শাওয়াল মাসে ছয় সিয়াম রাখার হুকুম এবং এই সিয়াম পালন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রশ্নোত্তর

প্রথমত: রমজানের সিয়াম পালনের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত-মুস্তাহাব; ফরজ নয়। শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখার বিধান রয়েছে। এ রোজা পালনের মর্যাদা অনেক বড়, এতে প্রভূত সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি এ রোজাগুলো পালন করবে সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবু আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।”[মুসনাদে আহমাদ (৫/৪১৭), সহিহ মুসলিম (২/৮২২), সুনানে আবু দাউদ (২৪৩৩) ও সুনানে তিরমিযি (১১৬৪) এ হাদিসকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য বাণী দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পরে ছয়দিন রোজা রাখবে সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল:যে ব্যক্তি একটি নেকি করবে সে দশগুণ সওয়াব পাবে।”অন্য বর্ণনাতে আছে- “আল্লাহ এক নেকিকে দশগুণ করেন। সুতরাং এক মাসের রোজা দশ মাসের রোজার সমান। বাকী ছয়দিন রোজা রাখলে এক বছর হয়ে গেল।”[সুনানে নাসায়ী, সুনানে ইবনে মাজাহ]হাদিসটি সহিহ আত-তারগীব ও তারহীব (১/৪২১) গ্রন্থেও রয়েছে। সহিহ ইবনে খুজাইমাতে হাদিসটি এসেছে এ ভাষায়- “রমজান মাসের রোজা হচ্ছে দশ মাসের সমান। আর ছয়দিনের রোজা হচ্ছে- দুই মাসের সমান। এভাবে এক বছরের রোজা হয়ে গেল।”

হাম্বলি মাযহাব ও শাফেয়ি মাযহাবের ফিকাহবিদগণ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখা একবছর ফরজ রোজা পালনের সমান। অন্যথায় সাধারণ নফল রোজার ক্ষেত্রেও সওয়াব বহুগুণ হওয়া সাব্যস্ত। কেননা এক নেকিতে দশ নেকি দেয়া হয়। এ ছাড়া শাওয়ালের ছয় রোজারাখার আরও ফায়দা হচ্ছে- অবহেলার কারণে অথবা গুনাহর কারণেরমজানের রোজার উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে সেটা পুষিয়ে নেয়া।কেয়ামতের দিন ফরজ আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হবে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন: আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন অথচ তিনি সবকিছু জানেন- তোমরা আমার বান্দার নামায দেখ; সেকি নামায পূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি নামাযে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ নামায লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন: দেখ আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা? যদি নফল নামায থাকে তখন বলেন: নফল নামায দিয়ে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূর্ণ কর। এরপর অন্য আমলের হিসাব নেয়া হবে।[সুনানে আবু দাউদ হা/৮৬৪, তিরমিযি হা/ ৪১৩)
.
▪️দ্বিতীয়ত: শাওয়ালের ছয়টি রোজা শাওয়াল মাসের শুরুতে কিংবা শেষে ধারাবাহিকভাবে যেমন রাখা যাবে তেমনি ভেঙ্গে ভেঙ্গেও রাখা যাবে,শাওয়ালের রোজা গুলো সাপ্তাহিক সোমবার ও বৃহস্পতিবার কিংবা প্রতি মাসের তথা আইয়ামে বীজের তিনটি সিয়াম, একই নিয়তে রাখা জায়েজ, এভাবে রোযা রাখলে রোজাদারের জন্য ছয় রোযার সওয়াব এবং সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার সওয়াব এবং আইয়ামে বীজের রোজা রাখার সওয়াবও লেখা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে যাদের রমজানের রোজার কাযা রয়েছে কিংবা মানতের রোজা রয়েছে, তাদের জন্য একই নিয়তে উভয় রোজা রাখা জায়েজ নয়, কারন নফল রোযার নিয়ত ও ফরয রোযার নিয়ত একত্রে করা জায়েয নেই। তাছাড়া রমজানের রোযার সাথে অন্য নফল রোযার কোন সম্পর্ক নেই। ফরজ রোযার জন্য স্বতন্ত্র বিশেষ নিয়তের প্রয়োজন রয়েছে,যেমনিভাবে শাওয়ালের ছয় রোযার জন্যেও নিয়তের প্রয়োজন। এই মর্মে কয়েকটি ফাতওয়া হচ্ছে,
.
(১).শাওয়ালের ছয় রোযা কি লাগাতরভাবে রাখা শর্ত? নাকি আমি আলাদা আলাদাভাবে রাখতে পারি?
.
শাওয়ালের রোযাগুলো লাগাতরভাবে রাখা শর্ত নয়। তাই এ রোযাগুলো কেউ আলাদা আলাদাভাবে রাখুক কিংবা লাগাতরভাবে রাখুক এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে যত তাড়াতাড়ি আদায় করা যায় তত ভাল। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তোমরা ভাল কাজে অগ্রণী হও।” আল্লাহ্‌ আরও বলেন: “তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে দ্রুত ছুটে আস।” মুসা আলাইহিস সালাম বলেন: “আমি তাড়াতাড়ি আপনার কাছে আসলাম, আপনি সন্তুষ্ট হবেন এ জন্য।”[সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ৮৪] তাছাড়া দেরী করলে নানা বিপদ-আপদ ঘটতে পারে। এটি শায়েফি মাযহাবের আলেমগণ ও হাম্বলি মাযহাবের কিছু কিছু আলেমের অভিমত। কিন্তু, অবিলম্বে আদায় না করে মাসের মাঝখানে কিংবা শেষে আদায় করলেও কোন অসুবিধা নেই।

শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,

“قَالَ أَصْحَابُنَا: يُسْتَحَبُّ صَوْمُ سِتَّةِ أَيَّامٍ مِنْ شَوَّالٍ، لِهَذَا الْحَدِيثِ قَالُوا: وَيُسْتَحَبُّ أَنْ يَصُومَهَا مُتَتَابِعَةً فِي أَوَّلِ شَوَّالٍ فَإِنْ فَرَّقَهَا أَوْ أَخَّرَهَا عَنْ شَوَّالٍ جَازَ. وَكَانَ فَاعِلا لأَصْلِ هَذِهِ السُّنَّةِ، لِعُمُومِ الْحَدِيثِ وَإِطْلاقِهِ. وَهَذَا لا خِلافَ فِيهِ عِنْدَنَا وَبِهِ قَالَ أَحْمَدُ وَدَاوُد.”

“আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: এ হাদিসের দলিলের ভিত্তিতে শাওয়াল মাসের ছয় রোযা রাখা মুস্তাহাব। শাওয়াল মাসের প্রথম দিকে লাগাতরভাবে রোযাগুলো রাখা মুস্তাহাব। আর যদি আলাদাভাবে রাখে কিংবা শাওয়াল মাসের পরে রাখে তবুও জায়েয হবে এবং এ সুন্নত পালনকারী হিসেবে গণ্য হবে এ হাদিসের ব্যাপকতার কারণে। এ বিষয়ে আমাদের আলেমগণের মধ্যে কোন মতভেদ নেই। ইমাম আহমাদ ও দাউদও এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।”[আল-মাজমু শারহুল মুহায্‌যাব]
ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৭৮৫৮)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে নিম্নোক্ত প্রশ্নটি করা হয়েছিল:প্রশ্ন:ছয় রোযা কি রমযানের পর ঈদের দিনের অব্যবহিত পরেই শুরু করা আবশ্যক; নাকি ঈদের কয়েকদিন পর শাওয়াল মাসে লাগাতরভাবে রাখাও জায়েয; নাকি জায়েয নয়?

জবাবে তারা বলেন,

لا يلزمه أن يصومها بعد عيد الفطر مباشرة، بل يجوز أن يبدأ صومها بعد العيد بيوم أو أيام، وأن يصومها متتالية أو متفرقة في شهر شوال حسب ما يتيسر له، والأمر في ذلك واسع، وليست فريضة بل هي سنة.

“ঈদের দিনের অব্যবহিত পরেই ছয় রোযা রাখা আবশ্যকীয় নয়। বরং ঈদের একদিন পর কিংবা কয়েক দিন পর শুরু করাও জায়েয। লাগাতর ভাবে রাখা বা ভেঙ্গে ভেঙ্গে রাখা; যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে রাখা জায়েয। এ বিষয়টি প্রশস্ত। এটি ফরয রোযা নয়; বরং সুন্নত রোযা”।(ফাতাওয়াল লাজনাহ্‌ আদ্‌-দায়িমা খন্ড: ১০ পৃষ্ঠা:৩৯১)।
.
(২).প্রশ্ন: শাওয়ালের ছয় রোযা কি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রাখা যেতে পারে?
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে শাওয়ালের ছয় রোযা কি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রাখা যেতে পারে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে জবাবে শাইখ বলেন,

إذا اتفق أن يكون صيام هذه الأيام الستة في يوم الاثنين أو الخميس فإنه يحصل على أجر الاثنين بنية أجر الأيام الستة، وبنية أجر يوم الاثنين أو الخميس ، لقوله صلى الله عليه وسلم: (إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى).”

“যদি এই ছয়দিনের রোযা সোমবারে বা বৃহস্পতিবারে পড়ে তাহলে তিনি দুটো সওয়াবই পেতে পারেন; যদি তিনি ছয় রোযার নিয়ত করেন এবং সোমবার বা বৃহস্পতিবারে রোযা রাখারও নিয়ত করেন। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কর্মসমূহ নিয়ত অনুযায়ী হয়ে থাকে। কোন ব্যক্তি যা নিয়ত করেন সেটাই তার প্রাপ্য”।(উসাইমীন ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা; খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ১৫৪)
.
প্রশ্ন: শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার মধ্যে তিনটি রোজা কি শাওয়াল মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ এই তিনদিন আইয়ামে বীজের নিয়তে রাখা যাবে?
.
যে ব্যক্তি শাওয়ালের ছয় রোযার মধ্যে তিনটি রোযা আইয়ামে বীযের দিনগুলোর রোযার সাথে একই নিয়তে রাখবে সে কি ফযিলত পাবে? এমন প্রশ্ন: বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] করা হলে জবাবে শাইখ বলেন,

بأنه يُرجى له ذلك لأنّه يصدق أنه صام الستّ من شوال كما يصدق أنه صام الأيام البيض وفضل الله واسع.

“আশা করি তিনি সে ফযিলত পাবেন। কেননা তার ক্ষেত্রে এ কথা বলা সত্য যে, তিনি ছয় রোযা রেখেছেন এবং এ কথা বলাও সত্য যে, তিনি বীযের দিনগুলোর রোযা রেখেছেন। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ প্রশস্ত”।
.
একই মাসয়ালার জবাবে শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন আমাকে জবাব দিয়েছেন:

نعم ، إذا صام ست أيام من شوال سقطت عنه البيض، سواء صامها عند البيض أو قبل أو بعد لأنه يصدق عليه أنه صام ثلاثة أيام من الشهر ، وقالت عائشة رضي الله عنها: كان النبي صلى الله عليه وسلم يصوم ثلاثة أيام من كل شهر لا يبالي أصامها من أول الشهر أو وسطه أو آخره، و هي من جنس سقوط تحية المسجد بالراتبة فلو دخل المسجد وصلى السنة الراتبة سقطت عنه تحية المسجد …”

হ্যাঁ। যদি কেউ শাওয়ালের ছয় রোযা রাখে তার উপর বীযের রোযাগুলো বাদ হয়ে যাবে; হোক না তিনি বীযের দিনগুলোতে কিংবা আগে কিংবা পরে রোযাগুলো রাখুন না কেন। যেহেতু তার ক্ষেত্রে এ কথা বলা সত্য হয় যে, তিনি প্রত্যেক মাসের তিনদিন রোযা রেখেছেন। তিনি কি মাসের প্রথমে রোযাগুলো রাখলেন; নাকি মাঝে রাখলেন; নাকি শেষে রাখলেন সেটা ধর্তব্য নয়। সুন্নত নামায আদায় করার মাধ্যমে যেমন তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়া বাদ হয়ে যায় এটি সেই শ্রেণীর আমল। কেউ যদি মসজিদে প্রবেশ করে সুন্নত নামায পড়ে তাহলে তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করার বিধান বাদ হয়ে যায়…। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।(ইসলাম সাওয়াল জবাব ফাতাওয়া নং-৪০১৫)
.
প্রশ্ন: শাওয়াল মাসের ৬ টি রোজা কি রমজানের কাযা রোজা আদায়ের সাথে একই নিয়তে রাখা যাবে?
.
(৩).রমজানের কাযা আদায় ও শাওয়ালের ছয় দিনের রোযা এক নিয়্যতে এক সাথে আদায় করা শুদ্ধ হবে কিনা এমন একটি প্রশ্ন: আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে করা হলে জবাবে শাইখ বলেন,

من صام يوم عرفة ، أو يوم عاشوراء وعليه قضاء من رمضان فصيامه صحيح ، لكن لو نوى أن يصوم هذا اليوم عن قضاء رمضان حصل له الأجران: أجر يوم عرفة ، وأجر يوم عاشوراء مع أجر القضاء ، هذا بالنسبة لصوم التطوع المطلق الذي لا يرتبط برمضان ، أما صيام ستة أيام من شوال فإنها مرتبطة برمضان ولا تكون إلا بعد قضائه، فلو صامها قبل القضاء لم يحصل على أجرها ، لقول النبي صلى الله عليه وسلم : (من صام رمضان ثم أتبعه بست من شوال فكأنما صام الدهر) ومعلوم أن من عليه قضاء فإنه لا يعد صائماً رمضان حتى يكمل القضاء”

“যে ব্যক্তি আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিনে রোযা পালন করে এবং তার উপর রমজানের কাযা রোযা অনাদায় থাকে তবে তার রোযা রাখাটা সহিহ। তবে তিনি যদি এই রোযার মাধ্যমে রমজানের কাযা রোযা পালনেরও নিয়্যত করেন তবে তার দুটি সওয়াব হবে। আরাফাতের দিন অথবা আশুরার দিন রোযা পালনের সওয়াব ও কাযা রোযা আদায়ের সওয়াব। এটি সাধারণ নফল রোযার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রমজানের রোযার সাথে যে নফল রোযার কোন সম্পর্ক নেই। তবে শাওয়ালের ছয় রোযা রমজানের সাথে সম্পৃক্ত। সে রোযা রমজানের কাযা রোযা আদায়ের পরেই রাখতে হবে। তাই যদি কেউ কাযা আদায়ের আগে তা পালন করে তবে তিনি এর সওয়াব পাবেন না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেছেন : من صام رمضان ثم أتبعه بست من شوال فكأنما صام الدهر “যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোযা পালন করল, সে রোযার পর শাওয়াল মাসেও ছয়দিন রোযা পালন করল, সে যেন গোটা বছর রোযা রাখল।”আর এটি জানা বিষয় যে, যার উপর কাযা রোযা রয়ে গেছে সে রমজান মাসে রোযা পালন করেছে বলে ধরা হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার কাযা রোযা আদায় সম্পূর্ণ করে।”(উসাইমীন; ফাতাওয়াস্ সিয়াম’ পৃষ্ঠ: ৪৩৮)
.
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, ধরুন কারো কারো রমজানের বেশকিছু রোজার কাযা রয়েছে কিন্তু শাওয়াল মাসের যে কয়দিন বাকী আছে সেদিনগুলো যদি রমজানের কাযা রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার জন্য যথেষ্ট না হয় তাহলে কি কাযা রোজার আগে ছয় রোজা রাখা জায়েয হবে?

উত্তর: সঠিক মতানুযায়ী শাওয়ালের ছয় রোজা রমজানের রোজা পূর্ণ করার সাথে সম্পৃক্ত। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী:

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّامِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ

رواه مسلم (1164)

“যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল অতঃপর এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।” [সহিহ মুসলিম (১১৬৪)]

হাদিসে উল্লেখিতثُمَّ শব্দটিحرف عطف যাالترتيب (বিন্যাস) ও التعقيب (ক্রমধারা) অর্থে ব্যবহৃত হয়।এদিক থেকেহাদিসটি প্রমাণ করছে যে, আগে রমজানের রোজাপূর্ণ করতে হবে। সেটা সুনির্দিষ্ট সময়ে আদায় হিসেবে হোক অথবা (শাওয়াল মাসে) কাযাপালন হিসেবেহোক। অর্থাৎ রমজানের রোজা পূর্ণ করার পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখতে হবে। তাহলে হাদিসে উল্লেখিত সওয়াব পাওয়া যাবে।কারণ যে ব্যক্তির উপর রমজানের কাযা রোজা বাকী আছে সেতো পূর্ণ রমজান মাস রোজা রাখেনি। রমজান মাসের কিছুদিনরোজা রেখেছে। তবে কারো যদি এমন কোন ওজর থাকে যার ফলে তিনি শাওয়াল মাসে রমজানের কাযা রোজা রাখতে গিয়ে শাওয়ালের ছয়রোজা রাখতে পারেননি। যেমন কোন নারী যদি নিফাসগ্রস্ত (প্রসবোত্তর স্রাবগ্রস্ত) হন এবং গোটা শাওয়াল মাস তিনি রমজানের রোজা কাযা করেন তাহলে তিনি জিলক্বদ মাসে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখতে পারবেন। কারণ এ ব্যক্তির ওজর শরিয়তেগ্রহণযোগ্য। অন্য যাদের এমন কোন ওজর আছে তারা সকলে রমজানের রোজা কাযা করার পর শাওয়ালের ছয় রোজা জিলক্বদ মাসে কাযা পালন করতে পারবেন। কিন্তু কোন ওজর ছাড়া কেউ যদি ছয় রোজা না রাখে এবং শাওয়াল মাস শেষ হয়ে যায় তাহলে সে ব্যক্তি এই সওয়াব পাবেন না। শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: কোন নারীর উপর যদি রমজানের রোজার ঋণ থেকে যায় তাহলে তার জন্য কি রমজানের ঋণের আগে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা জায়েয হবে; নাকি শাওয়ালের ছয়রোজার আগে রমজানের ঋণের রোজা রাখতেহবে? জবাবে তিনি বলেন: যদি কোন নারীর উপর রমজানের কাযা রোজা থাকে তাহলে তিনি কাযা রোজা পালনের আগে ছয়রোজা রাখবেন না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّامِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ

رواه مسلم (1164)

“যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল এবং এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।” [সহিহ মুসলিম: ১১৬৪]

যার উপর কাযা রয়ে গেছে সেতো রমজানের রোজা পূর্ণ করেনি। সুতরাং সে কাযা আদায়ের আগে এই রোজা পালনের সওয়াব পাবে না। যদি ধরে নেয়া হয় যে, কাযা রোজা পালন করতে গোটা মাস লেগে যাবে (যেমন কোন নারী যদি নিফাসগ্রস্ত হন এবং তিনি গোটা রমজানে একদিনও রোজা রাখতে না পারেন, শাওয়াল মাসে তিনি রমজানের কাযা রোজা রাখা শুরু করেন, কিন্তু কাযা রোজা শেষ করতে করতে জিলক্বদ মাস শুরু হয়ে যায়) তাহলে তিনিজিলক্বদ মাসে ছয়রোজা রাখবেন। এতে করে তিনি শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখার সওয়াব পাবেন। কেননা তিনি বাধ্য হয়ে এই বিলম্ব করেছেন (যেহেতু শাওয়াল মাসে তার পক্ষে রোজা রাখা সম্ভবপর ছিল না)। তাই তিনি সওয়াব পাবেন।[দেখুন; উসাইমীন: ফতোয়া সমগ্র; ১৯/২০]

এর সাথে আরেকটু যোগ করে বলা যায়, যে ব্যক্তি বিশেষ কোন ওজরের কারণে রমজানের রোজা ভেঙ্গেছে সেটা কাযা করা তার দায়িত্বেফরজ। রমজানের রোজা ইসলামের পঞ্চবুনিয়াদের অন্যতম। তাই এই ইবাদত পালনপ্রাধান্য পাবে এবং ফরজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়াকে অন্য মুস্তাহাব আমলের উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে।
.
(৪).প্রশ্ন: কসম এর কাফ্‌ফারার রোযা শাওয়াল মাসের ছয় রোযা হিসেবে গণ্য হবে কী?
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: শাওয়ালের ছয় রোযা, আশুরার রোযা ও আরাফার দিনের রোযা কি শপথ ভঙ্গের রোযা হিসেবে আদায় হবে? যদি ব্যক্তি শপথের সংখ্যা নির্ধারণ করতে অক্ষম হয়?

উত্তরে তারা বলেন:

كفارة الأيمان هي : عتق رقبة مؤمنة ، أو إطعام عشرة مساكين ، أو كسوتهم ، فإن لم تجد شيئاً من ذلك : فتصوم عن كل يمين ثلاثة أيام .وأما عجزك عن حصر الأيمان : فيجب عليك الاجتهاد في حصرها بالتقريب ، ثم التكفير فيما حنثت فيه منها ، ويكفيك ذلك إن شاء الله .ولا يجزئ صيام يوم عاشوراء ، وعرفة ، وستة من شوال ، عن كفارة اليمين ، إلا إذا نوى بصيامها أنه عن الكفارة لا التطوع .الشيخ عبد العزيز بن باز ، الشيخ عبد الرزاق عفيفي ، الشيخ عبد الله بن غديان

শপথের কাফ্‌ফারা হচ্ছে, একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করা কিংবা দশজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানো কিংবা তাদেরকে পোশাক দেয়া। যদি এগুলোর কোনটি কেউ করতে না পারে তাহলে সে প্রতিটি শপথ ভঙ্গের বদলে তিনদিন রোযা রাখবে। আপনি বলেছেন যে, আপনি শপথের সংখ্যা হিসাব করতে অক্ষম: আপনার কর্তব্য হচ্ছে, কাছাকাছি সংখ্যা হিসাব করার চেষ্টা করা। এরপর এ শপথগুলোর মধ্যে যেগুলো আপনি ভঙ্গ করেছেন সেগুলোর কাফ্‌ফারা আদায় করা। এভাবে করা আপনার জন্য যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ্‌। আশুরার রোযা, আরাফার রোযা ও শাওয়ালের ছয় রোযা শপথ ভঙ্গের কাফ্‌ফারার রোযা হিসেবে আদায় হবে না; তবে ব্যক্তি যদি নিয়ত করে যে, এটা কাফ্‌ফারার রোযা; নফল রোযা নয় তাহলে আদায় হবে। শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি, শাইখ আব্দুল্লাহ্‌ বিন গাদইয়ান।[ফাতাওয়াল লাজনাহ্‌ দায়িমাহ্‌ (২৩/৩৭, ৩৮)]

শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:

প্রশ্নকারী বোন উল্লেখ করেছেন যে, তিনি শপথ করেছেন; এখন তিনি তিনদিন রোযা রেখে এ শপথের কাফ্‌ফারা আদায় করতে চাচ্ছেন। আমার জন্যে কি এ রোযাগুলো শাওয়ালের ছয় রোযার সাথে রাখা জায়েয হবে? অর্থাৎ আমি ছয়দিন রোযা রাখব?

উত্তরে তিনি বলেন:

أولاً : لا يجوز للحالف إذا حنث في يمينه أن يصوم ، إلا إذا كان لا يجد إطعام عشرة مساكين ، أو كسوتهم ، أو تحرير رقبة ؛ لأن الله سبحانه وتعالى قال ( فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ) ، وقد اشتهر عند كثير من العامة : أن كفارة اليمين إذا حنث الحالف : صيام ثلاثة أيام لمن يجد الإطعام ، أو الكسوة ، أو العتق ، ومن لا يجد ، وهذا غلط ، بل لا يجوز الصيام إلا إذا كان الحالف الذي حنث لا يجد إطعام عشرة مساكين ، أو يجد لكن لا يجد مساكين ، فحينئذٍ يصوم ثلاثة أيام متتابعة .

ثم إذا كان يندرج تحت صيام الأيام الثلاثة : فإنه لا يجزئ أن ينوي بها صيام ستة أيام من شوال ؛ لأنهما عبادتان مستقلتان ، فلا تغني إحداهما عن الأخرى ، بل يصوم ستة أيام من شوال ، ثم يصوم الأيام الثلاثة زائدة على صيام الأيام الستة

শপথকারী শপথ ভঙ্গ করলে তার জন্য রোযা দিয়ে কাফ্‌ফারা আদায় করা জায়েয হবে না; যদি না তিনি দশজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানো কিংবা তাদেরকে পোশাক দেয়া কিংবা একজন কৃতদাস মুক্ত করার সামর্থ্য না রাখেন। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “এর কাফ্‌ফারা হচ্ছে- দশজন মিসকীনকে মধ্যম ধরণের খাদ্য দান, যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও, বা তাদেরকে বস্ত্রদান, কিংবা একজন দাসমুক্তি। অতঃপর যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন সিয়াম পালন। তোমরা শপথ করলে এটাই তোমাদের শপথের কাফ্‌ফারা।”[সূরা মায়িদা, আয়াত: ৮৯]

সাধারণ মানুষের কাছে একটা বিষয় মশহুর হয়ে গেছে যে, শপথ ভঙ্গ করার কাফ্‌ফারা তিনদিন রোযা রাখা; চাই সে ব্যক্তি মিসকীনকে খাদ্য দেয়া কিংবা পোশাক দেয়া কিংবা দাস মুক্ত করার সামর্থ্য রাখুক কিংবা না-রাখুক এটি ভুল। বরং যে শপথভঙ্গকারী দশজন মিসকীনকে খাদ্য দেয়ার সামর্থ্য রাখে না, কিংবা সামর্থ্য রাখলেও মিসকীন খুঁজে পায় না; সে ব্যক্তি লাগাতর তিনদিন রোযা রাখবে।

শপথভঙ্গকারী ব্যক্তি যদি তিনদিন রোযা রাখার শ্রেণীভুক্ত হয় সেক্ষেত্রে এ রোযাগুলোর মাধ্যমে শাওয়ালের ছয় রোযার নিয়ত করা জায়েয হবে না। কেননা, এ দুইটি স্বতন্ত্র দুটি ইবাদত। একটি দিয়ে অপরটি আদায় হবে না। বরং সে ব্যক্তি শাওয়ালের ছয় রোযা রাখবে। তারপর ছয়দিনের উপর আর তিনটি রোযা অতিরিক্ত রাখবে। [ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব, (৮৪, ৮৫)]
.
(৫).প্রশ্ন: যাদের মানতের রোজা বাকি আছে এমতাবস্থায় শাওয়াল মাসে তাদের জন্য কি শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা উত্তম; নাকী মানতের রোজা রাখা উত্তম?

প্রশ্ন: বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে প্রশ্ন: আমি একবার রোগে আক্রান্ত হয়েছিলাম এবং মানত করেছিলাম যে, সুস্থ হলে আল্লাহর জন্য ১৫টি রোজা রাখব; আমি কোন সময় নির্ধারণ করিনি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি সুস্থ হয়েছি এবং রজব মাস থেকে রোজা রাখা শুরু করেছি। পাঁচদিন রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এরপর শাবান মাসে আরও পাঁচদিন রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এরপর রমজান শুরু হলে রমজানের রোজা রেখেছি। এখন আমরা শাওয়াল মাসে আছি। এমতাবস্থায় আমার জন্য কি শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা উত্তম; নাকি মানতের বাকী পাঁচদিনের রোজা পরিপূর্ণ করা উত্তম? দয়া করে জানাবেন, আল্লাহ আপনাকে মোবারকময় করুন।

জবাবে শাইখ বলেন,

عليك أولاً أن تصومي بقية النذر، ثم تصومي الستة من شوال إذا تمكنت من ذلك، وإن تركتيها فلا بأس، لأن الصوم للستة من شوال مستحب وليس بواجب. أما صوم النذر فهو واجب فريضة فالواجب عليك أن تبدئي بالفريضة قبل النافلة، وإذا كنت قد نويت التتابع ؛ أنك تصومين خمسة عشر يوماً متتابعة فلابد أن تصوميها متتابعة، ولا يجوز تفريقها بل عليك أن تصوميها متتابعة، والصوم السابق يلغى.

أما إذا نويت صيامها غير متتابعة فقد وجب عليك الباقي وهي خمسة أيام تصومينهن إن شاء الله وانتهى الأمر.

ولا ينبغي أن تنذري بعد ذلك، فالنذر لا ينبغي، يقول النبي صلى الله عليه وسلم: لَا تَنْذِرُوا، فَإِنَّ النَّذْرَ لَا يَرُدُّ شَيْئًا مِنْ الْقَدَرِ، وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنْ الْبَخِيلِ.

فلا ينبغي النذر لا للمريض ولا غير المريض، ولكن متى نذر الإنسان طاعة لله وجب عليه الوفاء كالصوم والصلاة، لقول النبي صلى الله عليه وسلم: مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلَا يَعْصِهِ رواه البخاري في الصحيح.

فإذا نذر الإنسان صوم أيام معدودة، أو صلاة ركعتين، أو صدقة بكذا من المال لزمه أن يوفي بما نذر من الطاعات ؛ لأن الله مدح المؤمنين فقال: يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا الإنسان/7.

ولأن الرسول صلى الله عليه وسلم أمر بالوفاء كما في الحديث السابق، فالنذر ليس هو سبباً للبرء، وليس سببا لحصول الحاجة المطلوبة، فلا حاجة إليه، ولكنه شيء يكلف الإنسان به نفسه، ويستخرج به من البخيل، ثم بعد ذلك يندم ويقع في الحرج ويود أنه لم ينذر، فالشريعة بحمد الله جاءت بما هو أرفق وأنفع للناس وهو النهي عن النذر”

“আগে মানতের অবশিষ্ট রোজাগুলো শেষ করা আপনার কর্তব্য। এরপর সম্ভব হলে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবেন। যদি ছয় রোজা নাও রাখতে পারেন কোন অসুবিধা নেই। কারণ শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা মুস্তাহাব; ফরজ নয়। পক্ষান্তরে মানতের রোজা রাখা ফরজ। তাই আপনার কর্তব্য হচ্ছে- নফলের আগে ফরজ রোজা রাখা। আপনি যদি লাগাতরভাবে ১৫টি রোজা রাখার নিয়ত করে থাকেন তাহলে আপনাকে লাগাতরভাবে ১৫টি রোজা রাখতে হবে। আলাদা আলাদাভাবে রাখলে চলবে না; বরং লাগাতরভাবে রাখতে হবে। আর পূর্বের রোজাগুলো বাতিল হয়ে যাবে।

আর যদি আপনি লাগাতরভাবে রাখার নিয়ত না করে থাকেন তাহলে বাকী ৫টি রোজা রাখলে ইনশাআল্লাহ আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে।

আর পরবর্তীতে কখনও মানত করবেন না; মানত করা সমীচীন নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা মানত করো না; কারণ মানত তাকদীর পরিবর্তন করে না। মানতের মাধ্যমে কৃপণের সম্পদ খরচ করানো হয়।”

এ কারণে মানত করা ঠিক না। অসুস্থ ব্যক্তির জন্যেও না; অসুস্থ নয় এমন ব্যক্তির জন্যেও না। তবে কেউ যদি আল্লাহর কোন একটি আনুগত্য পালন করার মানত করে যেমন- নামায, রোজা তাহলে সে মানত পূর্ণ করা ফরজ। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করেছে তার উচিত সে আনুগত্য পূর্ণ করা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার মানত করেছে সে আল্লাহর অবাধ্য হবে না।”[সহিহ বুখারি]

অতএব কোন ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট কিছুদিন রোজা রাখার অথবা দুই রাকাত নামায পড়ার অথবা বিশেষ সম্পদ সদকা করার মানত করে থাকে তার উচিত সে আনুগত্যের কাজ পালন করা। কেননা আল্লাহ তাআলা মুমিনদের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন: “তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে যেদিনের অনিষ্ট সম্প্রসারিত।”[সূরা আল-ইনসান, আয়াত: ৭] এবং কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্বোক্ত হাদিসে মানত পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং মানত রোগমুক্তির কারণ নয়; প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার কারণ নয়। তাই মানতের কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু মানুষ নিজের উপর সেটা অনিবার্য করে নেয়। এর মাধ্যমে কৃপনের সম্পদ খরচ করানো হয়। পরবর্তীতে মানতকারী আফসোস করে, কষ্টে পড়ে এবং প্রত্যাশা করে সে যদি মানত না করত। আলহামদুলিল্লাহ ইসলামি শরিয়ত এমন বিধান জারী করেছে যা মানুষের জন্য কল্যাণকর ও সহজতর। সেটা হচ্ছে মানত করা থেকে নিষেধাজ্ঞা।
সূত্র: শাইখ বিন বায; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব: ৩/১২৬১। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।