একজন নারীর জন্য অন্ধ ব্যক্তির সামনে পর্দা করা কি ফরজ

প্রশ্ন: একজন নারীর জন্য অন্ধ ব্যক্তির সামনে পর্দা করা কি ফরজ? অন্ধের সামনে নারী তার খিমার ও নেকাব খুলে ফেলা কি জায়েজ হবে?
▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে অন্ধ পুরুষের সামনে একজন নারী তার নেকাব কিংবা খিমার খুলে ফেললে দোষের কিছু নেই। কারন পরিপূর্ণ অন্ধ ব্যক্তির সামনে নারীদের জন্য পর্দা করা ফরজ নয়, তবে এক্ষেত্রে একটি শর্ত পালন করতে হবে, আর তা হল, মহিলা অন্ধ পুরুষের প্রতি (অনুরূপ কোন পুরুষের প্রতি) কামনা দৃষ্টিতে তাকাবে না। কারণ মহান আল্লাহ মহিলাকেও নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِهِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَهُنَّ আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। (সূরা নূর: ২৪/৩১)।
.
কামভোব ব্যতীত বেগানা পুরুষকে দেখা নারীর জন্য দোষনীয় নয়। একথার প্রমাণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস, যাতে বলা হয়েছেঃ একবার ঈদের দিন মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় কিছু সংখ্যক হাবশী যুবক সামরিক কুচকাওয়াজ করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কুচকাওয়াজ নিরিক্ষণ করতে থাকেন এবং তার আড়ালে দাঁড়িয়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও এই কুচকাওয়াজ উপভোগ করতে থাকেন এবং নিজে অতিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত দেখে যান। (সহীহ বুখারী: ৪৫৫, সহীহ মুসলিম: ৭৯২)।
.
অন্ধ ব্যক্তির সামনে নারীদের পর্দা করা ফরজ নয় এই মর্মে দলিল হল: ফাতিমা বিনতে কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উম্মু শারীকের ঘরে ইদ্দাত পালনের নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ تِلْكِ امْرَأَةٌ يَغْشَاهَا أَصْحَابِي ، اعْتَدِّي عِنْدَ ابْنِ أُمِّ مَكْتُومٍ فَإِنَّهُ رَجُلٌ أَعْمَى تَضَعِينَ ثِيَابَكِ তার ঘরে তো আমার সাহাবীদের আসা-যাওয়ার একটা ভীড় থাকে। তুমি বরং ইবনু উম্মে মাকতূমের ঘরে অবস্থান করো। কারণ সে অন্ধ মানুষ। তোমার পোশাক বদলাতে অসুবিধা হবে না। অন্য বর্ননায় এসেছে: (فَإِنَّكِ إِذَا وَضَعْتِ خِمَارَكِ لَمْ يَرَكِ) “তুমি যদি তোমার খিমার খুলে দেও তবে সে তোমাকে দেখতে পাবে না।” (সহীহ মুসলিম ১৪৮০, আবূ দাঊদ ২২৮৪, নাসায়ী ৩২৪৫, আহমাদ ২৭৩২৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪০৪৯)।
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: অন্ধ শিক্ষকের সামনে হিজাব পালনের হুকুম কি?

তিনি জবাব বলেন: لا يجب الحجاب عن المدرِّس الأعمى لقول النبي صلى الله عليه وعلى آله وسلم لفاطمة بنت قيس : ( اعتدي في بيت ابن أم مكتوم فإنه رجلٌ أعمى تضعين ثيابك عنده ) একজন অন্ধ শিক্ষকের সামনে হিজাব পালনের প্রয়োজন নেই। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাতিমা বিনতে কায়েসকে বলেছেন: তুমি ইবনু উম্মে মাকতূমের ঘরে তোমার ইদ্দত পালন করো। কারণ সে অন্ধ মানুষ। তোমার পোশাক বদলাতে অসুবিধা হবে না। (উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব,ফাতাওয়া আল-নিসা’/১৭০) ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯২৭৫৩)।
.
যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ,ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] আল-মুনতাকা মিন ফাতাওয়া আল-ফাওজান গ্রন্থে বলেছেন: والراجح – والله أعلم – أنها لا يجب عليها الاحتجاب من الكفيف ؛ أي : تغطية وجهها بحضرته ” সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি – আল্লাহই ভাল জানেন – তাকে একজন অন্ধ ব্যক্তির সামনে হিজাব পালন করতে হবে না, অর্থাৎ তার সামনে তার মুখ ঢেকে রাখতে হবেনা। (আল-মুনতাকা মিন ফাতাওয়া আল-ফাওজান (৩/প্রশ্ন নং ৪১০)।

উল্লেখ্য যে, সমাজে একটি জয়ীফ হাদীস প্রসিদ্ধ রয়েছে যে, রাসূল (ﷺ) তার স্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন তোমরা দুজনেও কি অন্ধ?” অথচ এ হাদীস সহীহ নয়। বর্ননাটি হল: মুহাম্মদ ইবন আলা (রহঃ) উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি এবং মায়মূনা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ছিলাম। তখন সেখানে আবদুল্লাহ ইবন উম্মু মাকতুম (রাঃ) আসেন। আর এটি ছিল পর্দার আয়াত নাযিলের পর। তখন তিনি বলেনঃ তোমরা দু’জন এর থেকে পর্দা কর। তখন আমরা বলি ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে পায়না, চিনতেও পারেনা। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমরাও কি অন্ধ, তোমরা দু’জন কি তাকে দেখছো না? (আবু দাউদ হা/৪০৬৬ তিরমিযী ২৭৭৮, আহমাদ ২৬৫৩৭, ইরওয়া ১৮০৬। তাহক্বীক: হাদীসটি জয়ীফ কারন এর সনদে নাবহান একজন মাজহূল রাবী। বিস্তারিত জানতে দেখুন সিলসিলা য‘ঈফাহ হা/ ৫৯৫৮) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।