অপবিত্র ব্যক্তি ও ঋতুবতী মহিলার কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ, তাহলিল পাঠ, হাদীস, তাফসীর তথা ইসলামী বই-পুস্তক পড়ার বিধান

প্রশ্ন: অপবিত্র ব্যক্তি ও ঋতুবতী মহিলা কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ, তাহলিল পাঠ, হাদীস, তাফসীর তথা ইসলামী বই-পুস্তক পড়তে পারবে কি? কেউ বলেন পড়তে পারবে আবার কেউ বলেন পারবেনা। কোনটি সঠিক?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে কিনা যদিও এই মাসালায় মতানৈক্য রয়েছে তবে বিশুদ্ধ কথা হল অপবিত্র ব্যক্তি ও ঋতুবতী মহিলা কুরআন স্পর্শ না করে যিকির হিসাবে মুখস্থ বা মোবাইল,কম্পিউটারে পড়তে পারে।এবং কুরআনের আয়াত ও অনুবাদ সম্বলিত অন্যান্য ইসলামী গ্রন্থ, হাদীস ও তাফসীর গ্রন্থ, সাধারণ যিকির-আযকার ও দু‘আ-দরূদের বই-পুস্তকসমূহ স্পর্শ করতে ও পড়তে পারে। সাথে সাথে সকল প্রকার তাসবীহ, তাহলীল ও তাকবীর পাঠ করতে পারে। তবে সর্বদা পবিত্র ও ওযু অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করাই উত্তম। (আবু দাঊদ, হা/১৭, ১/৪ পৃ. সিলসিলা সহীহাহ, হা/৮৩৪; ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ২৬ তম খণ্ড, পৃ. ৯৯)।
.
ঋতুবতী মহিলা কুরআন তেলাওয়াত করতে পারবে না মর্মে স্পষ্ট কোন সহীহ দলীল নেই। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন, ليس في منع الحائض من القراءة نصوص صريحة صحيحة ‘ঋতুবতী নারীদের কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না মর্মে কোন স্পষ্ট কোন সহীহ দলীল নেই।’ (ফাতাওয়াউল ইসলাম সুওয়াল ওয়া জাওয়াব, প্রশ্ন নং-২৫৬৪)। ঋতুবতী মহিলাগণের কুরআন তেলাওয়াত করা হারাম, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত পবিত্রতা অর্জন না করবে’ মর্মে বক্তব্যটি শক্তিশালী নয়। কারণ এমর্মে বর্ণিত দলীলগুলো যঈফ। (যঈফ তিরমিযী, হা/১৩১; মিশকাত, হা/৪৬১; যঈফ ইবনু মাজাহ, হা/৫৯৪; মিশকাত, হা/৪৬০)।
.
তাছাড়া এটা সর্বজন বিদিত যে,রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে মহিলা সাহাবীদের হায়েয আসত কিন্তু তাদেরকে কুরআন তেলাওয়াত করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে এরকম কোন প্রমাণ নেই। যেমন: যিকির আযকার ও দু‘আ থেকে নিষেধ করা হয়নি, তেমনি কুরআন তিলাওয়াত থেকেও নিষেধ করা হয়নি। বরং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যামানায় ঋতুবতী মহিলাগণ ঈদের খুৎবা ও দু‘আয় শরীক হতেন। উম্মু আত্বিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুই ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশিন মহিলাদেরকে ঈদের মাঠে বের করার জন্য আমাদের আদেশ করা হয়েছে। তবে ঋতুবতী মহিলারা মুছল্লা থেকে পৃথক থাকবে এবং মুসলিমদের জামাআতে ও দু‘আতে শরীক হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৫১সহীহ মুসলিম, হা/৮৯০; মিশকাত, হা/১৪৩১]।
.
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি ঋতুবতী হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ ছাড়া হজ্জের বাকী সব অনুষ্ঠান পালন করার জন্য আমাকে নির্দেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/২৯৪; সহীহ মুসলিম, হা/১২১১; মিশকাত, হা/২৫৭২)।
.
ইবরাহীম নাখঈ বলেন, ঋতুবতী মহিলার কুরআনের আয়াত পড়াতে কোনো দোষ নেই। [সহীহ বুখারী, পবিত্রতা অধ্যায়]।

ইবনু আব্বাস নাপাক ব্যক্তির জন্য কুরআন পড়াকে দোষের কিছু মনে করতেন না।(সহীহ বুখারী, পবিত্রতা অধ্যায়)। তাছাড়া অপবিত্র অবস্থায় যে কুরআন স্পর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছে,তা হলো মূল কুরআন। [মুগনী শারহুল কাবীর, ২/৭৫]।

উল্লেখ্য যে, নাপাক অবস্থা দু’প্রকার। যথা:(ক) পেশাব-পায়খানা করার কারণে নাপাক হওয়া (খ) স্ত্রী সহবাস বা অন্য কোন উপায়ে বীর্যপাত হওয়ার কারণে নাপাক হওয়া। প্রথম অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা ছাড়াই পড়া যায়।(সহীহ বুখারী, হা/২৮৩; মিশকাত, হা/৪৫১)। তবে উত্তম হল ওযু করে তেলাওয়াত করা। (আবু দাঊদ, হা/১৭, ১/৪ পৃঃ; সিলসিলা সহীহাহ হা/৮৩৪; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউল ফাতাওয়া, ২৬তম খণ্ড, পৃ. ৯৯; সুবুলুস সালাম, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৭১; ইবনু কাছীর, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৫৪৪)। দ্বিতীয় অবস্থায় কুরআন মাজীদ স্পর্শ করে তেলাওয়াত করা হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, পবিত্রতা অর্জনকারী ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না।’ (সূরা আল-ওয়াক্বি‘আহ: ৭৯)। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামানবাসীদের জন্য আমর ইবনু হাযম (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে লিখে পাঠিয়েছিলেন, لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ ‘পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে।’ (মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৬৮০; দারাকুৎনী, হা/৪৪৯; শু‘আবুল ঈমান, হা/২১১১ মিশকাত, হা/৪৬৫; ইরওয়াউল গালীল, হা/১২২, সনদ সহীহ; তামামুল মিন্নাহ, পৃ. ১০৭)। এছাড়া হায়েয অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করাতেও কোন সমস্যা নেই। (মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৬১৪, সনদ সহীহ)। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে দ্বীন বুঝার তওফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।