সিয়াম অবস্থায় ইনজেকশন গ্রহনের বিধান

প্রশ্ন: সিয়াম অবস্থায় ইনজেকশন গ্রহনের বিধান কি? কোন ধরনের ইনজেকশন গ্রহণে সিয়াম ভঙ্গ হয় এবং কোন কোন ইনজেকশন গ্রহনে ভঙ্গ হয়না; তা বিস্তারিত।
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে রমাদ্বনে দিনের বেলা ইনজেকশন দেওয়ার ক্ষেত্রে দুটি পরিস্থিতি প্রযোজ্য হতে পারে: (১).খাদ্য জাতীয় ইনজেকশন (২).খাদ্য নয় বরং শুধুমাত্র প্রতিষেধক হিসাবে। প্রথমটি সিয়াম ভঙ্গের কারণ দ্বিতীয় টি নয়।এবার এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

▪️(১). খাদ্য জাতীয় ইনজেকশন:
.
যেসকল ইনজেকশন পুষ্টি প্রদান করে যা খাদ্য ও পানীয়ের স্থান নেয়; অর্থাৎ যেসব ইনজেকশন খাদ্য বা পুষ্টি হিসেবে প্রয়োগ করা হয়, এধরনের ইনজেকশন সিয়াম ভঙ্গ করে। কারণ তা খাওয়া-দাওয়ার মতো।অথচ সিয়াম মূলতঃ খাদ্য ভক্ষণ থেকে বিরত থাকার নাম। অতএব রমাদানে দিনে গ্লুকোজ বা অনুরূপ স্যালাইন গ্রহণ করা যাবে না। যেহেতু পানাহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে— রক্ত তৈরী। সেজন্য রোগী কোনো প্রকার পানাহার না করে শুধু এর ওপর নির্ভর করেই লম্বা সময় বেঁচে থাকতে পারে।অর্থাৎ খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ইনজেকশন পুশ করা হয়। আর এমন ইনজেকশন নিলে পানাহারের প্রয়োজন হয় না। সুতরাং এই প্রকার ইনজেকশন সাওম ভঙ্গ করবে। শাইখ আব্দুর রহমান সা‘দী, শাইখ ইবন বায, শাইখ মুহাম্মাদ উসাইমীনসহ আধুনিক যুগের বেশিরভাগ আলিম এই মত অবলম্বন করেছেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমী’-ও এই মত সমর্থন করেছে।তাদের দলীল হচ্ছে, যেহেতু এই ইনজেকশন খাদ্যের কাজ করে,সেহেতু তা সাওম ভঙ্গ করবে। (ইমাম উসাইমিন মাজালিসু শারহি রমাদান’ পৃষ্ঠা- ৭০)
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ কে-স্যালাইন, ভিটামিন ইনজেকশন, শিরাতে পুশকৃত ইনজেকশন ও সাপোজিটরি ব্যবহারে কি রোযা ভাঙ্গবে কিনা মর্মে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেছেন; যা কিছু পানাহার, কিংবা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত সেটাই রোযা ভঙ্গকারীর অন্তর্ভুক্ত। ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন; “রোযা ভঙ্গকারী বিষয় অনেক। এর মধ্যে রয়েছে- ইচ্ছাকৃত পানাহার। পানাহারের অধীনে পড়বে প্রত্যেক খাদ্য বা পানি যা পেটে প্রবেশ করে। রাইস টিউবের মাধ্যমে নাক দিয়ে যা পেটে পৌঁছানো হয় সেটাও এর অধিভুক্ত হবে। অনুরূপভাবে খাদ্যের বিকল্প ইনজেকশনও এর অধিভুক্ত হবে। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা:১৭৮)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.) বলেছেন; “রোযা ভঙ্গকারী বিষয়গুলো হচ্ছে- খাওয়া ও পান করা; সে খাদ্য বা পানীয় যে শ্রেণীরই হোক না কেন। খাওয়া ও পান করার অধিভুক্ত হবে ইনজেকশনসমূহ। অর্থাৎ ঐ সকল ইনজেকশন সমূহ যেগুলো শরীরে পুষ্টি যোগায় কিংবা খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে যে শক্তি অর্জিত হয় এসব ইনজেকশনের মাধ্যমেও একই শক্তি অর্জিত হয়। তাই এগুলো রোযা ভঙ্গ করবে..।” (ইমাম উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড:১৯; পৃষ্ঠা:২১)
.
ইমাম উসাইমীন অপর এক ফাতওয়ায় আরও বলেছেন; আলেমগণ মুফাত্তিরাত বা রোযা ভঙ্গকারী বিষয়গুলোর অধিভুক্ত করেছেন ঐ সব বিষয়কে যেগুলো পানাহারের পর্যায়ে পড়ে। যেমন- পুষ্টিদায়ক ইনজেকশন। যে সকল ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীর চাঙ্গা হয় কিংবা রোগ মুক্ত হয়; এটি সেসব ইনজেকশন নয়। বরং এটি হচ্ছে পুষ্টিদায়ক ইনজেকশন; যা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত। এ আলোচনার ভিত্তিতে বলা হয় যে- যেসব ইনজেকশন পানাহারের স্থলাভিষিক্ত নয় সেগুলো রোযা ভঙ্গ করবে না। চাই সে ইনজেকশন রগে দেয়া হোক কিংবা রানে দেয়া হোক কিংবা অন্য কোন স্থান দিয়ে দেয়া হোক। (ইমাম উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড:১৯: পৃষ্ঠা:১৯৯)
.
▪️(২). খাদ্য নয় বরং শুধুমাত্র প্রতিষেধক জাতীয় ইনজেকশন:
.
যেসব ইনজেকশন শুধুমাত্র প্রতিষেধক হিসাবে প্রয়োগ করা হয়, সেসব ইনজেকশন সিয়াম অবস্থায় নেয়া যাবে। এতে রোজা ভেঙ্গে যায় না বা প্রভাবিত হয় না। কারণ এসকল ইনজেকশন শরীরকে চাঙ্গা করার জন্য, ব্যথ্যা দূর করার জন্য, কিংবা লাঘব করার জন্য, জ্বর কমানোর জন্য গ্রহণ করা হয়। এগুলো কখনও চামড়ায় দেওয়া হয়; যেমন, ইনসুলিন। আবার কখনও মাংসপেশী বা শিরায় দেওয়া হয়। এসব ইনজেকশন পাকস্থলী পর্যন্ত যায় না। যেহেতু এগুলো পুষ্টিগুণ সম্পন্ন নয়; তাই এসব ইনজেকশনের কারণে সিয়ামের কোন ক্ষতি হয়না। উদাহরণতঃ ইনসুলিন, পেনেসিলিন কিংবা টীকা হিসেবে দেয়া হয়। চাই এসব ইনজেকশন মাংশপেশীতে দেয়া হোক কিংবা শিরাতে দেয়া হোক; এতে কোন পার্থক্য নেই।আধুনিক কালের প্রায় সকল আলিমের মতে, উল্লিখিত ইনজেকশন সাওম ভঙ্গ করবে না। ‘আন্তর্জাতিক ফিক্বহ একাডেমী’, সঊদী আরবের ‘আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল-বুহূছ আল-ইলমিইয়া ওয়াল-ইফতা’ এবং ‘দারুল ইফতা আল-মিছরিইয়া’-ও এই ফাতওয়া দিয়েছে।তারা বলেন, এসব ইনজেকশন খাদ্য, পানীয় বা এ জাতীয় কোনো কিছু নয় বলে সেগুলো সাওম ভঙ্গ করবে না।তবে তারা এটিও বলেছেন যদি রাতে এই ইনজেকশন গুলো দেয়া সম্ভব হয়, তাহলে রোজা রাখার ক্ষেত্রে তা উত্তম এবং নিরাপদ। (ইসলামী সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৪৯৭০৬ শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম রাহিমাহুল্লাহ-এর ফতোয়া সমগ্র খন্ড:৪ পৃষ্ঠা:১৮৯)
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ কে, রমাযানের দিনের বেলায় ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়ার হুকুম কি; এবং সেটা পুষ্টিদায়ক ইনজেকশন হোক কিংবা চিকিৎসার ইনজেকশন হোক? এসম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তারা বলেছেন, রোযাদারের জন্য রমাযানের দিনের বেলায় মাংসপেশী ও শিরাতে ইনজেকশন নেয়া জায়েয। তবে দিনের বেলায় পুষ্টিদায়ক ইনজেকশন গ্রহণ করা জায়েয নেই। কেননা তা খাদ্য ও পানীয়ের পর্যায়ভুক্ত। তাই এ ধরণের ইনজেকশন গ্রহণ করা রমাযানের রোযা ভাঙ্গার কৌশল হিসেবে গণ্য হবে। মাংসপেশী ও শিরাতে পুশকৃত ইনজেকশনও যদি রাতের বেলায় নেয়া যায় তাহলে সেটাই উত্তম। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা:২৫২)
.
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে রমাদান মাসে রোজাদারের জন্য শক্তিবর্ধক ইনজেকশন ব্যবহার করা জায়েজ কিনা জিজ্ঞেস করা হলে, জবাবে শাইখ বলেন; বিশুদ্ধ মতানুসারে- এতে কোনো সমস্যা নেই। শক্তিবর্ধক ও ব্যথানাশক ইনজেকশন ব্যবহার করায় কোনো সমস্যা নেই। তবে পুষ্টিকারক বা খাদ্য দানকারী ইনজেকশন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কেননা যেসব ইনজেকশন পুষ্টির জোগান দেয়, তা রোজাদারের রোজা ভেঙে ফেলে। কিন্তু কেউ যদি এই ইনজেকশন নিতে বাধ্য হয় এবং এই ইনজেকশন নিয়ে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তার জন্য রোগীদের বিধান প্রযোজ্য হবে। পক্ষান্তরে শক্তিবর্ধনের জন্য, অথবা ব্যথা নাশ করার জন্য, বা কিছু রক্ত নেওয়ার জন্য কিংবা অনুরূপ কোনো কাজের জন্য ইনজেকশন নিলে, বিশুদ্ধ মতানুসারে এতে রোজা নষ্ট হবে না।” (ইমাম বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-৭৪৭৬)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে শিরা, পেশী বা নিতম্বে ইনজেকশন দেওয়ার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাবে বলেছেন; শিরা, মাংসপেশি বা নিতম্বে ইনজেকশন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দোষ নেই এবং এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে না। কারণ, এটি রোজা ভঙ্গকারী জিনিসগুলির মধ্যে একটি নয়; এটা খাবার বা পানীয় নয়, এবং এটা খাওয়া বা পান করার মত নয়।আমরা ইতিমধ্যে ব্যাখ্যা করেছি যে- এটি রোজার উপর কোন প্রভাব ফেলে না। কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে খাবার ও পানীয়ের জায়গায় এমন কিছুর ইনজেকশন দেওয়া হলে রোযার উপর কি প্রভাব পড়ে। (শাইখ ইবনে উসাইমিনকে ফাতাওয়া আল-সিয়াম পৃষ্ঠা:২২০)
.
কেউ যদি রমাদানে দিনের বেলায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পান, তাহলে কি তার রোজা ভেঙ্গে যাবে? এই প্রশ্নটি বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে শাইখ বলেন, সিয়ামরত অবস্থায় করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করা যাবে। কেননা সিয়াম অবস্থায় খাদ্য নয় এরূপ বস্ত্ত দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করায় কোন বাধা নেই। অতএব যেসব টিকা, ইনস্যুলিন, ইনজেকশন বা ভ্যাকসিন খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় না বা শরীরে বাড়তি পুষ্টি যোগায় না, সেগুলো সিয়াম অবস্থায় চিকিৎসা হিসাবে গ্রহণ করা যাবে। অনুরূপ হাঁপানী রোগের জন্য সিয়াম অবস্থায় ‘ইনহেলার’ নেওয়া যাবে। কারণ, এগুলি স্যালাইন বা গ্লুকোজ ইনজেকশনের ন্যায় খাদ্য বা পানীয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়। (ইমাম উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল;খণ্ড:১৯: পৃষ্ঠা:১৯৬-১৯৯ ও ২২৫, খন্ড:২০; পৃষ্ঠা২৮৪)
.
▪️সিয়াম অবস্থায় চিকিৎসা সংক্রান্ত আরও কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো। যেমন:
_______________________________________
প্রশ্ন: সিয়াম পালনকারীর শ্বাসকষ্ট উপশমকারী স্প্রে (ইনহেইলার বা পাফার) ব্যবহারের বিধান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জবাবে সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায ও শায়খ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘‘রামাযান মাসে দিনের বেলায় ইনহেলার বা পাফার ব্যবহার করলে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। কুয়েতের ফিক্বহশাস্ত্রবিদরা এই মতটিকেই গ্রহণ করেছেন।” (মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি বায, ১৫/২৬৫ পৃ.; মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি উসাইমীন, ১৯/২০৯ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩৭৬৫০)।
.
▪️শ্বাসকষ্ট উপশমকারী স্প্রে (ইনহেইলার বা পাফার)
সিয়াম ভঙ্গ না করার কয়েকটি কারণ হল:
.
(১). প্রথমতঃ এ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে যে স্প্রে ব্যবহার করা হয়, তা মূলত হাওয়া বা বায়ু, এর সীমানা হলো ফুসফুস এবং এর কাজ হলো ঐ ধমনী ও শ্বাসনালীকে প্রসারিত করা, যেগুলো হাঁপানি দ্বারা সংকুচিত হয়। তাছাড়া এই স্প্রে পাকস্থলীতে পৌঁছায় না এবং রোগীর জন্য খাদ্য বা পানীর প্রয়োজনও পূরণ করে না। (মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি উসাইমীন, ১৯/২১১ পৃ.; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, পৃ. ৪৭৫; মাজাল্লাহ, মাজমাঊল ফিক্বহিল ইসলামী, ১০/৬৪১ পৃ.)।
.
(২). দ্বিতীয়তঃ স্প্রে খাওয়া বা পানের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং এটি রোগীর জন্য পুষ্টিও সরবরাহ করে না। (মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি বায, ১৫/২৬৫ পৃ.; মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি উসাইমীন, ১৯/২১১ পৃ.)।
.
(৩). তৃতীয়তঃ শ্বাসকষ্ট উপশমকারী একটি স্প্রের বোতলে সব মিলিয়ে ১০মিলিমিটার তরল ঔষুধ থাকে, যা দিয়ে ২০০বার স্প্রে করা যায়। দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেক বার স্প্রেতে এক ফোঁটারও কম তরল পদার্থ থাকে। এই এক ফোঁটারও কম তরল পদার্থ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় ভাগটি প্রবেশ করে শ্বাসনালীতে, ছোট ভাগটি থেকে যায় গলনালীতে এবং খুবই সামান্য পরিমাণ পাকস্থলীতে প্রবেশ করতে পারে। এই পরিমাণটি এতই যৎসামান্য যে, তা হিসাবে আসে না। যেমনিভাবে কুলি ও নাকের সামান্য অংশ পানি হিসাবে আসে না, বরং কুলি করলে ও নাকে পানি দিলে যে পরিমাণ পানি ভেতরে প্রবেশ করে, তার পরিমাণ স্প্রের চেয়ে বেশি। (মাজাল্লাহ, মাজমাঊল ফিক্বহিল ইসলামী, ১০/৭৫৯ পৃ.)।
.
(৪). চতুর্থতঃ দাঁতন ব্যবহারের উপর ক্বিয়াস করে এটিকে জায়েয করা হয়েছে। ডাক্তারগণ বলে থাকেন, আরাক গাছের মিসওয়াকে আট প্রকার রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা দাঁত ও মাড়িকে রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। পদার্থগুলো লালার সাথে মিশে গলনালীতে প্রবেশ করে। সঊদী আরবের ফাতাওয়া বোর্ডের স্থায়ী কমিটি এই মতটিই গ্রহণ করেছেন। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ১/১৩০ পৃ.; মাজাল্লাহ, মাজমাঊল ফিক্বহিল ইসলামী, ১০/৬৫৫ পৃ.)।
.
▪️প্রশ্ন: সিয়াম অবস্থায় ক্যাথেটার ও সাপোজিটোরী ব্যবহার করা যাবে কি?
.
উত্তর : (২).প্রথমতঃ ক্যাথেটার (Catheter) হল: চিকিৎসায় ব্যবহৃত এক প্রকার সরু পাইপ; যা চিকিৎসাকার্যে ব্যবহারযোগ্য উপাদান দ্বারা তৈরি করা হয়। রোগের চিকিৎসা বা শল্যচিকিৎসার প্রয়োজনে অনেক সময় শরীরে ক্যাথেটার প্রবেশ করানোর প্রয়োজন পড়ে। শরীরের গহ্বর, নালী বা রক্তবাহিকায় ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। কাজের দিক থেকে শরীর থেকে তরল নিষ্কাশন করা অথবা তরল বা গ্যাস প্রয়োগ করা অথবা শল্যচিকিৎসার প্রয়োজনে কোন যন্ত্র বা সরঞ্জাম প্রবেশ করানোসহ বিভিন্ন কাজে ক্যাথেটার ব্যবহৃত হযে থাকে। (উইকিপিডিয়া)। ইসলামী বিশেষজ্ঞ ও ফিক্বহশাস্ত্রবিদরা বলেন, ক্যাথেটার, এন্ডোস্কোপি, কোনপ্রকারের ঔষধ, মূত্রাশয় পরিষ্কার করার দ্রবণ বা এক্স-রে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এমন কোন পদার্থ শরীরে প্রবেশ করালে ছিয়াম ভঙ্গ হয় না। কেননা মলদ্বার বা পেশাবদ্বার দিয়ে যা কিছু প্রবেশ করানো হয় তার মাধ্যমে পেট খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। (মাজমাঊল ফিক্বহিল ইসলামী, সিদ্ধান্ত নং-৯৩, সংখ্যা নং-১০, পৃ.-১)। এ প্রসঙ্গে শায়খ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ক্যাথেটার, এন্ডোস্কোপি এবং এ জাতীয় অন্যান্য জিনিস মুখমণ্ডল দিয়ে প্রবেশ করালেও সিয়াম নষ্ট হয় না। (আশ-শারহুল মুমতি‘, ৬/৩৭০ পৃ.)।‌ ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যেহেতু এগুলোর সঙ্গে পেটের কোন সম্পর্ক নেই, তাই সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না। (আল-মুগনী, ৩/১২৬ পৃ.)। শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘পেট থেকে মলমূত্র বা অন্য কোন বর্জিত পদার্থ নিষ্কাশনের জন্য রোগীর শরীরে নল বা টিউব বসালে সিয়াম ভঙ্গ হয় না। কারণ তা খাদ্যদ্রব্য বা পানীয় বস্তু নয় এবং সেগুলো খাদ্য বা পানীয় হিসাবে ব্যবহৃতও হয় না। (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩৩১০৯)।
.
(২). দ্বিতীয়তঃ সাপোজিটোর বা সাপোজিটরি (Suppository) বলতে বুঝায়:এটি এক ধরনের ঔষধ বিতরণ ব্যবস্থা; যার মাধ্যমে কঠিন, তরল বা বায়ুবীয় ঔষধ উপাদান পায়ুপথে প্রয়োগ করে বিতরণ করা হয়। সাধারণত মুখে ঔষুধ খাওয়ানো সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ। কিন্তু যদি কোনভাবেই মুখ দ্বারা খাওয়ানো সম্ভব না হয়, যেমন রোগী অচেতন কিংবা শিশুদের ক্ষেত্রে গলায় আটকে যাবার ভয় থাকলে কিংবা রোগী ক্রমাগত বমি করলে, কেবল তখনই পায়ুপথে সাপোজিটোর প্রয়োগ করা যাবে, অন্যথায় নয় (উইকিপিডিয়া)। সিয়াম থাকা অবস্থায় দিনের বেলায় সাপোজিটোর বা সাপোজিটরি ব্যবহার করলে সিয়াম নষ্ট হয় না। কেননা এটি খাওয়া ও পানের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং এর মধ্যে এমন কোন জিনিস থাকে না যা খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। (আল-মুহাল্লা, ৬/২০৩; মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি উসাইমীন, ১৯/২০৫; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২২৯২৭; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-২৩৬৫ আল ইখলাস)
.
▪️প্রশ্ন: সিয়াম থাকা অবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন গ্রহণের বিধান কি? বিশেষতঃ যাদের দিনে একাধিকবার গ্রহণের প্রয়োজন হয়।
.
উত্তর: ইফতারের পর ও সেহরীর পূর্বে ইনসুলিন নেওয়াই উত্তম। যদি এরপরেও প্রয়োজন হয়, সেটা দিনের বেলায় সিয়াম অবস্থায় নিতে পারে। কেননা ইনসুলিন গ্রহণ করা সিয়াম ভঙ্গের কারণ নয়। আর এটি কোন খাদ্য নয়। অনুরূপ হাঁপানী রোগের জন্য সিয়াম অবস্থায় ‘ইনহেলার’ নেওয়া যায়। (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৫/২৪৫; মাজাল্লাতু মাজমা‘ইল ফিক্বহিল ইসলামী ১০/৯১৩; উসাইমীন মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/১৯৬-৯৯) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।