ইজমা ও কিয়াস কি শরীয়তের দলিল

শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু শর্তসাপেক্ষে ‘ইজমা’ ও ‘ক্বিয়াস’ দু’টিই শরীয়তের দলীল হিসাবে বিবেচিত। কুরআন ও সুন্নাহর পরের অর্থাৎ তৃতীয় স্থান হল ইজমার,আর ইজমার পরের অর্থাৎ চতুর্থ স্থান হল ক্বিয়াসের। বিশুদ্ধ ‘ইজমা’ ইসলামী আইন প্রণয়নের অন্যতম উৎস। যদি ইমামগনের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়,সেক্ষেত্রে এটি একটি বাধ্যতামূলক শারঈ দলীল এবং কোন ব্যক্তির পক্ষে এটির বিরোধিতা করা জায়েয নয়।
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮] বলেন, এই উম্মতের ইজমা দলীল হিসাবে স্বীকৃত।(মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ,খন্ড: ২৮ পৃষ্ঠা:১২৫ পৃ.)।
.
অপরদিকে পবিত্র কুরআন রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহ ও সাহাবীদের মন্তব্যের ভিত্তিতে ক্বিয়াস শারঈ দলীল হিসাবে বিবেচিত। তবে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম এটাকেই ইজতিহাদ বলেছেন।বিখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল ‘আস (রারিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ﷺ)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে,

إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ

‘কোন বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছলে তার জন্য আছে দু’টি পুরস্কার। আর বিচারক ইজতিহাদে ভুল করলে তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার’ (সহীহ বুখারী, হা/৭৩৫২;সহীহ মুসলিম, হা/১৭১৬)।

মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, , ؕ کَمَا بَدَاۡنَاۤ اَوَّلَ خَلۡقٍ نُّعِیۡدُہٗ‘যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবেই আমি দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করব’ (সূরা আল-আম্বিয়া :২১/২১৪)।
.
অন্য আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন, اللّٰہُ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ الرِّیٰحَ فَتُثِیۡرُ سَحَابًا فَسُقۡنٰہُ اِلٰی بَلَدٍ مَّیِّتٍ فَاَحۡیَیۡنَا بِہِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ کَذٰلِکَ النُّشُوۡرُ। আর আল্লাহ্ যিনি বায়ু পাঠিয়ে মেঘমালা সঞ্চারিত করেন। তারপর আমরা সেটাকে নির্জীব ভুখণ্ডের দিকে পরিচালিত করি, এরপর আমরা তা দ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর আবার জীবিত করি। এভাবেই হবে মৃত্যুর পর আবার জীবিত হয়ে উঠা।(সূরা আল-ফাতির : ৯)। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি জীবকে পুনরায় সৃষ্টি করাকে প্রথমবার সৃষ্টি করার সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন এবং মৃত ব্যক্তিদেরকে জীবিত করাকে যমীন জীবিত করার সাথে সাদৃশ্য দিয়েছেন। মূলত এটিই হল ‘ক্বিয়াস’।
.
শাসনকার্য ফয়সালার ক্ষেত্রে বিখ্যাত সাহাবী আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উদ্দেশ্যে চিঠিতে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘…তারপর তোমার বুঝ, যা তোমার কাছে প্রতিভাত হয়, তদনুযায়ী ফায়সালা করবে। যে মাসআলার ব্যাপারে কুরআন-হাদীছে কোন দলীল নেই তা তোমার কাছে পেশ করা হলে তুমি ঐ সব মাসআলাকে অন্যান্য বিষয়ের সাথে ক্বিয়াস বা পারস্পরিক তুলনা করবে এবং উপমা সম্পর্কে জ্ঞান রাখবে। তারপর তোমার ধারণানুসারে যা আল্লাহর নিকট অধিকতর প্রিয় এবং হক্বের সাথে অধিকতর সাদৃশ্যপূর্ণ হয়, তার উপরই নির্ভর করবে’ (বায়হাক্বী, ১০/১১৫; দারাকুৎনী, ৪/২০৬-২০৭ পৃ.)।
.
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত মর্যাদাবান চিঠি, যা উম্মাহ গ্রহণ করে নিয়েছেন। ইমাম মুযনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, সাহাবীদের যুগ থেকে তার যুগ পর্যন্ত সকল ফক্বীহ একমত যে, ‘নিশ্চয় হক্বের অনুরূপ জিনিসও হক্ব এবং বাতিলের অনুরূপ জিনিসও বাতিল হিসাবে বিবেচিত এবং তারা ফিক্বহের সকল বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে ক্বিয়াসের ব্যবহার করছেন (ইগাসাতুল লাহফান, ১/৮৬ পৃ.; দ্র. : আল-উসূল মিন ইলমিল উসূল আল ইখলাস থেকে সংগ্রহীত)।
.
সুতরাং যাদের কুরআন সুন্নার বেসিক জ্ঞান নেই তারাই বলে ইজমা কিয়াস মানিনা অথবা অস্বীকার করে। আল্লাহ তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
জুয়েল মাহমুদ সালাফি