কাউকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ করা যাবেনা

প্রিয় পাঠক, বর্তমানে ওয়াজ মাহফিল বা জুমার খুতবায় কিছু তরুণ দ্বীনের দাঈগন-কে শরীয়তের হুকুম আহকাম সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছাড়াই হুটহাট মুসলিমদেরকে গণহারে কাফের বা জাহান্নামী বলে আখ্যা দিতে দেখা যাচ্ছে যা মোটেও কাম্য নয়। দ্বীনি বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার পূর্বে তাদের উচিত আরো গভীরভাবে পড়াশোনা করা এবং সালাফদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেখা। হুটহাট ফাতওয়া দিয়ে মানুষকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ করা শরীয়ত সম্মত নয়। কারন মানুষ মাত্রই ভুলকারী। রাসূল (ﷺ) বলেছেন,كُلُّ بَنِي آدَمَ خَطَّاءٌ، وَخَيْرُ الْخَطَّائِينَ التَّوَّابُونَ ‘প্রত্যেক আদম সন্তানই ভুলকারী। তবে উত্তম ভুলকারী তারাই, যারা বারবার তওবা করে’।(ইবনু মাজাহ হা/৪২৫১; মিশকাত হা/২৩৪১, সনদ হাসান)
.
সুতরাং একজন মানুষের ভুল বা পাপের কারণে তাকে আল্লাহর রহমত হ’তে নিরুৎসাহিত করা যাবে না। বরং তাকে দাওয়াতের মাধ্যমে সংশোধনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। হয়ত মৃত্যুর পূর্বে তার একনিষ্ঠ তাওবার ফলে আল্লাহ তাকে পবিত্র করতে পারেন। সুতরাং কাউকেই জাহান্নামী আখ্যাদান বা তার ক্ষমা প্রাপ্তি কখনই হবে না এরূপ কথা বলা যাবে না। এমনটি বললে সেই দাঈ বা বক্তার আমলই বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। কেননা হাদীছে এসেছে, জুনদুব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন,مَنْ ذَا الَّذِي يَتَأَلَّى عَلَيَّ أَنْ لَا أَغْفِرَ لِفُلَانٍ، فَإِنِّي قَدْ غَفَرْتُ لِفُلَانٍ، وَأَحْبَطْتُ عَمَلَكَ- ‘সে ব্যক্তি কে যে কসম খেয়ে বলে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করব না? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমার আমল বিনষ্ট করে দিলাম।(সহীহ মুসলিম হা/২৬২১; মিশকাত হা/২৩৩৪ ‘ক্ষমা ও তাওবা’ অধ্যায়)
.
এই হাদীসের ব্যখ্যায় ইমাম নাবাবী বলেন, হাদীসে বিনা তাওবাতে গুনাহ মাফ হওয়ার ক্ষেত্রে আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের দলীল আছে, আর তা যখন আল্লাহ চাইবেন। আর মু‘তাযিলা সম্প্রদায় এ হাদীসের মাধ্যমে কাবীরাহ গুনাহের কারণে ‘আমল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন। আহলুস্ সুন্নাতের মাযহাব হল, কুফরী ছাড়া ‘আমলসমূহ ধ্বংস হয় না। আর এ ‘আমল ধ্বংস হওয়াকে ঐ কথার উপর ব্যাখ্যা করা হবে, পাপের কারণে তার পুণ্যসমূহ ঝড়ে গেছে। সুতরাং একে রূপকভাবে ‘আমল ধ্বংস করা বুঝানো হয়েছে। আরো সম্ভাবনা রয়েছে যে, তার হতে অন্য কোন বিষয় সংঘটিত হয়েছে যা কুফরীকে আবশ্যক করে দিয়েছে। আরো সম্ভাবনা রয়েছে এটি আমাদের পূর্ববর্তীদের শারী‘আতে ছিল আর এটা ছিল তাদের হুকুম।(সহীহ মুসলিম ২৬২১ হাদিসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য:)
.
অপর হাদীসে আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, বনী ইসরাঈলের মধ্যে দু’ ব্যক্তি ছিলো। তাদের একজন পাপ কাজ করতো এবং অন্যজন সর্বদা ইবাদাতে লিপ্ত থাকতো। যখনই ইবাদাতরত ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে দেখতো তখনই তাকে খারাপ কাজ পরিহার করতে বলতো। একদিন সে তাকে পাপ কাজে লিপ্ত দেখে বললো, তুমি এমন কাজ থেকে বিরত থাকো। সে বললো, আমাকে আমার রবের উপর ছেড়ে দাও। তোমাকে কি আমার উপর পাহারাদার করে পাঠানো হয়েছে? সে বললো, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না অথবা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।অতঃপর দু’ জনকেই মৃত্যু দিয়ে আল্লাহর নিকট উপস্থিত করা হলে তিনি ইবাদগুজারী ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি আমার সম্পর্কে জানতে? অথবা তুমি কি আমার হাতে যা আছে তার উপর ক্ষমতাবানী ছিলে? এবং পাপীকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করো।আর অপর ব্যক্তির ব্যাপারে তিনি বললেন, তোমরা একে জাহান্নামে নিয়ে যাও। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, সেই মহান সত্ত্বার কসম! যার হাতে আমার জীবন! সে এমন উক্তি করেছে যার ফলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়েই বরবাদ হয়ে গেছে।(আবু দাউদ হা/৪৯০১)। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন সুন্নার সঠিক বুঝ দান করুন। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________
জুয়েল মাহমুদ সালাফি