আমলের মাধ্যমে হজ্জ না করেও হজ্জের ন্যায় ফযীলত পেতে পারেন

যে আমলের মাধ্যমে হজ্জ না করেও হজ্জের ন্যায় ফযীলত পেতে পারেন, আজ আমরা তেমন কিছু আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: হজ্জ ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে সর্বশেষ এবং অন্যতম একটি রুকন। এটি শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। আল্লাহ সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর জীবনে একবার হজ্জ ফরয করেছেন। এর গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি ফযীলতও সীমাহীন। পৃথিবীতে যত নেক আমল রয়েছে তন্মধ্যে হজ্জ শ্রেষ্ঠতম। রাসূল (ﷺ) অন্য সকল আমলের উপর হজ্জের মর্যাদাকে পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের দূরত্বের সাথে তুলনা করেছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জ পালনকারীকে গুনাহমুক্ত নবজাতকের ন্যায় বলা হয়েছে। কবুল হজ্জের পুরস্কার জান্নাত। পাশাপাশি হজ্জের মত ফযীলতপূর্ণ এমন কতিপয় আমল ও ইবাদত ইসলামী শরী‘আতে বিধিবদ্ধ করেছেন, যেন অসমর্থ ব্যক্তিরাও সেই আমল সম্পাদনের মাধ্যমে হজ্জের সমান নেকী লাভে ধন্য হতে পারে।আজ আমরা হজ্জের মত ফযীলতপূর্ণ কয়েকটি আমল সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
.
(১) হজ্জের খালেছ নিয়ত করা: কোন মুসলিম ব্যক্তি হজ্জের খালেছ নিয়ত করলে এবং সে কোন কারণে হজ্জে গমন করতে না পারলে আল্লাহ তার জন্য হজ্জের নেকী লিখে দিবেন। [সহীহ মুসলিম হা/১২৮ ও ১৯১১; বুখারী হা/২৮৩৯, ৪৪২৩; মিশকাত হা/৩৮১৫। মুসলিম হা/১৯১১; ইবনু মাজাহ হা/২৭৬৫।]
.
(২) সালাতের পরে তাসবীহ-তাহলীল করা: দিনে-রাতে সালাতের পরে নির্দিষ্ট হারে তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করলে হজ্জের সমান নেকী লাভ করা যায়,মর্মে হাদীসে এসেছে। [সহীহ বুখারী হা/৮৪৩, ৬৩২৯; মুসলিম হা/৫৯৫।]
.
(৩) রামাযান মাসে ওমরাহ করা: রামাযান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাসে সকল আমলের নেকী বান্দা দ্বিগুণ হারে লাভ করে। অনুরূপভাবে এই মাসে ওমরাহ সম্পাদনের মাধ্যমে হজ্জ করার সমপরিমাণ সওয়াব অর্জন করা যায়। [বুখারী হা/১৮৬৩; ‘হজ্জ’ অধ্যায়, ‘মহিলাদের হজ্জ’ অনুচ্ছেদ। মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৯]
.
(৪) নিজ অর্থ ব্যয়ে অপরকে হজ্জ করানো: কোন ব্যক্তিকে হজ্জ করালে হজ্জের সমপরিমাণ নেকী লাভ করা যায়। এমনকি যদি কেউ তার মৃত পিতা-মাতার পক্ষ থেকেও হজ্জ সম্পাদন করেন, আল্লাহ হজ্জের নেকী সেই মৃতের কবরে পৌঁছিয়ে দেন। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৯; আবূদাঊদ হা/২৮৮৩; মুসলিম হা/১৮৯৩; তিরমিযী হা/৮১০; নাসাঈ হা/২৬৩১; মিশকাত হা/২৫২৪; সনদ ছহীহ। সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৪/৫১২]
.
(৫) ইশরাক্বের সালাত আদায় করা: ‘শুরূক’ শব্দের অর্থ সূর্য উদিত হওয়া। সূর্যোদয়ের পরপরেই দিনের প্রথম প্রহরের শুরুতে যে সালাত আদায় করা হয়, তাকে ইশরাক্বের সালাত বলে। ফজরের সালাতের পর উক্ত সালাত আদায় করলে একটি পূর্ণ হজ্জ ও একটি পূর্ণ ওমরার নেকী রয়েছে। [তিরমিযী হা/৫৮৬; মিশকাত হা/৯৭১, সনদ হাসান। ইবনু মাজাহ হা/১৪১২, সনদ সহীহ]
.
(৬) মসজিদে তালীমী বৈঠক বা দরসে অংশগ্রহণ করা: যে সকল মসজিদে তালীমী বৈঠক, দ্বীনী আলোচনা বা দরস অনুষ্ঠিত হয়, এতে হাযির হলে পরিপূর্ণ হজ্জের সওয়াব লাভ করা যায়। [তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর হা/৭৪৭৩; সহীহ আত-তারগীব হা/৮৬। মুসলিম হা/২৭০০; তিরমিযী হা/৩৩৭৮; ইবনে মাজাহ হা/২২৫; মিশকাত হা/২২৬১]
.
(৭) ফরয সালাত মসজিদে আদায় করা: পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা যেমন ফরয, তেমনি এই ফরয সালাত মসজিদে জামা‘আতের সাথে আদায় করাও অপরিহার্য। আর যারা বাড়ী থেকে পবিত্র হয়ে মসজিদে এসে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করে তার মর্যাদা হজ্জ সম্পাদনকারীর মত। [আবু দাঊদ হা/৫৫৮; মিশকাত/৭২৮, সহীহুল জামে‘ হা/৬৫৫৬। বুখারী হা/৬৪৫,৬৫৯; আবু দাঊদ হা/৫৬৩। সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩২২।]
.
পরিশেষ সম্মানিত পাঠক! একটু ভেবে দেখুন হজ্জ বা ওমরা পালন করতে হলে কত শ্রম, টাকা-পয়সা ও সময় খরচের প্রয়োজন রয়েছে। অথচ উপরোক্ত আমলগুলো সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই হজ্জ বা ওমরাহর নেকী অর্জন করতে পারি। শুধু প্রয়োজন ইবাদতের ব্যাপারে একনিষ্ঠতা ও সচেতনতা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত-বন্দেগী করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন! আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।
__________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।