দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা সকল মুসলিম নারী-পুরুষ সবার জন্য আবশ্যক। একজন মানুষের দুনিয়াতে চলার জন্য ও মহান আল্লাহর ইবাদত করার জন্য যেসকল জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য সেগুলি হ’ল- ঈমান ও তা বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ, বিশুদ্ধ ও বাতিল আক্বীদা, তাওহীদ-শিরক, হালাল-হারাম, সালাত-সিয়াম, হজ্জ-যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ফরয ইবাদত পালনের নিয়ম-পদ্ধতি সমূহ (আল-ফাক্বীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ হা/১৬৩)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা ফরয’ (ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮)। উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম বাগাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে ইবাদত পালন করা শরীআ বান্দার উপর আবশ্যক করে দিয়েছে সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা বান্দার উপর ফরজ। যেমন: যাকাত প্রসঙ্গে জ্ঞান অর্জন করা যদি নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, হজ্জ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা ফরয, হজ্জে যাওয়া সামর্থ্য হলে। (শারহুস সুন্নাহ, খন্ড:১ পৃষ্ঠা: ২৯০)।
.
অতএব উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে একথা পরিস্কার যে,যিনি হজ্ব করার ইচ্ছা করেন হজ্ব করার পদ্ধতি শিখে নেয়াতাঁর উপর ফরজ। অন্ততঃপক্ষে সুন্নাহর অনুসারী নির্ভরযোগ্য কোন একজন আলেমের সহজ সরল ছোট্ট একটি কিতাব সাথে রাখা এবং সে কিতাব অনুযায়ী আমলগুলো সম্পন্ন করা। এ ধরনের কিতাবগুলোর মধ্যে রয়েছে:
(১). বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর “আত তাহকীক ওয়াল ঈযাহ লি কাছিরিন মিন মাসায়িলিল হাজ্ব ওয়াল উমরা”
(২). শাইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-এর “মানাসিকুল হাজ্ব ওয়াল উমরাহ। এই কিতাবগুলো হজ্জ উমরাহর বিধি বিধান জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
.
হজ্জ উমরাহ সংক্রান্ত ওক্ত বইগুলো পড়তে গিয়ে যদি কোন বিষয় বুঝতে অসুবিধা হলে আপনার জন্য করনীয় হলে সহীহ আক্বীদার কোনো আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করা। এবং সম্ভব হলে বিশুদ্ধ আক্বীদা মানহাজের কোন একজন আলেম বা তালিবে ইলমের সঙ্গে হজ্ব যাওয়া।যেন সে আলেম বা তালেবে ইলম আগে থেকেই আপনাকে বিধিবিধানগুলো শিখিয়ে দিতে পারেন। যে কাফেলাগুলোর সাথে কোন দায়ী বা তালিবে ইলম হজ্ব করে থাকেন সেগুলোর অনুসন্ধান করে সে রকম কোন কাফেলার সাথে হজ্বে যাওয়া।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে ধরনের একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন:
.
আল্লাহ তাআলা তাঁর কালামে পাকে এই প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছেন এই প্রশ্নের ব্যাপারে আমারও সেই জবাব“তোমরা না জানলে আলেমগণকে জিজ্ঞেস কর।”[সূরা নাহল, আয়াত: ৪৩] যে ব্যক্তি কোন ইবাদতের বিধিবিধান জানেন না তার কর্তব্য হলো আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা; যাতে করে তিনি সুস্পষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহর ইবাদত করতে পারেন। কারণ ইবাদত কবুলের শর্ত হচ্ছে- আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শেরপূর্ণ অনুসরণ। রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে কোন বাচনিক ইবাদত বা কর্মকেন্দ্রিক ইবাদত পালন করতেন তা জানতে হবে। তা না জানলে তাঁকে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। তাই আমি এ প্রশ্নকারীকে বলব: আপনি যখনহজ্ব করতে চান অথচ হজ্বের বিধিবিধান আপনার জানা নেইএমতাবস্থায় আপনার উপর ফরজ এ সম্পর্কে আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা। আমি এ ব্যাপারেও তাগিদ দিচ্ছি যারা হজ্বে যেতে চান তারা যেন কোন আলেমের সঙ্গে বা তালিবে ইলমের সঙ্গে হজ্বে যান; যে আলেম বা তালিবে ইলম হজ্বের সাথে সংশ্লিষ্ট মাসয়ালাগুলো জানেন। যাতে করে তারা সে আলেমের নির্দেশনা মোতাবেক হজ্ব আদায় করতে পারেন।(উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল,২২/৫০ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৯৩৩৭) আশা করি বুঝতে পেরেছেন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।