স্বামীর আনুগত্য ও খেদমতের আবশ্যিকতা

হে মুসলিম নারীগণ, তোমাদের স্বামীদের দেয়া ভালো কাজের আদেশ মান্য করা তোমাদের উপর ওয়াজিব। আবূ হুরাইরা বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “একজন নারী যদি তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং তার স্বামীর আদেশ মান্য করে, তবে সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে সেই দরজা দিয়েই প্রবেশ করতে পারবে।” [ইবনে হিব্বান হতে তার গ্রন্থ সহীহতে বর্ণিত]

আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “স্বামীর উপস্থিতিতে স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে একজন স্ত্রীর রোজা রাখা জায়েজ না। এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে স্ত্রী অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করাতে পারবে না।” [বুখারী ও মুসলিম]

আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু আরও বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “স্বামী যখন তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে আর স্ত্রী না আসে, আর স্বামী যদি রাতটা নারাজির মধ্য দিয়ে কাটায়, তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতা সেই স্ত্রীকে অভিশাপ দিতে থাকে।” [বুখারী ও মুসলিম]

বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, যে নারী কিনা তার স্বামী যখন বিছানায় ডাকে কিন্তু সে অস্বীকৃতি জানায়। তাঁর উপর আসমানের উপরে যিনি আছেন তিনি ততক্ষণ নারাজ হন যতক্ষণ না সে (স্বামী) তার উপর সন্তুষ্ট হয়।”

স্ত্রীর কাছে স্বামীর হক হলো সে তার ঘরের দেখাশোনার দায়িত্ব পরিপূর্ণ করবে এবং অনুমতি ব্যতিরেকে কোন দায়িত্ব থেকে সরে আসতে পারবে না। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “নারী হলো তার স্বামীর ঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তার দায়িত্বের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি / জিজ্ঞাসিত করা হবে। [বুখারী ও মুসলিম]

স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামীর আরেকটি হক হলো, যে সে তার ঘৃহের দায়িত্ব পরিপূর্ণ করবে এবং কোন নারী সেবিকা সেই দায়িত্ব পালনের জন্য রাখবে না (বুয়া রাখা), কারন তা স্বামী সন্তানের জন্য বড় ক্ষতির কারন হতে পারে।

“কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাযতে তারা হেফাযত করে” [সূরা আন নিসা ৩৪]।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “এই আয়াত কোন নির্দিষ্টকরণ ছাড়াই নারীদের জন্য তাদের স্বামীদেরকে সকল বিষয়ে মান্য করা যেমন, তার সেবা করা, তার সাথে ভ্রমণ করা, তাকে সাহায্য করা এবং অন্যান্য সকল কিছুকে ওয়াজিব করে, যেমনটা আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহতে ইঙ্গিত করা হয়েছে।” (মাজমু আল ফতোয়া, ৩২/২৬০-২৬১)

কিংবদন্তি আলিম, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ❝যারা স্বামীর সেবা করা ওয়াজিব মনে করেন, তাঁরা দলিল হিসেবে পেশ করেন— আল্লাহ যাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলেছেন, তাদের নিকটে এটাই ছিল ন্যায়সঙ্গত অধিকার। কিন্তু স্ত্রী আরাম আয়েশে থাকবে, আর স্বামী তার সেবা করবে, ঝাড়ু দেবে, শষ্য পিষে ময়দা বানাবে, (রুটির) ময়দা মেখে খামির করবে, কাপড় ধুয়ে দেবে, বিছানা গুছিয়ে দেবে, আর ঘরের দেখভাল করবে — এমন বিষয়াদি (ন্যায়সঙ্গত অধিকার নয়, বরং) নিকৃষ্ট বিষয়ের অন্তর্গত।

মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর নারীদের প্রাপ্য তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের ওপর পুরুষদের।” (সুরা বাকারা: ২২৮) তিনি আরও বলেছেন, “পুরুষরা নারীদের ওপর কর্তৃত্বশীল।” (সুরা নিসা: ৩৪)

অতএব যদি একজন স্ত্রী তার স্বামীর সেবা না করে, উল্টো তার স্বামী তার সেবক হিসেবে থাকে, তাহলে তখন খোদ স্ত্রী স্বামীর ওপর কর্তৃত্বশীল হয়ে যায়।❞

·
তিনি আরও বলেন, ❝নিশ্চয় স্ত্রীর জন্য খোরপোষের দায়িত্ব নেওয়া, তার পোশাকআশাকের ব্যাবস্থা করা, এবং তার জন্য আবাসের ব্যবস্থা করাকে আল্লাহ স্বামীর ওপর ওয়াজিব করেছেন — এর বদৌলতে যে, স্বামী আপন স্ত্রীকে উপভোগ করতে পারবে, স্ত্রী আপন স্বামীর সেবা করবে এবং প্রথাগতভাবে স্ত্রীদের জন্য যেসব কাজ করা বাঞ্ছনীয় সে তা পালন করবে। তদুপরি নিঃশর্ত চুক্তির বিষয়গুলো প্রথা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হয় (এটা একটা শরয়ি মূলনীতি)। আর প্রথাগতভাবে এটাই প্রমাণিত যে, স্ত্রী স্বামীর খেদমত করবে এবং বাড়ির ভেতরের কল্যাণকর বিষয়াদি সম্পন্ন করবে।❞

এছাড়াও তিনি বলেন, ❝আর নারী শরিফ ঘরের কেউ হোক, চাই নিচু ঘরের হোক, ধনী হোক, আর গরীব হোক, (স্বামীর সেবা করার ক্ষেত্রে) কোনো পার্থক্য করা ঠিক নয়। এই দেখুন, দুনিয়ার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত নারীকে—অর্থাৎ ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা—তিনি আপন স্বামীর খেদমত করতেন। তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামের কাছে খেদমতের ব্যাপারে অনুযোগ-অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু নবিজি তাঁর অভিযোগের বিষয় (খেদমতকে) দূরীভূত করেননি।❞ [যাদুল মাআদ, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৮৮-১৮৯]

·
উৎস: শাইখ সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ বিরচিত তাম্বিহাতুন আলা আহকামিন তাখতাসসু বিল মুমিনাত, পৃষ্ঠা: ৯৭-৯৯।

• https://abdurrahman.org/2014/09/29/the-obligation-of-a-woman-obeying-her-husband-shaykh-saalih-fawzaan/
.

অনুবাদক: মুহাইমিনুর রহমান স্নিগ্ধ
ফেইসবুক পেইজ: সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে।