হিজরি নববর্ষের শুরুতে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের বিধান কি

প্রশ্ন: হিজরি নববর্ষের শুরুতে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের বিধান কি? এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: বাংলা নববর্ষ হোক আর আরবী নববর্ষ হোক কোন মুসলিম নিজ থেকে অন্য কাউকে শুভেচ্ছা জানাতে পারবেনা কারণ প্রথমতঃ অমুসলিম ইহুদি খ্রিস্টানদের অনুকরণে এসব দিবস পালিত হয়। অথচ ইসলামী শরীয়ত কোন দিবস পালন করা সমর্থন করে না। ইসলামী শরীয়ত যদি দিবস পালন করা সমর্থন করতো তাহলে ৩৬৫ দিনের কোন না কোন একটা দিনকে দিবস হিসেবে পালন করা হতো। ইসলামী ইতিহাস তালাশ করলে আপনি দেখতে পাবেন কত শত স্বরণীয় দিন আছে যেগুলো বর্তমান যুগের দিবসের তুলনায় শত শত গুণ বেশী মর্যাদাসম্পন্ন। অথচ নবী যুগ থেকে সাহাবাদের যুগ অর্থাৎ যে যুগকে সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ বলা হয় তাদের কোন যুগে এমন কোন ইতিহাস নেই যে, তারা দিবস পালন করেছেন। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আবূদাঊদ হা/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭ ‘পোষাক’ অধ্যায়)।
.
প্রিয় নবী রাসূল (ﷺ) আরো বলেন, যে আমাদের ব্যতীত অন্যদের রীতি- নীতির অনুসরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় (তিরমিযী হা/২৬৯৫, মিশকাত হা/৪৬৪৯)। অপর বর্ননায় রাসূল (ﷺ) স্বীয় উম্মতকে সাবধান করে বলেন, তোমরা ইহূদী-নাছারাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে হাতে হাতে ও বিঘ’তে বিঘ’তে। তারা যদি গুই সাপের গর্তে ঢুকে পড়ে, তোমরাও সেখানে ঢুকবে’(ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯৪,সনদ হাসান)
.
দ্বিতীয়তঃ এ ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) এবং তার সাহাবায়ে কেরাম বা তাবেঈন থেকে কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। সেজন্য নিজ থেকে কাউকে হিজরী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১/৪৫৪)
.
তবে কেউ যদি দো‘আ হিসাবে বলে যে,আগামী হিজরী বছর আপনার জন্য কল্যাণকর হৌক! তবে তার জওয়াবে তার মত বা তার থেকে উত্তম কিছু বলা যাবে। কিন্তু এজন্য খাবার তৈরি করা বা কোন অনুষ্ঠান করা যাবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ২৪/২৫৩)
.
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমিন (রহঃ) কে হিজরি বর্ষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের হুকুম ও শুভেচ্ছার প্রত্যুত্তরে কি বলতে হবে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। জবাবে শায়খ বলেন, তিনি বলেন:যদি কেউ আপনাকে শুভেচ্ছা জানায় তাহলে এর উত্তর দিন। কিন্তু আপনি নিজের থেকে কাউকে শুভেচ্ছা জানাবেন না। এ মাসয়ালায় এটাই সঠিক অভিমত। যদি কেউ আপনাকে বলে যে, ‘নববর্ষ উপলক্ষে আমরা আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি’। আপনি জবাবে বলুন: আল্লাহ্‌ আপনাকে কল্যাণ দিয়ে শুভ করুন এবং এ বছরটিকে কল্যাণ ও বরকতের বছরে পরিণত করুন। কিন্তু আপনি প্রথমে অন্যদেরকে শুভেচ্ছা জানাবেন না। কেননা সলফে সালেহিন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতেন এমন কোন বর্ণনা আছে মর্মে আমি জানি না। বরং আপনারা জেনে রাখুন সলফে সালেহিন ‘মহররম’ মাসকে নতুন বছরের প্রথম মাস হিসেবে গ্রহণ করেছেন উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এর খিলাফত আমলে এসে।[সূত্র: উনাইযাস্থ ‘দাওয়াত ও ইরশাদ অফিস কর্তৃক প্রকাশিত শাইখের ‘মাসিক সাক্ষাৎকারের সংকলন’, সিডি সংস্করণ-১, প্রশ্ন নং- ৮৩৫ ফাতাওয়া ইসলাম, প্রশ্ন নং ২১২৯০ উসাইমীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ১০/৯৩)।
.
শাইখ আব্দুল কারীম আল-খুদাইর হিজরি বর্ষের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন সম্পর্কে বলেন:বিভিন্ন উপলক্ষে যেমন- ঈদ উপলক্ষে মুসলমানের জন্য সাধারণ দোয়া করতে কোন আপত্তি নেই; যদি ব্যক্তি এ দোয়ার ভাষ্যকে বিশেষ কোন ইবাদত হিসেবে বিশ্বাস না করে। বিশেষতঃ এ ধরণের শুভেচ্ছার উদ্দেশ্য যদি হয় পারস্পরিক সম্প্রীতি এবং মুসলমানের চেহারায় আনন্দ ও খুশি ফুটিয়ে তোলা। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন: আমি প্রথমে কাউকে শুভেচ্ছা জানাই না। কেউ আমাকে শুভেচ্ছা জানালে আমি জবাব দেই। কেননা অভিবাদনের জবাব দেয়া ওয়াজিব। কিন্তু, প্রথমে শুভেচ্ছা জানানো: এটি কোন আদিষ্ট সুন্নত নয় এবং এ সম্পর্কে নিষেধও করা হয়নি।(ইসলামি জিজ্ঞেসা ও জবাব প্রশ্ন নং২১২৯০)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।