স্ত্রীর মা অর্থাৎ শাশুড়ী কি স্বামীর জন্য মাহরাম যদিও স্ত্রী মারা যায় অথবা তাকে তালাক দেওয়া হয়

উত্তর: শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে যারা হারাম হয় তারা হল, চারটি: পিতার স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, স্ত্রীর মা অর্থাৎ শাশুড়ী এবং স্ত্রীর কন্যা অর্থাৎ মেয়ে। যাদেরকে মুহাররামাতে আবাদীয়া’ বা ‘চিরস্থায়ী হারাম বলা হয়। এইভাবে তারা পর্যায়ক্রমে যত আসবে সকলেই এই আওতায় পড়বে। সুতরাং যদি কোন মহিলাকে বিবাহ করার পরপরই সহবাস না করেই তালাক দিয়ে দেয়, তবুও তার মায়ের (শাশুড়ীর) সাথে বিবাহ হারাম হবে। স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত অথবা মারা গেলেও এই বিধান প্রযোজ্য। কারন স্ত্রীর সাথে বিবাহ চুক্তি সম্পন্ন হলেই তার মা স্বামীর চিরস্থায়ী মাহরাম হয়ে যায়। দলিল মহান আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে,,, তোমাদের স্ত্রীদের মা।(সূরা নিসা: ৪/২৩) অর্থের ব্যাপকতায় স্ত্রীর মায়ের শ্রেনীতে তার দাদী-নানীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এইভাবে পর্যায়ক্রমে যত আসবে সকলেই মায়ের আওতায় পড়বে। কারণ আল্লাহ বলেছেন “তোমার স্ত্রীদের ‘মা’। যদি কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে বিবাহের চুক্তি করে, তবে স্ত্রীর মা এবং স্ত্রীর দাদী, নানী স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যায়, এটি শুধুমাত্র বিবাহের চুক্তির কারণে, এবার স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাস সম্পন্ন করুক অথবা না করুক তাতে কিছু যায় আসেনা।তবে এখানে আরেকটি মাসাআলা জেনে রাখা ভাল যে, যদি কোন মহিলাকে বিয়ের পর সহবাস না করেই তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তার মেয়েকে বিবাহ করা জায়েয হবে।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) কমিটির আলেমদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: কিছু মহিলা তাদের মেয়েদের স্বামীদের সামনে হিজাব পালন করে এবং তারা তাদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে অস্বীকার করে। এটা করা কি তাদের জন্য জায়েজ?
.
স্থায়ী কমিটির আলেমগন উত্তরে বলেন: একজন মহিলার কন্যার স্বামী বিবাহের মাধ্যমে তার মাহরামদের একজন, তাই তার নিজের মা, বোন, কন্যা এবং অন্যান্য মাহরামদের সম্পর্কে তার জন্য যা দেখা জায়েয তা তার জন্য বৈধ। তার (অর্থাৎ মেয়ের স্বামীর) উপস্থিতিতে শাশুড়ীর মুখমন্ডল, মাথা বা হাত ঢেকে রাখা হিজাবের চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে এবং তার সাথে সাক্ষাতের সময় হাত মেলাতে অস্বীকার করাও রক্ষণশীলতার চরম পর্যায়ে যাচ্ছে এবং এটি বাড়াবাড়ি এবং ফলে বন্ধন ছিন্ন করতে পারে। তার এই ধরনের চরমে যাওয়া বন্ধ করা উচিত যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি অনুভব করেন যে ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে অথবা তিনি লক্ষ্য করে যে সে তাকে অনুপযুক্ত ভাবে দেখছে, এমনটি হলে তিনি সঠিক কাজ করছেন। অর্থাৎ মেয়ের স্বামীর সাথে পর্দা রক্ষা করতে পারেন (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ১৭; পৃষ্ঠা:৩৫৬-৩৫৭)।
.
একজন পুরুষের জন্য স্ত্রীর মায়ের দিকে তাকানো জায়েয, যতক্ষণ দৃষ্টি কামনা ব্যতীত থাকবে। যদিও তাকে চুম্বন করা জায়েয, তবে মুখে চুম্বন করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং আলিঙ্গন করা থেকেও বিরত থাকতে হবে, বিশেষ করে যদি সে অল্পবয়সী হয় অথবা সে তার অন্তরে কোন প্রকার হারাম ইচ্ছা অনুভব করে। এই মর্মে সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির আলেমগন অপর ফাতওয়ায় বলেছেন: স্ত্রীর মা তার মেয়ের স্বামীর একজন মাহরাম এবং একজন পুরুষের জন্য তার মাহরামদের যা দেখা বৈধ তেমনি তার স্ত্রীর মায়ের যেমন: মুখ, হাত, ঘাড়, চুল ইত্যাদি দেখা তার জন্য জায়েজ। তবে একজন মহিলা তার মেয়ের স্বামীকে চুম্বন করা এবং তাকে আলিঙ্গন করা জায়েয নয়, কারন এতে ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে তাছাড়া এটি শুধুমাত্র একজনের স্বামীর সাথেই করা যেতে পারে। তবে তার জন্য তার মাথায় চুম্বন করা জায়েয কারণ এতে হারাম কিছু নেই। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ১৭; পৃষ্ঠা: ৩৬৫-৩৬৬)।
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন,

যদি কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাহলে স্ত্রীর “মা” তার স্বামীর জন্য চিরস্থায়ী হারাম হয়ে যাবে এবং সে তার মাহরামদের একজন হয়ে যাবে, যদিও সে কন্যার অর্থাৎ স্ত্রীর সাথে সহবাস সম্পন্ন না করে থাকে। যদি এমন হয় যে স্ত্রী মারা যায় বা তাকে তালাক দেওয়া হয়, তবুও সে তার মায়ের জন্য মাহরাম। যদি এমন হয় যে, সে যে নারীকে বিয়ে করেছে তার সাথে সঙ্গম বা সহবাস হতে দেরি হয়ে গেছে, তবুও সে তার মায়ের জন্য মাহরাম, যে তার সামনে তার মুখ খুলতে পারে এবং সে তার সাথে ভ্রমণ করতে পারে এবং তার সাথে একা থাকতে পারে এবং এতে দোষের কিছু নেই। কারণ শুধুমাত্র বিবাহ চুক্তির কারণে স্ত্রীর মা এবং দাদী তার মাহরাম হয়ে যায়, পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,”তোমাদের স্ত্রীদের মা”(আন-নিসা: ৪/২৩) এবং বিবাহ চুক্তির ফলে একজন মহিলা একজন পুরুষের স্ত্রী হয়। (ফাতাওয়া ইসলামীয়াহ খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ১৩২)।
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: স্ত্রীর মায়ের সাথে হাত মেলানো এবং তার সাথে সফর করা কি জায়েজ?

তিনি জবাব বলেছেন: হ্যাঁ, এতে দোষের কিছু নেই, কারণ তিনি একজন মাহরাম। মহান আল্লাহ তাআলা স্ত্রীর মাকে তার মেয়ের স্বামীর সাথে বিবাহের জন্য স্থায়ীভাবে হারাম করেছেন। অতএব সে আপনার মাহরামদের একজন, এবং তার সাথে করমর্দন করা বা তার সাথে সফর যাওয়া আপনার কোন দোষ নেই, কারণ আপনি তার জন্য একজন মাহরাম। কিন্তু যদি ফিতনার ভয় বা আশঙ্কা থাকে, তাহলে তার সাথে হাত মেলাবেন না, যেমন তার সাথে করমর্দন করার সময় কোন প্রলোভন বা প্ররোচনার আশঙ্কা থাকলে তার সাথে করমর্দন করবেন না। কিন্তু যদি কোন ফিতনার আশংকা না থাকে, তাহলে তার সাথে করমর্দন করা এবং তার সাথে ভ্রমণে কোন দোষ নেই। কারণ তার মেয়ের সাথে বিবাহ চুক্তির ফলে সে আপনার মাহরামদের একজন হয়ে গেছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,”তোমাদের স্ত্রীদের মা”(আন-নিসা: ৪/২৩ (আল-মুনতাকা মিন ফাতাওয়া আল-শাইখ আল-ফাওজান খন্ড: ৩ প্রশ্ন নং: ৪৫০) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
ফাতওয়া অনুবাদক:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।