কোন অমুসলিমকে Best Friend হিসেবে গ্রহণ করা যাবে কি

প্রশ্ন: কোন অমুসলিমকে best friend হিসেবে গ্রহণ করা যাবে কি? অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর:

অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব সাধারণত ২ টি উদ্দেশ্যে হতে পারে। (ক) তাওহীদের দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্য স্বাভাবিক বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তোলা। (খ) দুনিয়াবী কোন স্বার্থে তাদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করা। প্রথমটি শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ দ্বিতীয়টি সম্পন্ন হারাম।

▪️(ক) অমুসলিমদের সাথে স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্য যদি হয় তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে তাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসা। এক্ষেত্রে যদি ধর্মের ব্যাপারে ক্ষতি বা ফিৎনার আশংকা না থাকে তাহলে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব না করে স্বাভাবিক বন্ধুত্বে কোন দোষ নেই এটি জায়েজ।তাছাড়া কোন সমাজে কেবল মুমিন বাস করে না। বরং কাফির-মুশরিকরাও সেখানে বসবাস করে। মানুষ সমাজবদ্ধ ভাবে জীবনযাপন করতে গিয়ে নানা শ্রেণির নানা পেশার নানা মত ও পথের মানুষের মুখোমুখি হতে হয়। মুখোমুখি হতে হয় অমুসলিমদেরও। লেনদেন ওঠাবসা চলাফেরা সাহায্য-সহযোগিতা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে একজন মুসলমান ও একজন অমুসলমানের সাথে সাক্ষাৎ হতে পারে।কোনো মুসলিমপ্রধান দেশে অমুসলিমদের বসবাস কিংবা কোনো অমুসলিমপ্রধান দেশে মুসলমানদের বসবাস এখন বিচিত্র কিছু নয়। অমুসলিম ব্যক্তি হতে পারে কোনো মুসলমানের প্রতিবেশী। সেক্ষেত্রে তাদের সাথে মুমিনদের আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে ইসলামের সুন্দর নির্দেশনা রয়েছে। যদি তারা মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা শত্রুতা না করে, তাহলে তাদের প্রতি সর্বোচ্চ মানবিক আচরণ করা খাবার খাওয়ানো, বিপদাপদে এগিয়ে আসা, ধার-কর্জ দেওয়া বা নেওয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, কথাবার্তা বলা, প্রতিবেশী সুলভ ভালো আচরণ করা ইত্যাদি জায়েজ আছে ইনশাআল্লাহ। কারণ সবাই আদমের (আ:) এর সন্তান। আদম (আঃ) ছিলেন প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী। কিন্তু কাফের-মুশরিকরা তাদের আদি পিতা-মাতার ধর্ম ত্যাগ করে পথভ্রষ্ট হয়েছে। উত্তম উপদেশ ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে তাদেরকে জান্নাতের পথ দেখানো মুমিনের কর্তব্য। এর জন্য সে নেকী পাবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত হবে। মহান আল্লাহ বলেন,আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে আহবান জানায় এবং সৎকাজ করে। আর বলে, ‘অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত (সূরা ফুসিলাত৪১/৩৩) অপর আয়াতে বলেন, দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ হতে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন করতে ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায় পরায়ণদের ভালবাসেন।’ (সূরা মুমতাহিনা ৬০/৮)।
.
আবু আব্দুল্লাহ আমর ইবনে আ’স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে গোপনে নয় প্রকাশ্যে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, “অমুক গোত্রের লোকেরা (যারা আমার প্রতি ঈমান আনেনি তারা) আমার বন্ধু নয়। আমার বন্ধু তো আল্লাহ এবং নেক মু’মিনগণ। কিন্তু ওদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, আমি (দুনিয়াতে) অবশ্যই তা আর্দ্র রাখব।” (সহীহ বুখারী ৫৯৯০, মুসলিম ৫৪১, হাদিস সম্ভার, ১৭৫৫)।
.
তবে স্বাভাবিক ভাবে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা গেলেও অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় ও তাতে অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তার নিকট থেকে তা কখনোই কবুল করা হবে না এবং এমন ব্যক্তি পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আলে ইমরান ৩/৮৫)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুনানে আবুদাঊদ,৪০৩১,মিশকাত হা/৪৩৪৭)।

বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, কাফেরদের বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে উপহার বিনিময়, মিষ্টান্ন বিতরণ, রকমারি খাদ্য তৈরী করা, কাজ বন্ধ রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য হারাম (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/৪৬)।

▪️(খ) দুনিয়াবী কোন স্বার্থে তাদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করা এটি জায়েজ নয় বরং হারাম। কেননা পবিত্র কুরআনে ইহুদি, খ্রিস্টান ও অমুসলিম কাফেরের সাথে কোনরূপ বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে নিষেধ করা রয়েছে। তাছাড়া আমাদের জেনে রাখা উচিত যে, একজন মুসলিম কোন কাফের মুশরিকদের সাথে যত সুন্দর ই বন্ধুত্বের সম্পর্ক করুক না কেন তারা কখনো মুসলিমদেরকে ‘অন্তরঙ্গ বন্ধু’ মনে করে না। বরং তারা কতটা মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে যার সত্যতা প্রমান করে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করে জানিয়ে দিয়েছেন।মহান আল্লাহ বলেন- ঈমানদারগণ, তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ রূপে গ্রহণ করো না। তারা (কাফিররা) তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না। তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ।শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশি জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। (সূরা আলে ইমরান: ১৮) দুনিয়াবী সম্মান লাভের জন্য যাতে এটা না করা হয়, সেজন্য বলা হয়েছে, যারা মুমিনদের বাদ দিয়ে কাফিরদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে, তারা কি তাদের কাছে সম্মান কামনা করে? জেনে রেখো সর্বপ্রকার ইযযতের মালিকানা স্রেফ আল্লাহর।(নিসা ৪/১৩৯)। এমনকি নিজের বাপ-ভাই যদি ঈমানের উপরে কুফরীকে ভালবাসে, তবে তাদেরকেও বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না।(সূরা তওবাহ ৯/২৩)। এছাড়াও আরো দেখুন-সূরা মায়েদা, ৫/৫১-৫৩।

আল্লাহ বলেন, ইহূদী-নাসারারা কখনোই তোমার উপর সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না তুমি তাদের ধর্মের অনুসরণ করবে। তুমি বল,নিশ্চয়ই আল্লাহর দেখানো পথই সঠিক পথ। আর যদি তুমি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর,তোমার নিকটে (অহি-র) জ্ঞান এসে যাওয়ার পরেও, তবে আল্লাহর কবল থেকে তোমাকে বাঁচাবার মতো কোন বন্ধু বা সাহায্যকারী নেই।’ (বাক্বারাহ ২/১২০)।উক্ত আয়াতে উল্লেখিত ‘মিল্লাত’ অর্থ দ্বীন ও শরী‘আত (কুরতুবী) এবং ‘ইল্ম’ অর্থ কুরআন ও সুন্নাহ (ইবনু কাছীর)। অত্র আয়াতের উপরে ভিত্তি করে ইমাম আবু হানীফা, শাফেঈ, দাঊদ ইবনে আলী, আহমাদ প্রমুখ বিদ্বানগণ বলেন,أَنَّ الْكُفْرَ كُلَّهُ مِلَّةٌ وَّاحِدَةٌ ‘কাফেরগণ সকলেই এক মিল্লাত ভুক্ত।’(তাফসীরে কুরতুবী)। ইবনু জারীর ত্বাবারী বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা সকল মুসলমানকে নির্দেশ দিচ্ছেন তারা যেন ঈমানদারগণের বিরুদ্ধে ইহূদী-নাসারাকে তাদের আন্তরিক বন্ধু হিসাবে গ্রহণ না করে। যে ব্যক্তি এটা করবে,সে ব্যক্তি আল্লাহ, রাসূল ও মুমিনদের দলের বাইরে চলে যাবে। আল্লাহ ও রাসূল তাদের থেকে মুক্ত।’ (মুখতাছার তাফসীরুল মানার ২/৩৪৮)।

উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, মুসলিম কোন কাফিরকে ওয়ারিশ বানায় না বা কোন কাফির কোন মুসলিমকে ওয়ারিশ বানায় না’। (সহীহ বুখারী হা/৬৭৬৪; মুসলিম হা/১৬১৪; মিশকাত হা/৩০৪৩)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন; সাবধান! অমুক বংশের লোকেরা আমার বন্ধু নয়। বরং আল্লাহ এবং নেককার মুমিনগণ হলেন আমার বন্ধু। (সহিহ মুসলিম, ৪৫৯৪, ই.ফা. ৪৫৪৯, ই.সে. ৪৫৫২)।
আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতি-নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে। (সুনান আবু দাউদ: ৪৯৩৩, আত-তিরমিযী: ২৩৭৮, সনদ হাসান)।
.
পরিশেষে, উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, দ্বীনের পথে আকৃষ্ট করার জন্য অমুসলিমদের সাথে স্বাভাবিক বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তোলা যাবে। তবে আল ওয়ালা ওয়াল বারা অর্থাৎ ‘আল্লাহর জন্যই বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর জন্যই সম্পর্কচ্ছেদ’ এই মূলনীতির পরিপন্থী কোন কাজ করা যাবেনা। কিন্তু কোন অবস্থাতেই অমুসলিমদেরকে অন্তরঙ্গ বা Best friend (প্রিয় বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করা যাবেনা।কেননা এটি সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে দ্বীন বুঝার তওফিক দান করুন। আমীন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।