ভূমিকা: বিতর অর্থ বেজোড়। বিতর সালাত সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। যা এশার ফরয সালাতের পর হতে ফজর পর্যন্ত সুন্নাত ও নফল সালাত সমূহের শেষে আদায় করতে হয়। যদি কেউ বিতর পড়তে ভুলে যায় অথবা বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, তাহলে স্মরণ হলে কিংবা রাতে বা সকালে ঘুম হতে জেগে উঠার পরে সুযোগ মত তা আদায় করবে। অন্যান্য সুন্নাত-নফলের ন্যায় বিতরের ক্বাযাও আদায় করা যাবে। এক্ষেত্রে দিনে কাযা পড়লে জোড় পড়তে হবে। অর্থাৎ যিনি এক রাকাআতে অভ্যস্ত তিনি দুই রাআকাত, যিনি তিন রাকাআতে অভ্যস্ত তিনি দুই সালামে চার রাকাআত পড়বেন। বিতর সালাত এক, তিন, পাঁচ, সাত ও নয়, এগারো, তেরো রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়। তিন রাকআত বিতর পড়লে দুটি নিয়মে পড়তে হবে; হয় এক তাশাহহুদে একই সাথে তিন রাকআত আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে দুই রাকআত পড়ার পর তাশাহুদ পড়ার জন্য বসা যাবে না। আবার আরেকটি নিয়ম হচ্ছে, দুই রাকাআত পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। তারপর আরো এক রাকাআত পড়তে হবে।
.
বিতর সালাতে কুনুত পড়া মুস্তাহাব। তবে মাঝে মধ্যে না পড়লেও কিংবা পড়তে ভুলে গেলেও সালাতের কোন সমস্যা হবেনা ইনশাআল্লাহ। বিতিরের কুনুত রুকুর আগে বা পরে পড়া যাবে। তবে অধিক উত্তম হচ্ছে রুকুর পরে অর্থাৎ রুকু করে দাঁড়িয়ে তারপর কুনুত পড়বেন তারপর সোজা সিজদায় চলে যাবেন। কুনুত পড়ার সময় হাত উত্তোলন করা জায়েজ, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে প্রমান রয়েছে। আজ আমরা বিতিরের জন্য সুন্নাহ সম্মত একটি দু’আ শিখবো ইনশাআল্লাহ। হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রাহিমাহুল্লাহ) প্রখ্যাত সাহাবী হাসান বিন আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে সংকলন করেছেন। হাসান বিন আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন; রাসূলুল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কিছু বাণী শিখিয়ে দিয়েছেন সেগুলো আমি বিতিরের নামায দোয়ায়ে কুনুত হিসেবে পড়ি:
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ ، إِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইহদিনী ফীমান হাদাইতা ওয়া’আ-ফিনী ফীমান আ-ফাইতা ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইতা ওয়া বা-রিক লী ফীমা আ’তাইতা ওয়াক্বিনী শাররা মা ক্বাদাইতা, ইন্নাকা তাক্বদী ওয়ালা ইউক্দা ‘আলাইকা ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মান ওয়ালাইতা ওয়ালা ইয়াইয্যু মান আ-দাইতা তাবা-রাকতা রব্বানা ওয়া তা’আলাইতা”। (আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ: হে আল্লাহ আপনি যাদেরকে হেদায়েত দান করেছেন, আমাকে তাদের সাথে হেদায়েত করুন। আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছেন, আমাকেও তাদের সাথে নিরাপত্তা দান করুন। আপনি যাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের সাথে আমার দায়িত্বও গ্রহণ করুন। আপনি আমাকে যা কিছু দান করেছেন, তাতে বরকত দান করুন। আপনি যে (তাক্বদীর) নির্ধারণ করেছেন, তার অকল্যাণ থেকে আমাকে বাঁচান। কেননা আপনিই নির্ধারণ করেন, আপনার নির্ধারণের বিরুদ্ধে কোন আপত্তি নেই। নিশ্চয় আপনি যাকে নৈকট্য দান করেন, কেউ তাকে অপমানিত করতে পারে না। আপনি যার সাথে শত্রুতা করেন, সে সম্মানিত হতে পারে না। আপনার কল্যাণ অবারিত হোক এবং আপনার মর্যাদা সমুন্নত হোক। (আবু দাউদ হা/১৪২৫; তিরমিযী হা/৪৬৪, নাসায়ী হা/১৭৪৫, ইবনু মাজাহ্ হা/১১৭৮, মুসনাদে আহমাদ হা/১৭১৮, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১০৯৫; হাদীসটি সহীহ)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ
(আল্ল-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদাইত)
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি যাদেরকে হেদায়েত দান করেছেন, আমাকে তাদের সাথে হেদায়েত করুন।
.
وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ
(ওয়া আ-ফিনী ফীমান আ-ফাইত)
অর্থ: আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছেন, আমাকেও তাদের সাথে নিরাপত্তা দান করুন।
.
وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ ،
(ওয়াতা ওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত)
অর্থ: আপনি যাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের সাথে আমার দায়িত্বও গ্রহণ করুন।
.
وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ
(ওয়াবা-রিক লী ফীমা- আ‘ত্বাইত)
অর্থ: আপনি আমাকে যা কিছু দান করেছেন, তাতে বরকত দান করুন।
.
وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ ،
(ওয়াক্বিনী শাররা মা- ক্বদ্বইত)
অর্থ: আপনি (আমার ভাগ্যে ) যে (তাক্বদীর) নির্ধারণ করেছেন, তার অকল্যাণ থেকে আমাকে বাঁচান
.
إِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ ،
(ইন্নাকা তাক্বদ্বী ওয়ালা ইউক্বদা আলাইক)
অর্থ: কেননা আপনিই নির্ধারণ করেন, আপনার নির্ধারণের বিরুদ্ধে কোন আপত্তি নেই।
.
وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ ،
(ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মান ওয়ালাইত)
অর্থ: আর নিশ্চয় আপনি যাকে নৈকট্য দান করেন, কেউ তাকে অপমানিত করতে পারে না।
.
وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ ،
(ওয়ালা ইয়াইয্যু মান আ-দাইত)
অর্থ: আপনি যার সাথে শত্রুতা করেন, সে সম্মানিত হতে পারে না।
.
تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
(তাবা-রাকতা রব্বানা ওয়া তা’আলাইত) অর্থ: আপনার কল্যাণ অবারিত হোক এবং আপনার মর্যাদা সমুন্নত হোক।
.
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত সম্পূর্ণ দু’আটি বিভিন্ন সূত্রে সহীহ সনদে সাব্যস্ত হয়েছে। দু’আটি একটু বড় হলেও এর অর্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার। দু‘আটির অর্থের দিকে লক্ষ করলেই এর বিরাট গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়। যদিও দু’আটি একটু বড় হয়ে গেছে তবুও কয়েকদিন সময় নিয়ে বারবার পড়লে আশা করি মুখস্ত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং প্রত্যেকের উচিত বিতরের জন্য এই কুনুতটি মুখস্থ করা নেওয়া, এবং বিতির সালাতে পাঠ করা। দু’আটি পড়ার নিয়ম হচ্ছে, বিতিরের শেষ রাকআতে প্রথমে রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ পাঠ করে রুকু থেকে “সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ” বলে উঠে সোজা হয়ে প্রশান্তির সাথে দাঁড়াবেন এবং কান বা কাঁধ বরাবর দুই হাত উঠিয়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করবেন। তারপর বলবে- رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ ‘রব্বানা লাকাল হাম্দ’ বলবেন। অথবা বলবে- رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ ‘রব-বানা ওয়া লাকাল হাম্দু হাম্দান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি।’ তারপর হাত তুলে কিংবা হাত তোলা ছাড়া কুনুতের উপরোক্ত দু’আটি পাঠ করবেন সাথে অন্য দু’আও পড়তে পারেন। আর জামআতে ইমামের পিছনে পড়লেে মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলতে পারবেন।দু’আটি পাঠের সময় অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন।তারপর কুনুত শেষে আল্লাহু আকবর বলে সিজদায় চলে যাবেন। অতঃপর সিজদার তাসবিহ
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন। তারপর বৈঠকে তাশাহুদ দুরুদ এবং অন্যান্য দু’আ পড়ে সালাম ফিরাবেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।