيء من الربح، أو نصيب أو حظ. لم يصح؛ لأنه مجهول، ولا تصح المضاربة إلا على قدر معلوم …والحكم في الشركة كالحكم في المضاربة، في وجوب معرفة قدر ما لكل واحد منهما من الربح. মুদারাবা চুক্তি সঠিক হওয়ার শর্ত হলো- “শ্রমদাতার প্রাপ্য অংশ নির্ধারণ করা। কেননা শর্ত করার ভিত্তিতে সে এর হককার হয়। তাই শর্ত করা না হলে তার অংশ নির্ধারণ হয় না।” এরপর তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন; “যদি কেউ বলে- মুদারাবা হিসেবে তুমি এটি গ্রহণ কর। লাভের একটি অংশ তুমি পাবে, কিংবা লাভ অংশীদারিত্বমূলক কিংবা কিছু লাভ পাবে কিংবা অংশ বিশেষ পাবে বা ভাগ পাবে; তাহলে সহিহ হবে না। কেননা তা অজ্ঞাত। অংশীদারদ্বয়ের প্রত্যেকের প্রাপ্য লাভ জানার আবশ্যকতার ক্ষেত্রে কোম্পানির হুকুম মুদারাবার হুকুমের ন্যায়। (ইবনে কুদামাহ আল-মুগনী, খন্ড; ৫ পৃষ্ঠা; ২৪-২৭)
.
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীকে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে, অবৈধ উপার্জন ও লোভ-লালসাকে সংবরণ করতে হবে। আর এটাই ইসলামের দাবী। সুতরাং বর্তমান হালাল-হারামের মিশ্র যুগে যার আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার ভয়ে হালাল ভাবে কোন কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানে “মূলধন” বিনিয়োগ করে জীবিকা নির্বাহ করতে চান তাদের জন্য উপরোক্ত আর্টিকেলটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সততার সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করে ইহকালে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন ও পরকালে মুক্তি লাভের তাওফীক দান করুন। আমীন!! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________________
আমাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।