মহিলাদের জন্য স্বর্ণ বা রৌপ্য ছাড়া অন্য কোন ধাতব আংটি পরা কি জায়েজ

এই উম্মতের মহিলাদের জন্য হীরা বা অন্যান্য মূল্যবান পাথর যেমন: সোনা, রুপা পান্নাসহ ইত্যাদি আংটি পরা জায়েয। এমনকি নারীরা চাইলে রুবি এবং কার্নেলিয়ান অথবা লোহার আংটি ব্যবহার করতে পারে। কারণ মূলনীতিটি হল যে, এগুলো জায়েজ কেননা নারীদের জন্য এর কোনওটি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ মর্মে কুরআন হাদীসে বিশুদ্ধ কোন দলিল নেই। (ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৪২৮৬৫)
.
যারা বলেন নারীদের জন্য লোহার আংটি ব্যবহার করা মাখরুহ তাদের বক্তব্য সঠিক নয়।কারন রাসূল (ﷺ) জনৈক ব্যক্তিকে মোহরানা বাবদ লোহার আংটি হলেও নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। অতঃপর সেটাও না পাওয়ায় কুরআন শিক্ষা দেওয়ার শর্তে বিবাহ পড়িয়ে দেন। (সহীহ বুখারী হা/৫১৩৫; সহীহ মুসলিম হা/ ১৪২৫; মিশকাত হা/৩২০২)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসের ভিত্তিতে লোহার আংটি পরিধান করা বৈধ। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪২৫)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ,শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, মহিলাদের জন্য স্বর্ণের, রৌপ্যের ও মূল্যবান পাথরের অলংকার বৈধ; যে ধরণের অলংকার পরার রীতি নারীদের মধ্যে রয়েছে। যেমন: চুড়ি, নূপুর, কানের দুল, আংটি এবং নারীরা তাদের চেহারায়, গলায়, হাতে, পায়ে, কানে ইত্যাদিতে যে সব অলংকার পরে। পক্ষান্তরে নারীদের মাঝে যে ধরণের অলংকার পরার রীতি নেই; যেমন বেল্ট ও এ জাতীয় পুরুষদের পরিধেয় অলংকার; সেগুলো পরা হারাম। যেমনিভাবে কোন পুরুষের জন্য নারীদের অলংকার পরা হারাম। (ইবনে কুদামাহ আল মুগনি খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৩২৪-৩২৫))
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, আমাদের সঙ্গীরা বলেছেন: মহিলাদের জন্য সব ধরনের গহনা ব্যবহার করা জায়েজ; এটা শুধুমাত্র ততক্ষণ পর্যন্ত জায়েয, যতক্ষণ না কোনো সুস্পষ্ট বাড়াবাড়ি জড়িত থাকে। (ইমাম নববী আল-মাজমু’,খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ৫২৩)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে অলংকার পরার জন্য মেয়ের কান ফোঁড়া বা নাক ফোঁড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেন: সঠিক মতানুযায়ী কান ফোঁড়াতে কোন আপত্তি নেই। যেহেতু বৈধ অলংকার পরার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি হচ্ছে মাধ্যম। এই মর্মে বর্ণনা সাব্যস্ত হয়েছে যে, নারী সাহাবীদের কানে পরিধেয় কানের দুল ছিল। আর ফোঁড়ানোর কষ্টটা নিতান্ত সামান্য কষ্ট। যদি ছোট বয়সে ফোঁড়ানো হয় তাহলে অতি দ্রুত শুকিয়ে যায়।

নাক ফোঁড়া: এ ব্যাপারে আলেমদের কোন বক্তব্য আমার মনে পড়ছে না। তবে এতে আমাদের দৃষ্টিতে সৃষ্টিগত অবয়বকে বিকৃতকরণ রয়েছে। অন্যদের দৃষ্টিতে হয়তো এমনটি নাও হতে পারে। যদি কোন নারী এমন কোন দেশে থাকেন যেখানে নাকে অলংকার পরাকে সৌন্দর্য হিসেবে গণ্য করা হয়; তাহলে নাকে ফুল পরার জন্য নাক ফোঁড়াতে কোন আপত্তি নেই। (উসাইমীন মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল খন্ড: ১১/প্রশ্ন নং- ৬৯) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।