কুরবানীর নিসাব কত অর্থাৎ কি পরিমান সম্পদ থাকলে কুরবানী দিতে হয়

প্রথমত কুরবানী ওয়াজিব নাকি সুন্নত মাসালায় আহালুল ইমামগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে,তবে সঠিক কথা হল কুরবানী দেওয়ার মত যাদের সামর্থ্য রয়েছে এমন প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অপরিহার্য কর্তব্য। এখন প্রশ্ন হল সামর্থ্য দ্বারা উদ্দেশ্য কি? কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে কুরবানী দেওয়া উচিত? এই মাসালায় হানাফি মাজহাবের আলেমদের মতে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য যাকাতের ন্যায় নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা শর্ত অর্থাৎ ৫২ ভরি রুপা বা সাড়ে সাত ভরি সোনা অথবা তার সমপরিমাণ নগদ অর্থ। কিন্তু তাদের বক্তব্যের পক্ষে কুরআন সুন্নায় এমন কোন দলিল আছে বলে আমাদের জানা নেই। বরং জমহুর আলেমগনের বিশুদ্ধ মতে সামর্থ্য দ্বারা উদ্দেশ্য হল: কারো জন্য কুরবানী ওয়াজিব হওয়া কিংবা সুন্নত হওয়ার জন্য কোরবানীকারীকে সামর্থ্যবান হওয়া শর্ত। অর্থাৎ কোরবানীদাতার নিজের খরচপাতি এবং সে যাদের খরচ চালায় অর্থাৎ ইসলামী শরীয়ত যাদের ভরণপোষণ তার উপর ওয়াজিব করেছে তাদের খরচপাতির অতিরিক্ত অর্থ তার কাছে থাকলে তিনি কুরবানী দিবেন। অতএব, কোন মুসলমানের যদি মাসিক বেতন বা আয় থাকে এবং এ বেতন দিয়ে তার এবং তার অধীনস্থদের খরচ চলে যায়,অতঃপর অতিরিক্ত তার কাছে কোরবানীর পশু কেনার অর্থ থাকে তাহলে সে ব্যক্তি কর্তৃক কুরবানী দেয়ার শরয়ি বিধান রয়েছে।কিন্তু এর জন্য যাকাতের ন্যায় নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে এমন কোন শর্ত বা দলিল নেই।
.
কোরবানী দেওয়ার জন্য সামর্থ্যবান হওয়া শর্ত মর্মে দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী, যেখানে তিনি বলেছেন:“যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে অথচ সে কোরবানী করেনি সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়”(সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৩১২৩),শাইখ আলবানী ‘হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন) এখানে সামর্থ্য দ্বারা উদ্দেশ্য ধনী হওয়া। প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়ার বিধান রয়েছে। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর একটি কুরবানী দেয়া ওয়াজিব”(মুসনাদে আহমাদ হা/২০২০৭) ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেন: হাদিসটির সনদ মজবুত। আলবানী ‘সহিহ সুনানে আবু দাউদে হা/২৭৮৮ সনদ হাসান’ বলেছেন)
.
কোরবানীর এই বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারীর কোন ভেদ নেই। অতএব, কোন নারী যদি একাকী বসবাস করেন কিংবা তাঁর সন্তানদেরকে নিয়ে থাকেন ঐ নারীর যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে তাকেও কুরবানী করতে হবে।ফিকহের কিতাব আল-মাওসুআ আল-
ফিকহিয়্যাতে এসেছে-“কুরবানী ওয়াজিব হওয়া কিংবা সুন্নত হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত নয়।কুরবানী পুরুষদের উপর যেমন ওয়াজিব হয় তেমনি নারীদের উপরও ওয়াজিব হয়। কারণ ওয়াজিব হওয়ার দলিলগুলো নর-নারী সবাইকে সমানভাবে শামিল করে।”(সংক্ষেপিত আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা, ৫/৭৯-৮১ ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৭০২৯১) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।