কুরআন সুন্নার আলোকে এক নজরে তামাত্তু হজ্জ এর নিয়মাবলী

🔸(১) মিনায় গমন: বাংলাদেশী হাজীগণ সাধারণতঃ তামাত্তু হজ্জ করে থাকেন।তাই আমরা তামাত্তু হজ্জ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ননা করবো ইনশাআল্লাহ। তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ যিনি ইতিপূর্বে ওমরাহ পালন শেষে ইহরাম খুলে ফেলেছেন ও হালাল হয়ে গেছেন,(উমরাহ সম্পর্কে পূর্বে পোস্ট করা হয়েছে দেখে নিবেন)তিনি ৮ই যিলহাজ্জ যাকে তারবিয়ার দিন বলা হয়।ঐ দিন সকালে বেলা স্বীয় অবস্থানস্থল হ’তে ওযূ-গোসল সেরে সুগন্ধি মেখে হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধবেন। ইহরাম বাঁধার জন্য মসজিদে হারামে বা অন্য কোন মসজিদে যাওয়া সুন্নাতসম্মত নয়। কারণ আমার জানা মতে ইহা নাবী (সা.) থেকে বা তাঁর কোন সাহাবী হতে প্রমাণিত নয়।ইহরাম বাঁধার সময় নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ করবেন- لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ حَجًّا লাববায়েক আল্লা-হুম্মা হাজ্জান’ (হে আল্লাহ! আমি হজ্জের উদ্দেশ্যে তোমার দরবারে হাযির)। আর যদি হাজ্জের কার্যাবলী সম্পূর্ণ করায় কোন রকম বাধার আশঙ্কা থাকে তাহলে শর্ত করে নিয়ে বলবে:اللَّهُمَّ مَحِلِّي حَيْثُ حَبَسْتَنِي [আল্লাহুম্মা মাহিল্লী হাইসু হাবাসতানী] হে আল্লাহ! যেখানে তুমি আমাকে বাধা প্রদান করবে সেখানেই আমি হালাল হয়ে যাব।[সহীহ বুখারী ৫০৮৯ ও মুসলিম ১২০৭]

আর যদি কোন রকম আশঙ্কা না থাকে তাহলে কোন শর্ত উল্লেখ করবেন না। অতঃপর ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করতে করতে কা‘বা থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে মিনা অভিমুখে রওয়ানা হবেন ও যোহরের পূর্বেই সেখানে পৌঁছে যাবেন। অতঃপর সেখানে রাত্রি যাপন করবেন ও জমা না করে শুধু ক্বসরের সাথে প্রতি ওয়াক্ত সালাত পৃথক পৃথকভাবে মসজিদে খায়েফে আদায় করবেন। তবে জামা‘আতে ইমাম পূর্ণ পড়লে তিনিও পূর্ণ পড়বেন। ‘ক্বসর’ অর্থ, চার রাক‘আত বিশিষ্ট ফরয সালাতগুলি দু’রাক‘আত পড়া। সফরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সুন্নাত সমূহ পড়তেন না।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৩৮] তবে ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত ও বিতর ছাড়তেন না।[ইবনুল ক্বাইয়িম, যা-দুল মা‘আদ ৩/৪৫৭ পৃঃ] এই সময় সিজদায় ও শেষ বৈঠকে ইচ্ছামত হৃদয় ঢেলে দিয়ে দো‘আ করবেন। তবে রুকু ও সিজদায় কুরআনী দো‘আগুলি পড়বেন না।

উল্লেখ্য যে, মক্কার পরে মিনা হ’ল হাজী ছাহেবদের দ্বিতীয় আবাসস্থল। যেখানে তাঁদেরকে আরাফা ও মুযদালিফা সেরে এসে আইয়ামে তাশরীক্বের তিন দিন কংকর মারার জন্য অবস্থান করতে হয়। ৯ তারিখে হজ্জ সেরে ১০ই যিলহাজ্জ সকালে মিনায় ফিরে কংকর মেরে প্রাথমিক হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে ইহরাম অবস্থায় থাকতে হবে।

🔸(২) আরাফা ময়দানে অবস্থান: এটিই হ’ল হজ্জের প্রধান দিন। এটি পালন না করলে হজ্জ হবে না। রাসূলুল্লাহ (সা,) বলেন, الْحَجُّ عَرَفَةُ ‘হজ্জ হ’ল আরাফাহ’।[মুসলিম, মিশকাত হা/২৭১৪।]

৯ই যিলহাজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনা হ’তে ধীরস্থিরভাবে ‘তালবিয়াহ’ পাঠ করতে করতে ১৪.৪ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে আরাফা ময়দান অভিমুখে রওয়ানা হবেন অতঃপর সহজসাধ্য চেষ্টা করবেন মাথার উপর থেকে সূর্য ঢলা পর্যন্ত নামেরাহ নামক স্থানে অবতরণ করতে। আর যদি কষ্টের কারণ হয় তাহলে কোন গোনাহ নেই। কারণ নামেরায় অবস্থান করা সুন্নাত, ইহা ওয়াজিব নয়। সুতরাং ময়দানের চিহ্নিত সীমানার মধ্যে সুবিধামত স্থানে অবস্থান নিবেন।[আ‘রাফ ১৭২; আহমাদ, মিশকাত হা/১২১]

এবং সেখানে আপনি যোহর হ’তে মাগরিব পর্যন্ত অবস্থান করবেন। আরাফাতে পৌঁছে সূর্য ঢলার পরে ইমাম বা তাঁর প্রতিনিধি কর্তৃক হজ্জের সুন্নাতী খুৎবা হয়ে থাকে। যা শোনা জরূরী। তারপর সূর্য ঢলে পড়লে যোহর ও আসর সলাত অগ্রিম একত্রিত (জমা তাকদীম) করে দুই দুই রাক’আত আদায় করবেন, যেমন নাবী (সা.) আদায় করেছিলেন। যোহর ও আসরের সালাত এক আযান ও দুই ইক্বামতে ২+২=৪ রাক‘আত জমা ও ক্বসর সহ মূল জামা‘আতের সাথে আদায় করবেন। সম্ভব না হ’লে নিজেরা পৃথক জামা‘আতে নিজ নিজ তাঁবুতে জমা ও ক্বসর করবেন।[সহীহ মুসলিম ১২১৮]

আর (হাজ্জের অবস্থায়) ক্বসর করে এবং দু’সালাতকে একত্রিত করে আদায় করার বিধান মক্কাবাসী ও অন্যান্য সমস্ত হাজীদের জন্য। আর দু’ওয়াক্ত সলাত জমা’ তাকদীম (অগ্রীম একত্রিত) করার বিধানের রহস্য হচ্ছে, যেন হাজীগণ নিজ নিজ ইমামের সাথে সালাত আদায় করে নিয়ে নিজ নিজ স্থানে ফিরে গিয়ে দু‘আর জন্য অবসর হয়ে যেতে পারেন।কারণ, হাজীদের জন্য সুন্নাত হল যে, তাঁরা আরাফার দিনের শেষ ভাগে দু‘আ, যিকির ও তিলাওয়াতের জন্য অবসর হয়ে যাবেন।

আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে হৃদয়ের গভীরে ফেলে আসা স্মৃতিচারণ করতে হবে যে, এ ময়দানেই একদিন আমরা মানবজাতি আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্মুখে অঙ্গীকার করেছিলাম যে, আপনিই আমাদের প্রতিপালক। যাকে ‘আহ্দে আলাস্ত্ত’ বলা হয়। অতএব সার্বিক জীবনে আমরা আল্লাহরই দাসত্ব করব এবং শয়তানের দাসত্ব থেকে বিরত থাকব। এই দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এখানে অবস্থানকালে সর্বদা দো‘আ-দরূদ ও তাসবীহ-তেলাওয়াতে রত থাকবেন এবং ক্বিবলামুখী হ’য়ে দু’হাত ঊর্ধ্বে তুলে আল্লাহর নিকটে কায়মনোচিত্তে প্রার্থনায় রত থাকবেন। যেন আল্লাহ তাকে জাহান্নাম হ’তে মুক্তদাসদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।

কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বলেছেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ সর্বাধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম হ’তে মুক্তি দান করে থাকেন এবং তিনি নিকটবর্তী হন ও ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করে বলেন, দেখ ওরা কি চায়?[সহীহ মুসলিম ১৩৪৮, মুসতাদ্রাকে হাকিম ১৭০৫, ইবনু মাজাহ ৩০১৪]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি নিম্ন আকাশে নেমে আসেন ও ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা সাক্ষী থাক আমি ওদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম’।[রাযীন, বাযযার, ত্বাবারাণী, ছহীহ আত-তারগীব হা/১১৫৪-৫৫]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সর্বশ্রেষ্ঠ দু‘আ হলো আরাফার দু‘আ। আর সর্বশ্রেষ্ঠ দু‘আ যা আমি বলেছি এবং আমার পূর্বের নাবীরা বলেছেন, তা হলো:

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

[লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু, লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হাম্দু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর]

অর্থঃআল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা মাত্রই তাঁর। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।[তিরমিযী, মিশকাত হা/২৫৯৮; ছহীহাহ হা/১৫০৩]

আরাফার ময়দানে অবস্থান করে তওবা-ইস্তিগফার, যিকর ও তাসবীহ সহ আল্লাহর নিকটে হৃদয়-মন ঢেলে দো‘আ করাটাই হ’ল হজ্জের মূল কাজ। এ সময় সহীহ হাদীছে বর্ণিত বিভিন্ন দো‘আ পড়বেন ও কুরআন তেলাওয়াতে রত থাকবেন।আর যদি রসূল (সা.) থেকে বর্ণিত (দু‘আ মাসূরাহ্) কারো না জানা থাকে তাহলে যে কোন বৈধ দু‘আ নিজ ভাষায় করবেন।

আর যেখানে নাবী (সা.) আরাফায় অবস্থান করেছিলেন সেখানে অবস্থান করা সহজসাধ্য হলে তা উত্তম। তা না হলে আরাফার যেখানে অবস্থান করা সহজসাধ্য হবে সেখানে অবস্থান করবে। কেননা জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, নাবী (সা.) বলেন:আমি এখানে কুরবানী করলাম, তবে মিনার সব জায়গায় হচ্ছে কুরবানীর স্থান। সুতরাং তোমরা নিজ নিজ অবস্থান স্থলে কুরবানী কর। আর আমি এখানে (আরাফায়) অবস্থান করলাম। তবে আরাফার সব জায়গায় হচ্ছে অবস্থান স্থল। আর আমি (মুযদালিফায়) এখানে অবস্থান করলাম। তবে মুযদালিফার সব জায়গায় হচ্ছে অবস্থান স্থল।[সহীহ মুসলিম ১২১৮]

আর আরাফায় অবস্থানকারীর (হাজীর) জন্য তার সীমানা সম্পর্কে নিশ্চিৎ হওয়া আবশ্যক। আরাফার চতুর্দিকের সীমানায় বেশ কিছু চিহ্ন দেয়া আছে যা সন্ধান করলে সহজেই পেয়ে যাবে। কারণ, অনেক হাজীরা এ ব্যাপারে অবহেলা করে, ফলে তারা অজ্ঞতা বশতঃ এবং অন্ধ অনুকরণের কারণে আরাফার সীমানার বাইরে অবস্থান করে। মনে রাখবে যে, যারা আরাফার সীমানার বাইরে অবস্থান করবে তাদের হজ্জ হবে না। কারণ, হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থানের নাম।

যার দলীল আব্দুল্লাহ বিন ইয়া‘মুর বর্ণিত হাদীস; তিনি বলেন, নাজদের অধিবাসী কতিপয় লোকেরা আল্লাহর রাসূল (সা.) এর নিকট তাঁর আরাফায় অবস্থানকালে এসে তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তখন তিনি একজন ঘোষনাকারীকে একথা ঘোষনা করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন:হাজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থানের নাম। সুতরাং যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাত্রে ফজর হওয়ার পূর্বে (আরাফায়) এসে পৌঁছাবে সে হজ্জ পেয়ে গেল। মিনায় অবস্থানের দিন হচ্ছে তিন দিন। তবে যে ব্যক্তি দুই দিনে তাড়াতাড়ি করবে তার কোন গোনাহ্ নেই। আর যে (তিন দিন পর্যন্ত) বিলম্ব করবে তারও কোন গোনাহ্ নেই।[সহীহ: তিরিমিযী ৮৮৯, নাসাঈ ৩০৪৪, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ ২৮২২] তাই আরাফার সীমানা সম্পর্কে হাজীদের সজাগ থাকা আবশ্যক, যাতে করে তার সীমানার ভিতরে আছে কি না এ বিষয়ে নিশ্চিৎ হয়ে যায়।

আর যারা আরাফায় দিনে অবস্থান করবে তাদের সেখানে সূর্য অস্ত হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। কারণ, নাবী (সা.) সূর্য অস্ত হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেছেন এবং তিনি একথার নির্দেশ দিয়েছেন:

لِتَأْخُذُوا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم

তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হাজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১২৯৭] আর একারণে যে, সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে আরাফা থেকে প্রস্থান করা জাহিলী যুগের প্রথা ছিল, ইসলামে যার বিরোধিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে আরাফায় অবস্থানের শেষ সময় হচ্ছে ঈদুল আয্হার দিন ফজর হওয়া পর্যন্ত। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাত্রে ফজর হওয়ার পূর্বে (আরাফায়) এসে পৌঁছাবে সে হাজ্জ পেয়ে যাবে।[আবূ দাউদ,১৯৪৭ তিরিমিযী, ৮৮৯ ও ইবনু মাজাহ,৩০১৫]

অতএব কোন ব্যক্তির আরাফায় অবস্থানের পূর্বেই যদি ফজর হয়ে যায় তাহলে তার হজ্জ ছুটে যাবে। সুতরাং এ ব্যক্তি যদি তার ইহরামের শুরুতে এ বলে শর্ত করে থাকে যে, “হে আল্লাহ! যদি আমাকে কোন কিছু হজ্জ সম্পূর্ণ করতে বাধা প্রদান করে, তাহলে আমি সেখানেই হালাল হয়ে যাব” তাহলে সে নিজ ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে, তাতে তার প্রতি কোন দাম (কুরবানী) ওয়াজিব হবে না।

আর যদি কোন শর্ত না করে থাকে তাহলে সে মক্কাহ্ গিয়ে কা‘বা ঘরের তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সাঈ এবং মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে উমরাহ্ করে হালাল হয়ে যাবে। তার সঙ্গে যদি হাদীর (কুরবানী) পশু থাকে তবে তাকে যবহ করে দিবে, অতঃপর আগামি বছর তার ছুটে যাওয়া হজ্জের কাযা করবে এবং কুরবানী করবে। আর যদি কুরবানী করতে না পারে তাহলে দশটি সিয়াম পালন করবে। তার মধ্যে তিনটি সিয়াম হজ্জের সফরেই এবং সাতটি নিজ পরিবারে ফিরে আসার পরে রাখবে।[সূরা বাকারা ২: ১৯৬]

উল্লেখ্য যে, ৯ই যিলহাজ্জ হাজীগণ সিয়াম পালন করবেন না। তবে যারা হাজী নন, তাদের জন্য আরাফার দিন সিয়াম পালন করা অত্যন্ত নেকীর কাজ। এতে বিগত এক বছরের ও আগামী এক বছরের গোনাহ মাফ হয়’।[সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪৪] এর দ্বারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানকারী মুসলিম নর-নারীগণ হজ্জের বিশ্ব সম্মেলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। যা মুসলিম ঐক্য ও সংহতির প্রতি গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ করে।

🔸(৩) মুযদালিফায় রাত্রিযাপন:
৯ই যিলহাজ্জ সুর্যাস্তের পর আরাফা ময়দান হ’তে ‘তালবিয়াহ’ পাঠ ও তওবা-ইস্তিগফার করতে করতে ধীরে-সুস্থে প্রায় ৯ কিঃমিঃ উত্তর-পশ্চিমে মুযদালিফা অভিমুখে রওয়ানা হবেন। অতঃপর সেখানে মাগরিব ও ইশা (জমা তা’খীর) বিলম্বে একত্রিত করে আদায় করবেন।কোন অবস্থাতেই সূর্যাস্তের পূর্বে রওয়ানা হওয়া যাবে না। রওয়ানা দিলে পুনরায় ফিরে আসতে হবে ও সূর্যাস্তের পরে যাত্রা করতে হবে। যদি ফিরে না আসেন, তাহ’লে তার উপরে কাফফারা স্বরূপ ফিদ্ইয়া ওয়াজিব হবে।

মুযদালিফায় পৌঁছে ‘জমা তাখীর’ করবেন। অর্থাৎ মাগরিব পিছিয়ে এশার সাথে জমা করবেন। এক আযান ও দুই এক্বামতে জমা ও ক্বসর অর্থাৎ মাগরিব তিন রাক‘আত ও এশা দু’রাক‘আত জমা করে পড়বেন। জরূরী কোন কারণে জমা ও ক্বসরের মাঝে বিরতি ঘটে গেলে তাতে কোন দোষ নেই। তবে অর্ধেক রাত অতিবাহিত হয়ে ইশার সময় পার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে সময় শেষ হওয়ার পূর্বে পথে যে কোন স্থানে সলাত আদায় করে নেয়া ওয়াজিব।

তারপর মুযদালিফায় ঘুমিয়ে রাত যাপন করবেন কিন্তু সেখানে নফল সলাত বা অন্য কোন আমলের মাধ্যমে রাত জাগরণ করবে না। কারণ, নাবী (সা.) এখানে তা করেননি।আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) হতে বর্ণিত, নাবী (সা.) মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সলাত একত্রিত করেছেন। তবে এ দুই সলাতের মাঝে বা পরে কোন সুন্নাত সলাত আদায় করেননি এরপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিলেন।[মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫]

এতে বুঝা যায় যে, তিনি এই রাতে বিতর বা তাহাজ্জুদ পড়েননি। অতঃপর ঘুম থেকে উঠে আউয়াল ওয়াক্তে ফজর পড়ে ‘আল-মাশ‘আরুল হারামে’ (অর্থাৎ মুযদালিফা মসজিদে) গিয়ে অথবা নিজ অবস্থানে বসে দীর্ঘক্ষণ ক্বিবলামুখী হয়ে দো‘আ-ইস্তিগফারে রত থাকবেন। তারপর ভালভাবে ফর্সা হওয়ার পর সূর্যোদয়ের পূর্বেই মিনা অভিমুখে রওয়ানা হবেন।

আর দুর্বল পুরুষ ও নারীদের জন্য রাতের শেষভাগে মুযদালিফা থেকে প্রস্থান করা জায়েয।তার পূর্বে রওয়ানা হওয়া জায়েয নয়। রওয়ানা দিলে ফিরে আসতে হবে। নইলে কাফফারা স্বরূপ ফিদ্ইয়া দিতে হবে।
কারণ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সা.) আমাকে তাঁর পরিবারের দুর্বল সদস্যদের সঙ্গে মুযদালিফা থেকে ভোর রাত্রেই পঠিয়ে দেন।[সহীহ মুসলিম ১২৯৩]

আর আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) বলতেন এধরনের দুর্বলদের ক্ষেত্রে আল্লাহর রসূল (সা.) ছাড় দিয়েছেন।[সহীহ বুখারী ১৬৭৬] তবে যারা দুর্বলও নয় এবং দুর্বলের সঙ্গীও নয় তারা রসূল (সা.) এর সুন্নাত মুতাবেক ফজর সলাত আদায় করা পর্যন্ত মুযদলিফায় অবস্থান করবে।

অতঃপর ফজর সলাত সমাপ্ত হলে মাশ‘আরে হারামে এসে ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহর একত্ব ঘোষণা করবে, তাকবীর পাঠ করবে, কালিমা তাওহীদ পাঠ করবে এবং পূর্ব আকাশ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত নিজ পছন্দ মত দু‘আ করতে থাকবে। তবে যদি কেউ মাশ‘আরে হারামে যেতে না পারে তাহলে নিজ স্থানেই দু‘আ করতে থাকবে। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:

وَوَقَفْتُ هَاهُنَا وَجَمْعٌ كُلُّهَا مَوْقِفٌ

আর আমি (মুযদালিফায়) এখানে অবস্থান করলাম। তবে মুযদালিফার সব জায়গায় হচ্ছে অবস্থান স্থল।[মুসনাদে আহমাদ ও সহীহ মুসলিম ১২১৮]

উল্লেখ্য যে, অর্ধরাত্রির পরে নিয়ত সহকারে মুযদালিফার উপর দিয়ে চলে গেলেও সেখানে অবস্থানের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। মুযদালিফা হ’তে মিনায় রওয়ানা হওয়ার সময় যে কোন স্থান থেকে সাতটি ছোলা দানার চাইতে সামান্য বড়, ছোট-ছোট কংকর কুড়িয়ে নিবেন।যা মিনায় গিয়ে সকালে জামরাতুল আক্বাবাহ বা ‘বড় জামরায়’ মারার সময় ব্যবহার করবেন।

এ সময় বিশেষ ধরনের কংকর কুড়ানোর জন্য মুযদালিফা পাহাড়ে উঠে টর্চ লাইট মেরে লোকদের যে কঠিন প্রচেষ্টা চালাতে দেখা যায়, সেটা স্রেফ বিদ‘আতী আক্বীদার ফলশ্রুতি মাত্র।

📖 অতএব মুযদালিফায় গিয়ে মূল কাজ হলো: মাগরিব-এশা একত্রে জমা করার পর ঘুমিয়ে যাওয়া। অতঃপর ঘুম থেকে উঠে আউয়াল ওয়াক্তে ফজর পড়ে ক্বিবলামুখী হয়ে কায়মনোচিত্তে দো‘আয় মশগুল হওয়া। রাতে এই বিশ্রামের কারণ যাতে পরদিন কুরবানী ও কংকর মারার কষ্ট সহজ হয়। আরাফা ময়দানের ন্যায় এখানেও কোন নির্দিষ্ট দো‘আ নেই।

🔸(৪) মিনায় প্রত্যাবর্তন: ১০ই যিলহাজ্জ ফজরের সালাত আদায়ের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে হাজীগণ মুযদালিফা থেকে ‘দোয়া-জিকির-তালবিয়াহ’ পাঠ করতে করতে রওয়ানা হয়ে মুযদালিফার শেষ প্রান্ত ও মিনার সীমান্তবর্তী ‘মুহাসসির’ উপত্যকায় একটু জোরে চলবেন।[ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৬১]

অতঃপর প্রায় ৫ কিঃমিঃ উত্তর-পশ্চিমে মিনা পৌঁছে সূর্যোদয়ের পর প্রথমে ‘জামরাতুল আক্বাবাহ’ যা মক্কার নিকটবর্তী, সেই বড় জামরাকে লক্ষ্য করে মক্কা বাম দিকে ও মিনা ডান দিকে রেখে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবেন। কারণ, আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বড় জামরায় পৌঁছে বায়তুল্লাহকে বামে এবং মিনাকে ডানে রেখে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন। এবং তিনি বললেন, এইভাবে সেই নাবী (সা.) কংকর নিক্ষেপ করেছেন যার প্রতি সূরাহ্ বাক্কারা নাযিল হয়েছে।[সহীহ বুখারী ১৭৪৮]

আর প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সময় , الله اكبر
“আল্লাহু আকবার” বলবেন।[সহীহ বুখারী ১৭৫০]

এভাবে সাতবার তাকবীর দিয়ে সাতটি কংকর মারবেন। এই তাকবীর ধ্বনি শয়তানের বিরুদ্ধে মুমিনের পক্ষ থেকে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা এবং ঈদের তাকবীরের ন্যায় ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কংকর হাউজে পড়লেই হবে। পিলারের গায়ে লাগা শর্ত নয়।[আহমাদ হা/২৭০৭, ২৭৯৫; সনদ সহীহ]

আর মনে রাখবেন যে, বড় পাথর, জুতো, স্যান্ডেল এবং এধরনের বস্ত্ত দ্বারা জামরায় রামী (নিক্ষেপ) করা জায়েয নয়। আর মহান আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণার (তাকবীর) সাথে বিনয়ী ও শান্ত হয়ে কংকর নিক্ষেপ করবে। অনেক মূর্খরা যেমন হৈ হুল্লুড় ও গালি-গালাজ করে তাদের মত করবে না। কেননা জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:

ذَلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ

যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে সম্মান করবে সে তো তার অন্তরস্থিত আল্লাহ-ভীতি থেকেই তা করবে।[সূরাহ্ আল-হাজ্জঃ ৩২] অতঃপর তাকবীর ধ্বনির সময় নিয়ত এটাই থাকবে যে, আমি আমার সার্বিক জীবনে শয়তান ও শয়তানী বিধানকে দূরে ছুঁড়ে ফেলে সর্বাবস্থায় আল্লাহ ও আল্লাহর বিধানকে ঊর্ধ্বে রাখব। বস্ত্ততঃ হজ্জের পর থেকে আমৃত্যু ত্বাগূতের বিরুদ্ধে আল্লাহর বিধানকে অগ্রাধিকার দেবার সংগ্রামে টিকে থাকতে পারলেই হজ্জ সার্থক হবে ইনশাআল্লাহ।

এরপর থেকে ‘তালবিয়াহ’ পাঠ বন্ধ করবেন এবং কুরবানী করবেন। দশ তারীখে জামরায় কংকর নিক্ষেপ করার পর সঙ্গে হাদী (কুরবানীর পশু) থাকলে তা যবহ করবেন, তা না হলে ক্রয় করে তা যবহ করবেন। এর পরে হাদীর আবশ্যক ধরণ, গুণাবলী, কুরবানীর পশু যবহ করার স্থান ও সময় এবং তা যবহ করার নিয়মাবলী বিস্তারিত নিচে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব তা দেখে নিবেন। তারপর মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা। হাদী যবহ করার পর পুরুষ ব্যক্তি নিজ মাথা মুণ্ডন করবে কিংবা চুল ছোট করবে।উলেখ্য যে, চাইলে কুরবানী করার পরেও মাথা মুন্ডন করা জায়েজ রয়েছে। [সহীহ বুখারী ৮৩, মুসলিম ১৩০৬, তিরমিযী ৯১৬,মিশকাত২৬৫৫] তবে আগে মাথা নেড়া পরে কুরবানী করাই উত্তম।এর প্রথম দলীল এই যে, মহান আল্লাহ এই আয়াতে প্রথম মাথা মুণ্ডনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন:

(مُحَلِّقِينَ رُؤُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ )الفتح27

তোমাদের মস্তক মুণ্ডিত অবস্থায় ও চুল কেটে।[সূরাহ্ আল-ফাত্হঃ ২৭]

মাথা মুণ্ডন উত্তম হওয়ার দ্বিতীয় দলীল নাবী (সা.)-এর পুরো মাথার চুল মুণ্ডন করা।যেমন আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, নাবী (সা.) মিনা এসে জামরায় কংকর নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর মিনায় নিজ তাঁবুতে এসে কুরবানী করলেন, তারপর নাপিতকে বললেন, নাও মাথা মুণ্ডন কর। এবলে মাথার ডান দিকে ইংগিত করলেন। অতঃপর বাম দিক থেকে মুণ্ডন করতে বললেন। তারপর লোকদের মাঝে নিজ মুবারাক চুল বিতরণ করে দিলেন।[সহীহ মুসলিম ১৩০৫মিশকাত,২৬৪৮ও ২৬৩৬]

মাথা মুণ্ডন উত্তম হওয়ার তৃতীয় দলীল এই যে, নাবী (সা.) মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্যে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার তিনবার করে দুআ করেছেন এবং চুল ছোটকারীদের জন্যে একবার দুআ করেছেন।[সহীহ বুখারী ১৭২৭-১৭২৮ ও ৪৪১০]

তবে মহিলা নিজ চুলের শেষভাগ থেকে আঙ্গুলের অগ্রভাগ সমান ছোট করবে।[আবু দাউদ,১৯৮৪ মিশকাত,২৬৫৪] অতঃপর ইহরাম খুলে হালাল হয়ে যাবেন ও সাধারণ পোষাক পরিধান করবেন। তবে এটা হবে প্রাথমিক হালাল বা ‘তাহাল্লুলে আউয়াল’। উপরোক্ত কাজগুলি সম্পাদন করা হলেই স্ত্রী সম্ভোগ ছাড়া ইহরামের সমস্ত নিষিদ্ধ কাজগুলি হালাল হয়ে যায়। অতএব এর পরে হাজীর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা, সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা, চুল কাটা, নখ কাটা ও অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজগুলি হালাল হয়ে যাবে। আর এই প্রাথমিক হালাল হওয়ার পরে সুগন্ধি লাগানো সুন্নাত।

কারণ, আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী (সা.)-কে তাঁর ইহরাম করার পূর্বে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ইফাযা করার পূর্বে (প্রাথমিক) হালাল হওয়ার পরেও সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম।[সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১১৮৯]

তবে প্রাথমিক হালাল হওয়ার জন্য উপরোক্ত সবগুলি কাজ সমাপ্ত করা আবশ্যক নয়, বরং জামরায় কংকর নিক্ষেপ করার পর মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা হলেই স্ত্রী সম্ভোগ ছাড়া ইহরামের সমস্ত নিষিদ্ধ কাজগুলি হালাল হয়ে যাবে।

এরপরই মক্কায় গিয়ে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ করা এর প্রমাণ মহান আল্লাহর বাণী:

ثُمَّ لْيَقْضُوا تَفَثَهُمْ وَلْيُوفُوا نُذُورَهُمْ وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ

অতঃপর তারা যেন তাদের দৈহিক অপরিচ্ছন্নতা দূর করে, তাদের মানত পূর্ণ করে আর প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করে।[সূরা আল-হাজ্জ ২২ঃ ২৯]

আর আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজ্জ কসূল করলাম। অতঃপর কুরবানীর দিন আমরা তাওয়াফ ইফাযাহ করলাম।[সহীহ বুখারী ১৭৩৩ ও সহীহ মুসলিম]

ত্বাওয়াফে ইফাযাহ করলে পুরা হালাল হওয়া যাবে। এসময় ‘রমল’ করার প্রয়োজন নেই। ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’-কে ‘ত্বাওয়াফে যিয়ারত’ও বলা হয়। [সহীহ বুখারী,১৭৩২–৩৩] এটি হজ্জের অন্যতম রুকন। যা না করলে হজ্জ বিনষ্ট হয়। সেকারণ রাত্রিতে হ’লেও ১০ই যিলহাজ্জ তারিখেই এটা সম্পন্ন করা উচিত। নইলে আইয়ামে তাশরীক্বের মধ্যে অর্থাৎ ১১, ১২, ১৩ই যিলহাজ্জের মধ্যে সম্পন্ন করা উত্তম।

মাথা মুন্ডন ও ত্বাওয়াফে ইফাযাহ: মাথা মুন্ডনের তাৎপর্য হ’ল হারাম থেকে হালাল হওয়া এবং ইহরামের কারণে যা কিছু নিষিদ্ধ ছিল, তা সিদ্ধ হওয়া। অতঃপর ত্বাওয়াফে ইফাযাহর তাৎপর্য হ’ল, ৮ তারিখে মক্কা থেকে ইহরাম বেঁধে বিদায় নিয়ে এসে হজ্জ সমাধা করে পুনরায় আল্লাহর ঘরে ফিরে যাওয়া। অতঃপর পূর্ণ হালাল হওয়া।

উল্লেখ্য যে, যিলহাজ্জ মাসের পুরাটাই হজ্জের মাস সমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব এ মাসের মধ্যেই ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু যদি কোন কারণ বশতঃ এ মাস অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তবে তার হজ্জ হয়ে যাবে। তবে কাফফারা স্বরূপ ফিদ্ইয়া দিতে হবে। ঋতুর আশংকাকারী মহিলাগণ এ সময় ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে সাময়িকভাবে ঋতুরোধ করে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ সেরে নিতে পারেন।[ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৩৭-৩৮]।

🔸(৫) মক্কায় গিয়ে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ করা। তবে এ কাজগুলির কোনটি আগপিছ হয়ে গেলে তাতে কোন দোষ নেই। যেমন কেউ কংকর মারার আগেই ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ করল অথবা আগেই মাথা মুন্ডন করল ও পরে কুরবানী করল এবং শেষে কংকর মারল, তাতে কোন দোষ নেই। উল্লেখ্য যে, কুরবানী মিনা ছাড়া মক্কাতে এসেও করা যায়। কেননা মক্কা, মিনা, মুযদালিফা, আযীযিয়াহ সবই হারামের অন্তর্ভুক্ত। তবে আরাফাত নয়।

তামাত্তু হাজীগণ ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ করার পর সাঈ করবেন। অতঃপর পূর্ণ হালাল হবেন। এর কারণ এই যে, প্রথম ত্বাওয়াফ ও সাঈ ছিল ওমরাহর জন্য। কিন্তু এবারেরটা হ’ল হজ্জের জন্য।সুতরাং হজ্জের জন্য আরো একটি সাঈ করা ফরয। কেননা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতঃপর যারা উমরার ইহরাম (হাজ্জে তামাত্তু) করেছিল তারা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে সাফা ও মারওয়ার সাঈ করল, অতঃপর হালাল হয়ে গেল। তারপর মিনা থেকে ফিরে এসে তাদের হজ্জের জন্য আরো একটি সাঈ করল। পক্ষান্তরে যারা হজ্জ ও উমরা একত্রিত করে (হাজ্জে কিরানের) ইহরাম করেছিল তারা মাত্র একটি সাঈ করে। আর আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ এমন ব্যক্তির হজ্জ ও উমরা কবুল করেন না যে সাফা ও মারওয়ার সাঈ করে না।[সহীহ মুসলিম ১২৭৭]

আর ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সা.) তারবিয়ার দিনের (৮ যিলহজ্জ) বৈকালে আমাদেরকে হাজ্জের ইহরাম করার নির্দেশ দিলেন। তারপর আমরা হাজ্জের কার্যাবলী সমাপ্ত করলে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ার সাঈ করি। এরপর আমাদের হাজ্জ সম্পূর্ণ হয়ে যায় এবং আমাদের উপর হাদী (কুরবানী) ওযাজিব হয়ে যায়।[সহীহ বুখারী ১৫৭২]

ক্বিরান ও ইফরাদ হাজীগণ শুরুতে মক্কায় এসে ‘ত্বাওয়াফে কুদূম’-এর সময় সাঈ করে থাকলে এখন আর সাঈ করতে হবে না। কারণ, সাহাবী জাবির (রা.) বলেন, নাবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ সাফা ও মারওয়ার মাঝে প্রথম একটি সাঈর বেশী করেননি।[সহীহ মুসলিম ১২১৫]

তবে যদি কোন ব্যক্তি তাওয়াফে কুদূমের পরে সাঈ না করে থাকে তাহলে তার উপর সাঈ করা ফরয। কারণ, সাঈ ব্যতীত হাজ্জ সম্পূর্ণ হয় না, যেমনটি আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর ইফরাদ বা কিরান হজ্জ সম্পাদনকারী ব্যক্তি যখন তাওয়াফে ইফাযাহ করে হাজ্জের জন্য তার পরে কিংবা তার পূর্বে সাঈ করে নিবে তখন সে দ্বিতীয় পর্বে (সম্পূর্ণরূপে) হালাল হয়ে যাবে। ফলে তার জন্য ইহরামের অবস্থায় নিষিদ্ধ সমস্ত কাজ হালাল হয়ে যাবে। কেননা আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) হতে নাবী (সা.)-এর হজ্জের বিবরণ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে; তিনি বলেন: নাবী (সা.) কুরবানীর দিন নিজ হাদী (কুরবানীর পশু) যবহ করেন। তারপর মক্কা গিয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফে ইফাযাহ করেন। অতঃপর ইহরাম অবস্থায় যা কিছুই হারাম ছিল তা হতে হালাল হয়ে যান।[সহীহ বুখারী ১৬৯১, সহীহ মুসলিম ১২২৭।]

🔰কুরবানী: আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র পুত্রকে নিজ হাতে কুরবানী দেওয়ার ও পুত্রের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় তা বরণ করে নেওয়ার অনন্য আত্মোৎসর্গের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পুরস্কার স্বরূপ জান্নাত হ’তে প্রেরিত দুম্বার ‘মহান কুরবানী’র পুণ্যময় স্মৃতিকে ধারণ করেই কুরবানী অনুষ্ঠান পালন করতে হয়। যাতে মুসলমান সর্বদা দুনিয়াবী মহব্বতের উপরে আল্লাহর মহব্বতকে স্থান দিতে পারে। প্রায় চার হাযার বছর পূর্বে এই দিনে এই মিনা প্রান্তরেই সেই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল।
🔸 (ক) কুরবানী তাই মিনা সহ ‘হারাম’ এলাকার মধ্যেই করতে হয়, বাইরে নয়। যদি কেউ ‘হারাম’ এলাকার বাইরে আরাফাতের ময়দান বা অন্যত্র কুরবানী করেন, তবে তাকে হারামে এসে পুনরায় কুরবানী দিতে হবে। সামর্থ্য না থাকলে ফিদ্ইয়া স্বরূপ হজ্জের মধ্যে ৩টি ও বাড়ী ফিরে ৭টি মোট ১০টি সিয়াম পালন করতে হবে।

🔸(খ) হাজী ছাহেব সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে মিনার বাজার থেকে নিজের কুরবানীর পশু খরিদ করে কসাইখানায় যবহ করে গোশত কুটাবাছা করে নিয়ে আসতে পারেন।

কুরবানীর পশু সুন্দর, স্বাস্থ্যবান ও ত্রুটিমুক্ত হ’তে হবে। কুরবানী করার সময় উট হ’লে দাঁড়ানো অবস্থায় ‘হলকূমে’ অর্থাৎ কণ্ঠনালীর গোড়ায় অস্ত্রাঘাত করে রক্ত ছুটিয়ে দিবেন, যাকে ‘নহর’ করা বলা হয়। আর গরু বা দুম্বা-বকরী হ’লে দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে বামকাতে ফেলে ক্বিবলামুখী হয়ে তীক্ষ্ণধার অস্ত্র দিয়ে দ্রুত ‘যবহ’ করবেন। তবে ক্বিবলামুখী হ’তে ভুলে গেলেও ইনশাআল্লাহ কোন দোষ বর্তাবে না। নহর বা যবহ কালে নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বেন-

بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ، اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ، اَللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنِّى-

‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার; আল্লা-হুম্মা মিন্কা ওয়া লাকা, আল্লা-হুম্মা তাক্বাববাল মিন্নী’।

অর্থ: ‘আল্লাহর নামে কুরবানী করছি। আল্লাহ সবার বড়। হে আল্লাহ! এটি তোমারই তরফ হ’তে প্রাপ্ত ও তোমারই উদ্দেশ্যে নিবেদিত। হে আল্লাহ! তুমি এটি আমার পক্ষ থেকে কবুল কর’। অন্য কোন পুরুষের পক্ষ থেকে হ’লে বলবেন ‘মিন ফুলা-ন’ এবং মহিলার পক্ষ থেকে হ’লে বলবেন ‘মিন ফুলা-নাহ’।[বায়হাক্বী ৯/২৮৬-৮৭]

জন প্রতি একটি করে বকরী বা দুম্বা ও সাত জনে মিলে একটি গরু অথবা সাত বা দশজনে একটি উট কুরবানী দিতে পারেন।[মুসলিম ‘হজ্জ’ অধ্যায় হা/১৩১৮; মিশকাত হা/১৪৫৮; তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৪৬৯] মেয়েরাও যবহ বা নহর করতে পারেন।

জানা আবশ্যক যে, নিজে কুরবানী করে পশুটিকে ফেলে রেখে আসা জায়েয নয়। বরং এতে গোনাহগার হ’তে হবে। কেননা কুরবানীর পশু আল্লাহর উদ্দেশ্যে যবহ করা হয় এবং তা অত্যন্ত সম্মানিত। অতএব তাকে যত্নের সাথে কুটাবাছা করতে হবে, নিজে খেতে হবে, অন্যকে দিতে হবে এবং ফকীর-মিসকীনের মধ্যে অবশ্যই বিতরণ করতে হবে। নিজে না পারলে বিশ্বস্ত কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকে কুরবানী বাবদ নির্ধারিত টাকা জমা দিলে হাজী ছাহেবের পক্ষে তারাই অর্থাৎ সঊদী সরকার উক্ত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সরকার অনুমোদিত সংস্থা সমূহের লোকেরা উক্ত হাজীর নামে মিনা প্রান্তরেই সরকারী কসাইখানায় গিয়ে যবহ বা নহর করে থাকে। অতঃপর এগুলো মেশিনের সাহায্যে ছাফ করে আস্ত বা টুকরা করে ফ্রিজে রেখে মোটা পলিথিনে মুড়িয়ে বিভিন্ন দেশে গরীবদের মাঝে বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশ সমূহের সরকারের নিকটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

অতএব মিনা প্রান্তরে মসজিদে খায়েফ-এর নিকটবর্তী সেলুন এলাকার সামনে বা অন্যত্রে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যাংক কাউন্টারে কুরবানী বা হাদ্ই বাবদ নির্ধারিত ‘রিয়াল’ জমা দিয়ে রসিদ নিলেই কুরবানীর দায়িত্ব শেষ হ’ল বলে বুঝতে হবে। কুরবানী শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোন প্রয়োজন নেই।

🔸(গ) কুরবানীর পশু কেনার সামর্থ্য না থাকলে তার পরিবর্তে দশটি সিয়াম পালন করতে হবে। তিনটি হজ্জের মধ্যে (৯ই যিলহাজ্জের পূর্বে অথবা ১০ই যিলহাজ্জের পরে) এবং বাকী সাতটি বাড়ী ফিরে (বাক্বারাহ ২/১৯৬)। ১০ই যিলহাজ্জ কুরবানীর দিন ও পরবর্তী আইয়ামে তাশরীক্বের তিনদিন সকলের জন্য সিয়াম পালন নিষিদ্ধ।[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪৮-৫০]তবে ফিদ্ইয়ার তিনটি ছিয়াম এ তিনদিন রাখা যায়।

🔸(ঘ) উল্লেখ্য যে, ১০ই যিলহাজ্জ তাকবীর সহ কংকর নিক্ষেপ করা ঈদুল আযহার তাকবীর ও সালাতের স্থলাভিষিক্ত। সেজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জের এদিন কংকর নিক্ষেপের পর সকলের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিয়েছেন। যেমন তিনি মদীনায় থাকা অবস্থায় ঈদের সালাতের পর খুৎবা দিতেন। যেহেতু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীন মিনাতে ঈদুল আযহার সালাত আদায় করেননি, সেহেতু তা আদায় করা হয় না।

🔸(ঙ) এ দিন বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ শেষে ঈদের তাকবীর ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহ আকবর, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু; আল্লা-হু আকবর, আল্লা-হু আকবর, ওয়া লিল্লা-হিল হাম্দ’ (আল্লাহ সবার বড়, আল্লাহ সবার বড়। নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত। আল্লাহ সবার বড়, আল্লাহ সবার বড়, আর আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা) বারবার পড়া উচিত।
ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ শেষে সেদিনই মিনায় ফিরে এসে রাত্রিযাপন করবেন।

📖মিনায় ৪টি কাজ: ১০ই যিলহাজ্জ সকালে মুযদালিফা থেকে মিনায় পৌঁছে মোট চারটি কাজ পর্যায়ক্রমে করতে হয়। (১) বড় জামরায় কংকর মারা (২) কুরবানী করা (৩) মাথা মুন্ডন করা অথবা সমস্ত চুল ছোট করা। টাকমাথা যাদের তারাও মাথায় ক্ষুর দিবেন। এসময় সকলের জন্য গোফ ছাঁটা ও নখ কাটা মুস্তাহাব।[ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৩৬]

🔰মিনায় অবস্থান (المبيت بمنى) : হাজীগণ ঈদের দিন তাওয়াফ ও সাঈ করার পরে মিনায় ফিরে আসবে এবং মিনায় অবশিষ্ট অংশ এবং তাশ্রীকের দিন-রাত্রিগুলি ১১, ১২, ১৩ই যিলহাজ্জ আইয়ামে তাশরীক্ব-এর তিনদিন মিনায় রাত্রি যাপন করা ওয়াজিব। কারণ, নাবী (সা.) এ রাতগুলি মিনায় যাপন করেছেন এবং তিনি আমাদেরকে এ বলে নির্দেশ প্রদান করেছেন:

لِتَأْخُذُوا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم

তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হাজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১২৯৭]

আর এমন কোন ওজর যা হজ্জ বা হাজীদের সাথে সর্ম্পকিত হলে মিনার বাইরে রাত কাটানো জায়েয।

কারণ, আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) হতে বর্ণিত যে, আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব নাবী (সা.)-এর নিকট হাজীদেরকে যমযমের পানি পান করাবার উদ্দেশ্যে মিনার রাতগুলি মক্কায় যাপনের জন্য অনুমতি চাইলেন, তখন নাবী (সা.) তাঁকে এর অনুমতি দিলেন।[সহীহ বুখারী ১৭৪৫, সহীহ মুসলিম ১৩১৫]

আসিম বিন আদী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) উঁটের রাখালদেরকে মিনার বাইরে রাত কাটাবার অনুমতি দিয়েছেন।[সহীহ: মুসনাদে আহমাদ ২৩৭৭৫, আবূ দাউদ ১৯৭৫, তিরমিযী ৯৫৫ ও ইবনু মাজাহ ৩০৩৭]

এ সময় পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামা‘আতের সাথে মসজিদে খায়েফে আদায় করা উত্তম। সালাত ক্বসর করা ও পূর্ণ পড়া দু’টিই জায়েয।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৪৭]

ইমাম যেভাবে পড়েন, সেভাবেই পড়তে হবে।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৩৯]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ সময় প্রতি রাতে কা‘বা যিয়ারত করতেন ও ত্বাওয়াফ করে ফিরে আসতেন। প্রথম রাতে মিনায় থেকে শেষ রাতেও মক্কা যাওয়া যায়। মিনায় রাত্রি যাপন না করলে তাকে ফিদ্ইয়া স্বরূপ একটি কুরবানী দিতে হবে। ৮ই যিলহাজ্জ দুপুর হ’তে ১৩ই যিলহাজ্জ মাগরিব পর্যন্ত গড়ে ৫ দিন মিনায় ও মুযদালিফায় অবস্থান করতে হয়। অবশ্য ১২ তারিখ সন্ধ্যার পূর্বেও মিনা থেকে মক্কায় ফিরে আসা জায়েয আছে। অনেকে মিনায় না থেকে মক্কায় এসে রাত্রি যাপন করেন ও দিনের বেলায় মিনায় গিয়ে কংকর মারেন। বাধ্যগত শারঈ ওযর ব্যতীত এটি করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয। যদি বিনা কারনে কেউ এটা করেন, তবে তাকে ফিদ্ইয়া স্বরূপ একটি কুরবানী দিতে হবে। মহান আল্লাহই অধিক জ্ঞানী।

কংকর নিক্ষেপ (رمى الجمار): মিনায় ৪দিনে মোট ৭০টি কংকর নিক্ষেপ করতে হয়। ১০ই যিলহাজ্জ কুরবানীর দিন সকালে বড় জামরায় ৭টি। অতঃপর ১১, ১২, ১৩ই যিলহাজ্জ প্রতিদিন দুপুরে সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ার পর হ’তে সন্ধ্যার মধ্যে তিনটি জামরায় ৩´৭=২১টি করে মোট ৬৩টি। বাধ্যগত অবস্থায় রাতেও কংকর নিক্ষেপ করা যায়। ছোলার চাইতে একটু বড় যেকোন কংকর হ’লেই চলবে এবং তা যেখান থেকে খুশী কুড়িয়ে নেওয়া যায়। তবে ১০ তারিখে বড় জামরায় মারার জন্য প্রথম সাতটি কংকর মুযদালিফা থেকে বা মিনায় ফেরার সময় রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নেওয়া মুস্তাহাব। ‘মুযদালিফা পাহাড় থেকে বিশেষ সাইজ ও গুণ সম্পন্ন কংকর সংগ্রহ করতে হবে’ বলে যে ধারণা প্রচার করা হয়ে থাকে, তা নিছক ভিত্তিহীন।

📖কংকর মারার আদব:

🔸(ক) ১১, ১২, ১৩ তারিখে সর্বপ্রথমে ‘জামরা ছুগরা’ (ছোট) যা মসজিদে খায়ফের নিকটবর্তী, তারপর ‘উস্তা’ (মধ্যম) ও সবশেষে ‘কুবরা’ (বড়)-তে কংকর মারতে হবে। যদি কেউ সূর্য পশ্চিমে ঢলার পূর্বে কংকর মারে কিংবা নিয়মের ব্যতিক্রম করে আগে ‘বড়’ পরে ‘মধ্যম’ ও শেষে ‘ছোট’ জামরায় কংকর মারে, তবে তাকে ফিদ্ইয়া স্বরূপ একটি কুরবানী দিতে হবে।

🔸(খ) আর প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবেন।

🔸(গ) পূর্ণ শালীনতা ও ভদ্রতার সাথে ‘জামরা’-র উঁচু পিলার বেষ্টিত হাউজের কাছাকাছি পৌঁছে তার মধ্যে কংকর নিক্ষেপ করবেন। প্রতিবারে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ডান হাত উঁচু করে সাতবারে সাতটি কংকর মারবেন। খেয়াল রাখতে হবে হাউজের মধ্যে পড়ল কি-না। নইলে পুনরায় মেরে সাতটি সংখ্যা পূরণ করতে হবে।

🔸(ঘ) কংকর গণনায় ভুল হ’লে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে দু’একটা পড়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে, তাতে কোন দোষ হবে না। কিন্তু সবগুলি হারিয়ে গেলে পুনরায় কংকর সংগ্রহ করে এনে মারতে হবে। নইলে ফিদ্ইয়া দিতে হবে।

🔸(ঙ) ছোট ও মধ্যম জামরায় কংকর মেরে প্রতিবারে একটু দূরে সরে গিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দীর্ঘক্ষণ আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে হয়। অতঃপর জামরা আক্বাবায় অর্থাৎ বড় জামরায় পাথর মেরে সেখান থেকে ফিরে আসবে। সেখানে দু‘আ করবে না। এভাবে ইমাম বুখারী (রহঃ) আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সা.) এরকমই করতেন।[সহীহ বুখারী ১৭৫৩]

🔸(চ) এই সময় হুড়াহুড়ি করা, ঝগড়া করা, জোরে কথা বলা, কারো গায়ে আঘাত করা, হাউজে জুতা-স্যান্ডেল নিক্ষেপ করা, কারো উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়া, পা দাবানো ইত্যাদি কষ্টদায়ক যাবতীয় ক্রিয়া-কলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। শয়তান মারার নামে এগুলি আরেক ধরনের শয়তানী কাজ মাত্র। হজ্জের পবিত্র অনুষ্ঠান সমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এগুলি পালন করতে এসে যাবতীয় বিদ‘আত থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। নইলে হজ্জের নেকী হ’তে মাহরূম হবার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাবে।

🔸(ছ) আর তাশরীকের দিনগুলিতে (১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্জ) সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে কংকর নিক্ষেপ করা জায়েয নয়। কারণ, নাবী (সা.) পশ্চিমে সূর্য ঢলার পূর্বে কংকর নিক্ষেপ করেননি। আর তিনি একথাও বলেছেন:

لِتَأْخُذُوا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم

তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ১২৯৭]

🔸(জ) বদলী কংকর মারা। জামরাতে পাথর নিক্ষেপ করা হাজ্জের কার্যাবলীর একটি অন্যতম ইবাদাত এবং তা একটি অংশ। তাই সম্ভবপর হলে একাজ হাজীর নিজেই সম্পাদন করা ওয়াজিব, তার এ হাজ্জ ফরয হোক কিংবা নফল। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন:

وَأَتِمُّواْ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّهِ
তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হাজ্জ ও উমরা সম্পূর্ণ কর।[সূরা বাক্বারাঃ ১৯৬]

অতএব কোন ব্যক্তি হাজ্জ ও উমরায় প্রবেশ করলে তা নফল হলেও সম্পূর্ণ করা ফরয। আর কোন হাজী যতক্ষণ কোন ব্যধি, বার্ধক্য বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া কিংবা অন্য কোন কারণে কংকর নিজেই নিক্ষেপ করতে অক্ষম না হবে ততক্ষণ তার জন্য অন্য কোন ব্যক্তিকে উকীল নিযুক্ত করা জায়েয হবে না।তবে প্রয়োজনে কংকর নিক্ষেপ করার জন্য এমন ব্যক্তিকে উকীল বানাবে যার আকীদা ও আমল ভাল। আর এ কংকর হাজী নিজেই কুড়িয়ে উকীলকে দিয়ে দিক অথবা উকীল নিজেই কংকর কুড়িয়ে নিয়ে অন্যের পক্ষ থেকে কংকর নিক্ষেপ করুক। আর উকীলের কংকর মারার পদ্ধতি হচ্ছে যে, উকীল প্রথম নিজের সাতটি কংকর মেরে নিয়ে অন্যের পক্ষ থেকে কংকর নিক্ষেপ করবে এবং যার পক্ষ হতে কংকর মারবে তার নাম উচ্চারণ করে বা মনে মনে নিয়্যাত করবে।

🔸(ঝ) নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত অন্য সময়ে কংকর মারার ক্বাযা আদায় করার নিয়ম নেই।

🔸(ঞ) তবে যদি কেউ শারঈ ওযর বশতঃ সন্ধ্যার সময়সীমার মধ্যে কংকর মারতে ব্যর্থ হন, তাহ’লে বাধ্যগত অবস্থায় তিনি সূর্যাস্তের পর হ’তে ফজরের আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কংকর মারতে পারেন।

🔸(ট) বদলী হজ্জের জন্য কিংবা প্রচন্ড ভিড়ের কারণে দুর্বল, রোগী বা অপারগ মহিলা হাজীর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত হ’লে প্রথমে নিজের জন্য সাতটি কংকর মারবেন। পরে দায়িত্ব দানকারী মুওয়াক্কিল-এর নিয়তে তার পক্ষে সাতটি কংকর মারবেন।

🔸(ঠ) ১২ই যিলহাজ্জ জামরাগুলিকে পাথর মারা হলেই হজ্জের ওয়াজিব কাজ সমাপ্ত হয়ে যায় কাজ শেষ করে চাইলে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ত্যাগ করে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হবেন।এর প্রমাণ মহান আল্লাহর বাণী:

فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى

অতঃপর যে ব্যক্তি তাড়াতাড়ি করে দু’দিনে চলে যায় তার প্রতি কোন গুনাহ্ নেই এবং যে ব্যক্তি অধিক সময় পর্যন্ত বিলম্ব করবে, তার প্রতিও গুনাহ্ নেই, এটা তার জন্য যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করবে।[সূরা আল-বাক্বারা ২ঃ ২০৩]

যদি রওয়ানা অবস্থায় ভিড়ের কারণে মিনাতেই সূর্য ডুবে যায়, তাতেও কোন অসুবিধা নেই।কিন্তু যদি রওয়ানা হবার পূর্বেই মিনাতে সূর্য অস্ত যায়, তাহ’লে থেকে যেতে হবে ও পরদিন দুপুরে সূর্য ঢলার পর আগের দিনের ন্যায় যথারীতি তিন জামরায় ২১টি কংকর মেরে রওয়ানা হ’তে হবে। ১২ তারিখে আগেভাগে চলে যাওয়ার চাইতে ১৩ তারিখে দেরী করে যাওয়াই উত্তম। কেননা এতেই সুন্নাতের পূর্ণ অনুসরণ হয়।

(ড) বাধ্যগত শারঈ ওযর থাকলে মিনায় রাত্রিযাপন না করে ১১-১২ দু’দিনের কংকর যেকোন একদিনে একসাথে মেরে মক্কায় ফেরা যাবে।[তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৬৭৭; তুহফা হা/৯৬২]

◾(৫) বিদায়ী ত্বাওয়াফ: হাজীগণ হাজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করার পরে মিনা থেকে রওনা হয়ে নিজ ঘরে ফিরার ইচ্ছা করলে ঋতুবতী ও নেফাস ওয়ালী মহিলা ব্যতীত কোন হাজী বিদায়ী ত্বাওয়াফ ছাড়া মক্কা ত্যাগ করতে পারবেন না এটি ওয়াজিব ।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৬৮] যদি কেউ সেটা করেন, তাহ’লে তাকে ফিদ্ইয়া স্বরূপ একটি কুরবানী দিতে হবে।

আর এ তাওয়াফ মক্কা থেকে বিদায়ের পূর্বে সর্বশেষ কাজ হওয়া আবশ্যক। কারণ, আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হাদীসে আছে, তিনি বলেন, লোকেরা হাজ্জের শেষে যে যেখান থেকে ইচছা রওনা হয়ে যেত। তখন নাবী (সা.) বলেন: তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন বায়তুল্লাহর শেষ সাক্ষাৎ (তাওয়াফ) না করা পর্যন্ত হাজ্জ শেষে বিদায় না হয়।[সহীহ বুখারী,১৭৫৫ আবু দাউদ, ২২০২ ইবনে মাজা,৩০৭০] অতএব মিনার ইবাদত সমূহ শেষ করে মক্কায় ফিরে এসে হাজীগণ বায়তুল্লাহর বিদায়ী ত্বাওয়াফ করবেন। এ সময় সাঈ করার প্রয়োজন নেই।

সুতরাং বিদায়ী তাওয়াফের পরে মক্কায় অবস্থান করা জায়েয নয়। অনুরূপ বিদায়ী তাওয়াফের পরে সফরের প্রস্ত্ততি ছাড়া যেমন, মাল-সামান যানবাহনে উঠানো বা সাথী-সঙ্গীর অপেক্ষা করা কিংবা গাড়ীর অপেক্ষা করা- অন্য কোন কাজে ব্যস্ত হওয়াও জায়েয নয়। তাই যদি কেউ সফরের প্রস্ত্ততি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে মক্কায় বিলম্ব করে তাহলে তার পুনঃরায় তাওয়াফ করা আবশ্যক হয়ে পড়বে, যাতে করে তার শেষ কাজ কা’বা ঘরের তাওয়াফ হতে পারে।

তবে যদি ইতিপূর্বে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ না করে থাকেন, তাহ’লে তামাত্তু হাজীগণ ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ ও সাঈ করে পূর্ণ হালাল হয়ে দেশে রওয়ানা হবেন। তখন তাকে আর পৃথকভাবে ‘বিদায়ী ত্বাওয়াফ’ করতে হবে না। পক্ষান্তরে ক্বিরান ও ইফরাদ হাজীগণ শুরুতে মক্কায় এসে ত্বাওয়াফে কুদূম-এর সময় সাঈ করে থাকলে এখন আর তাকে সাঈ করতে হবে না। কেবল ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ করেই হালাল হয়ে দেশে রওয়ানা হবেন। অনুরূপভাবে ঋতুবতী বা নেফাস ওয়ালী মহিলাগণ বিদায়ী ত্বাওয়াফ ছাড়াই বায়তুল্লাহ থেকে বিদায় হবার দো‘আ পাঠ করবেন, যা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে (‘সফরের আদব’ দো‘আ-৬ দ্রঃ)।

◾তিনটি হজ্জের সময়কাল: তিনটি হজ্জের মধ্যে তামাত্তু হজ্জের জন্য সময় লাগে একটু বেশী এবং এতে কষ্টও কিছুটা বেশী। কেননা তাকে প্রথমে ওমরাহর ত্বাওয়াফ ও সাঈ করতে হয়। পরে নতুন ভাবে হজ্জের ইহরাম বেঁধে হজ্জ শেষে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ ও সাঈ করতে হয়। ফলে গড়ে দু’টি বা তিনটি ত্বাওয়াফ ও দু’টি সাঈ করতে হয়। অবশ্য এতে তার নেকীও বেশী হয়।

◾এর পরের সংক্ষিপ্ত হজ্জ হ’ল ক্বিরান ও ইফরাদ। এতে গড়ে দু’টি ত্বাওয়াফ ও একটি সাঈ করতে হয়। সর্বসাকুল্যে ৮ই যিলহাজ্জ থেকে ১২ বা ১৩ই যিলহাজ্জ পর্যন্ত ৫ বা ৬ দিনে এই হজ্জ সমাপ্ত হয়। উল্লেখ্য যে, বিদায়ী ত্বাওয়াফের পর সফরের গোছগাছ ব্যতীত অন্য কারণে দেরী হ’লে তাকে পুনরায় বিদায়ী ত্বাওয়াফ করতে হবে। বিদায়ের সময় বায়তুল্লাহকে সম্মান দেখাবার জন্য পিছন দিকে হেঁটে বের হওয়া নিকৃষ্টতম বিদ‘আতী কাজ। বরং অন্যান্য মসজিদের ন্যায় স্বাভাবিকভাবে মুখ ফিরিয়ে দো‘আ পড়তে পড়তে বেরিয়ে আসতে হবে।

◾কিবরান ও ইফরাদ হাজীদের করণীয়: ক্বিরান’ অর্থাৎ যারা ওমরাহ ও হজ্জ একই নিয়তে ও একই ইহরামে আদায় করেন এবং ‘ইফরাদ’ অর্থাৎ যারা স্রেফ হজ্জ-এর নিয়তে ইহরাম বাঁধেন, তাঁরা তামাত্তু হাজীদের ন্যায় মক্কায় গিয়ে প্রথমে বায়তুল্লাহতে ‘ত্বাওয়াফে কুদূম’ বা আগমনী ত্বাওয়াফ সম্পাদন করবেন ও ত্বাওয়াফ শেষে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবেন। অতঃপর ইচ্ছা করলে সাঈ করবেন অথবা রেখে দিবেন। যা তিনি হজ্জ শেষে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ করার পর সম্পাদন করবেন। আর যদি ত্বাওয়াফে কুদূমের পরেই সাঈ করেন, তাহ’লে তাকে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ শেষে পুনরায় সাঈ করতে হবে না। অর্থাৎ শুরুতে একবার সাঈ করলে শেষে আর সাঈ প্রয়োজন হবে না। তবে তাকে ত্বাওয়াফে কুদূমের পর থেকে ১০ই যিলহাজ্জ কুরবানীর দিন হালাল হওয়া পর্যন্ত ইহরামের পোষাকে থাকতে হবে। ‘ক্বিরান’ হজ্জের জন্য কুরবানী ওয়াজিব হবে। কিন্তু ‘ইফরাদ’ হজ্জের জন্য কুরবানী প্রয়োজন নেই।

◾হজ্জ শেষে মক্কায় ফিরে করণীয়: হজ্জের সব কাজ সেরে মক্কায় ফিরে দেশে ফেরার জন্য বিদায়ী ত্বাওয়াফের আগ পর্যন্ত মাসজিদুল হারামে যত খুশি ছালাতে এবং দিনে-রাতে যত খুশি ত্বাওয়াফে সময় কাটাবেন। কেননা বায়তুল্লাহর ছালাতে অন্য স্থানের চাইতে এক লক্ষ গুণ বেশী নেকী রয়েছে[আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/১৪০৬; সনদ সহীহ]

এবং বায়তুল্লাহর ত্বাওয়াফে প্রতি পদক্ষেপে একটি করে গুনাহ ঝরে পড়ে ও একটি করে নেকী লেখা হয়।[তিরমিযী হা/৯৫৯, মিশকাত হা/২৫৮০]

এই সময় সর্বদা তেলাওয়াত ও ইবাদতে রত থাকা এবং তাক্বওয়া বৃদ্ধি পায় এমন কিতাব সমূহ পাঠের মধ্যে মনোনিবেশ করা উত্তম। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক ইলমী মজলিসে যোগদান করা ও গভীর মনোযোগের সাথে উক্ত আলোচনা শ্রবণ করা নিঃসন্দেহে নেকীর কাজ।
___________________
উপস্থাপনায়
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।