রাসূল (ﷺ)-এর ইতিকাফ কেমন ছিল এবং ইতিকাফকারীর জন্য কোন কোন কাজ করা বৈধ ও কোন কাজ করা নিষিদ্ধ

ইতিকাফ করার ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ হচ্ছে অধিক পরিপূর্ণ ও অধিকতর সহজ। রাসূল (ﷺ) প্রত্যেক রামাদানে দশ দিনের ইতিকাফ করতেন। রাসূল (ﷺ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রামাদানে ই‘তিকাফ করতেন।তিনি ২০ রামাদানের দিন সূর্যাস্তের পূর্বে ইতেকাফের স্থানে প্রবেশ করতেন। উল্লেখ্য যে, একটি হাদীসে এসেছে রাসূল ﷺ ফজরের সালাত শেষে ই‘তিকাফের নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০৪১)। এই হাদীসপর অর্থ হলো, তিনি জনগণ থেকে একাকী হতেন। (ফাতাওয়া উসাইমীন, ২০/১৭০ পৃ.)। যে বছর তিনি ইন্তিকাল করেন সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০৪৪, ৪৯৯৮)। তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর স্ত্রীগণও সে দিনগুলোতে ই‘তিকাফ করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০২৫; সহীহ মুসলিম, হা/১১৭১, ১১৭২)। অর্থাৎ ২য় হিজরীতে সিয়াম ফরয হওয়ার পর থেকে ১১ হিজরীতে মৃত্যুবরণের পূর্ব পর্যন্ত ৯ বছর যাবৎ রাসূল (ﷺ) সকল রামাদানেই শেষ দশকে ই‘তিকাফ করেছেন। মৃত্যুর বছর জীবনের শেষ রামাযানে তিনি ২০ দিন ই‘তিকাফ করেন। শুধু এক বছর স্ত্রীদের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি ই‘তিকাফ করেননি। কিন্তু রামাদানের পরেই শাওয়াল মাসে তার ক্বাযা করেছিলেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০৪১, ২০৪৫, ২০৩৪)।

▪️রাসূল ﷺ এর জীবনের শেষ বছর বিশ দিন ই‘তিকাফ করার কয়েকটি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন:
.
(১)- প্রতি রামাদানে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) একবার কুরআন শুনাতেন। কিন্তু যে বছর তিনি মারা যান সে বছর দু’বার কুরআন শুনানোর কারণে ২০ দিন ই‘তিকাফ করেন। (২)- তিনি বেশি আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর অধিক নৈকট্য লাভ করতে চেয়েছিলেন।
(৩)- কারো মতে, তিনি ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের সফরকালে ই‘তিকাফ করতে সক্ষম হননি। ফলে তার ক্বাযা স্বরূপ পরবর্তী রামাদানে তিনি ২০ দিন ই‘তিকাফ করেছিলেন। (হাকীম, হা/১৬০২; সহীহ ইবনু খুয়ায়মাহ, হা/২২২৬, সনদ সহীহ)।
.
নবী করীম (ﷺ) ছোট আকৃতির তাঁবু পাতার নির্দেশ দিতেন। মসজিদে তার জন্য এটি পাতা হত। (সহীহ মুসলিম, ১১৬৭)। ইবনুল কাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘এ সবকিছু করেছেন যাতে করে ই‘তিকাফের উদ্দেশ্য ও প্রাণ হাছিল হয়। এটি ছিল অজ্ঞ লোকেরা যা করে তথা ই‘তিকাফকে মেলামেশা ও সাক্ষাৎ প্রার্থীদের সাক্ষাৎস্থল হিসাবে গ্রহণ করা এবং তাদের মাঝে খোশ আলাপ জুড়ে দেয়ার এ সবের সম্পূর্ণ বিপরীত। এ ধরণের ই‘তিকাফের একটি রূপ আর নবী করীমর (ﷺ)-এর ই‘তিকাফের আরেকটি রূপ।’ (যাদুল মা‘আদ, ২/৯০ পৃ.)। তিনি সারাক্ষণ মসজিদে অবস্থান করতেন। শুধু প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হতেন না। (সহীহ বুখারী, হা/২০২৯; সহীহ মুসলিম, হা/২৯৭)। ই‘তিকাফ অবস্থায় নবী করীম (ﷺ) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে চলতেন। তিনি আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর কামরার দিকে মাথা ঢুকিয়ে দিতেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তাঁর মাথা ধুয়ে চিরুনি করে দিতেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০২৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৯৮)। এমনকি মাথা ধুয়েও দিতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩০১, ২০৩১; সহীহ মুসলিম, হা/২৯৭)। হাফেয ইবনে হাজার বলেন; “এ হাদিসে মাথা আঁচড়ানোর অধিভুক্ত হিসেবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সুগন্ধি ব্যবহার, গোসল করা, মাথা মুণ্ডন করা, পরিপাটি হওয়া ইত্যাদি জায়েয হওয়ার পক্ষে প্রমাণ রয়েছে। জমহুর আলেমের অভিমত হচ্ছে— মসজিদে যা কিছু করা মাকরুহ; কেবল সে সব ছাড়া ইতিকাফ অবস্থায় অন্যসব কিছু করা মাকরুহ নয়। (ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১২৬৫৮)
.
নবী করীম (ﷺ) ইতিকাফে থাকাবস্থায় কোন রোগী দেখতে যেতেন না, কোন জানাযায় শরীক হতেন না। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘ই‘তিকাফকারীর জন্য সুন্নত হলো- রোগী দেখতে না যাওয়া, জানাযার আলাতে না যাওয়া, কোন নারীকে স্পর্শ না করা ও মেলামেশা না করা এবং একান্ত যে প্রয়োজনে বের না হলে নয়; এমন প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়া।’ (আবু দাঊদ, হা/২৪৭৩, সনদ সহীহ)। ‘কোন নারীকে স্পর্শ না করা ও মেলামেশা না করা’-এর দ্বারা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সহবাস বুঝাতে চেয়েছেন। (নাইলুল আওত্বার, ৪/৩৫৭ পৃ.)। অতএব নবী করীম (ﷺ)-এর ই‘তিকাফ ছিল সহজতা ও কাঠিন্যবিহীন। গোটা সময় ছিল আল্লাহর যিকির, তাঁর ইবাদত ও লাইলাতুল ক্বদরের সন্ধানে মশগুল। (বিস্তারিত দ্র. ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৬৫৮; যাদুল মা‘আদ, ২/৯০ আল ইখলাস)।

❑ যেসব কাজ করলে ই‘তিকাফ বাতিল হয়:
_____________________________________
.
নিম্নোক্ত কাজের যে কোন একটি করলে ই‘তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন:

(১). স্ত্রী সহবাস: স্ত্রী সহবাস করলে ই‘তিকাফ বাতিল হয়ে যাবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন; আর তোমরা স্ত্রীগমন করো না যখন তোমরা মসজিদে ই‘তেকাফ অবস্থায় থাক। (সূরা বাক্বারাহ; ২/১৮৭)
.
(২). শারঈ ওযর ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হওয়া:
অতি প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে সামান্য ক্ষণের জন্যও ইচ্ছাকৃত বের হলে ই’তিকাফ নষ্ট হয়ে যায়। ই‘তিকাফকারী কোন অবস্থাতেই বিনা ওজরে মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না। কারণ, মসজিদে অবস্থান করা ই’তিকাফের জন্য অন্যতম শর্ত অথবা রুকন। তবে মানবিক প্রয়োজন অর্থাৎ পানাহার, প্রস্রাব-পায়খানা এবং শারঈ কোন ওযর থাকলে বের হতে পারবে।(বিদয়াতুল মুজতাহিদ ১/৪৭০; ফতহুল বারী ৪/২৭২; আস-সায়লুল জারার ২/১৩৬)
.
(৩). নেশা বা মস্তিষ্ক-বিকৃতির ফলে জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলে ই’তিকাফ বাতিল হয়ে যায়। কারণ, তাতে মানুষের ভালো-মন্দের তমীয থাকে না।
.
(৪). মহিলাদের মাসিক বা নিফাস শুরু হলে ই’তিকাফ বাতিল। কারণ, পবিত্রতা একটি শর্ত।
.
(৫). কোন কথা বা কর্মের মাধ্যমে শির্ক, কুফর করলে বা মুর্তাদ্দ হয়ে গেলে ই’তিকাফ বাতিল হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, তুমি শির্ক করলে তোমার আমল পন্ড হয়ে যাবে। (সূরা যুমার; ৩৯/৬৫, ফিকহুস সুন্নাহ; ১/৪২৬)
.
❑ ইতিকাফকারীর জন্য যা করা মুস্তাহাব:
_______________________________________
.
(১). ইতিকাফকারীর জন্য বেশী বেশী নফল ইবাদত করা, নিজেকে সালাত, কুরআন তেলাঅত, যিকর, ইস্তিগফার, দরূদ ও সালাম, দুআ ইত্যাদি ইবাদতে মশগুল রাখা মুস্তাহাব। যে ইবাদত দ্বারা বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে এবং মুসলিম তার মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্ক কায়েম করতে পারে। প্রকাশ যে, শরয়ী ইল্ম আলোচনা করা, (দ্বীনী বই-পুস্তক পাঠ করা), তফসীর, হাদীস, আম্বিয়া ও সালেহীনদের জীবনী গ্রন্থ পাঠ করা এবং দ্বীনে ইসলাম ও ফিক্হ সম্বন্ধীয় যে কোন বই-পুস্তক পাঠ করাও উক্ত ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত। (ফিকহুস সুন্নাহ খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ৪২৩)। তদনুরূপ মসজিদে অনুষ্ঠিত ইলমী মজলিসেও সে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে উত্তম হলো, বিশেষ ইবাদত দ্বারা ই’তিকাফ করা; যেমন সালাত, যিকর, কুরআন তেলাওয়াত প্রভৃতি। অবশ্য দিনে বা রাতে ২/১ টি দর্সে উপস্থিত হওয়া দূষণীয় নয়। কিন্তু ইলমী মজলিস যদি একটানা হতেই থাকে এবং ই’তিকাফকারীও সেই দর্সসমূহের পূর্বালোচনা ও পুনরালোচনা করতে থাকে, আর অনেক বৈঠক বা জালসায় উপস্থিত হয়ে বিশেষ ইবাদত করতে সুযোগ না পায়, তাহলে নিঃসন্দেহে তা ত্রুটির কথা। পক্ষান্তরে সাময়িক ও সবল্প দর্সে ২/১ বার হাযির হলে কোন ক্ষতি হয় না। (ইমাম উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে’ খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:৫০৩, ৫২৯)
.
(২). ইতিকাফকারী অপ্রয়োজনীয় ও বাজে কথা বলা থেকে দূরে থাকবে এবং তর্কাতর্কি, হুজ্জত-ঝগড়া ও গালাগালি করা থেকে বিরত থাকবে।
.
(৩). মসজিদের ভিতরে একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে সেখানে অবস্থান করবে। নাফে বলেন, আব্দুল্লাহ বিন উমার মসজিদের সেই জায়গাটিকে দেখিয়েছেন, যে জায়গায় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ইতিকাফ করতেন। (সহীহ মুসলিম হা/১১৭১)
.
❑ ই’তিকাফকারীর জন্য যা করা বৈধ:
__________________________________
.
(১). অতি প্রয়োজনীয় ব্যাপারে ই’তিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে। যেমন; ব্যক্তিগত প্রয়োজনে পানাহার করতে, পরনের কাপড় বা শীতের ঢাকা আনতে এবং পেশাব-পায়খানা করতে বের হওয়া বৈধ। তদনুরূপ শরয়ী প্রয়োজনে; যেমন নাপাকীর গোসল করতে অথবা ওযু করতে মসজিদের বাইরে যাওয়া অবৈধ নয়। (উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে’ খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:৫২৩)। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘(ইতিকাফের সময়) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছাড়া ঘরে আসতেন না। তিনি আরো বলেন, ই’তিকাফকারীর জন্য সুন্নত হলো- সে কোন রোগীকে দেখতে যাবে না, কোন জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না, স্ত্রী-স্পর্শ, কোলাকুলি, বা সঙ্গম করবে না, আর অতি প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হবে না। (আবু দাঊদ/২১৬০; ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ খন্ড:১০ পৃষ্ঠা: ৪১০)
.
(২). মসজিদের একাংশে তাঁবু টাঙ্গানো: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন ই‘তিকাফের ইচ্ছা করতেন; তখন আয়েশা (রাঃ) মসজিদে তাঁবু টাঙ্গিয়ে দিতেন। (সহীহ বুখারী হা/২০৩৩)। মসজিদের পিছন দিকে ই‘তিকাফকারী ছোট্ট তাঁবু টানিয়ে সেখানে ই‘তিকাফ করতে পারবে। কেননা রাসূল (ﷺ) যখন ই‘তিকাফ করতেন, তখন আয়েশা (রাঃ) তাঁর জন্য একটি তাঁবু (خِبَاءٌ) তৈরি করে দিতেন। আর এটি তিনি রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশেই করতেন। (বুখারী, হা/২০৩৩; মুসলিম, হা/১১৭৩)
.
(৩). মসজিদের ভিতরে ইতিকাফকারী পানাহার করতে ও ঘুমাতে পারে। তবে মসজিদের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার খেয়াল অবশ্যই রাখতে হবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়; ‘একুশতম দিনের সকালে আমরা আমাদের বিছানা-পত্র সরিয়ে দিলাম।(সহীহ বুখারী হা/২০৪০)
.
(৪). নিজের অথবা অন্যের প্রয়োজনে বৈধ কথা বলতে পারে। রাসূল (ﷺ) তাঁর স্ত্রী সাফিয়া (রাঃ)-এর সাথে কথা বলেছেন। সাফিয়া (রাঃ) বলেন, রামাদান মাসের শেষ দশ দিনে তিনি একবার রাসূল (ﷺ)-কে দেখতে আসলেন। রাসূল (ﷺ) তাঁর সাথে অনেক্ষণ কথা বললেন। এরপর তিনি উঠে গেলে রাসূল (ﷺ) তাঁর সাথে উঠলেন এবং মসজিদের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা/২০৩৫; সহীহ মুসলিম হা/২১৭৫)
.
(৫). মাথা আচড়ানো, লম্বা নখ কাটা, দৈহিক পরিচ্ছন্নতার খেয়াল রাখা, সুন্দর পোশাক পরা, আতর ব্যবহার করা ইত্যাদি কর্ম ইতিকাফকারীর জন্য বৈধ। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ইতিকাফ অবস্থায় নিজের মাথাকে মসজিদ থেকে বের করে হুজরায় আয়েশার সামনে ঝুঁকিয়ে দিতেন এবং তিনি মাসিক অবস্থাতেও তাঁর মাথা ধুয়ে দিতেন এবং আঁচড়ে দিতেন। (সহীহ বুখারী হা/২০২৮, ২০৩০, মুসলিম হা/২৯৭)
.
(৬). ইতিকাফ অবস্থায় যদি পরিবারের কেউ ই’তিকাফকারীর সাথে মসজিদে দেখা করতে আসে, তাহলে তাকে আগিয়ে বিদায় দেওয়ার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ। সাফিয়্যাহ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-কে দেখা করতে এলে তিনি এরূপ করেছিলেন। (সহীহ বুখারী হা/২০৩৫, মুসলিম ২১৭৫)
.
(৭). মসজিদে ওযু ও গোসল করা: রাসূল (ﷺ)-এর খাদেম আনাস (রাঃ) বলেন, تَوَضَّأ النَّبِىُ صَلَّ اللهُ علَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الَمَسْجِدِ وُضُوْءًا خَفِيْفًا، রাসূল (ﷺ) খুব অল্প পানি খরচ করে মসজিদে ওযু করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৬৪)
.
(৮). মুস্তাহাযা মহিলার ই‘তিকাফ করা জায়েয: মুস্তাহাযা মহিলার ই‘তিকাফ করা জায়েয। তবে তাকে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন মসজিদে নাপাকী না লাগে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর সাথে তাঁর এক মুস্তাহাযা স্ত্রী ই‘তিকাফরত অবস্থায় ছিলেন। তাঁর লাল ও হলুদ বর্ণের রক্ত প্রবাহিত হতো। সালাত আদায়কালে আমরা অনেক সময় তাঁর নীচে পাত্র রাখতাম। (বুখারী হা/৩০৯; সুনান দারেমী হা/৮৭৭)
.
❑ ইতিকাফকারীর জন্য যা করা মকরূহ:

ই’তিকাফকারীর জন্য কোন কিছু ক্রয়-বিক্রয় করা, অপ্রয়োজনে কথা বলা, ইবাদত মনে করে প্রয়োজনেও বিলকুল কথা না বলা ইত্যাদি মকরূহ। (ফিকহুস সুন্নাহ খন্ড:১ পৃষ্ঠা: ৪২৪)
.
❑ ইতিকাফ ভঙ্গ এবং তার কাযা করা:

ইতিকাফকারী যতটা সময় ইতিকাফ করার নিয়ত করেছিল ততটা সময় পূর্ণ হওয়ার আগে সে তা ভঙ্গ করতে পারে। একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের ইতিকাফের তাঁবু তৈরী দেখে তা ভেঙ্গে ফেলতে আদেশ করলেন এবং নিয়ত করার পরে তাঁদের সাথে নিজেও ইতিকাফ ত্যাগ করলেন। অতঃপর তিনি সেই ইতিকাফ শওয়াল মাসের প্রথম দশকে কাযা করেন। (সহীহ বুখারী ২০৩৩, মুসলিম ১১৭৩)। উক্ত হাদীস অনুসারে যে বক্তি নফল ইতিকাফ শুরু করার পর ভঙ্গ করে তার জন্য তা কাযা করা মুস্তাহাব। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নযরের ইতিকাফ শুরু করার পর কোন অসুবিধার ফলে ভঙ্গ করে, সুযোগ ও সামর্থ্য হলে তার জন্য তা কাযা করা ওয়াজিব। কিন্তু তা কাযা করার পূর্বেই সে যদি মারা যায়, তাহলে তার তরফ থেকে তার নিকটবর্তী ওয়ারেস কাযা করবে।
.
❑ ইতিকাফকারীর শিষ্টাচার: ই‘তিকাফকারীর জন্য করণীয় হলো, সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার ধ্যানে মগ্ন থেকে বেশী বেশী সালাত আদায়, ক্বুরআন তেলাওয়াত, যিকির এবং আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। বিশেষ করে বেজোড় রাত্রিগুলোতে লায়লাতুল ক্বদর অন্বেষণ করা। শুধু ঘুমালে ইতিকাফের উদ্দেশ্য হাছিল হবে না। অনেককে দেখা যায়, ই‘তিকাফে বসে দুনিয়াবী অহেতুক কথা, কাজ বা খোশ-গল্পে মত্ত থাকে, যা ই‘তিকাফের বৈশিষ্ট্য পরিপন্থী। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীগণের ই‘তিকাফ এরূপ ছিল না।
.
পরিশেষে, ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই লোক দেখানো এবং দুনিয়াবী স্বার্থ পরিহার করে, শুধু মাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইতিকাফ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শরীআতের বিধান মেনে ই‘তিকাফ করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।