নাজদি-আহলেহাদিস উলামাদের দৃষ্টিতে জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। সালাফি-বিদ্বেষী বিদাতি মাতুরিদি গোষ্ঠীর কতিপয় অসাধু লোক কিছু ফটো দেখিয়ে প্রচার করছে, নাজদি-আহলেহাদিস উলামাগণ জাতীয় দিবসকে জায়েজ করেছেন! বাংলাদেশের কোনো আহলেহাদিস দায়ি কী করলেন, তার জন্য নাজদি উলামাদের ওপর দোষ চাপিয়ে সালাফি মানহাজ থেকে মানুষদের বিতাড়িত করা কোনো রুচিশীল সভ্য মানুষের কাজ নয়। এজন্য আমরা বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে যুগশ্রেষ্ঠ কয়েকজন নাজদি-আহলেহাদিস বিদ্বানের ফতোয়া থেকে দেখাব, নাজদি-সালাফি উলামাগণ জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন করাকে হারাম ফতোয়া দিয়েছেন এবং বাস্তবেও বিষয়টি হারাম। আল্লাহু ওয়ালিয়্যুত তাওফিক।

·
১. সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাকিহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.) প্রদত্ত ফতোয়া—

السؤال: لقد تكلمتم عن أحكام الأعياد المبتدعة، فما رأيكم فيما يحدث في وقتنا الحاضر من اليوم الوطني، والاحتفال به، والتهنئة له، أفتونا جزاكم الله خيرًا؟
الجواب: هذا اليوم الوطني هو من التشبه بأعداء الله، الأيام الوطنية هو من التشبه، وقد وقع عن حسن نية، واجتهاد، ولكنه فيما يظهر لنا لا يشرع، وليس مما ينبغي، بل هو فيه تشبه لأعداء الله، وإن لم تقصد العبادة، أما لو قصد العبادة؛ يكون بدعة، لكن إذا لم تقصد العبادة، وإنما قصد بذلك التهانئ، وإظهار ما أنشأته الدولة، وما بذلته الدولة، فهذا يكون معتبرًا من جنس الأيام الأخرى التي يحدثها اليهود، والنصارى، وأشباههم للذكرى، أو لأسباب أخرى، فلا ينبغي التشبه بهم، لا في هذا، ولا في غيره.

প্রশ্ন: “আপনি বিদাতি উৎসবের বিধান নিয়ে কথা বলেছেন। আমাদের বর্তমান সময়ে উদ্ভূত জাতীয় দিবস, এই দিবসের উদ্‌যাপন, এই দিবসকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক সম্ভাষণ বিনিময়ের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? আমাদেরকে এ বিষয়ে ফতোয়া দিন। আর আল্লাহ আপনাকে দিন উত্তম পারিতোষিক।”

উত্তর: “আলোচ্য জাতীয় দিবস হলো আল্লাহর শত্রুদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনের আওতাভুক্ত। যাবতীয় জাতীয় দিবসগুলো (নিষিদ্ধ) সাদৃশ্য অবলম্বনের অন্তর্গত। কখনো কখনো এ কাজ (দিবস পালন) ভালো নিয়তে এবং শরিয়ত নিয়ে ইজতিহাদ তথা গবেষণার দরুনও সংঘটিত হতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে অগ্রাধিকারযোগ্য অভিমত অনুযায়ী এ কাজ শরিয়তসম্মত নয় এবং বাঞ্ছনীয় কাজও নয়। বরং এতে আল্লাহর শত্রুদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে, যদিও এতে ইবাদতের উদ্দেশ্য না করা হয়। পক্ষান্তরে ইবাদতের নিয়ত করলে এ কাজ বিদাত হবে। কিন্তু ইবাদতের নিয়ত না করে এ কাজের মাধ্যমে স্রেফ পারস্পরিক সম্ভাষণ বিনিময় এবং রাষ্ট্রের উদ্ভাবিত বিষয়াদি ও রাষ্ট্রের ব্যয়-বিনিয়োগের বহিঃপ্রকাশ করার উদ্দেশ্য থাকলে এ কাজ অন্যান্য দিবসের শ্রেণিভুক্ত হবে, যেগুলো ইহুদি-খ্রিষ্টান ও তাদের সমপর্যায়ের লোকজন স্মৃতিচারণ বা অন্য কোনো কারণের জন্য উদ্ভাবন করে। এদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা উচিত নয়— না এক্ষেত্রে, আর না অন্য কোনো ক্ষেত্রে।” [দ্রষ্টব্য : https://tinyurl(ডট)com/bdehth55 (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের আর্টিকেল লিংক)]

·
২. বিশিষ্ট নাজদি বিদ্বান, সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২১ হি.) প্রদত্ত ফতোয়া—

سئل فضيلته: ما رأي سماحتكم في الأعياد التي تقام الآن، لعيد الميلاد، والعيد الوطني، وغير ذلك؟
فأجاب فضيلته بقوله: أماعيد الميلاد فإن كان المراد ميلاد عيسى بن مريم، عليه الصلاة والسلام، الذي يتخذه النصارى عبادة فإن إقامته للمسلم حرام بلا شك. وهو من أعظم المحرمات، لأنه تعظيم لشعائر الكفر، والإنسان إذا أقامه فهو على خطر. وأما إذا كان المراد ميلاد كل شخص بنفسه، فهذا إلى التحريم أقرب منه إلى الكراهة، وكذلك إقامة أعياد المناسبات غير المناسبات الشرعية، والمناسبات الشرعية للأعياد هي: فطر رمضان، وعيد الأضحى، وعيد الأسبوع، وهو يوم الجمعة.

প্রশ্ন: “বর্তমানে যেসব উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেমন ইদুল মিলাদ (জন্মদিবস বা ক্রিসমাস ডে), জাতীয় দিবস প্রভৃতির ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?”

উত্তর: “ইদুল মিলাদ বলতে যদি ইসা বিন মারইয়াম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের জন্মদিবস উদ্দেশ্য হয়, যেটাকে খ্রিষ্টানরা ইবাদত বানিয়ে নিয়েছে, তাহলে তা পালন করা মুসলিমের জন্য সন্দেহাতীতভাবে হারাম। এটা সবচেয়ে বড়ো হারামগুলোর অন্যতম। কেননা এতে করে কুফরের নিদর্শনগুলোকে সম্মান করা হয়। কোনো ব্যক্তি এই দিবস পালন করলে সে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।

পক্ষান্তরে ইদুল মিলাদ বলতে যদি প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের জন্মদিবস উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তা পালন করা মাকরুহ হওয়ার চেয়ে হারাম হওয়ারই অধিক নিকটবর্তী হবে। শরয়ি উপলক্ষ ব্যতিরেকে অন্যান্য উপলক্ষে দিবস পালন করার বিধানও অনুরূপ। আর শরয়ি উপলক্ষের দিবসগুলো হলো— রমজানের ইদ, ইদুল আজহা এবং সাপ্তাহিক ইদ তথা জুমার দিন।” [মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িল, খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ১৯১; দারুল ওয়াতান ও দারুস সুরাইয়্যা কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১৩ হিজরি]

·
৩. প্রখ্যাত নাজদি বিদ্বান, সৌদি আরবের সাবেক প্রধান বিচারপতি, সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, ইমাম সালিহ আল-লুহাইদান রাহিমাহুল্লাহকে (মৃত: ১৪৪৩ হি.) প্রশ্ন করা হয়, “জাতীয় দিবস পালন করা এবং অন্যান্য দিবস থেকে এটাকে খাস করার বিধান কী? এরকম উদ্‌যাপনে অংশ নেওয়া কি জায়েজ হবে, বিশেষত যখন কতিপয় বিদ্যাপীঠের শিক্ষা-অধিদপ্তর আমাদেরকে এ কাজে বাধ্য করে?”

শাইখ লুহাইদান রাহিমাহুল্লাহ উত্তরে বলেন, “যদি তাদেরকে এ কাজে বাধ্য করা হয় এবং এটাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা তাদের না থাকে, তাহলে এতে অংশ নেওয়ায় তাদের কোনো সমস্যা হবে না। পক্ষান্তরে দিবস পালনের ব্যাপারে কথা হচ্ছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরিয়তসম্মত করেছেন এমন শরয়ি দিবস (ইদুল আজহা, ইদুল ফিতর, জুমার দিন) ব্যতিরেকে যত দিবস আছে, তার সবই বাতিল। স্বাধীনতা দিবস হোক, চাই দাদি দিবস, মা দিবস, বা খালা দিবস হোক না কেন — কোনোটিই শরিয়তসম্মত নয়।” [দ্রষ্টব্য: https://youtu.be/A9x5YaUCUb0]

·
৪. বর্তমান যুগের অন্যতম নাজদি বিদ্বান, সৌদি ফতোয়া বোর্ড ও সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য ইমাম সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ প্রদত্ত ফতোয়া—

প্রশ্ন: “জন্মদিবস বা জাতীয় দিবস বলে নামকরণ করা হয় এমন দিবসগুলো কি শরিয়তে বৈধ?”
উত্তর: “এগুলোর সবই না-জায়েজ এবং নিষিদ্ধ। (ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহা – এই) দুটো ইদ ছাড়া আমাদের আর কোনো (পালনীয়) দিবস নেই।” [দ্রষ্টব্য: https://youtu.be/nTjyMG2cz7E]

আল্লাহ আমাদেরকে এসব বেশরিয়তি হারাম দিবস পালন করা থেকে হেফাজত করুন এবং নাজদি-সালাফি উলামাদের নামে কুৎসা রটানো বিদাতি লোকদের থেকেও সতর্ক-সাবধান থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন, ইয়া রব্বাল আলামিন।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা।
ফেইসবুক পেইজ: সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে