আওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করা উত্তম নাকি জামাআতে আদায় করা উত্তম?

প্রশ্ন: ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে আওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করা উত্তম নাকি জামাআতে আদায় করা উত্তম? কোনটিতে নেকী বেশি, আওয়াল ওয়াক্তে একাকী নাকি জামাআতে আদায়ের নেকী বেশি? সঠিক তথ্য জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: ইসলামী শরীয়ত প্রত্যেকটি ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি বর্ণনার সাথে সাথে তার সুনির্দিষ্ট সময়ও নির্ধারণ করে দিয়েছে। হজ্জের মৌসুমে হজ্জ,সিয়ামের মৌসুমে সিয়াম, কুরবানীর সময় কুরবানী ইত্যাদি।একজন মুসলিমের কালেমার স্বীকৃতি দেওয়ার পর দ্বিতীয় রুকন হিসাবে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হল সালাত।সালাতের উপরই অন্যান্য ইবাদত কবুল হওয়া না হওয়া নির্ভর করে।সর্বদা নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) এর আদর্শ ছিল। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ আজ কুরআন-সুন্নাহর ভুল অর্থ ও অপব্যাখ্যা, যঈফ ও জাল হাদীস এবং মাযহাবী গোঁড়ামির কারণে একই সালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করে থাকে। একই স্থানে একই সালাতের আযান পৃথক পৃথক সময়ে হয়। কখনো এক ঘণ্টা আবার কখনো আধা ঘণ্টা আগে-পরে। কোন স্থানে একাধিক মসজিদ থাকলেও আযান ও জামা‘আত এক সঙ্গে হয় না। এভাবে মানুষও দলে দলে বিভক্ত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামা‘আতে সালাত আদায় করার যে গুরুত্বারোপ করেছেন,অথচ বর্তমানে তা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরয। আল্লাহ বলেন, إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْتًا ‘মুমিনদের উপরে ‘সালাত’ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে।’ (সূরা নিসা ৪/১০৩)। উম্মু ফারওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল সর্বাধিক উত্তম? তিনি উত্তরে বলেন, আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করা। (সুনানে আবুদাঊদ: ৪২৬, ১/৬১ পৃঃ; মিশকাত হা/৬০৭, সালাত আগে ভাগে পড়া’ অনুচ্ছেদ-২; দারাকুৎনী হা/৯৫৬-৫৭)।

◾সালাতের আওয়াল ওয়াক্ত কখন হয় এবং সাধারণ মানুষ কিভাবে আওয়াল ওয়াক্ত নির্ধারণ করবে?
____________________________________
প্রত্যেক সালাতের ওয়াক্ত আরম্ভ হলেই আউয়াল ওয়াক্ত শুরু হয়, যা মোট সময়ের প্রথম অর্ধাংশ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সহীহ মুসলিম, হা/৬১৩-৬১৪; আবু দাঊদ, হা/৩৯৩, ৩৯৫, ৪১৭; তিরমিযী, হা/১৪৯)। মিরাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হওয়ার পরের দিন যোহরের সময় জিব্রীল (আঃ) এসে প্রথম দিন আউয়াল ওয়াক্তে ও পরের দিন আখেরী ওয়াক্তে নিজ ইমামতিতে পবিত্র কা‘বা চত্বরে মাক্বামে ইবরাহীমের পাশে দাঁড়িয়ে দু’দিনে পাঁচ পাঁচ দশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে রাসূল (ﷺ) কে সালাতের পছন্দনীয় ‘সময়কাল ঐ দুই সময়ের মধ্যে’ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৩; আবুদাঊদ হা/৩৯৩; তিরমিযী হা/১৪৯)। এ জন্য আউওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বোত্তম আমল হিসাবে অভিহিত করেছেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫২৭, ২৭৮২; আবূ দাঊদ, হা/৪২৬; তিরমিযী, হা/১৭০)। এছাড়া যদি লোকেরা সালাত দেরী করে পড়ে অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে না পড়ে, তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাকী সালাত আদায় করে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৮; আবূ দাঊদ, হা/৪৩১)। এ থেকে আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করার গুরুত্ব প্রমাণিত হয়। সে জন্য সালাতের সময়সূচির তালিকা লক্ষ্য করবেন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘জোহরের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয় যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে (মাথার উপর থেকে পশ্চিম দিকে) হেলে পড়ে এবং মানুষের ছায়া তার দৈর্ঘের সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। আর আসরের সালাতের সময় না হওয়া পর্যন্ত তা থাকে। আসরের সালাতের সময় থাকে সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালী বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত। মাগরিবের সালাতের সময় থাকে সূর্যাস্তের পর সন্ধ্যা গোধূলি বা পশ্চিম দিগন্তে উদ্ভাসিত লালিমা অন্তর্হিত না হওয়া পর্যন্ত। এশার সালাতের সময় থাকে অর্ধরাত্রি অর্থাৎ মধ্যরাত পর্যন্ত। আর ফজরের সালাতের সময় শুরু হয় ফজর বা উষার উদয় থেকে শুরু করে সূর্যোদয় পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম, হা/৬১২; আবূ দাঊদ, হা/৩৯৬; নাসাঈ, হা/৫২২)।

◾আওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করা উত্তম নাকি জামাআতে আদায় করা উত্তম?
_______________________________________
সালাতের প্রথম ওয়াক্তে একাকী সালাত আদায় করা উত্তম নাকি জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা উত্তম কুরআন-সুন্নাহর প্রতি লক্ষ করলে বুঝা যায় উভয় মতামতের পক্ষেই শরীয়তের স্পষ্ট দলিল রয়েছে কোনটির চেয়ে কোনটির গুরুত্ব কম নয়, এজন্য আহালুল ইমামগনের মধ্যেও এটি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। তবে জমহুর ওলামাদের বিশুদ্ধ মতে আওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব এবং পুরুষদের জন্য ফরয সালাত জামা‘আতের সাথে মসজিদে আদায় করা ওয়াজিব (তবে তা অবশ্যই ওয়াক্তের বাইরে গিয়ে নয়)। বিনা ওজরে জামাআত ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। তবে জামাআতের সময় যদি একেবারে শেষ ওয়াক্তে নিয়ে যাওয়া হয় সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা (এটি নিয়ে পোস্টের শেষে আলোচনা রয়েছে)। পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে জামা‘আতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা এসেছে। এমনকি যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর সম্মুখে থাকা অবস্থায়ও জামা‘আতে সালাত আদায় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। (সূরা নিসা ৪/১০২) মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَأَقِيْمُوا الصَّلاَةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ- ‘তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর।’ (সূরা বাক্বারাহ ২/৪৩)। এখানে আল্লাহ তা‘আলা রুকূ দ্বারা সালাত বুঝিয়েছেন। কারণ রুকূ সালাতের অন্যতম প্রধান রুকন। ‘রুকূকারীদের সাথে’ এ কথা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন যে, রুকূ একাকী হবে না। বরং রুকূকারীদের সাথে হতে হবে। আর এটি জামা‘আতে সালাত আদায় ব্যতীত সম্ভব নয়। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদী রুকূকারীদের সাথে রুকূ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, তোমরা মুমিনদের উত্তম ও সৎকর্মে তাদের সঙ্গী হয়ে যাও। তার মধ্যে বিশেষ ও পূর্ণাঙ্গ হলো সালাত। (তাফসীরে ইবনু কাছীর ১/২৪৫-২৪৬)। উসামা বিন যায়দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত: আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, আমি ঐসব লোকের কাছে যাবো যারা সলাতে হাযির হয় না এবং আমি তাদেরকে ঘরবাড়ীসহ জ্বালিয়ে দেব। সে সত্বার কসম যার হাতে আমার জীবন আবদ্ধ! যারা সলাতের জামা‘আতে অংশ গ্রহণ করে না তাদের কোন ব্যক্তি যদি জানে যে, মাসজিদে মাংস সহ হাড় অথবা (গাভী ও বকরীর) দু’টি ভাল খুর পাওয়া যাবে, তাহলে সে অবশ্যই ‘ইশার সলাতে উপস্থিত হয়ে যেত।(সহীহ বুখারী ৬৪৪, ২৪২০ মিশকাতুল মাসাবিহ,১০৫৩, সহিহ তারগিব ৪৩০)।
.
হাদীসে জামা‘আতে সালাত আদায় না করা অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া, গাফেল হওয়া ও মুনাফিকদের আলামত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।(সহীহ মুসলিম হা/৮৬৫: মিশকাত হা/১৩৭০)। মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আযান শোনা সত্ত্বেও মসজিদে জামাআতে এসে নামায আদায় করে না, কোন ওজর না থাকলে সে ব্যক্তির নামায কবুল হয় না।” (আবূদাঊদ, সুনান ৫৫১, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৬৩০০)। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘আযান দেয়া ও প্রথম কাতারের ফযীলত সম্পর্কে মানুষ যদি জানত, আর তা পেতে লটারী করা ছাড়া যদি কোন উপায় না থাকত, তাহলে তারা লটারীর সাহায্য নিত। আর যদি তারা প্রথম ওয়াক্তে যোহরের সালাত আদায়ের ফযীলত সম্পর্কে জানত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর এশা ও ফজরের সালাত [জামা‘আতে] আদায়ের কী ফযীলত তা যদি তারা জানত, তাহলে এ দু’সালাতে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হত। (সহীহ বুখারী, হা/৬১৫; সহীহ মুসলিম, হা/৪৩৭) রাসূল (ﷺ) আরো বলেন, “১ জনের ইমামতিতে ২ জনের নামায আল্লাহর নিকট একাকী ৪ জনের নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর, ১ জনের ইমামতিতে ৪ জনের নামায আল্লাহর নিকট একাকী ৮ জনের নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর এবং ১ জনের ইমামতিতে ৮ জনের নামায আল্লাহর নিকট একাকী ১০০ জনের নামায অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।” (বায়হাকী, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম,জামে ৩৮৩৬)।
.
সুতরাং কোথাও যদি ১০ মিনিট পূর্বে শুরু না হয়ে ১০ মিনিট পরেও যদি জামাআত শুরু হয় তখনও একাকী আওয়াল ওয়াক্তে পড়ার চেয়ে তাদের সাথে জামাআতে সালাত পড়াই উত্তম এবং ওয়াজিব। এমনকি রাতের এশার সালাত কিছুটা দেরীতে আদায় করা মুস্তাহাব হলেও একাকী আওয়াল ওয়াক্তে বা দেরি করে না পড়ে জামাআতে পড়া উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘একাকী সালাত আদায় করা অপেক্ষা জামাআতের সাথে সালাত আদায় করলে ২৭ গুণ নেকী বেশি হয়।’ (সহীহ বুখারী, হা/৬৪৫;সহীহ মুসলিম, হা/৬৫০; মিশকাত, হা/১০৫২)। মহানবী (ﷺ) বলেন, “নামাযে সবচেয়ে সওয়াব বেশী তার, যাকে (মসজিদের পথে) হাঁটতে হয় বেশী। আর যে ব্যক্তি অপেক্ষা করে ইমাম ও জামাআতের সাথে পড়ে সে ব্যক্তির সওয়াব তার থেকে বেশী, যে (একাকী) সালাত পড়ে নিয়ে ঘুমিয়ে যায়।” (সহীহ বুখারী ৬৫১)।
.
এখন সমাজ, রাষ্ট্র, ইমাম যদি খুব ঢিলে হন যেমনটা বর্তমান বাংলাদেশে অধিকাংশ এলাকায় কুরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করে প্রচলিত মাযহাবের দোহাই দিয়ে বিশেষ করে যোহর, আসর এবং ফজরের সালাত উপযুক্ত সময়ে জামাআত না করে ওয়াক্তের শেষ সময়ে জামাআত করে থাকেন। যা শরীয়তের সাথে ঠাট্টা মশকরা ছাড়া কিছুই নয়। সুতরাং এমন যদি নিয়মিত হয় অর্থাৎ সালাতের শেষ ওয়াক্তে অর্থাৎ পরবর্তী ওয়াক্তের কিছু সময় পূর্বে জামাআত করা হয় তাহলে মুসল্লিদের কর্তব্য হলো আউয়াল ওয়াক্তে একাকী হলেও সালাত আদায় করা। কেননা নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনের উপর ফরজ করা হয়েছে। (সূরা নুসা: ৪/১০২)। তাই মুসুল্লি একাকী সালাত আদায় করে পরবর্তীতে সে চাইলে ইমামের সাথে জামা‘আতে শামিল হতে পারবে। তাহলে একইসাথে আউওয়াল ওয়াক্ত ও জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলত লাভ করবে। (শারহুন নববী ‘আলা সহীহ মুসলিম, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৪৭)। এই মর্মে হাদীসে স্পষ্ট দলিল রয়েছে তাছাড়া সাহবী মুআয ইবনু জাবাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ফরয সালাত আদায় করতেন। তারপর নিজ সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদের সালাতের ইমামতি করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৭০১, ৭১১; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৫; মিশকাত, হা/৮৩৩)। এ সালাত তার জন্য নফল হিসাবে গণ্য হতো। (দারাকুৎনী, হা/১০৮৬; বায়হাক্বী, হা/৫৫৬; মিশকাত, হা/১১৫১)।

উম্মু ফারওয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কোন আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন,সালাতকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা।’ (আবু দাঊদ, হা/৪২৬, তিরমিযী, হা/১৭০)। এমনকি ওয়াক্ত অনুযায়ী সালাত আদায় করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোরও অঙ্গীকার করেছেন। আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি, আর একটি অঙ্গীকার করেছি যে, নিশ্চয় যে ব্যক্তি সেগুলোকে ওয়াক্ত অনুযায়ী যথাযথভাবে আদায় করে উপস্থিত হবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে সেগুলোকে সংরক্ষণ করবে না, তার জন্য আমার কোন অঙ্গীকার নেই। (আবূ দাঊদ, হা/৪৩০, সনদ হাসান)। উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীস উপমহাদেশীয় ছাপা আবু দাঊদে নেই। কোন রাখালও যদি ওয়াক্ত অনুযায়ী একাকী সালাত আদায় করে, তবুও আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান। (আবু দাঊদ, হা/১২০৩, ১/১৭০ পৃ., সনদ সহীহ; মিশকাত, হা/৬৬৫, পৃ. ৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৬১৪, ২/২০২ পৃ.)।

অপর হাদীসে এসেছে, আবু যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, আমীরগণ যখন সালাতের ওয়াক্ত থেকে সরিয়ে সালাত দেরী করে পড়বে বা সালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে মেরে ফেলবে, তখন তুমি কী করবে? আমি তখন বললাম, আপনি আমাকে কী করতে বলছেন? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, صَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ نَافِلَةٌ ‘সলাতের সময়েই সালাত আদায় করে নাও। অতঃপর তাদের সাথে যদি আদায় করতে পার, তাহলে আদায় কর। তবে তা তোমার জন্য নফল হবে।’ (সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৮; মিশকাত, হা/৬০০)। উক্ত হাদীস প্রমাণ করে কোথাও জামা‘আত দেরীতে হওয়ার কারণে কেউ যদি একাকী আউওয়াল ওয়াক্তে সালাত পড়ে নেয়, তাহলে জামা‘আতের নেকী পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। অতএব দেরী করে নয়, বরং ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে সালাত আদায় করা অপরিহার্য বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজর ও আসর সালাতের ব্যাপারে খুব কঠোরতা আরোপ করেছেন। জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা একদা রাসূল (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের রবকে অচিরেই দেখতে পাবে, যেভাবে তোমরা এই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমাদের কোন কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে না। সুতরাং সূর্যোদয়ের পূর্বের সালাত ও সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বের সালাতের প্রতি যত্নশীল হও। অতঃপর তিনি এই আয়াত পড়েন, ‘সুতরাং তোমরা প্রতিপালকের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্য ডুবার পরে।’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৫৪, ১/৭৮ পৃ., (ইফাবা হা/৫২৭, ২/১৭ পৃ.); আবূ দাঊদ, হা/৪২৮, ১/৬১ পৃ.)। এমনকি এ দু’ ওয়াক্ত সালাতেই মালায়িকাহ্’র দু’টি দল একত্রিত হন। আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কাছে রাতে একদল ও দিনে একদল মালায়িকাহ্ আসতে থাকেন। তারা ফাজর ও ‘আসরের ওয়াক্তে মিলিত হন। যারা তোমাদের কাছে থাকেন তারা আকাশে উঠে গেলে আল্লাহ তা’আলা তাদের কাছে (বান্দার) অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, যদিও তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক অবগত। বলেন, তোমরা আমার বান্দাদেরকে কী অবস্থায় ছেড়ে এসেছো? উত্তরে মালায়িকাহ্ বলেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার বান্দাদেরকে সলাত আদায়ে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। আর যে সময় আমরা তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছি তখনও তারা সালাত আদায় করছিল। (সহীহ: বুখারী ৫৫৫, মুসলিম ৬৩২, নাসায়ী ৪৮৫, মালিক ১৮০/৫৯০, আহমাদ ১০৩০৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৭৩৭, সহীহ আল জামি‘ ৮০১৯। মিশকাতুল মাসাবিহ,৬২৬)।
.
পরিশেষে, বিখ্যাত সাহাবীর একটি বর্ণনা পেশ করে আলোচনা শেষ করতে চাই। আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, অচিরেই তোমাদের উপর এমন আমীর হবে যারা সালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেবে এবং এর সময়কে এমনভাবে গলা চেপে ধরবে যে, পূর্ব দিকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটবে (সূর্য বেশি হলুদ হবে)। সুতরাং তোমরা যদি এটা দেখ তবে তোমাদের ঘরে সালাত আদায় করবে। অতঃপর তাদের সাথে (সালাত) আদায় করবে নফল হিসাবে। (মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, হা/৭৬৭৩; সনদ সহীহ)। পরিশেষে মহান আল্লাহ সকল তাওহীদ প্রিয় দ্বীনি মুসলিম নর-নারীকে যথাসময়ে সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।