দুটি ভিন্নজাতের খাদ্যদ্রব্য থেকে এক সা’ অর্থাৎ এক প্রকারের খাদ্য তিন কিলোগ্রাম (৩ কেজি) না দিয়ে প্রত্যেক প্রকারের খাদ্য এক কিলোগ্রাম করে দেয়া বৈধ হবে কি

দুই বা ততোধিক প্রকারের খাদ্য মিশ্রিত করে এক সা’ ফিতরা পরিশোধ করার হুকুম নিয়ে ফিকাহবিদ আহালুল আলেমগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে এক্ষেত্রে দুটি প্রসিদ্ধ মত পাওয়া যায়। যেমন:

(১). প্রথম অভিমত: দুই বা ততোধিক প্রকারের খাদ্য মিশ্রিত করে এক সা’ ফিতরা পরিশোধ করলে সহীহ হবে না এবং ফিতরা আদায় হবে না। এটি শাফেয়ি মাযহাব ও ইবনে হাযম জাহেরির অভিমত। তারা দলিলগুলোর বাহ্যিক অর্থের সাথে অবস্থান নিয়েছেন। যে দলিলগুলো বর্ণনা করছে যে, ফিতরা নির্দিষ্ট শ্রেণীর খাদ্যদ্রব্যের এক সা’। তাই কেউ যদি অর্ধ সা’ এক শ্রেণীর খাদ্যদ্রব্য দিয়ে দেয়; বাকী অর্ধ সা’ অন্য শ্রেণীর খাদ্যদ্রব্য দিয়ে দেয় তাহলে তারা দলিলে যা উদ্ধৃত হয়েছে সেটার অনুসরণ করল না।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“ইমাম শাফেয়ি, গ্রন্থাকার (অর্থাৎ শিরাজি) ও মাযহাবের সকল আলেম বলেন: দুই জাতের খাদ্য এক সা’ দিলে ফিতরা পরিশোধ হবে না…। যেমনিভাবে শপথ ভঙ্গের কাফফারার ক্ষেত্রে পাঁচজন মিসকীনকে পোশাক দিলে ও পাঁচজন মিসকীনকে খাদ্য দিলে আদায় হবে না। যেহেতু সে ব্যক্তি এক সা’ গম কিংবা এক সা’ যব কিংবা এক সা’ অন্য কোন খাদ্য দিতে আদিষ্ট। কিন্তু সে ব্যক্তি এ দুটোর প্রত্যেকটি থেকে এক সা’ পরিশোধ করেনি। যেমনিভাবে (শপথ ভাঙ্গকারী) দশজন মিসকীনকে খাদ্য দান কিংবা দশজন মিসকীনকে পোশাক দান করতে আদিষ্ট। কিন্তু পূর্বোক্ত উদাহরণে সে ব্যক্তি দশজনকে পোশাক দান করেনি এবং দশজনকে খাদ্য দান করেনি। এটাই মাযহাবের অভিমত।(ইমাম নববী আল-মাজমু” খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা:৯৮-৯৯ আরো বিস্তারিত জানতে ‘মুগনিল মুহতাজ’ ২/১১৮ ও ‘তুহফাতুল মুহতাজ’ ৩/৩২৩)
.
ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“এক সা’–এর কিছু অংশ যব ও কিছু অংশ খেজুর দিলে পরিশোধ হবে না। মূল্য দিলে মূলতঃই পরিশোধ হবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা ফরয করেছেন এগুলো সেটা নয়।(সংক্ষেপে আল-মুহাল্লা বিল আছার খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা:২৫৯)
.
(২). দ্বিতীয় অভিমত: দুই বা ততোধিক প্রকারের খাদ্য মিশ্রিত করে এক সা’ ফিতরা পরিশোধ করলে সহিহ হবে ও ফিতরা আদায় হবে। এটি হানাফি ও হাম্বলি মাযহাবের অভিমত। তারা মর্মার্থের দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। তারা বলেছেন অবশ্যই এক সা’ মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য গরীবের জন্য যথেষ্ট হওয়া, ব্যক্তিকে পবিত্র করা ও ফিতরা আদায় হওয়ার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে।
.
ইমাম ইবনু রজব আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৯৫ হি.] ‘আল-কাওয়ায়েদ আল-ফিকহিয়্যা’ গ্রন্থে বলেন: “যে ব্যক্তিকে দুটো আমলের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে এবং তার পক্ষে সম্মিলিতভাবে দুটো আমলের অর্ধেক অর্ধেক করে পালন করা সম্ভবপর হয়েছে— এভাবে কি আদায় হবে; নাকি হবে না?”এতে মতভেদ রয়েছে। এর ভিত্তিততে কিছু মাসয়ালা উৎপন্ন হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

(১). যদি কেউ পাঁচজন মিসকীনকে খাদ্যদান ও পাঁচজন মিসকীনকে বস্ত্রদানের মাধ্যমে শপথ ভঙ্গের কাফ্‌ফারা দেয় তাহলে মশহুর অভিমত অনুযায়ী সেটা পরিশোধ হয়ে যাবে।

(২). কেউ যদি দুই জাতের এক সা’ খাদ্য দিয়ে ফিতরা পরিশোধ করে তাহলে মাযহাবের মতানুযায়ী আদায় হয়ে যাবে। এতে আরেকটি অভিমত আছে (অর্থাৎ আদায় হবে না)”(আল-কাওয়ায়েদ আল-ফিকহিয়্যা’ গ্রন্থে কায়েদা নং-১০১, পৃষ্ঠা-২২৯ ‘আল-ইনসাফ (৩/১৮৩ ‘হাশিয়াতু ইবনে আবেদিন’ ২/৩৬৫)
.
পরিশেষে, উপরোক্ত দুটি মতের মধ্যে দলিলের আলোকে ইমাম শাফেয়ির অভিমত অধিক বিশুদ্ধ। কারন এটাই সুন্নাহর বাহ্যিক অনুসরণ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকাতুল ফিতর বা ফিতরা ফরয করেছেন এক সা’ যব কিংবা এক সা’ খেজুর …। সাহাবায়ে কেরাম এভাবেই ফিতরা পরিশোধ করতেন। কোন সাহাবী একাধিক খাদ্য দিয়ে এক ‘সা’ নির্ধারণ করেছেন এমন কোন দলিল পাওয়া যায়না।সুতরাং যে ব্যক্তি দুই জাতের এক সা’ খাদ্য দিয়েছে সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নির্দেশ দিয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করেনি। অথচ মহান আল্লাহ বলেন, অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। সূরা আহযাব,৩৩/২১ (কিছুটা পরিমার্জিত ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৯৭৭৯)। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।