ইমামের যোগ্যতা ও গুণাবলী

প্রশ্ন: সালাতে ইমাম হওয়ার সর্বাধিক বেশী যোগ্য কে? অর্থাৎ একজন ইমামের যোগ্যতা ও গুণাবলী গুলো কি কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সর্বাঙ্গ সুন্দর ইসলামের সুষ্ঠ এক বিধান হল জামাআত তথা তার পরিচালক একক ইমাম বা নেতার বিধান।
ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। রাসূল (ﷺ) বলেন, إِنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ ‘ইমাম নিযুক্ত করা হয়,কেবল তাঁকে অনুসরণ করার জন্য।’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১১৩৯)। ইমামের পিছে পিছে মুক্তাদী তাকবীর, রুকূ, সিজদা, ক্বিয়াম ও সালাম ফিরাবে।(মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৭)। ইমাম অর্থ নেতা। সালাত আদায়ে তিনি নেতৃত্ব দেন। সকল শ্রেণীর মুসল্লী তার নেতৃত্বে সালাতে রুকু-সিজদা দেন, উঠেন ও বসেন। তার তাকবীর ধ্বনি শুনে সকলে তার অনুকরণ ও অনুসরণ করেন,কেউই তা লঙ্ঘন করে না। ইমামের এরূপ অনুসরণই হলো ইকতিদা। এজন্য ইমাম সাহেব হবেন সর্বপ্রথম সুন্দর চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী। মানুষকে সদুপদেশ যা দেবেন তা সর্বাগ্রে আমল করবেন তিনি। তার কথা ও কাজ হবে এক রকম। তিনি হবেন সকলের মান্যবর, পরামর্শদাতা, কল্যাণকামী ও শুধানুধ্যায়ী। নিজের আখলাক তিনি এমনভাবে বণ্টন করবেন, যাতে তিনি হতে পারেন সকলের শ্রদ্ধাভাজন। যা তিনি বয়ান করবেন আগে তার সত্যতা ও বিশুদ্ধতা যাচাই করে কথা বলবেন। তিনি হবেন সকলের দৃষ্টান্ত।

সালাতে ইমামতির সবচেয়ে বেশী যোগ্য তিনি, যিনি কুরআনের হাফেয; যিনি (তাজবীদ সহ্‌) ভালো কুরআন পড়তে পারেন। তাজবীদ ছাড়া হাফেয ইমামতির যোগ্য নয়। পূর্ণ হাফেয না হলেও যাঁর পড়া ভালো এবং বেশী কুরআন মুখস্থ আছে তিনিই ইমাম হওয়ার অধিক যোগ্য।মহানবী (ﷺ) বলেন, “তিন ব্যক্তি হলে ওদের মধ্যে একজন ইমামতি করবে। আর ইমামতির বেশী হ্‌কদার সেই ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে বেশী ভালো কুরআন পড়তে পারে।” (সহীহ মুসলিম:৬৭৬, মিশকাত: ১১১৮)

তিনি আরো বলেন,“লোকেদের ইমাম সেই ব্যক্তি হবে যে বেশী ভালো কুরআন পড়তে পারে। পড়াতে সকলে সমান হলে ওদের মধ্যে যে বেশী সুন্নাহ্‌ জানে, সুন্নাহর জ্ঞান সকলের সমান থাকলে ওদের মধ্যে যে সবার আগে হিজরত করেছে, হিজরতেও সকলে সমান হলে ওদের মধ্যে যার বয়স বেশী সে ইমাম হবে। আর কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তির জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে ইমামতি না করে এবং না কেউ কারো ঘরে তার বসার জায়গায় তার বিনা অনুমতিতে বসে।” (মুসলিম ৬৭৩, আবূ দাঊদ ৫৮২, তিরমিযী ২৩৫, নাসায়ী ৭৮০, ইবনু মাজাহ্ ৯৮০ সহীহ আল জামি‘ ৩১০৪, মিশকাত ১১১৭)।

উল্লেখ্য যে, সাধারণ নামাযীর মত ইমামতির জন্যও সুন্নতী লেবাস উত্তম। তবে মাথায় পাগড়ী,রুমাল বা টুপী হওয়া কিংবা মাথা ঢাকা ইমামতির জন্য শর্ত, ফরয বা জরুরী নয়।(ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৩৮৬, ৩৮৯)। সুতরাং যার মাথা ঢাকা আছে তার থেকে যার মাথা ঢাকা নেই,সে ভালো কুরআন পড়তে পারলে সেই ইমামতির হ্‌কদার।

◈ যে ইমামতি করতে চায় তার মধ্যে যে সকল আবশ্যকীয় যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন সেগুলো হল:
● ১. ইখলাস তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত থাকা।
● ২. বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত।
● ৩. কমপক্ষে সালাতের মৌলিক। বিধিবিধানগুলো জানা,যেন সঠিকভাবে সালাত পড়াতে পারে।

◈ তার মধ্যে আরও যে সকল গুণাবলী থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: (১০টি)

১. বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা ও মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার।
২. অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও মিষ্টভাষী হওয়া।
৩. ইসলাম সম্পর্কে মৌলিক ও বিশুদ্ধ জ্ঞান থাকা।
৪. কথা ও কাজের মিল থাকা।
৫. পাপাচার থাকা দূরে থাকা।
৬. সময়ানুবর্তীতা। কারণ সালাত নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পৃক্ত।
৭. আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন হওয়া। অর্থাৎ তার থেকে এমন কোন নীচ ও হীন আচরণ প্রকাশিত না হওয়া,যা এই দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির জন্য শোভনীয় নয়।
৮. মানুষের প্রতি কল্যাণকামী মনোভাব এবং মুসল্লিদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি সচেতন থাকা।
৯. ধৈর্য ও সহনশীলতা।
১০. মানুষের সম্পদের প্রতি লোভ সংবরণ করা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য যে, এ সকল গুণাবলী প্রত্যেক মুসলিমের মধ্যেই থাকা উচিৎ। তবে বিশেষভাবে ইমাম, দাঈ, আলেম প্রমুখ ব্যক্তিগণ-যাদের নিকট মানুষ দ্বীন ও চরিত্র শিখবে-তাদের মধ্যে থাকাটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।(শেষের অংশ নোট শাইখ আব্দুল হাদী (হাফিঃ) থেকে)। [আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী]।
_______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।