গীবত যে জগন্য গুনাহের কাজটা আমরা প্রতিনিয়ত করছি

ওর মত আবুল আমি লাইফে একটাও দেখি নাই, ছেলেটাতো আস্ত একটা ফাউল, ওর টাক দেখসিশ? পুরাই সার্জার স্টেডিয়াম,  আমাদের ব্যাচে একটা মেয়ে আছে না? ওইযে খুব ঢং কইরা কথা বলে, এক বাপের এক পোলা তো , আহ্লাদ থাকবে না আবার? ব্যাটা অলওয়েজ দুই লাইন বেশি বোঝে, দ্যাখ না শালায় প্যান্টটা কেমনে পড়সে, হায়রে ডিজুস। উপরের কথাগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব অপরিচিত না, বরংঅহরহ ঠিক এইভাবেই আমরা গীবতের রিহার্সাল দেই। আমাদের অবস্থা এখন এমন যে দেখা যাবে প্রতি দশটা কথা বললে একটা তো গীবত হবেই। আর এগুলো আমরা এতটাই রিফ্লেক্সলি করি যে আমাদের দ্বারা যে গীবত হচ্ছে সেটা মাথায়ই থাকে না যদি না কেউ এসে সতর্ক করে দেয়। আর কে সতর্ক করবে? যখন সবাই একই দলের প্লেয়ার? সেদিন স্টুডেন্টদের ভাইবা পরীক্ষায় একটা বোর্ডে আমি ভাইবা নিচ্ছিলাম, একটা মেয়ের ভাইবা বাকি ছিল, মেয়েটা আরেকবোর্ডে তার ভাইবা শেষে আমার কাছে ভাইবা দেবে। বুঝতে পারছিলাম ওই বোর্ডে দেরী হবে, তো এক স্টাফ মামাকে বললাম – মামা ওই কর্নারের মেয়েটার ভাইবা শেষ হলে আমাকে ডাক দিয়েন ,আমি আমাদের রুমে বসছি। কিছুক্ষণ পর আমিই উঠে গিয়ে মামাকে জিজ্ঞেস করলাম মেয়েটার কি ওই বোর্ডে শেষ হয়েছে? স্টাফ মামা বললেন – ” ওই মোটা করে মেয়েটা না? “মনটা খুবই খারাপ লাগল, আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায় আমরা কত অসতর্ক। আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন “আমি নবী ( সাঃ) কে বললাম সাফিয়্যাহ (রাঃ) ব্যাপারে আপনার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে এরূপ অর্থাৎ তিনি খাটো। তিনি বললেনঃ তুমি এমন একটি কথা বলেছ যা সমূদ্রে মিশিয়ে দিলে তাতে সমূদ্রের রং পাল্টে যাবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন – আমি এক ব্যক্তিকে অঙ্গভঙ্গীর মাধ্যমে নকল করলাম, তিনি ( নবী করিম সাঃ) বললেন আমাকে এত এত সম্পদ দেওয়া হলেও আমি কারো অনুকরণ পছন্দ করব না ” ( সুনানে আবু দাউদ, ৪৮৭৫ নং হাদিস)। একটু ভেবে দেখেন, এই দুটো বিষয় আমাদের মধ্যে কতটা ব্যাপক। একটা হাদিস যার সারমর্ম মোটামুটি এমন – আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন গীবত করা ব্যাভিচার থেকেও ভয়ঙ্কর। সাহাবা (রাঃ) কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলেন কি কারণ, নবীজি জানালেন – ব্যাভিচারে লিপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন, কিন্তু যার গীবত করা হল সে ব্যক্তি ক্ষমা না করলে গীবতকারীর ক্ষমা নাই। ফেইসবুককে যদি গীবতের সরাইখানা বলি অত্তুক্তি হবে না, মানুষকে পঁচিয়ে একগাদা লাইক কুড়ানোর খুব ভাল মাধ্যম ফেইসবুক। এক শাকিব খান, অনন্ত জলীল আর তাহসানকে নিয়ে যত গীবত হয়েছে, তাদের নাম বিকৃত করে যত কবীরা গুনাহ হয়েছে সেটার হিসাব করাও মুশকিল হয়ে যাবে। আর মহিলাদের মধ্যে গীবত যেন মিষ্টি শুরা, শাশুড়ি দেবর ননসনিয়ে তারা কোন কমেন্ট করা কোন একটা দিন বাদ দিয়েছে সেটা গুগল করা লাগবে।অথচ আমরা বড়ই ঈমানওয়াল মুসলমান, নাস্তেকের টাইমলাইনে গালিগালাজ করে আমরা সহী ঈমানের পরিচয় দিতে এক সেকেন্ডও দেরী করি না। এক সিনিয়র এক তাবলীগি ভাই বলছিলেন, গীবত যে শুধু মুখের দ্বারা হয় তা কিন্তু না, গীবত তো চোখের ইশারায়ও হয়, কিছুটা টাশকি খেয়েছিলাম শুনে। বললেন ধর একটা লোক হেঁটে আসছে, তোমরা দুই বন্ধু বসে আছো, সেই লোকটা কোন কারণে হয়ত তোমাদের কাছে হাসির পাত্র। ওই লোকটাকে ইঙ্গীত করে চোখ টিপ দিলা বা চোখের ইঙ্গীতে বোঝালে” ওই যে আমাদের উনি আসছে ” এটাও গীবত ।আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত ” কেউ জিজ্ঞাসা করল হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ), গীবত কি? তিনি বললেন, তোমার ভাইয়ের প্রসঙ্গে তোমার এমন ধরণের কথাবার্তা বলা যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্নকারী জিজ্ঞেস করল – আমি যে কথাগুলো বলি তা যদি প্রকৃতপক্ষেই ওই ব্যক্তির মধ্যে থাকে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বললেন, তুমি যে কথাগুলো বল তা প্রকৃতই তার মধ্যে থাকলে তবেই তো তুমি তার গীবত করলে। তুমি যা বল তার মধ্যে সেগুলো যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে। (জামে আততিরমিজি, হাদিস নং ১৯৩৪)। যার গীবত করা হয় সে যদি ক্ষমা না করে তাহলে গীবতকারীর আমলনামা থেকে তার আমলনামায় নেক আমল দিয়ে দেওয়া হবে। যেন তেন আমল না, যে আমলগুলো আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। আপনার যে নামায খুব দরদ দিয়ে পড়েছেন, যে তিলাওয়াত খুব আবেগের সাথে করেছেন যেটা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে গেছে সেই আমলগুলোই যাবে, দুই মিনিটে চার রাকাত লামছাম নামায যেটা কবুল হওয়ার ব্যাপারে মাথার এক হাত ওপরেও ওঠে নাই সেগুলো ট্রান্সাফার হবে না। তাহলে একটু বসে হিসাব করেন, জীবনে আপনি কয় রাকাত নামাযের ব্যাপারে নিশ্চিৎ বলতে পারবেন কবুল করাতে পেরেছি? হাতে গোনা যে কয়টা কবুল হওয়া আমল আছে সেগুলোও যদি অপছন্দের মানুষের আমলনামায় গীবতের মাধ্যমে দিয়ে দেন তাহলে আপনার অপছন্দের মানুষকে ঘৃণা করলেন না উপকার করে দিলেন? আর যদি মনে করে আপনার কবুল হওয়া আমল সমূদ্রের ফেনা পরিমাণ, পৃথিবীর সমস্ত বালুকণা পরিমাণ যে সবাইকে দিয়ে সেরেও নিশ্চিন্তে জান্নাতে যেতে পারবেন তাইলে আর কিছু বলার নাই। সো , প্রতিটা কথা বলার সময় একটু ভেবে দেখা – গীবত হয়ে যাচ্ছে না তো? সতর্ক থাকতে হলে যেটা প্রয়োজন – ” কারো ব্যাপারেই NO COMMENTS PLEASE “সন্তানদেরকে ছোটবেলা থেকেই এমনভাবে ঘরে শিক্ষা দেওয়া জরুরি যেন গীবতের ব্যাপারে তারা খুবই সেন্সিটিভ হতে শেখে। আর গীবত হয়েই গেলে নিয়ম হচ্ছে যার গীবত হল তার কাছে গিয়ে মাফ চেয়ে বলা ” ভাই আমি আপনার ব্যাপারে অমুককে বলেছি যে আপনি সব জায়গায়ই দুই লাইন বেশি বোঝেন, আমার ভুল হইসে, প্লিজ আমাকে মাফ করে দেন “আছে সৎ সাহস এভাবে মাফ চাওয়ার? যদি না থাকে, No comments please ………কথায় কথায় কত গীবত করে ফেলি আল্লাহ্‌ আমাদের এই কঠিন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

***সৌজন্যেঃ যুবায়ের আহমেদ***

Share: