রামাদান মাসে কিয়ামুল লাইলের ফজিলত পেতে হলে পুরা মাস কেয়ামুল লাইল আদায় করা কি শর্ত নাকি দুই একদিন না পড়লেও এই ফজিলত পাওয়া যাবে

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবপ্রাপ্তির আশা নিয়ে রামাদান মাসে কিয়ামুল লাইল আদায় করবে তার পূর্বের সব (সগিরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”(সহীহ বুখারী হা/৩৮, ১৮০২, ১৯১০, ২০১৪, সহীহ মুসলিম হা/৭৬০, আবূ দাঊদ হা/১৩৭২, নাসায়ী হা/২২০৫, ইবনু মাজাহ ১৬৪১)
.
উক্ত হাদীসে রামাদান মাস শব্দটি ব্যবহার করায় কথাটি রামাদানের সকল রাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই হাদিসের প্রত্যক্ষ মর্ম হচ্ছে— মাসের সকল রাতে কিয়াম পালন করার সাথে উল্লেখিত সওয়াবটি সম্পৃক্ত। (ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯২২১০৭)
.
ইমাম নাবাবী (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য রমাযানের রাতে তারাবীহের সালাত আদায় করা। অর্থাৎ তারাবীহের সালাত দ্বারা قيام الليل (কিয়ামুল লায়ল)-এর উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যায়। এর অর্থ এমন নয় যে, তারাবীহ ব্যতীত قيام الليل হয় না।( মিশকাতুল মাসাবিহ হা ১৯৫৮ ব্যাখ্যা দৃষ্টব্য)
.
ইমাম আস-সানআনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “হাদীসের এমন একটি অর্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যে, তিনি মাসের সকল রাতে কিয়ামুল লাইল আদায় করাকে উদ্দেশ্য করেছেন। যে ব্যক্তি কিছু রাত কিয়ামুল লাইল পালন করবে সে ব্যক্তির জন্য উল্লেখিত ক্ষমা হাছিল হবে না। এটাই হাদিসের প্রত্যেক্ষ অর্থ। (সুবুলুস সালাম খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ১৮২)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ ইমাম ইবনে উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন: “যে ব্যক্তি রামাদানে কিয়াম আদায় করবে” অর্থাৎ রামাদান মাসে। এ কথাটি গোটা মাসকে শামিল করছে; মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।”(শারহু বুলুগুল মারাম খন্ড:৩ পৃষ্ঠা:২৯০)
.
তবে যে ব্যক্তি মাসের কিছু রাতে বিশেষ কোন ওজরের কারণে কিয়াম পালন করতে পারেনি তার ব্যাপারে আশা করা যায় যে, হাদিসে উল্লেখিত সওয়াব তার জন্যে অর্জিত হবে।কারন আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যদি কোন বান্দা অসুস্থ হয় কিংবা সফরে থাকে তার জন্য সে মুকীম (গৃহ অবস্থানকারী) থাকা অবস্থায় কিংবা সুস্থ থাকাবস্থায় যে আমলগুলো করত সেগুলো লিখে দেয়া হবে।”(সহিহ বুখারী হা/২৯৯৬)
.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কোন ব্যক্তির যদি রাতের সালাতের অভ্যাস থাকে; কিন্তু কোনদিন যদি তাকে ঘুমে কাবু করে ফেলে; তাহলে তার জন্য সালাত পড়ার সওয়াব লিখে দেয়া হবে। আর তার ঘুম হবে তার জন্য সদকা। (সুনানে আবু দাউদ হা/১৩১৪); আলবানী ইরওয়াউল গালিল ২/২০৪) আর যদি অলসতা করে কিছু রাতের সালাত না পড়ে তাহলে হাদিসের প্রত্যক্ষ মর্ম হচ্ছে সে ব্যক্তি উল্লেখিত সওয়াব পাবে না। (ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯২২১০৭)
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, রামাদানের কিয়ামুল লাইলের ফজিলত পেতে হলে অবশ্যই পুরা রামাদান মাসে কিয়ামুল লাইলের সালাত আদায় করতে হবে। তবে শরীয়ত সম্মত কোন ওজর অর্থাৎ অসুস্থতা বা ভিন্ন কোন সমস্যার কারণে দুই একদিন মিস হলেও পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু বিনা ওজরে অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত ভাবে দুই এক দিন মিস করলে উক্ত ফজিলত পাওয়া যাবেনা। জেনে রাখা ভাল যে,উক্ত সালাত জামাআতে অথবা একাকী বিতরসহ ১১ অথবা তার বেশি আদায় করা সর্বাবস্থায় একই বিধান প্রযোজ্য। তবে জামাআতে পড়া হলে নিশ্চিত সওয়াব বেশি হবে ইনশাআল্লাহ। (বাকিটা আল্লাহই ভাল যানেন)
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।