রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের সঠিক দিন এবং বছর কোনটি

ভূমিকা: পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ মহা মানব মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আগমনে বিশ্ববাসী পেয়েছে সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও আলোর সন্ধান। তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে দেখিয়েছে মুক্তি ও কল্যাণের পথ। তাঁর দর্শনতন্ত্রের মূলমন্ত্র ছিল হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক্ব আদায় করা ও হাক্কুল ইবাদ বা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কর্তব্য পালন করা। রাসূল (ﷺ)-এর জীবনদর্শন কোনো স্বতঃস্ফূর্ত কর্ম নয়; বরং মহান আল্লাহপাক প্রদত্ত ঐশী বাণীরই বাস্তব রূপায়ণ। কেবল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর মহান কর্মের গুরুদায়িত্ব সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। তিনি একাধারে পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মহাবিপ্লবের মাধ্যমে রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছিলেন। এসব দায়িত্বের মূলে ছিল আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, وَمَا اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ ‘হে নবী! আমি তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া, ১০৭)। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মহান চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা আরো করেছেন, وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ ‘তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা কালাম, ৪)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমস্ত মানুষের মাঝে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেন, اِنَّمَا بُعِثْتُ لِاُتَمِّمَ صَالِحَ الْاَخْلَاقِ ‘নিশ্চয়ই আমি প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্রসমূহকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য।’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯৫২, ৮৯৩৯)। পৃথিবীতে সর্বাধিক চর্চা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে নিয়ে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ ‘আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি। (সূরা ইনশিরাহ: ৪)।
.
পৃথিবীর ইতিহাসে যত মানুষ এসেছে তাদের মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ)। ইতিহাস সাক্ষী বিশ্বের বহু খ্যাতিমান পুরুষ মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর জীবনী নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং গবেষণা শেষে এক বাক্যে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, মুহাম্মদ (ﷺ) একমাত্র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক। পৃথিবীতে তাঁর অবদানের কোনো বিকল্প নেই। তিনি যে বার্তা নিয়ে এ পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছিলেন, সেটিই শ্রেষ্ঠ বার্তা, মানবের জন্য চির কল্যাণকর গাইডলাইন। এই গাইডলাইনের মধ্যেই বিশ্বমানবতার শান্তি নিহিত। এটি অস্বীকার করার কারও কোনো সুযোগ নেই। আর সেই রাসূল (ﷺ) এর জন্মের দিন ও মাস নির্দিষ্ট করা নিয়ে সীরাত প্রণেতা ও ঐতিহাসিকগণ মতানৈক্য করেছেন। এ মতানৈক্যের যৌক্তিক কারণও রয়েছে। যেহেতু তখনকার সময় কারও জানা ছিল না যে,এ নবজাতক ভবিষ্যতে বড় কিছু হবে। সেকারণে অন্য নবজাতকের জন্মকে যেভাবে নেওয়া হতো, রাসূল (ﷺ)-এর জন্মকেও সেভাবে নেওয়া হয়েছিল। এজন্য কেউ রাসূল ( ﷺ)-এর জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করেননি। ড.মুহাম্মাদ তাইয়্যেব আন-নাজ্জার (রাহি.)-বলেন,সম্ভবত এর রহস্য হলো,যখন তিনি জন্মগ্রহণ করেন, তখন তার থেকে কেউ এমন বিপদ আশঙ্কা করেনি। এজন্যই জন্মলগ্ন থেকে নবুঅত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত সময়ে আলোচনায় আসেননি। ৪০ বছর বয়সে যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে রিসালাতের দাওয়াত পৌঁছানোর নির্দেশ প্রদান করেন, তখন থেকে মানুষ এ নবী সংক্রান্ত তাদের স্মৃতিতে গেঁথে থাকা ঘটনাগুলো স্মরণ করতে থাকে এবং একে অপরকে তাঁর জীবনের খুঁটিনাটি সব ইতিহাস জিজ্ঞেস করতে থাকে। এ বিষয়ে তাদেরকে অনেকটা সমৃদ্ধ করেছে বুঝবান হওয়ার পর থেকে নিজের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বর্ণিত যে ঘটনাগুলো তিনি পার করেছেন অথবা তাঁর উপর দিয়ে পার হয়েছে। অনুরূপভাবে তার সাহাবীগণের বর্ণনা ও এসব ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের বর্ণনা। এভাবে মুসলিমরা তাদের নবী (ﷺ)-এর ইতিহাস সংক্রান্ত শ্রুত সব ঘটনা সংগ্রহ করা আরম্ভ করেন, যাতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য তা বর্ণনা করে যেতে পারেন। (আল-ক্বাওলুল মুবীন ফী সীরাতে সায়্যিদিল মুরসালীন, পৃষ্ঠা: ৭৮)।

◾সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) জন্মের দিন কোনটি?
_______________________________________
মহান আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআনে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্মদিন, বার,তারিখ কিংবা সময় সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। সেজন্য আমাদেরকে রাসূল ﷺ এর জন্মের দিন তারিখ জানার জন্য রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস এবং ইমামগনের উক্তি বিশ্লেষণ করতে হবে। রাসূল (ﷺ)-এর হাদীস থেকে যানা যায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্মের বার ছিল সোমবার, তাই এটি নিয়ে পৃথিবীর কোন আলেমদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই সবাই একমত। রাসূল (ﷺ) -এর জন্মদিন সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, আবু ক্বাতাদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সোমবারের দিন সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি, এই দিনেই আমি নবুঅত পেয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর কুরআন নাযিল করা হয়েছে।'(সহীহ মুসলিম, হা/১১৬২; মিশকাত, হা/২০৪৫) ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছেন, সোমবারে নবুঅত লাভ করেন, সোমবারে ইন্তিকাল করেন,সোমবারে মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনার পথে রওয়ানা করেন, সোমবারে মদীনা পৌঁছান এবং সোমবারেই তিনি হাজারে আসওয়াদ স্থাপন করেন। (ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ, মিসর: খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ১৭২-১৭৩, হা/২৫০৬, বিশ্লেষক আহমদ শাকির সনদ আলোচনা করে বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ)।
.
◾সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ)-এর জন্মবছর:
_______________________________________
রাসূল (ﷺ) -এর জন্মবছর সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, ক্বাইস ইবনে মাখরামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করে বলেন, আমি ও রাসূল (ﷺ) হস্তির বছরে (আবরাহার বাহিনী ধ্বংসের বছর) জন্মগ্রহণ করি। তিনি বলেন, ইয়া‘মুর ইবনু লাইছ গোত্রীয় কুবাছ ইবনু আশইয়ামকে ওসমান ইবনু আফফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) প্রশ্ন করেন,আপনি বড় নাকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার চাইতে অনেক বড়, তবে আমি তাঁর আগে জন্মগ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাতির বছর জন্মগ্রহণ করেছেন। আমার মা আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেলেন, যেখানে গিয়ে আমি পাখিগুলোর মলের রং সবুজে বদল হয়ে যেতে দেখেছি।ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী বলেন,এ হাদীসটি হাসান গরীব। আমরা শুধু মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্বের সূত্রেই এ হাদীসটি জেনেছি। (জামে‘ আত-তিরমিযী, হা/৩৬১৯) ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কার অভ্যন্তরে হস্তিবাহিনীর বছর জন্মগ্রহণ করেন। (আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ: খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৭৬)।

◾হস্তিবাহিনীর ঘটনা কখন ঘটেছে:
___________________________________
আবরাহা সাবাহ হাবশী (সে সম্রাট নাজ্জাশী হাবশের পক্ষ হতে ইয়ামানের গভর্নর ছিল) যখন দেখল যে, আরববাসী কা‘বা ঘরের হজ্জ পালন করছে এবং একই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন সেখানে আগমন করছে, তখন সান‘আয় সে একটি বিরাট গির্জা নির্মাণ করল এবং সেই গির্জাকে কেন্দ্র করে হজ্জ পালন করার জন্য আরববাসীকে আহ্বান জানালো। কিন্তু বনু কেনানা গোত্রের লোকজন যখন এই সংবাদ অবগত হলো, তখন তারা এক রাতে গোপনে গির্জায় প্রবেশ করে তার সামনের দিকে ‘মল’-এর প্রলেপন দিয়ে একদম নোংরা করে ফেলল। উক্ত ঘটনায় আবরাহা ভয়ানক ক্রোধান্বিত হয় এবং প্রতিশোধ গ্রহণার্থে কা‘বা ঘর ধ্বংস করার জন্য বিশাল বাহিনী প্রস্ত্তত করেন। কোন বর্ণনায় ২০ হাযার ও কোন বর্ণনায় ৬০ হাযার সৈন্যের কথা এসেছে। তবে শেষোক্ত বর্ণনাটি আরবী কবিতা থেকে নেওয়া (কুরতুবী)। আর সে যুগে কবিতাই ছিল ইতিহাসের বাহন। অতএব শেষোক্ত সংখ্যাটিই সঠিক বলে অনুমিত হয়। উক্ত বাহিনীর সাথে নাজাশীর পক্ষ হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশালবপু হস্তীবাহিনী পাঠানো হয়। যার নেতৃত্বে ছিল ‘মাহমূদ’ নামক হাতিটি। হস্তীবাহিনীর সংখ্যা কেউ বলেছেন ১টি, কেউ বলেছেন ২টি, ৮টি বা ১২ টি বা তার বেশী। তবে ‘মাহমূদ’ ছিল এদের নেতা। বাকীরা মাহমূদের অনুগামী। এদের নেওয়া হয়েছিল এজন্য যে, লোহার শিকলের এক প্রান্ত কা‘বার দেওয়ালে বেঁধে অন্য প্রান্ত হাতির ঘাড়ে বাঁধা হবে। অতঃপর হাতিকে হাঁকিয়ে দেয়া হবে, যাতে পুরা কা‘বাগৃহ এক সাথে উপড়ে ভেঙ্গে পড়ে (ইবনু কাছীর)।সে নিজে একটি শক্তিশালী হাতির পিঠে আরোহণ করে।
.
আবরাহা ইয়ামান হতে অগ্রসর হয়ে ‘আল-মাগাম্মাস’ নামক স্থানে পৌঁছল এবং সেখানে তার সৈন্য বাহিনীকে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত করে মক্কায় প্রবেশের উদ্দেশ্যে সামনে অগ্রসর হলো। অতঃপর যখন মুযদালিফা এবং মিনার মধ্যবর্তী স্থান ওয়াদিয়ে মুহাসসারে পৌঁছল, তখন আবরাহার হাতিটি মাটিতে বসে পড়ল। কা‘বা অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার জন্য কোনোভাবেই তাকে উঠানো সম্ভব হলো না। অথচ উত্তর, দক্ষিণ কিংবা পূর্বমুখে যাওয়ার জন্য তাকে উঠানোর চেষ্টা করলে সে তৎক্ষণাৎ উঠে দৌঁড়াতে শুরু করছিল। এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা এক ঝাঁক ছোট পাখি প্রেরণ করলেন। কুরআন মাজীদে সেই পাখিগুলোকে ‘আবাবীল’ বা ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই পাখিগুলো পাথরের ছোট ছোট টুকরো বয়ে এনে সৈন্যদের উপর নিক্ষেপ করতে লাগল। কঙ্করগুলো শরীরের যেখানে লাগছিল, ফেটে গিয়ে সেখান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে হতে সে মরে যাচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া নুফায়েল বিন হাবীব বলে ওঠেন,أيْنَ الْمَفَرُّ والإلَهُ الطَّالِبُ + والْأَشْرَمُ الْمَغْلُوبُ لَيْسَ الْغَالِبُ কোথায় পালাচ্ছ, খোদ আল্লাহ আজ তোমাদের ধরেছেন। নাককাটা (আবরাহা) পরাজিত। সে বিজয়ী নয়। এছাড়াও নুফায়েল-এর আরও কবিতা বর্ণিত হয়েছে।
.
ইবনু ইসহাক বলেন, আবরাহা বাহিনী মক্কা থেকে পালিয়ে ইয়ামন পর্যন্ত পথে পথে মরতে মরতে যায় এবং আবরাহা তার প্রিয় রাজধানী সান‘আ শহরে পৌঁছে লোকদের কাছে আল্লাহর গযবের ঘটনা বলার পর মৃত্যুবরণ করে। এ সময় তার বুক ফেটে কলিজা বেরিয়ে যায়। মুক্বাতিল বিন সুলায়মান বলেন, কুরায়েশরা ঐদিন বহুমূল্য গণীমতের মাল হস্তগত করে। একা আবদুল মুত্ত্বালিব যা স্বর্ণ পান, তাতে তাঁর সমস্ত পাত্র পূর্ণ হয়ে যায়। ইবনু ইসহাক বলেন, এর পরপরই আল্লাহ তাঁর বিশেষ রহমত স্বরূপ কুরায়েশদের গৃহে তাঁর প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করেন (ইবনু কাছীর)। তিনি বলেন, আবরাহা বাহিনীর এই মর্মান্তিক পরিণতির ফলে সমগ্র আরবে কুরায়েশদের সম্মান ও মর্যাদা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তারা তাদেরকে أَهْلُ اللهِ ‘আল্লাহওয়ালা’ বলতে থাকে। তারা বলতে থাকে যে, قَاتَلَ اللهُ عَنْهُمْ، وَكَفَاهُمْ مَئُونَةَ عَدُوِّهِمْ ‘আল্লাহ তাদের পক্ষে লড়াই করেছেন এবং তাদেরকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন (কুরতুবী)। এই ঘটনার পর দশ বছর মক্কার লোকেরা মূর্তিপূজা থেকে বিরত থাকে।(মুস্তাকরাকে হাকেম ২/৫৩৬ হা/৬৮৭৭; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৯৪৪)।
.
হস্তীওয়ালাদের এই ঘটনা আরবদের মধ্যে বহুল প্রচলিত ছিল। এমনকি রাসূল (ﷺ)-এর সময়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে অনেকে জীবিত ছিলেন। যেমন হাকীম বিন হেযাম, হাতেব বিন আব্দুল ওযযা, নওফেল বিন মু‘আবিয়া প্রমুখ। যারা প্রত্যেকে ১২০ বছর করে বয়স পেয়েছিলেন। ৬০ বছর জাহেলিয়াতে ও ৬০ বছর ইসলামে। এছাড়া উক্ত ঘটনার বিষয়ে রাসূল (ﷺ) থেকে অনেকগুলি সহীহ হাদীস এসেছে। যেমন হুদায়বিয়ার দিন রাসূল (ﷺ)-এর উষ্ট্রী ‘ক্বাছওয়া’ বসে পড়লে তিনি বলেন, حَبَسَهَا حَابِسُ الْفِيْلِ ‘হস্তীবাহিনীকে বাধা দানকারী (আল্লাহ) তাকে বাধা দিয়েছেন।’(সহীহ বুখারী হা/২৭৩১, ২৭৩২) তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকের অভিমত হচ্ছে, উক্ত ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রাসূল (ﷺ)-এর জন্মগ্রহণের মাত্র ৫০ কিংবা ৫৫ দিন পূর্বে মুহাররম মাসে। এই প্রেক্ষিতে এটা ধরে নেওয়া যায় যে, ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল ৫৭১ ঈসায়ী সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ ভাগে কিংবা মার্চ মাসের প্রথম ভাগে। (আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী, আর রাহীকুল মাখতূম, ঢাকা : পিস পাবলিকেশন), পৃ. ৯১-৯২) কিছু কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, রাসূল (ﷺ)-এর জন্ম হস্তিবাহিনীর ১০/২৩/৪০ বছর পর। তবে উক্ত বর্ণনাগুলো দূর্বল। (আস-সীরাতুন নাবাবিয়াহ আস-সাহীহাহ, ১/৯৭।) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।