সোনা-রুপার যাকাত আদায়ের বিধান এবং নারীদের গহনা হিসেবে ব্যবহৃত স্বর্ণের যাকাত দিতে হবে কি

প্রশ্ন: সোনা-রুপার যাকাত আদায়ের বিধান কি? নারীদের গহনা হিসেবে ব্যবহৃত স্বর্ণের যাকাত দিতে হবে কি?
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: আহালুল আলেমগণ সবাই একমত যে, স্বর্ণ ও রৌপ্যের গহনার উপর যাকাত ওয়াজিব যদিও তা ব্যবহার করা হারাম। অথবা যদি তা ব্যবসার জন্য প্রস্তুত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ: ব্যবসায়িক স্বর্ণ অর্থাৎ যে স্বর্ণ ব্যবসার উদ্দেশ্যে গচ্ছিত রাখা হয়েছে সে স্বর্ণের যাকাত ফরয এবং হারাম কাজে ব্যবহৃত স্বর্ণ যেমন- পুরুষের ব্যবহৃত স্বর্ণ এবং কোন প্রাণীর আকৃতিতে বানানো নারীর অলংকার যা ব্যবহার করা হারাম, এরূপ ব্যবহৃত স্বর্ণেরও যাকাত ফরয। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। কারণ, স্বর্ণের এরূপ ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়। পক্ষান্তরে বৈধ পন্থায় নারীদের ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত ফরয কি-না? এ ব্যাপারে আহালুল আলেমগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। সবগুলো মতামত পর্যালোচনা করলে এ ব্যাপারে দুটি প্রসিদ্ধ মত পাওয়া যায়। যেমন:
.
(১). আর ইমাম মালিক, ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফিঈ সহ অধিকাংশ ওলামাদের প্রসিদ্ধ মত যে, অলঙ্কারের যাকাত ফরয নয়। আর এটা আয়িশাহ্, আনাস, ইবনু উমার ও আম্মার- এবং আসমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর মত। বর্তমান সময়ের যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] এই মতটি পছন্দ করেছেন। তবে তিনি বলেছেন দেওয়া উত্তম।এই মতের আলেমগণ সূরা তওবার ৩৪ নং আয়াতের আলোকে কিয়াস করে বলেন,অলংকার বৈধ পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে এটি পোশাক এবং অন্যান্য জিনিসের মতো হয়ে যায় এবং এটি এমন পণ্যের মতো নয়; যার বাণিজ্যিক মূল্য রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন; “হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় পন্ডিত ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, আর তারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক এক শাস্তির সুসংবাদ দাও।” (সূরা তওবা; ৯/৩৪)। তারা বলেন- এই আয়াতে জমা করা (গচ্ছিত করা) ও খরচ (ব্যায়) করা দ্বারা বোঝা যায় যে, এতে স্বর্ণ ও রূপা বলতে বোঝানো হয়েছে: অর্থ সম্পদ। কারণ, এটি জমা করা যায় এবং খরচ (ব্যায়) করা যায়। আর সাধারণত ব্যবহৃত গহনাগুলির গচ্ছিত করা সম্ভব নয়; ঠিক যেমন এটি তার প্রকৃতি অনুসারে ব্যয় করা যায় না। এবং একটি সহীহ সনদের সাথে বর্ণিত হয়েছে যে, আয়েশা (রাঃ) তার ঘরে তার ভাইয়ের এতিম কন্যাদের দেখাশোনা করতেন। তাদের কাছে স্বর্ণালঙ্কার ছিল কিন্তু তিনি সেগুলো থেকে যাকাত দেননি। ইমাম দারাকুতনি তার সনদ সহ আসমা বিনতে আবী বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তার কন্যাদের স্বর্ণালঙ্কার দ্বারা সজ্জিত করতেন এবং তিনি তাতে যাকাত দিতেন না, (যদিও এর মূল্য ছিল) প্রায় পঞ্চাশ হাজার। (সুনান আল-দারাকুতনী, ২/১০৯)। তারা দলিল হিসেবে আরো উল্লেখ করেন।আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, لَيْسَ فِيْ الْحُلِىِّ زَكَاةٌ ‘অলংকারের যাকাত নেই।’ (তিরমিযী হা/৬৩৬; দারাকুত্বনী ২/১০৭ পৃঃ)। কিন্তু এই হাদীসটি সহীহ নয়। ইমাম দারাকুত্বনী হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। (নাছবুর রিওয়ায়া ২/৩৪৭ পৃঃ)। ইমাম বায়হাক্বী হাদীসটিকে ভিত্তিহীন বলেছেন। (মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার ৩/২৯৮ পৃঃ)। ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানীও হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। (জামেউস সগীর হা/৪৯০৬; সনদ জয়ীফ)। এছাড়াও আরো কিছু দলিল রয়েছে তবে সনদ সহীহ নয়।
.
(২). অপরদিকে হানাফী মাজহাবের ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু ১৫০ হি./৭৬৭ খ্রি.] এর মতে ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত দেয়া ওয়াজিব। আর এ মতের পক্ষে উমার ইবনুল খাত্ত্বাব, সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব, ইবনে মাসউদ, ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আল-আস, সাঈদ ইবনে যুবায়ের,(রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আতা, মুজাহিদ, ইমাম ইবনে সিরীন, ইবনে হাযম ইমাম আল-যুহরি (রাহিমাহুল্লাহ) সহ অন্যান্যদের। আর এটা ইমাম আহমাদ ও ইমাম শাফি‘ঈর অন্য একটা দুর্বল মত। এই মতের পক্ষে সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া বোর্ড, আল-লাজনাতুদ দাইমাহর আলেমগণ, বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায, ইমাম উসাইমীন, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, মিশকাতুল মাসাবীহ’র বিখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রমুখ আলেমগণের শক্তিশালী মত। (বিস্তারিত দেখুন ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ৯/২৬৭ পৃ.; ফাতাওয়া শায়খ বিন বায,১৪/৮৪ পৃ.; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ফৎওয়া নং-৩৬৪; মিশকাতুল মাসাবিহ হা/১৯০৮; ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৫৯৮৬৬ ইসলাম অয়েব ফাতওয়া নং-৬২৩৭)। উপরোক্ত দুটি মতের মধ্যে এই মাসালায় অধিকতর সঠিক মত হলো দ্বিতীয়টি অর্থাৎ হানাফী মাজহাবসহ অন্যান্য আলেমগণের মত। কারণ, কুরআন-সুন্নাহর দলিল অনুযায়ী এটিই অধিক সঠিক। একাধিক বিশুদ্ধ হাদীস প্রমান করে নারীর ব্যবহৃত অলংকারে যাকাত ফরয। যদি তা নিসাব পরিমাণ হয় অথবা যদি মালিকের কাছে নিসাব সম্পূর্ণ করার জন্য পর্যাপ্ত স্বর্ণ, রৌপ্য অথবা ব্যবসায়িক পণ্য থাকে- কারণ হাদীসের সাধারণ অর্থ যা বলে যে সোনা ও রৌপ্যের উপর যাকাত ফরয। আমরা যতদূর জানি, এটি ব্যবহৃত অলঙ্কার বাদ দিয়ে এমন কোন সহীহ হাদীস নেই। নারীর ব্যবহারিক অলংকারের যাকাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সোনা রূপার মালিক যদি এর যাকাত আদায় না করে, তবে কিয়ামতের দিন এ ধন সম্পদকে তার শাস্তির জন্য আগুনের পাত বানানো হবে।” (সহীহ মুসলিম হা/৯৮৭; মিশকাত হা/১৭৭৩)।উক্ত হাদীস হতে প্রমাণ হয় যে, স্বর্ণ ও রূপা যাকাত আদায় না করে জমা করে রাখলে, উক্ত মাল জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে মালিক-এর ললাটে, পার্শ্বদেশসমূহ এবং পৃষ্ঠদেশসমূহে দাগ দেয়া হবে। অন্যান্য অঙ্গ থেকে এ তিনটি অঙ্গকে উল্লেখ করার কারণ হলো, চেহারায় দাগ দিলে অধিক কদর্য দেখায় আর পার্শ্বদেশ এবং পিঠে দাগ দিলে অধিক ব্যথা অনুভূত হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, কারণ একজন ভিক্ষুক কোন কৃপণের নিকট চাইলে সর্বপ্রথম তার চেহারায় বিরক্তি, অপছন্দের ভাব পরিস্ফুটিত হয়, তার কপালে ভাজ পড়ে। আবার তাই চাইলে তার থেকে পার্শ্বদেশ পরিবর্তন করে। পুনরায় চাইতে গেলে সে তাকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে চলে যায়। এজন্য এ তিনটি অঙ্গের উল্লেখ করা হয়েছে। (মিশকাতুল মাসাবীহ হা/১৭৭৩ ব্যাখ্যা দৃষ্টব্য:)।
.
▪️এবার কয়েকটি হাদীস লক্ষ করুন:
__________________________________

(১). আমর ইবনু শুআইব (রাঃ) হতে বর্ণিত, একবার ইয়ামনবাসী জনৈকা মহিলা তার কন্যাসহ রাসূল (ﷺ)-এর নিকটে আসলেন। তার কন্যার হাতে মোটা দু’টি স্বর্ণের বালা ছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? মহিলাটি বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি কি পছন্দ কর যে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের বালা পরিয়ে দেন? রাবী বলেন, একথা শুনে উক্ত মহিলা তার হাত থেকে বালা দু’টি খুলে রাসূল (ﷺ)-এর সামনে রেখে দিয়ে বলল, এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য। (নাসাঈ হা/২৪৭৯; আবু দাউদ হা/১৫৬৩; তিরমিযী হা/৬৩৭; মিশকাত হা/১৮০৯; সহীহুত তারগীব হা/৭৬৮)।
.
(২). অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, মা আয়েশা (রাঃ) বলেন; একদা রাসূল (ﷺ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার হাতে রূপার বড় বড় আংটি দেখতে পান এবং বলেন, হে আয়েশা! এটা কি? আমি বললাম, হে রাসূল (ﷺ)! আপনার উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য তা তৈরী করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? আমি বললাম, না অথবা আল্লাহর যা ইচ্ছা ছিল। তিনি বললেন, তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। (আবু দাউদ হা/১৫৬৫, সনদ সহীহ)
.
(৩). অন্য হাদীসে এসেছে- আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন; আমি ও আমার খালা হাতে স্বর্ণের বালা পরিহিত অবস্থায় রাসূল (ﷺ)-এর দরবারে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে বললেন, তোমরা এর যাকাত দাও কি? তিনি বলেন, তখন আমরা বললাম, না। তখন তিনি (ﷺ) বললেন, ‘তোমরা কি ভয় কর না যে, এর পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা আগুনের বালা পরিধান করাবেন। সুতরাং তোমরা যাকাত আদায় কর।(মুসনাদে আহমাদ হা/২৭৬৫৫; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৭৭০, সনদ সহীহ লিগায়রিহি হাসান)
.
(৪). উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, আমি স্বর্ণের গহনা পরতাম। একদিন আমি রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি সেই কান্যের অন্তর্ভুক্ত, যার শাস্তির কথা কুরআনে এসেছে? (তওবা ৯/৩৪-৩৫)। রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘যদি নিসাব পরিমাণ হয় এবং তাতে যাকাত দেওয়া হয়, তখন তা কান্য হয় না।’ (আবু দাঊদ হা/১৫৬৪; মিশকাত হা/১৮১০)।
.
(৫). ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, এক মহিলা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন যে- অলংকারের যাকাত দিতে হবে কি? তিনি বললেন, যদি তা দুইশত দিরহামে পৌঁছে, তাহলে তার যাকাত আদায় করবে। মহিলাটি বললেন, আমার ঘরে কতিপয় ইয়াতীম রয়েছে, তাদেরকে কি (যাকাত) প্রদান করতে পারব? তিনি বললেন, হ্যাঁ।(মুছান্নাফ আব্দুর রায্যাক ৪/৮৩ পৃঃ; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্ববারানী ৯/৩৭১ পৃঃ; সনদ সহীহ লিগায়রিহি)
.
(৬). আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যয়নব বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে খুৎবায় বলেন; হে নারী জাতি! তোমরা সাদাক্বা কর, যদিও তোমাদের অলংকার দ্বারা হয়। কেননা ক্বিয়ামতের দিন তোমরাই জাহান্নামবাসীদের অধিকাংশ হবে। (তিরমিযী হা/৩৫৬; মিশকাত হা/১৮০৮)।

(৭). আয়েশা (রাঃ) বলেন, অলংকার পরিধানে কোন সমস্যা নেই, যদি তার যাকাত দেওয়া হয়। (দারাকুত্বনী ২/১০৭ পৃঃ; বায়হাক্বী ৪/১৩৯ পৃঃ; সনদ হাসান)
.
▪️এবার বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ইমামগণের ফাতওয়াগুলো লক্ষ করুন:
_______________________________________
(১). বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আজকাল অনেক ধরনের গহনা আছে যেমন- হীরা, প্লাটিনাম ইত্যাদি যা পরিধান করার জন্য তৈরি করা হয়। এগুলোর উপর কি যাকাত আছে? যদি সেগুলিকে সাজসজ্জার জন্য বা ব্যবহারের জন্য ফুলদানি এবং পাত্রে তৈরি করা হয়?
.
তিনি জবাব দিলেন: গহনা যদি স্বর্ণ বা রৌপ্যের হয়, তবে তার উপর যাকাত ওয়াজিব, যদি তা নিসাবে পৌঁছায় এবং এক পূর্ণ হিজরি বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। এবার তা পরিধানের জন্য হোক বা ঋণ বা বিক্রি করার জন্য হোক। এটি উভয় পক্ষের আলেমদের মতের অধিকতর সুস্পষ্ট মত। কারণ এগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে মর্মে বর্ণিত হাদীস সহীহ। তবে যদি সেগুলি অর্থাৎ গহনা গুলো সোনা ও রৌপ্য দিয়ে তৈরি না হয় যেমন; হীরা, কার্নেলিয়ান ইত্যাদি তাহলে তাদের উপর কোন যাকাত নেই। যদি না সেগুলি ব্যবসার উদ্দেশ্যে হয়, সেক্ষেত্রে সেগুলি ব্যবসায়িক পণ্যের সাধারণ শিরোনামের অধীনে আসে, তাই যাকাত অবশ্যই হবে। অন্যান্য সমস্ত বাণিজ্য পণ্যের ক্ষেত্রে তাদের উপর অর্থ প্রদান করা হয়। স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্র শুধুমাত্র সাজ-সজ্জার জন্য হলেও ব্যবহার করা জায়েয নয়। একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সোনা ও রূপার পাত্রে পান করো না এবং এগুলোর বাসনে আহার করো না। কেননা দুনিয়াতে এগুলো কাফিরদের জন্য আর আখিরাতে তোমাদের জন্য।(বুলুগুল মারাম হা/১৬ ইমাম বিন বায রাহিমাহুল্লাহ, মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খন্ড:১৪ পৃষ্ঠা:১২১)
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) কে আরো জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এমন এক মহিলার সম্পর্কে, যার অলংকার রয়েছে এবং যা তার কাছে বছরের পর বছর রয়ে গেছে। তারপর তিনি জানতে পারলেন যে তার উপর যাকাত দেওয়া ওয়াজিব তখন তার জন্য সেটা বের করা আবশ্যক হলো। কিন্তু যে সমস্ত বছরগুলো সে জানতে পারেনি তার উপর যাকাত ফরজ হয়েছে এখন কি বিগত তাকে বিগত বছরগুলোর যাকাত দিতে হবে?
.
শাইখ বিন বায উত্তরে বলেন, না! বিগত বছরের যাকাত তাকে আদায় করতে হবেনা। তার উপর আবশ্যক হলো যখন থেকে তিনি জানতে পেরেছেন তার উপর যাকাত আবশ্যক হয়েছে তখন থেকে তিনি সেটা আদায় করবেন এবং তাকে ভবিষ্যতে তার গহনার উপর প্রতি বছর যাকাত দিতে হবে; যদি তা নিসাব পরিমাণ সীমায় পৌঁছায়। আর যে সমস্ত বছরগুলো ইতিপূর্বে চলে গেছে সেগুলোর যাকাত তাকে আদায় করতে হবে না। কারণ, শরীয়তের হুকুম-আহকাম তখনই আবশ্যক হয় যখন মানুষ জানতে পারে যদিও আহালুল আলেমগণের কেউ কেউ বলেছেন, বিগত বছরগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে। কিন্তু অধিকতর সঠিক মত হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত নিসাব না পৌঁছাবে এবং পরিপূর্ণ একবছর অতিবাহিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত যাকাত ফরজ নয় এই বিষয়ে কুরআন এবং সুন্নাহ দলিল রয়েছে। যাকাত অবশ্যই গহনার মালিককে দিতে হবে, স্বামীর দ্বারা নয়। কিন্তু যদি তা তার স্বামী বা অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে এবং তার অনুমতিক্রমে প্রদান করে তবে তাতে দোষের কিছু নেই।গহনা থেকেই যাকাত দিতে হবে না, বরং এক বছর পেরিয়ে গেলে বাজারে সোনা ও রৌপ্যের মূল্য অনুযায়ী সমান মূল্য দেওয়াই যথেষ্ট। অর্থাৎ যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে তা স্বর্ণের বর্তমান বিক্রয় মূল্যের হিসাবে মোট স্বর্ণের ২.৫০%। (ফাতাওয়া ইসলামিয়া,খন্ড:২ পৃষ্ঠা:৮৪-৮৫, ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৫৯৮৬৬)
.
(২). সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল (আল্লাহ আপনার ইলমে বরকত দান করুন )। আমি আমার স্ত্রীর জন্য স্বর্ণের গয়না কিনেছিলাম, তারপর আমি তার যাকাত দেওয়ার ইচ্ছা করি কিন্তু আমি আগে থেকে জানতাম যে মহিলার ব্যবহৃত গহনার উপর যাকাত নেই। এই কথাটা কি সঠিক? কতটুকু পরিমাণ হলে নিসাব পরিমাণ হবে অর্থাৎ যাকাত দিতে হবে?
.
উত্তরে শাইখ বলেন: ব্যবহৃত স্বর্ণের যাকাত আদায় করতে হবে কিনা এটি নিয়ে আহালুল আলেমগনের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন; যে এতে কোন যাকাত নেই । কারণ, এটি এমন পোশাকের মতো যা একজন ব্যক্তি পরিধান করে তাই এর যাকাত নেই। আবার কেউ কেউ বলেছেন; এতে যাকাত রয়েছে। তবে সঠিক কথা হলো, এতে যাকাত রয়েছে এবং ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত আদায় করা ফরজ। কেননা কুরআন-সুন্নাহর দলিলগুলো সাধারণভাবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের উপর যাকাত ফরয হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে। এবং তাতে কোন কিছু বাদ দিয়ে বলা হয়নি যে এরুপ হলে যাকাত লাগবে বা এরুপ হলে লাগবে না। এটা সার্বজনবিদিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে লোকেরা স্বর্ণ ও রৌপ্য দিয়ে নিজেদেরকে সুশোভিত করত। সুতরাং, যখন তাদের মালিকানা থাকা সত্ত্বেও হাদীসে কোন ব্যতিক্রম উল্লেখ করা হয়নি, আর রাসূল (ﷺ) এটা যে করেননি এতেই প্রমাণ করে যে- সাধারণ ভাবে এগুলোর যাকাত ফরজ।তাছাড়াও হাদীসে খাস করে ব্যবহৃত স্বর্নের কথা এসেছে। তার মধ্যে থেকে একটি হাদীস হলো আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আশ থেকে সালাসা (ইমাম বুখারী, মুসলিম এবং আহমাদকে সালাসা বলা হয়) বর্ননা করেছেন; হাদীসের সনদের ব্যাপারে বুলুগুল মারামের লেখক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. শক্তিশালী বলেছেন। হাদিসটি হলো: জনৈকা মহিলা তার কন্যাসহ রাসূল (ﷺ)-এর নিকটে আসলো। তার কন্যার হাতে মোটা দু’টি স্বর্ণের বালা ছিল। তিনি তাকে বললেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? মহিলাটি বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি কি পছন্দ করো যে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের বালা পরিয়ে দেন? রাবী বলেন, একথা শুনে উক্ত মহিলা তার হাত থেকে বালা দু’টি খুলে রাসূল (ﷺ)-এর সামনে রেখে দিয়ে বলল, এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য‌। (নাসাঈ হা/২৪৭৯; আবু দাউদ হা/১৫৬৩)। এই হাদীসটি ব্যবহৃত গহনার উপর যাকাত আদায় ফরযের একটি স্পষ্ট দলিল। এই হাদীসে রাসূল (ﷺ) স্পষ্ট করে জিজ্ঞেস করেননি যে এটা ব্যবহার করা স্বর্ণ নাকি ব্যবসার স্বর্ণ। তবে বাহ্যিক অবস্থা দেখে মনে হয় যে, এই স্বর্নগুলো ব্যবসার জন্য নয়। কারণ সে তার মেয়েকে সাজিয়েছে অর্থাৎ এগুলো ব্যবহৃত স্বর্ন। তদুপরি, এই কথাটি আরও সতর্কতামূলক এবং বাধ্যবাধকতামূলক নেওয়া যেতে পারে। তাই সতর্কতামূলক বিষয়টি গ্রহন করা উচিত হবে। কারণ, সতর্কতা শরয়ী দলিলের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। যারা জামা কাপড়ের উপর কিয়াস করেছে; তাদের কিসায়টি সঠিক নয়। এর কারণ হলো, তারা স্বর্ণটাকে কাপড়ের সাথে তুলনা করেছেন। তারা বলেন: যদি এই অলংকার ব্যবসার জন্য কেনা হয়; তাহলে যাকাত আদায় করতে হবে। কিন্তু যদি ব্যবসার কাপড় হয় অর্থাৎ বিক্রি করার জন্য কাপড় ক্রয় করে তাহলে যাকাত আদায় করতে হবেনা এবং তারা এটাও বলে যে, কাপড় যদি ব্যবসার হয় এবং তার মালিক যদি এটি পরিধান করে আর নিয়ত করে যে এটা ব্যবসার তাহলে এটা ব্যবসার নয়।আর ব্যবসার স্বর্ণ যদি পরিধান করে তাহলে সেটা ব্যবসার দিকে প্রত্যাবর্তন করে অর্থাৎ বাণিজ্যে পরিণত হয়। কিন্তু এই দলিলটি হুবাহুব বিপরীত হয়ে যাচ্ছে (অর্থাৎ একটি ব্যবসার জন্য হবে অন্যটি হবেনা এমনটি হয়না)। এজন্য সঠিক কথা হলো স্বর্ণ ও রৌপ্যের অবশ্যই যাকাত আদায় করা ওয়াজিব। আর অন্যান্য মনি-মুক্তা খনিজ সম্পদ যেগুলো রয়েছে সেগুলোর কোন যাকাত নেই। কারণ এই বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহয় কোন দলিল নেই যে- এগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে। তবে যদি এগুলো ব্যবসার জন্য হয় তাহলে যাকাত আদায় করতে হবে। এগুলোর উপর বিত্তি করে আপনার উচিত হলো স্ত্রীর গহনার যাকাত আদায় করা। এটি একটি দান-খয়রাত, আর মহান আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। স্বর্ণের নিসাব হলো বিশ দীনার বা ৮৫ গ্রাম। সুতরাং কারো যদি এ পরিমাণ অলংকার থাকে, তবে তার অবশ্যই যাকাত আদায় করা ওয়াজিব আর যদি এর কম হয় তাহলে যাকাত আদায় করা লাগবে না। (উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব, টেপ রেকর্ড নং ১১০)
.
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে আরো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: একজন ব্যক্তির কয়েকজন কন্যা আছে তিনি তাদেরকে গয়না দিয়েছেন। সকল কন্যার গহনা একসাথে যোগফল নিসাবে পৌঁছেছে। কিন্তু প্রত্যেকের গহনা পৃথকভাবে নিসাবে পৌঁছায় না। প্রশ্ন হলো সে ব্যক্তি তার মেয়েদের সমস্ত গয়না একত্রিত করে যাকাত দিতে হবে কি?
.
তিনি উত্তরে বলেন: যদি তিনি তার মেয়েদেরকে এই গহনাগুলো অস্থায়ীভাবে অর্থাৎ ধারস্বরূপ শুধুমাত্র পরিধান করার জন্য দিয়ে থাকে, তাহলে গয়নাগুলোর মালিক তিনি নিজেই। সবগুলো অলংকার একত্রিত করে যদি নিসাব পরিমাণ হয়; তাহলে তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে। কিন্তু যদি অলংকারগুলো তাদেরকে সেগুলো দানস্বরূপ স্থায়ীভাবে ভাগ করে দিয়ে দেয় তাহলে গয়নাগুলো একত্রিত করা আবশ্যক নয়। কেননা প্রত্যেকেই আলাদাভাবে স্বর্ণগুলোর মালিক। অতএব, তাদের একজনের স্বর্ণ যদি নিসাব পরিমাণ হয়, তবেই যাকাত প্রদান করবে। অন্যথায় নয়। (উসাইমীন, মাজমুঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল,খন্ড:১৮ পৃষ্ঠা:১৪২)

(৩). বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রশ্ন: নারীদের অলংকারে কি যাকাত ওয়াজিব?
.

জবাবে তিনি বলেন, ফাতিমা বিনতে কাইস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলেন, “আমার স্বর্ণের হারে আল্লাহ যা ফরয করেছেন তা আপনি গ্রহণ করুন।” তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বলেন, হে ফাতিমা! এখন আল্লাহর অধিকার (যাকাত) তোমার ওপর থেকে আর কিছুই অবশিষ্ট রাখলে না! (সিলসিলাতুস সহীহাহ হা/২৯৭৮)। এই হাদীসটি একেবারে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, মহিলাদের অলংকারে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে পরিচিত ছিল। এ ছাড়া একাধিক হাদীসে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) অলংকারের যাকাত প্রদানের আদেশ দিয়েছেন। আমি সেসব হাদীস ‘আদাবুয যিফাফ’ বইয়ে উল্লেখ করেছি। এ কারণে ফাতিমা বিনতে কাইস রাদিয়াল্লাহু তার হার নিয়ে রাসূলুল্লাহ(ﷺ)-এর কাছে আসেন, যেন তিনি হারের যাকাত নিয়ে নেন। এবার এ হাদীস আদেশ সংক্রান্ত হাদীসের সাথে যুক্ত করুন। তাহলে যারা অলংকারে যাকাত ওয়াজিব নয় ফাতওয়া দিয়ে ধনীদের যাকাতের সম্পদে গরীবদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখেন তারা কি এতে পরিতৃপ্ত হতে পারবেন?(তুরাসুল আলবানী ফিল ফিকহ,খন্ড:১০ পৃষ্ঠা: ৪১২ ফাতাওয়ায়ে আলবানী প্রশ্ন নং- ৩০৭ পৃষ্ঠা:২৭০)
.
(৪). সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রশ্ন করা হয় যে; মহিলা যাকাত দিতে চায় সে মহিলা কিভাবে তার গয়না অনুমান করবে? এটা কি তার মূল্যের দ্বারা নাকি তার ওজনের ভিত্তিতে? সে কি একই ধরণের সোনায় যাকাত দিবে নাকি সে এর জন্য নগদ অর্থ দিবে? যাকাতের নিসাবের পরিমাণ কি?
.
উত্তরে শাইখ বলেন: গয়না যদি ব্যবসার জন্য এবং ব্যবহার না করার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয় তাহলে আহালুল আলেমগনের ঐক্যমতে যাকাত দিতে হবে। অলংকার যদি ব্যবসার জন্য হয়, তাহলে তার যাকাত নগদ অর্থ দিয়ে দিতে হবে। নগদ অর্থে দশমাংশের এক চতুর্থাংশ যাকাত বের করবে। যখন এটি ব্যবহার এবং ব্যবসা উদ্দেশ্য হবে না, তখন এটি তার ওজনের উপর যাকাত হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই যদি তার ওজন বিশ মিছকালে পৌঁছায়, যা এগারো সৌদি পাউন্ড এবং প্রায় আধা পাউন্ড। যাকাত দিতে হবে তার ওজন অনুযায়ী দশমাংশের এক চতুর্থাংশ। আর ব্যবহৃত স্বর্নের যাকাত দিতে হবে কি না এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যাকাত দিতে হবে না এ মতটি আমার কাছে বেশি স্পষ্ট। কেননা অলংকার হলো পোশাক, পশুপাখি ও গবাদিপশুর মতো, যা কাজের জন্য নেওয়া হয় বা ভাড়া দেওয়া হয়, যেগুলি সওয়ারীর জন্য নেওয়া হয়, তাতে যাকাত নেই। কেউ কেউ বলেছেন; ব্যবহৃত স্বর্নের যাকাত দিতে হবে। সতর্কতামূলক ব্যবহৃত স্বর্নের যাকাত দেওয়া উত্তম। এর যাকাত প্রদান করতে হবে তার ওজনের উপর ভিত্তি করে যেমন উপরে বলা হয়েছে। (সালিহ বিন ফাউজান আল-ফাওজান সৌদি আরবের সিনিয়র স্কলার কাউন্সিলের সদস্য; ইসলাম islamway net ফাতওয়া নং-৭১৪০)
.
পরিশেষে আমাদের পাঠকদের উদ্দেশ্য বলবো প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল এবং ইমামদের ফাতওয়া থেকে একথা পরিস্কার যে, নারীদের ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত দিতে হবে। এটাই নিরাপদ মত তাছাড়া যেকোন মতপার্থক্যপূর্ণ বিষয়ে সন্দেহমুক্ত আমল করাই মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য। প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] বলেছেন, শরী‘আতে নতুন কাজ সম্পর্কে চিন্তা করার চেয়ে মধ্যম পন্থায় সুন্নাতের উপর আমল করা অতীব উত্তম। (সহীহ আত-তারগীব হা/৬৩) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।