সম্মিলিত মুনাজাত নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: ফেইসবুকে দুটি কমেন্টে পড়েছিলাম যেখানে বলা হয়েছে, উপমহাদেশের হাজার হাজার আলেম-উলামা ও তাহাজ্জুদ গুজার ব্যক্তিবর্গ তারা কি এই সম্মিলিত মুনাজাত করার জন্য জাহান্নামী? একজন ৫০ বছর বুখারীর দারস দিতেন কিন্তু তিনি মুনাজাত করতেন, আর মুনাজাত যদি বিদআত হয় তাহলে তিনি কি জাহান্নামী নন?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬
উত্তর: আমরা দুটি পয়েন্টে উক্ত বক্তব্যের জবাব দিবো ইনশাআল্লাহ।

(১). উপমহাদেশের হাজার হাজার আলেম-উলামা ও তাহাজ্জুদ গুজার ব্যক্তিবর্গ তারা এই সম্মিলিত মুনাজাত করে কি ভুল করেছেন?
.
জবাব:আমাদের কারো অজানা নয় যে, ইবাদতের ক্ষেত্রে শরীয়তের উসূল বা মূলনীতি হলো তা توقيفية অর্থাৎ দলিলনির্ভর হতে হবে। কারো ব্যক্তিগত ফাতওয়া, মতামত বা ইজতিহাদ নির্ভর নয়। ইবাদতের নিয়তে যে কোন কর্মকাণ্ড বর্তমান পৃথিবীর সকল মানুষের মাঝে পরিচিতি ও ব্যাপক বিস্তার লাভ করলেও যেই ইবাদত প্রজ্ঞাবান শরীয়তপ্রণেতা রাসূল (ﷺ) থেকে সাব্যস্ত হয়নি, তা শরী‘আত হিসাবে প্রমাণিত হবে না। কারণ, অধিকাংশ মানুষ কোন ইবাদত করলেই তা শরী‘আতসিদ্ধ ইবাদত হয়ে যায় না। কেননা অধিকাংশ মানুষ কোন আমল করছে এবং তারা কী অনুসরণ করছে তাকে ইবাদত হিসাবে গ্রহণ করা হয় না; বরং পবিত্র কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হলেই কেবল তা ইবাদত হিসাবে গ্রহণ করা হয়, অন্যথায় নয়। এজন্যই রাসূল ﷺ বলেছেন, مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ. যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০)।
.
আল্লামা আবু বকর আত-তুরতূশী (রাহিমাহুল্লাহ) (১০৫৯-১১২৬ খ্রি.) বলেন,
.
شيوعة الفعل لا تدل على جوازه في الكلام على فريق من العامة وأهل التقليد قالوا إن هذا الأمر شائع ذائع في أقاليم أهل الإسلام وأقطار أهل الأرض، فالجواب أن نقول شيوعة الفعل وانتشاره لا يدل على جوازه، كما أن كتمه لا يدل على منعه

ব্যাপক প্রসিদ্ধ হওয়া কোন কাজকে তার বৈধতার প্রমাণ বহন করে না। এ মর্মে সাধারণদের মধ্যে একটি শ্রেণী ও তাক্বলীদপন্থীরা বলে যে, এই বিষয়টি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বহুল প্রচলিত ও ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ। উক্ত কথার জবাবে আমরা বলব, কোন কাজের বিস্তৃতি ও প্রসারিত হওয়া তার বৈধতাকে প্রমাণ করে না, যেমন ঐ কাজ গোপন করাটাও তাকে নিষিদ্ধতা প্রমাণ করে না। (আল-ইমাম আবূ বাকর মুহাম্মাদ ইবনুল ওয়ালীদ আত-তুরতূশী, কিতাবুল হাওয়াদিছ ওয়াল বিদাঈ; সঊদী আরব: দারু ইবনিল জাওযিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪১১ হি./১৯৯০ খ্রি., পৃ. ৭১, ৭৩; সংগৃহীত: আল ইখলাস থেকে)। অতএব সুন্নাহ পরিপন্থী কোন যুগের অধিকাংশ মানুষের কোন প্রসিদ্ধ আমল কিভাবে সুন্নাহ হতে পারে?
.
এবার একটি হাদীস লক্ষ করুন।

عَنْ أُمِّ الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ دَخَلَ عَلَيَّ أَبُو الدَّرْدَاءِ وَهُوَ مُغْضَبٌ فَقُلْتُ مَا أَغْضَبَكَ؟ قَالَ وَاللهِ مَا أَعْرِفُ مِنْ أَمْرِ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا إِلَّا أَنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ جَمِيْعًا

উম্মু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাগান্বিত অবস্থায় আমার নিকট উপস্থিত হলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ জিনিস আপনাকে এত রাগান্বিত করল? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মতের কোন বিষয় সম্পর্কে অবগত নই, তবে তাদের সকলে একত্রে সালাত আদায় করা ব্যতীত। (সহীহ বুখারী হা/৬৫০; মুসনাদে আহমাদ হা/২১১৯৩; মিশকাত হা/১০৭৯)
.
হাদীসটির ব্যখ্যায় ভারতবর্ষে হাদীসশাস্ত্রের আরেক দিকপাল, মিশকাতুল মাসাবীহ’র বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ’র সম্মানিত মুসান্নিফ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল-আল্লামাহ, ইমাম উবাইদুল্লাহ বিন আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.] বলেছেন, إِلَّا أَنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ جَمِيْعًا অর্থাৎ তারা ‘‘জামা‘আতে সালাত আদায় করে।’’ এখানে আবু দারদার উদ্দেশ্য হলো যারা জামা‘আতে সালাত আদায় করে তারা তো এ কাজটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণেই করে এতে কোন ত্রুটি নেই। তবে তাদের অন্যান্য সকল আমলেই ত্রুটি দেখা যায়। তাই আবু দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাগান্বিত হয়ে উক্ত কথা বলেছিলেন। আবু দারদা (রাঃ)-এর এ উক্তি ছিল উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর খিলাফাতের শেষ যামানায়। (ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাসাবীহ; ভারত: ইদারাতুল বুহূছিল ইলমিয়্যাহ ওয়াদ দাওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি., ৩য় খণ্ড, পৃ. ৫২৬ হা/১০৭৯)
.
প্রিয় পাঠক! আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে খলিফা ওসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর খেলাফতের সময়ে অসংখ্য মানুষের মাঝে অনেক বিদ‘আতী আমল চালু হলেও সেগুলো কিন্তু জায়েয হয়ে যায়নি; যা আবু দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উক্ত কঠোর অভিব্যক্তি দ্বারা স্পষ্ট হয়। অতএব কোন আমল বহুল প্রচলিত হওয়া কিংবা প্রসিদ্ধি লাভ করা ঐ আমলকে বৈধতা প্রমাণ করে না, যতক্ষণ না সে ব্যাপারে স্পষ্ট দলীল-প্রমাণ পাওয়া যাবে।
.
▪️(২). সম্মিলিত মুনাজাত যদি বিদআত হয় তাহলে তারা কি জাহান্নামী নন?
.
জবাব: নির্দিষ্ট করে কাউকে জান্নাতি বা জাহান্নামী বলার ক্ষেত্রে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের বক্তব্য বা মূলনীতি হলো; মহান আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) যাদের সম্পর্কে জান্নাতী অথবা জাহান্নামী হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ঘোষণা করেছেন শুধু তাদেরকেই জান্নাতী অথবা জাহান্নামী বলা যাবে। এর বাহিরে অন্য কাউকে নয়। কারণ এগুলো আক্বীদার বিষয় যা কুরআন-সুন্নাহর দলিল নির্ভর হতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো যুক্তি বা ইজতিহাদের অবকাশ নেই।(মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ২৫/১২১ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৭৩১)।
.
যেমন দুনিয়াতেই যারা জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নবী (ﷺ), আবু বকর, উমার, উসমান, আলী, ত্বালহা, যুবায়র ইবনুল আওয়াম, সা‘দ ইবনু আবু ওয়াক্কাস, আব্দুর রাহমান ইবনু আওফ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁরা সকলেই জান্নাতী। (আবু দাঊদ, হা/৪৬৪৯; তিরমিযী, হা/৩৭৪৭, ৩৭৪৮, ৩৭৫৭; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৩; সহীহুল জামি, হা/৫০, ৪০১০)। এছাড়াও আরো যারা বিভিন্নভাবে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন, যেমন: ২য় হিজরীতে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ৩১৩ জন সাহাবী। (বুখারী হা/৩৯৮৩)।৬ষ্ঠ হিজরীতে হোদায়বিয়ার সন্ধির পূর্বে বায়‘আতে রিযওয়ানে অংশগ্রহণকারী ১৪০০ সাহাবীর একজন বাদে। (মুসলিম হা/২৪৯৬, ২৭৮০)। এতদ্ব্যতীত নবীপত্নীগণ সহ নবী পরিবার। (মুসলিম হা/২৪২৪, ২৪০৮; আহযাব ৩৩/৩৩) উক্কাশাহ বিন মিহসান (রাঃ) (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫২৯৬)। ইয়াসির, আম্মার, সুমাইয়া (হাকেম হা/৫৬৬৬) বেলাল বিন রাবাহ। (তিরমিযী হা/৩৬৮৯)। উসায়রিম আমর বিন সাবেত (আহমাদ হা/২৩৬৮৪)। সাবেত বিন ক্বায়েস (সহীহ মুসলিম হা/১১৯)। হারেছাহ বিন সুরাক্বাহ (সহীহ বুখারী হা/২৮০৯) ইত্যাদি প্রমুখ।
.
পক্ষান্তরে যাদেরকে দুনিয়াতেই জাহান্নামের দুঃসংবাদ দিয়েছেন তাদেরকে জাহান্নামী বলে বিশ্বাস করতে হবে।যেমন: যারা জাহান্নামের দুঃসংবাদ পেয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে আবু লাহাব ও তার স্ত্রী যে ছিল আবু সুফিয়ানের বোন আরওয়া (أروى) অথবা ‘আওরা’ (العوراء) ওরফে উম্মে জামীল, আবু ত্বালিব ইত্যাদি (সূরা আল-লাহাব : ৩-৪)। আমর বিন আমের আল-খুযায়ীঃ মহানবী (ﷺ) তাকে জাহান্নামে নিজের নাড়িভুড়ি টেনে নিয়ে বেড়াতে দেখেছেন। (সহীহ বুখারী, মুসলিম)। আম্মার (রাঃ)-এর ঘাতক ও তার ব্যাপারে মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “সে জাহান্নামী।” (সহীহুল জামে হা/৪১৭০)
.
অপরদিকে যেসকল মুসলিমদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ এবং তার রাসূল (ﷺ) জান্নাত বা জাহান্নামের ঘোষণা দেননি, তাদেরকে নিশ্চিতরূপে জান্নাতী অথবা জাহান্নামী বলা জায়েয নয়। কারণ কেউ জান্নাতের কাজ করলেই তাকে জান্নাতী এবং জাহান্নামের কাজ করলেই তাকে জাহান্নামী মনে করা ঠিক নয়। হতে পারে, সে মরণের পূর্বে অথবা আল্লাহর কাছে তার বিপরীত হতে পারে। কয়েকটি উদাহরণ:
.
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত; ওমর (রাঃ) আমাকে বললেন, ‘খায়বারের যুদ্ধের দিন সাহাবীগণের একটি দল বাড়ী ফিরে আসছিলেন। ঐ সময় সাহাবীগণ বললেন, অমুক অমুক শহীদ, শেষ পর্যন্ত এমন এক ব্যক্তিকে সাহাবীগণ শহীদ বললেন, যার ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কখনো নয়, আমি তাকে জাহান্নামে দেখছি সে একটি চাদর আত্মসাৎ করেছে।’ (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৪০৩৪; বাংলা ৮ম খণ্ড, হা/৩৮৫৭)।
.
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একদা একজন আনসারীর বাচ্চার জানাযার সলাত আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ডাকা হলো। আমি (আয়িশাহ্‌) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ বাচ্চার কি সৌভাগ্য, সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখিদের মধ্যে একটি চড়ুই। সে তো কোন গুনাহ করেনি বা গুনাহ করার বয়সও পায়নি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এছাড়া অন্য কিছু কি হতে পারে না হে আয়িশাহ্‌! আল্লাহ তা’আলা একদল লোককে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করে রেখেছেন, যখন তারা তাদের পিতার মেরুদণ্ডে ছিল। এভাবে জাহান্নামের জন্যও একদল লোক সৃষ্টি করে রেখেছেন অথচ তখন তারা তাদের পিতার মেরুদণ্ডে ছিল। (মুসলিম ২৬৬২, নাসায়ী ১৯৪৭, ইবনু মাজাহ ৮২, আহমাদ ২৫৭৪২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৭৩ মিশকাত হা/৮৪)
.
উম্মুল আলা (রাঃ) বলেন, উসমান ইবনু মায’উনের মৃত্যুর পর ঐ সময় আমি উসমান (রাঃ)- কে লক্ষ্য করে বলছিলাম। হে আবু সায়িব! তোমার উপর আল্লাহর রহমত হোক। তোমার সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ নিশ্চয়ই তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন করে জানলে যে, আল্লাহ্‌ তাকে সম্মানিত করেছেন? আমি বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি তো জানি না। তবে কাকে আল্লাহ্‌ সম্মানিত করবেন? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! উসমানের মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহ্‌র কসম! আমি তার সম্পর্কে কল্যাণের আশা পোষণ করছি। আল্লাহ্‌র কসম, আমি আল্লাহ্‌র রাসূল হওয়া সত্ত্বেও জানিনা আল্লাহ আমার সাথে কী ব্যবহার করবেন। উম্মুল ‘আলা’ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র শপথ, আমি এ কথা শুনার পর আর কাউকে পূত-পবিত্র বলব না। (সহিহ বুখারী হা/৩৯২৯, আধুনিক প্রকাশনী; ৩৬৩৯, ইসলামী ফাউন্ডেশন; ৩৬৪২)
.
উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে জানা যায়, রাসূল (ﷺ) যাদেরকে জান্নাতি বলেছেন তাদের ছাড়া আর কাউকে জান্নাতি বলে ঘোষণা দেয়া যাবে না। তেমনিভাবে রাসূল (ﷺ) যাদেরকে জাহান্নামি বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাদের ছাড়া আর কাউকে জাহান্নামি বলে ঘোষণা দেয়া যাবে না। একটি হাদীসে এসেছে, জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- জনৈক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা‘আলা অমুক ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না। তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, এমন কে আছে যে আমাকে কসম দিতে পারে যে, (আমার নামে শপথ করতে পারে) আমি অমুককে ক্ষমা করব না। যাও, আমি তাকে মাফ করে দিলাম এবং তোমার আমাল নষ্ট করে দিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এ বাক্য অথবা অনুরূপ বাক্য বলেছেন। (সহীহ মুসলিম ২৬২১, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৬৭৯, শু‘আবূল ঈমান ৬২৬১, ইবনু হিববান ৫৭১১, সহীহাহ্ ২০১৪, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৬১, সহীহ আল জামি ২০৭৫, মিশকাত হা/২৩৩৪)
.
এই হাদীসে আলোকে ইমাম নাবাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই হাদীসে বিনা তাওবাতে গুনাহ মাফ হওয়ার ক্ষেত্রে আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের দলীল আছে, আর তা যখন আল্লাহ চাইবেন। আর মু‘তাযিলা সম্প্রদায় এ হাদীসের মাধ্যমে কাবীরাহ গুনাহের কারণে আমল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন। আহলুস্ সুন্নাতের মাযহাব হলো, কুফরী ছাড়া আমলসমূহ ধ্বংস হয় না। আর এ আমল ধ্বংস হওয়াকে ঐ কথার উপর ব্যাখ্যা করা হবে, পাপের কারণে তার পুণ্যসমূহ ঝড়ে গেছে। সুতরাং একে রূপকভাবে আমল ধ্বংস করা বুঝানো হয়েছে। আরো সম্ভাবনা রয়েছে যে, তার হতে অন্য কোন বিষয় সংঘটিত হয়েছে যা কুফরীকে আবশ্যক করে দিয়েছে। আরো সম্ভাবনা রয়েছে এটি আমাদের পূর্ববর্তীদের শারী‘আতে ছিল আর এটা ছিল তাদের হুকুম।(মিশকাতুল মাসাবিহ হা/২৩৩৪ ব্যখ্যা দৃষ্টব্য;)
.
পরিশেষে, আমাদের বক্তব্য হল: উপমহাদেশের হাজার হাজার আলেম-ওলামা যারা নিয়মিত মহান আল্লাহর ইবাদত করতেন তারা যদি কোন বিদআতি আমল করেন।তাহলে উনাদের রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায় এবং ৫০ বছর বুখারীর দারস দেওয়ার কারণে আমরা বিদআতকে সুন্নাত বলবো না। আবার উনাদের বিদআতের কারণে উনাদেরকে নির্দিষ্ট করে জান্নাতি বা জাহান্নামি বলতে পারবো না। বরং আমরা তাদের সম্পর্কে সুধারণা রাখি এবং উনাদের ইলম ও খিদমতের জন্য মুসলিম জাতি হিসেবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি পাশাপাশি তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে দোআ করি আল্লাহ যেন উনাদের ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতবাসী করেন। মহান আল্লাহ সবাইকে হকের পথে অটল থাকার এবং কথা বলার তৌফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।