সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত আদায়ের বিধান এবং উক্ত সালাত আদায়ের নিয়ম

ভূমিকা: ইস্তিসকা অর্থ: পান করার জন্য বৃষ্টি বা পানি প্রার্থনা করা। শারঈ পরিভাষায় ব্যাপক খরা ও অনাবৃষ্টির সময় বিশেষ পদ্ধতিতে সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে পানি প্রার্থনা করাকে ‘সালাতুল ইস্তিসকা’ বলা হয়। সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামায অনাবৃষ্টির সময় মহান প্রতিপালকের নিকট বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে পড়া সুন্নত ৬ষ্ঠ হিজরীর রামাযান মাসে সর্বপ্রথম মদ্বীনায় ইস্তিসকার সালাতের প্রবর্তন হয়। (মির‘আত ৫/১৭০)
.
◾জমিনে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার কারণ কি?
_______________________________
শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা ভাবনা করলে দেখা যায়। পৃথিবীতে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ হল, মানুষের পাপ ও বিশেষ করে যাকাত বন্ধ করে দেওয়া। মহানবী (ﷺ) বলেন, “হে মুহাজিরদল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে (উপযুক্ত শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে)। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, যাতে তোমরা তা প্রত্যক্ষ না কর। যখনই কোন জাতির মধ্যে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখনই সেই জাতির মধ্যে প্লেগ এবং এমন মহামারী ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। যে জাতিই মাপ ও ওজনে কম দেবে সে জাতিই দুর্ভিক্ষ, কঠিন খাদ্য-সংকট এবং শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হবে। যে জাতিই তার মালের যাকাত দেওয়া বন্ধ করবে সে জাতির জন্যই আকাশ হতে বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদি অন্যান্য প্রাণীকুল না থাকত তাহলে তাদের জন্য আদৌ বৃষ্টি হত না।যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে সে জাতির উপরেই তাদের বিজাতীয় শত্রুদলকে ক্ষমতাসীন করা হবে; যারা তাদের মালিকানা-ভুক্ত বহু ধন-সম্পদ নিজেদের কুক্ষিগত করবে।আর যে জাতির শাসকগোষ্ঠী যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর কিতাব (বিধান) অনুযায়ী দেশ শাসন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাদের মাঝে গৃহদ্বন্দ্ব অবস্থায়ী রাখবেন।”
(বাইহাকী,ইবনে মাজাহ হা/ ৪০১৯ সহীহ আত তারগীব হা/৭৫৯)
.
ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাঁচটির প্রতিফল পাঁচটি। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসূল! পাঁচটির প্রতিফল পাঁচটি কী কী? তিনি বললেন, যে জাতিই (আল্লাহর) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, সেই জাতির উপরেই তাদের শত্রুকে ক্ষমতাসীন করা হবে। যে জাতিই আল্লাহর অবতীর্ণকৃত সংবিধান ছাড়া অন্য দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, সেই জাতির মাঝেই দরিদ্রতা ব্যাপক হবে। যে জাতির মাঝে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ পাবে, সে জাতির মাঝেই মৃত্যু ব্যাপক হবে। যে জাতিই যাকাত দেওয়া বন্ধ করবে, সেই জাতির জন্যই বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হবে। যে জাতি দাঁড়ি-মারা শুরু করবে, সে জাতি ফসল থেকে বঞ্চিত হবে এবং দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হবে। (ত্বাবারানীর কাবীর হা/১০৮৩০ সহীহ আত তারগীব হা/ ৭৬৫)
.
◾কখন কি প্রেক্ষিতে এ সালাত পড়তে হয়?
____________________________________
সালাতুল ইস্তিসকা আদায় করার উপযুক্ত সময় হল যখন অনাবৃষ্টি, খরা এবং দূর্ভিক্ষ দেখা দিবে তখন আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চেয়ে উক্ত সালাত আদায় করতে হয়। হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,বৃষ্টির জন্য উক্ত সালাত আদায় করা সুন্নাত। এটি রাসূল ﷺ এবং তার সাহাবীদের আমল থেকে প্রমানিত। (ইবনে কুদামাহ মুগনী- ৩/৩৩৪)। হাদীসে এসেছে আর খরা, অনাবৃষ্টি ও দূর্ভিক্ষের প্রধান কারণ হলো পাপ কাজ বেড়ে যাওয়া। (ইবনে মাজাহ হা/ ৪০১৯)।

◾কিভাবে সালাতুল ইস্তিসকা আদায় করতে হয়:
_______________________________________
মলিন ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরে চাদর গায়ে দিয়ে বিনয়-একান্ত বিনয়ের সাথে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ঈদগাহ ময়দান অভিমুখে রওয়ানা হবে। সাথে ইমামের জন্য মিম্বর নিতে পারবে। অতঃপর নিম্নের যে কোন একটি পদ্ধতি অবলম্বনে আযান ইকামত ছাড়া দুই রাকআত ইস্তিসকার সালাত আদায় করবে। সালাতুল ইস্তিসকা আদায়ের চারটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
.
(১). বৃষ্টি প্রার্থনার প্রথম পদ্ধতি:
.
এই সালাত ঈদের নামাযের মতই প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা পর অতিরিক্ত সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে ওঠে দাঁড়ানোর পর অতিরিক্ত আরো পাঁচ তাকবীর দেওয়ার বিধানও রয়েছে তবে এই অতিরিক্ত তাকবীর গুলো মুস্তাহাব কম বেশি হলে বা কেউ অতিরিক্ত তাকবীর না দিয়ে সাধারণভাবে দুই রাকাআত সালাত আদায় করলেও কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। প্রত্যেক রাকআতে সশব্দে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়া যায়,তবে প্রথম রাকআতে সূরা ‘আলা’ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা গাশিয়া পড়া উত্তম। নামাযের আগে অথবা পরে খুতবা দেওয়া যায়। যদি সালাত শেষে খুতবা দেওয়া হয় তাহলে ইমাম মিম্বরে বসে বা দাঁড়িয়ে অথবা মিম্বর ছাড়াই মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রথমে আল্লা-হু আকবর, আলহামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আলামীন ওয়াছস সালাতু ওয়াসসালামু ‘আলা রাসূলিহিল কারীম’ বলে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ শেষে মুছল্লীদের প্রতি ইস্তিস্ক্বার গুরুত্ব সম্পর্কে ঈমান বর্ধক উপদেশসহ সংক্ষিপ্ত খুৎবা দিবেন। (আবু দাঊদ হা/১১৬৫, ইবনু আববাস (রাঃ) হতে; সহীহ বুখারী হা/১০২২ ‘দাঁড়িয়ে ইস্তিস্কার দো‘আ পাঠ’ অনুচ্ছেদ-১৫; মির‘আত ৫/১৮৯) খুতবায় ইমাম সাহেব বেশী বেশী ইস্তিগফার ও দুআ করবেন। মুক্তাদীগণ সে দুআয় ‘আমীন’ বলবে। এই দুআয় বিশেষ করে ইমাম (এবং সকলে) খুব বেশী হাত তুলবেন। মাথা বরাবর হাত তুলে দুআ করবেন। (আবূদাঊদ, সুনান ১১৬৮, ইবনে হিব্বান, সহীহ, মিশকাত ১৫০৪) এমন কি চাদর গায়ে থাকলে তাতে বগলের সাদা অংশ দেখা যাবে। (সহীহ বুখারী ১০৩১, মুসলিম, সহীহ ৮৯৫)
.
বৃষ্টি প্রার্থনার সময় উল্টা হাতে দুআ করা মুস্তাহাব। অর্থাৎ, সাধারণ প্রার্থনার করার সময় হাতের তেলো বা ভিতর দিকটা হবে আকাশের দিকে এবং বৃষ্টি প্রার্থনার সময় হবে মাটির দিকে; আর হাতের বাহির দিকটা হবে আকাশের দিকে। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ‘একদা নবী (ﷺ) বৃষ্টি প্রার্থনা করলে তিনি তাঁর হাতের পিঠের দিকটা আকাশের দিকে তুলে ইঙ্গিত করলেন।’ (সহীহ মুসলিম, সহীহ ৮৯৫-৮৯৬) ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ্‌ প্রমুখ উলামাগণ বলেন, কোন কিছু চাওয়া হয় হাতের ভিতরের অংশ দিয়েই, বাইরের অংশ দিয়ে নয়। আসলে আল্লাহর নবী (ﷺ) হাত দুটিকে মাথার উপরে খুব বেশী উত্তোলন করলে দেখে মনে হয়েছিল যে, তিনি হাতের বাইরের অংশ আকাশের দিকে করেছিলেন। (আল-ইনসাফ ২/৪৫৮, ৫/২৮৩)
.
অতঃপর কিবলামুখ হয়ে ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ে চাদর উল্টাবেন; অর্থাৎ, চাদরের ডান দিকটাকে বাম দিকে, বাম দিকটাকে ডান দিকে করে নেবেন এবং উপর দিকটা নিচের দিকে ও নিচের দিকটা উপর দিকে করবেন। এরপর সকলে পুনরায় (একাকী) দুআ করে বাড়ি ফিরবে। চাদর উল্টানো এবং দুআর সময় উল্টাহাত করা আসলে এক প্রকার কর্মগত দুআ। অর্থাৎ, হে মওলা! তুমি আমাদের এই চাদর ওহাত উল্টানোর মত আমাদের বর্তমান দুরবস্থাও পাল্টে দাও। আমাদের অনাবৃষ্টির অবস্থাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দাও। (নামাযে নববী, সাইয়েদ শাফীকুর রহ্‌মান, লাহোর ছাপা ২৩৪পৃ:) প্রকাশ থাকে যে, ইস্তিসকার জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন নেই। যে কোন একটি দিন ঠিক করে সেই দিনে নামায পড়া যায়। রোযা রাখা, পশু নেওয়া ইত্যাদির কথাও হাদীসে নেই। (ইমাম উসামীন আশ শরহুল মুমতে’ খন্ড: ৫ পৃষ্ঠা: ২৭১-২৭২)
.
(২). বৃষ্টি প্রার্থনার দ্বিতীয় পদ্ধতি:
.
জুমআর খুতবায় ইমাম সাহেব হাত তুলে দুআ করবেন এবং মুক্তাদীরাও হাত তুলে ‘আমীন-আমীন’ বলবে। একদা মহানবী (ﷺ) জুমআর খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক মরুবাসী (বেদুঈন) উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! মাল-ধন ধ্বংস হয়ে গেল আর পরিবার পরিজন (খাদ্যের অভাবে) ক্ষুধার্ত থেকে গেল। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন।’ তখন নবী (ﷺ) নিজের দুইহাত তুলে দুআ করলেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে দুআর জন্য হাত তুলল। ফলে এমন বৃষ্টি শুরু হল যে পরবর্তী জুমআতে উক্ত (বা অন্য এক) ব্যক্তি পুনরায় খাড়া হয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ঘর-বাড়ি ভেঙে গেল এবং মাল-ধন ডুবে গেল। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য দুআ করুন!’ মহানবী (ﷺ) তখন নিজেরহাত তুলে পুনরায় বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার জন্য দুআ করলেন এবং বৃষ্টিও থেমে গেল। (বুখারী ৯৩২, ৯৩৩, ১০১৩, ১০২৯, মুসলিম, সহীহ ৮৯৭নং, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ ৩/২৫৬, ২৭১)

(৩). বৃষ্টি প্রার্থনার তৃতীয় পদ্ধতি:
.
শুরাহ্‌বীল বিন সিমত একদা কা’ব বিন মুর্রাহ্‌কে আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর হাদীস বর্ণনা করতে বললে তিনি বললেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, ‘আপনি মুযার (গোত্রের) জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন।’ তিনি বললেন, “তুমি তো বেশ দুঃসাহ্‌সিক! (কেবল) মুযারের জন্য (বৃষ্টি)?” লোকটি বলল, ‘আপনি আল্লাহ আযযা অজাল্লার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন, তিনি আপনাকে সাহায্য করেছেন। আল্লাহ আযযা অজাল্লার কাছে দুআ করেছেন, তিনি তা কবুল করেছেন।’ এ কথা শোনার পর মহানবী (ﷺ) দুইহাত তুলে বৃষ্টি প্রার্থনার দুআ করলেন এবং এত বৃষ্টি হল যে, তা বন্ধ করার জন্য পুনরায় তিনি দুআ করলেন। (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ১২৬৯ বায়হাকী, ইবনে আবী শাইবা)
.
(৪). বৃষ্টি প্রার্থনার চতুর্থ পদ্ধতি:
.
ইমাম শা’বী কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা উমার (রাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করতে বের হয়ে কেবল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে ফিরে এলেন। লোকেরা বলল, ‘আমরা তো আপনাকে বৃষ্টি চাইতে দেখলাম না?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি সেই নক্ষত্রের মাঝে বৃষ্টি প্রার্থনা করেছি, যাতে বৃষ্টি হয়ে থাকে। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন,(اِسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً، يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَاراً)অর্থাৎ,তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) কর। তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত করবেন। (কুরআন মাজীদ ৭১/১০-১১) মহান আল্লাহ আরো বলেছেন,তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) কর। অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর; তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (কুরআন মাজীদ ১১/৫২) (সুনানু সাঈদ বিন মানসূর, আব্দুর রাযযাক, মুসান্নাফ, বায়হাকী, ইবনে আবী শাইবা ৮৩৪৩)

বৃষ্টি-প্রার্থনার কতিপয় দুআ:
(1) اَلْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ، مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيْدُ- اَللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ عَلَيْنَا قُوَّةً وَّ بَلاَغًا إِلَى حِيْنٍ-

(১) উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন, আররহমা-নির রহীম, মা-লিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ইয়াফ‘আলু মা ইউরীদু। আল্লা-হুম্মা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আনতাল গানিইয়ু ওয়া নাহ্নুল ফুক্বারা-উ। আনঝিল ‘আলায়নাল গায়ছা ওয়াজ‘আল মা আনঝালতা ‘আলায়না কুউওয়াতাঁও ওয়া বালা-গান ইলা হীন।

অর্থ: সকল প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য। যিনি করুণাময় ও কৃপানিধান। যিনি বিচার দিবসের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনি যা ইচ্ছা তাই-ই করেন। হে প্রভু! আপনি আল্লাহ। আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আপনি মুখাপেক্ষীহীন ও আমরা সবাই মুখাপেক্ষী। আমাদের উপরে আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করুন! যে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তা যেন আমাদের জন্য শক্তির কারণ হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদী কল্যাণ লাভে সহায়ক হয়’। (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৮ সালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ইস্তিসকা’ অনুচ্ছেদ-৫২)

(2) اَللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَاحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ-

(২) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাস্ক্বে ‘ইবা-দাকা ওয়া বাহা-এমাকা ওয়ানশুর রহমাতাকা ওয়াহ্ইয়ে বালাদাকাল মাইয়েতা।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি পান করান আপনার বান্দাদেরকে ও জীবজন্তু সমূহকে এবং আপনার রহমত ছড়িয়ে দিন ও আপনার মৃত জনপদকে পুনর্জীবিত করুন’। (মুওয়াত্ত্বা, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ইস্তিসক্বা’ অনুচ্ছেদ-৫২।)

(3) اَللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُّغِيْثًا مَّرِيْئًا مَّرِيْعًا، نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ-

(৩) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাসক্বেনা গায়ছাম মুগীছাম মারীআম মারী‘আ, না-ফে‘আন গায়রা যা-র্রিন ‘আ-জেলান গায়রা আ-জেলিন।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এমন বৃষ্টি দান করুন, যা চাহিদা পূরণকারী, পিপাসা নিবারণকারী ও শস্য উৎপাদনকারী। যা ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী এবং যা দেরীতে নয় বরং দ্রুত আগমনকারী’। (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৭।)

এই সময় বৃষ্টি দেখলে বলবে, اَللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا আল্লা-হুম্মা ছাইয়েবান না-ফে‘আন (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন)। (সহীহ বুখারী হা/১০৩২, মিশকাত হা/১৫০০) বৃষ্টিতে চাদর ভিজিয়ে আল্লাহর বিশেষ রহমত মনে করে আগ্রহের সাথে তা বরণ করে নিতে হবে। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/১৫০১)

◾সালাতুল ইস্তিসকা সম্পর্কে যে বিষয়গুলো জেনে রাখা ভাল:
_________________________________
(১). সালাতুল ইস্তিসকার সালাত দু-রাকাত। আযান ইকামতবিহীন জোরে কিরাআতে উক্ত সালাত আদায় করতে হয়।

(২). এ সালাতের কোন নির্ধারিত সময় বা দিন নেই, নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যেকোন সময় বৃষ্টির সালাত আদায় করা যায়। তবে উত্তম হল ঈদের সালাতের মতো সকালে সূর্যোদয়ের একটু পরপরই পড়া।

(৩). শিশু ও নারীদেরকেও এ সালাতে নিয়ে যাওয়া, তবে বৃদ্ধদের উপস্থিতি আরো উত্তম।

(৪). জীবিত কোন মুত্তাক্বী পরহেযগার ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবে। রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পরে তাঁর চাচা আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে ওমর (রাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন। (সহীহ বুখারী হা/১০১০, মিশকাত হা/১৫০৯)

(৫). কোন মৃত ব্যক্তির দোহাই বা অসীলা দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবেনা। কারণ এটি হ’ল সবচেয়ে বড় শিরক।

(৬). দু’আর সময় ইমাম সাহেব মুসল্লীদের দিকে পিঠ দিয়ে কিবলামুখী হয়ে প্রার্থনা করবে, দু’আর সময় হাত যতখানী সম্ভব উপরে উঠিয়ে দুআ করবে, রাসূল ﷺ যখন হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন তখন তার দুই বোগল পর্যন্ত নজরে আসত। দু’হাতের পিঠ উপরে এবং তালু নিচের দিকে দিয়ে দু’আ করবে,সে সময় গায়ের চাদর বা রুমান উল্টিয়ে পরবে

(৭). ঈদের সালাতের মতো প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা পর অতিরিক্ত সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে ওঠে দাঁড়ানোর পর অতিরিক্ত আরো পাঁচ তাকবীর দেওয়ার বিধানও রয়েছে। (শরহেস্ সুন্নাহ লিলবাগাউয়ী- ৪/৪০২) তবে অতিরিক্ত তাকবির না দিলে বা কম বেশি হলে সমস্যা নেই ইনসাআল্লাহ।

(৮) ইস্তিসকার খুৎবা সাধারণ খুৎবার মত নয়। এটির সবটুকুই কেবল আকুতি ভরা দো‘আ আর তাকবীর মাত্র। (আবুদাঊদ হা/১১৬৫)

(৯) অতিবৃষ্টি হ’লে বলবে, اَللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا আল্লা-হুম্মা সাইয়েবান না-ফে‘আন (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন)। (বুখারী হা/১০৩২, মিশকাত হা/১৫০০)। আর তাতে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা দেখা দিলে তা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করে বলবে, اَللهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اَللّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالظِّرَابِ وَ بُطُوْنِ الأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ।

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহাওয়া-লাইনা অলা আলাইনা, আল্লা-হুম্মা আলাল আ-কামি অযযিরা-বি অবুতূনিল আউদিয়াতি অমানা-বিতিশ শাজার।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের আশে-পাশে বর্ষাও, আমাদের উপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়, টিলা, উপত্যকা এবং বৃক্ষাদির উদগত হওয়ার স্থানে বর্ষাও। (বুখারী,হা/৯৩৩, ১০২১; সহীহ মুসলিম,৮৯৭ আবুদাঊদ হা/১১৭৪)

(১০). যেনে রাখা ভাল যে, বৃষ্টি-প্রার্থনার জন্য ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া, গোবর-কাদা বা রং ছিটাছিটি করে খেল খেলা, কারো চুলো ভেঙ্গে দেওয়া ইত্যাদি প্রথা শিরকী তথা বিজাতীয় প্রথা।
.
মহান আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
.
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।