সালাতুল ইশরাক, দোহা, চাশত এবং সালাতুল আওয়াবীন সালাত

প্রশ্ন: সালাতুল ইশরাক, দোহা, চাশত এবং সালাতুল আওয়াবীন এর পরিচয় ও ফজিলত কি? উক্ত সালাত গুলো কি একই সালাত?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: আজকে আমরা সালাতুল ইশরাক, দোহা, চাশত এবং সালাতুল আওয়াবীন এর পরিচয় ও ফজিলত এবং এসব সালাতের সময়, নিয়ম ও রাকাত সংখ্যা সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করব ইন শাহ্ আল্লাহ।

নফল আরবী শব্দ অর্থ: অতিরিক্ত, বাড়তি, ঐচ্ছিক ইত্যাদি। ফরয সালাত ছাড়া অন্য যে সালাত মানুষ আদায় করে, তাই নফল সালাত। সুন্নাত, নফল, মানদূব ও মুস্তাহাব এসবই সমার্থক। সবগুলো শব্দই কাছাকাছি একই অর্থ বহন করে। নফল সালাত আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার একটি বড় মাধ্যম। এর মাধ্যমে হাশরের মাঠের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাইলে ফরজ সালাতের পাশাপাশি নফল সালাত আদায় করা উচিত। ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে সালাতুল ইশরাক, দোহা, চাশত এবং সালাতুল আওয়াবীনের সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। এই সালাতগুলে বাড়ীতে পড়া উত্তম’। এবং সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কখনও পড়তেন, কখনো ছাড়তেন।(মির‘আত শরহ মিশকাত সালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮; ৪/৩৪৪-৫৮) আমরা উপরোক্ত তিনটি সালাত সম্পর্কে আলাদা আলাদা জানার চেষ্টা করব।

❖ ইশরাক নামাজের পরিচয় ও ফজিলত:
____________________________________
ইশরাক মানে প্রভাত,সকাল, সূর্যোদয়। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়বে, এরপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে যিকির করবে, এরপর সূর্যোদয় হলে (সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর) দুই রাকাত নামাজ পড়বে, তার জন্য পরিপূর্ণ হজ্ব ও উমরার সওয়াব লেখা হবে।’’ কথাটি তিনি জোর দিয়ে তিনবার বলেন। (তিরমিযী, হা/৫৮৬; মিশকাত, হা/৯৭১; সনদ হাসান, সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৪০৩)। এই হাদিসে এই নামাজের কোনো নাম বর্ণিত হয়নি। তবে, বিদ্বানগণের নিকট এই নামাজ ইশরাকের নামাজ বা সূর্যোদয়ের নামাজ হিসেবে পরিচিত।
.
❖ দোহা ও চাশতের নামাজের পরিচয়:
___________________________________
দোহা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ হল, দিনের প্রথম প্রহর। ফার্সিতে একে বলা হয় ‘চাশত’। অতএব, দোহা এবং চাশত একই নামাজ। পরিভাষায় সূর্যোদয়ের পর সূর্যের তাপ কিছুটা প্রখর হওয়ার পর যে নামাজ পড়া হয়, সেটিকেই দোহার নামাজ বলা হয়। সময়ের হিসেবে যোহর সালাতের দেড় বা দু ঘণ্টা পূর্বে এটি আদায় করা সবচেয়ে উত্তম।
.
❖ সলাতুল আওয়াবীন পরিচয়:
____________________________
আওয়াবীন (أَوَّابٌ) শব্দের অর্থ হল বারবার প্রত্যাবর্তনকারী। অর্থাৎ, আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাবর্তনকারী আল্লাহমুখী ব্যক্তি। সালাতুল আওয়াবিন হল, আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাবর্তনকারীদের নামাজ। এটিই সালাতুয যোহা বা চাশতের অপর নাম। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সালাতুয যোহা (চাশতের নামায) এর প্রতি কেবল সেই যত্নবান হতে পারে যে, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। সুতরাং এটাই হল ‘সালাতুল আওয়াবীন’ বা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের সালাত।” (সহিহ ইবনে খুযায়মা, শাইখ আলবানী এটিকে হাসান বলেছেেন। দ্রষ্টব্য: সহিহ তারগীব তারহীব ১/১৬৪)। অপর বর্ননায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—.صلاة الأوابين إذا رمضت الفصال (رواه مسلم)‘
আওয়াবিন নামাজ (এর সময়) হল, যখন উটের বাচ্চা (সূর্যের) প্রখর উত্তাপ অনুভব করে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৬৩১]। ইমাম আহমাদের ‘মুসনাদ’ এবং ইবনু আবি শাইবার ‘মুসান্নাফে’ আরো বর্ধিত বর্ণনা এসেছে, ‘‘আওয়াবিন নামাজ (এর সময়) হলো, দোহার (চাশতের) সময়ে যখন উটের বাচ্চা (সূর্যের) প্রখর উত্তাপ অনুভব করে।’’।
.
❖ সালাতুর দোহা, ইশরাক, আওয়াবীন তিনটি সালাত কি এক সালাত নাকি ভিন্ন?
__________________________________
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশুদ্ধ হাদিসের বর্ণনা অনুসারে সালাতুল ইশরাক্ব, সালাতুল দোহা এবং সালাতুল আওয়াবীন উক্ত তিনটি সালাত একই সালাত। আদায় করার সময় ভিন্ন থাকার কারনে নাম ভিন্ন যেমন: সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে তাকে ‘সালাতুল ইশরাক্ব’ বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে সালাতুল দোহা বা চাশতের সালাত বলা হয়। (মির‘আতুল মাফাতীহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৪৪-৩৫৮)। আর দুপুরের পূর্বে পড়লে সালাতুল আওয়াবীন বলা হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/৭৪৮; মিশকাত, হা/১৩১২)। এই সালাত বাড়ীতে আদায় করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো পড়তেন আবার কখনো ছাড়তেন। (সহীহ মুসলিম, হা/৭১৭-৭১৮; মির‘আতুল মাফাতীহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৪৫)। মসজিদেও পড়া যাবে। (মির‘আতুল মাফাতীহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৪৬)।
.
প্রখ্যাত ফকিহ ও হাদিস বিশারদ ইমাম আবু বকর জাসসাস (রাহ.) বলেন, অধিকাংশ আলিমের মতে, ইশরাক এবং দোহার নামাজ একই। [আহকামুল কুরআন: ৩/৫৫৯] মুহাদ্দিসগণ দোহা এবং ইশরাকের সালাতকে একই সালাত গণ্য করেছেন। তবে, সুফিগণ আলাদা গণ্য করেছেন। [যাকারিয়া কান্ধলভি, ফাতহুল মুলহিম: ৪/৬৩৪]। ইমাম ত্বিবি তাঁর শারহুল মিশকাতে বলেছেন, ইশরাক হল দোহার প্রথম সময়। মূলত দুটো একই সালাত।
.
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, ইশরাকের সালাত ও সালাতুল দোহা একই সালাত। প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে সালাতুল দোহা আদায় করাকেই ইশরাক বলে। (মাজমু‘উল ফাতাওয়া: ৪০১/১১)।
.
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, ইশরাকের সালাতই হল সালাতুল দোহা তবে যদি তুমি তা সূর্য উজ্জ্বল হওয়া ও এক ধনুক পরিমাণ উপরে উঠার পর সকাল সকাল আদায় কর, তবে তা হবে ইশরাকের সালাত। আর যদি তা শেষ ওয়াক্তে বা মাঝামাঝি সময়ে আদায় করা হয় তখন তা হবে সালাতুল দোহা। (লিকায়ুল বাব আল-মাফতুহ)।
.
ফাতওয়া লাজনাহ আদ-দায়িমাহ আলেমগন বলেন, সালাতুল আওয়াবীন নামে আলাদা কোনো সালাত নেই, তবে সূর্যের রশ্মি প্রখর হওয়ার সময় থেকে নিয়ে সূর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত যে সালাতুল দোহা পড়া হয় তাকেই হাদীসে সালাতুল আওয়াবীন বলা হয়েছে। (আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ: ১৫৪/৬)।

❖ দোহার (চাশতের) সালাতের মহান ফজিলত:
_______________________________________
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে সাদাক্বাহ করা। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কার শক্তি আছে এই কাজ করার? তিনি বললেন, দু’রাক‘আত সালাতুয যুহাই এজন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাঊদ, হা/৫২৪২; মিশকাত, হা/১৩১৫, সনদ সহীহ; সহীহ মুসলিম, হা/৭২০; মিশকাত, হা/১৩১১)। এই সালাত ২, ৪, ৮ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায় (সহীহ বুখারী, হা/১১৭৬; আবু দাঊদ, হা/১২৯১; মিশকাত, হা/১৩০৯; মির‘আতুল মাফাতীহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৪৪-৩৪৫)।
.
আব্দুল্লাহ বিন আম্‌র বিন আস (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এক যোদ্ধাবাহিনী প্রেরণ করেন। এই যুদ্ধ সফরে তারা বহু যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ করে খুব শীঘ্রই ফিরে আসে। লোকেরা তাদের যুদ্ধক্ষেত্রের নিকটবর্তিতা, লব্ধ সম্পদের আধিক্য এবং ফিরে আসার শীঘ্রতা নিয়ে সবিময় বিভিন্ন আলোচনা করতে লাগল। তা শুনে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে ওদের চেয়ে নিকটতর যুদ্ধক্ষেত্র, ওদের চেয়ে অধিকতর লব্ধ সম্পদ এবং ওদের চেয়ে শীঘ্রতর ফিরে আসার কথার সন্ধান বলে দেব না? যে ব্যক্তি সকালে ওযু করে চাশতের নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদে যায় সে ব্যক্তি ওদের চেয়ে নিকটতর যুদ্ধক্ষেত্রে যোগদান করে, ওদের চেয়ে অধিকতর সম্পদ লাভ করে এবং ওদের চেয়ে অধিকতর শীঘ্র ঘরে ফিরে আসে।” (আহ্‌মদ, ত্বাবারানী, সহীহ তারগীব ৬৬৩)।

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আদম সন্তান, তুমি দিনের প্রথম ভাগে আমার জন্য চার রাকাত আদায় করো; আমি তোমার (দিনের) শেষ ভাগের জন্য যথেষ্ট হবো।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৪৩৭; হাদিসটি সহিহ]। এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, আল্লাহ তার বাকি দিনের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট হবেন এবং তার অপছন্দনীয় বিষয়গুলো তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। [মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযি: ২/৪৭৮]।
.
❖ দোহার (চাশতের) সালাতের সময় ও রাকআত সংখ্যা:
______________________________________
সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর থেকেই দোহার (চাশতের) সালাত পড়া যায়। তবে, দোহার (চাশতের) সালাতের উত্তম সময় হল, সূর্যের তাপ যখন প্রখর হয়। এই সময় থেকে নিয়ে দিনের দ্বিপ্রহর শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দোহার (চাশতের) সালাতের সময় থাকে। আয়িশা (রা.) বলেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত দোহার সালাত ৪ রাকাত পড়তেন। তবে, আল্লাহ চাহেতো কখনো তা বৃদ্ধি করতেন।’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭১৯]।
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিনে দোহার (চাশতের) ৮ রাকাত সালাত পড়েছেন। [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৯১]। শারহুল জামি আস সহীহ গ্রন্থে এসেছে, সাহাবিদের মধ্যে আম্মাজান আয়িশা পড়তেন ৬ রাকাত; ইবনু উমার ২ রাকাত, সা’দ ও আম্মাজান উম্মু সালামাহ ৮ রাকাত, আলি ইবনু আবি তালিব ৪ রাকাত পড়তেন। রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমা‘ইন।
.
আলিমগণের বড় অংশের মতে, উপরোক্ত সালাতগুলোর সর্বনিম্ন ২ রাকআত এবং সর্বোচ্চ ১২ রাকআত পড়া যায়। তবে সঠিক মতানুসারে এর সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সুতরাং ইচ্ছা অনুযায়ী দু রাকআত করে, ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ বা তার চেয়ে বেশি যতখুশি এই সালাত আদায় করা যায়। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু সলিহ আল উসাইমিন (রাহ.) বলেন, ‘‘(দোহার সালাতের) সর্বোচ্চ রাকআত নির্ধারিত নয়। কেননা আয়িশা (রা.) হতে (উপরে) বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘আল্লাহ চাহেতো এর চেয়ে অধিক পড়তেন (নির্দিষ্ট বাউন্ডারি দেওয়া হয়নি)।’’ [শারহুল মুমতি’: ৪/৮৫]। তবে, হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় ৪ রাকাত আদায় করতেন, যেমনটি আমরা পূর্বেই পড়লাম। প্রতি দু’রাক‘আত অন্তর সালাম ফিরাতে হয়।
.
উল্লেখ্য, অনেকে মাগরিব ও ইশার সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে ছয় রাকাআত নফল সালাতকে সালাতুল আওয়াবীন হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু উপরোক্ত হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, এ কথা ঠিক নয়। যদিও মাগরিব ও ইশার সালাতের মধ্যবর্তী সময়ে নফল সালাত আদায় করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে তা ছয় রাকআতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং যতখুশি পড়া যায়। আর সেটিকে সালাতুল আওয়াবীন বলাটা ভুল বা উক্ত হাদীস পরিপন্থী। যেমন বলা হয় মাগরিব সালাতের পরে বিশ রাকাত পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরি করা হবে বা যেকোন পরিমাণ নফল সালাতকে ‘আওয়াবীন’ বলার হাদীগুলো যঈফ। (যঈফ তিরমিযী, হা/১১৬৭; সিলসিলা যঈফাহ, হা/৪৬৯)।

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি মাগরিবের সালাতের পর ছয় রাকাত নফল সালাত পড়বে, এসবের মাঝখানে খারাপ কোনো কথা বলবে না, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ১২ বছরের নফল ইবাদাত করার নেকি দান করবেন।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৪৩৫; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১১৬৭; হাদিসটি বেশ দুর্বল]। তাবি‘ঈ মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রাহ.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে সালাত পড়ে, সে আওয়াবিনের সালাত পড়ে।’’ [ইবনু মুবারক, আয যুহদ; হাদিসটি দুর্বল]।
.
প্রকাশ থাকে যে, যুহার সালাত পড়ে ‘বাবুয যুহা’ দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার হাদীস সহীহ নয়। (দেখুন: যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়েম ১/৩৪৯ টীকা নং ১)।

❖ উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, ইশরাক এবং দোহা (চাশত) আওয়াবীন একই সালাত। শুধু সময়ের পার্থক্যের কারণে এদের নাম ভিন্ন হয়েছে। ইশরাক হলো দোহার প্রথম সময়। যদি জামায়াতে ফজর আদায় করে, সালাতের স্থানে বসে থেকে যিকর করে, অতঃপর সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর আদায় করা হয়, তবে এটিকে ইশরাক বলা হয়। আর সূর্য কিছুটা প্রখর হওয়ার পর (সকালের নাস্তার সময়ে) আদায় করলে এটিকে ‘দোহা’ (চাশত) বলা হয়। আওয়াবীন অর্থ, আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কারীদের সালাত। সূর্যের রশ্মি প্রখর হওয়ার সময় থেকে নিয়ে সূর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত যে সালাতুল দোহা পড়া হয় তাকেই হাদীসে সালাতুল আওয়াবীন বলা হয়েছে। মৌলিকভাবে তিনটি একই নামাজ। একই দিনে ইশরাক ও দোহার (চাশতের) সালাত আদায় করাও জায়েয। কোনো (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত বা নফল) নামাজের নিয়ত যেহেতু মুখে পড়তে হয় না (শুধু অন্তরে ইচ্ছাপোষণ করতে হয়), সেহেতু ইশরাক এবং দোহার (চাশতের) সালাতেও অন্তরে ইচ্ছাপোষণ করাই যথেষ্ট। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।