ইমামতি অথবা ওয়াজ মাহফিল করে টাকা নেওয়া জায়েজ আছে কি

ইমামতি অথবা ওয়াজ মাহফিল করে টাকা নেওয়া জায়েজ আছে কি? মোটকথা ধর্মীয় যে কোন কাজের বিনিময়ে অর্থ গ্রহন করা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
▬▬▬▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬▬▬▬
ইসলামী শরীয়তের আলোকে চিন্তা ভাবনা করলে মুমিনদের সব কাজই ধর্মীয়। এমনকি মুমিনের চিন্তা ভাবনা ও ইবাদত হতে পারে।পবিত্র কুরআনের প্রায় একশত আয়াতে মহান আল্লাহ চিন্তার ইবাদতে রত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ، ‘এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শন সমূহ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-গবেষণা করতে পার’ (সূরা বাক্বারাহ ২/২১৯)।
.
তারপরও শরীয়তে এমন কিছু নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে যেগুলোর সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিগণ পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারবেন। যেমন: কুরআন শিক্ষা দিয়ে, ইমামতি করে, আযান দিয়ে, দ্বীনী তা‘লীম দিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা এবং অন্যের নিকট দ্বীন প্রচার অর্থাৎ ওয়াজ মাহফিল করা ইত্যাদির মাধ্যমে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েজ আছে তবে খেয়াল রাখতে হবে উক্ত অর্থ গ্রহণ যেন উদ্দেশ্য না হয়।বরং উদ্দেশ্য হতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।আর উপরোক্ত কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বা কমিটি যথাযথ সম্মানীর ব্যবস্থা করবে। যেমন: আবুবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে বেতন প্রদান করা হত (সহীহ বুখারী, হা/২০৭০)।
..
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ ‘যে সকল জিনিসের উপর তোমরা বিনিময় গ্রহণ করে থাক, তন্মধ্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করার সবচেয়ে বেশি হক রয়েছে আল্লাহর কিতাবের ক্ষেত্রে’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৭৩৭)।
.
রাসূল (ﷺ) আবূ হুরায়রাকে আযান শেষে একটি রূপার থলি প্রদান করে তার জন্য বরকত কামনা করে দো‘আ করেন (নাসাঈ হা/৬৩২; ইবনু মাজাহ হা/৭০৮)
.
অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) আযানের বিনিময়ে যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করবে না তাকে মুয়াযযিন হিসাবে গ্রহণ করতে বলেছেন (নাসাঈ হা/৬৭২; তিরমিযী হা/২০৯)। উক্ত হাদীসের অর্থ হচ্ছে, যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করার শর্ত দিবে। যেমন বলল, এ পরিমাণ টাকা না দিলে আমি ইমামাতি করব না, আযান দিব না, কুরআন পড়াবো না। এভাবে নিদিষ্ট করা শরীয়ত সম্মত নয়।কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইচ্ছায় প্রদান করলে তাতে কোন দোষ নেই (ইমাম শানক্বীত্বী, শারহু যাদুল মুসতাক্বনি‘ ৯/১৪৯) ।
.
বিগত শতাব্দীতে সৌদি ‘আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে এমন প্রশ্ন করা হলে শাইখ বলেছেন,মসজিদের পরিচ্ছন্নকর্মী,ইমাম, মুয়াযযিন, কুরআনের শিক্ষকদের চুক্তি ছাড়া কোন ফান্ড থেকে বেতন দেয়াতে কোন সমস্যা নেই। যদি সরকার অথবা কোন বায়তুল মাল ফান্ড থেকে দেয়া হয় তাতেও সমস্যা নেই। কারণ যে ব্যক্তি এ দায়িত্ব পালন করবে জনগণের উচিত তার প্রয়োজন মেটানো (মুহাম্মাদ সালেহ আল-উসাইমীন, নূরুন ‘আলাদ দারব, ৪৮/১৮২ পৃ.)।
.
মোটকথা উপরোক্ত কাজগুলোর জন্য শর্ত বা চুক্তি করা উচিত নয়। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যে ব্যক্তি বলে আমি এত টাকা হলে ইমামতির চাকুরী করব, নয়লে করব না। তাহলে এমন ইমাম থেকে মুক্তি চাই। এমন ইমামের পেছনে কোন মুছল্লী কি সালাত আদায় করবে? (মুহাম্মাদ বিন ইবরহীম, ইবাদতের দিকে ধাবিত হওয়ার আদব, পৃ. ১২৮)। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।