রাত কেন্দ্রিক ২৮টি কুসংস্কার

ভূমিকা: ইসলামের দৃষ্টিতে সমস্ত কল্যাণ-অকল্যাণের চাবিকাঠি রয়েছে একমাত্র মহান আল্লাহর হাতে। তার লিখিত তকদিরের বাইরে কেউ কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না। কোন বস্তু ও জড়পদার্থ নিজে নিজে কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না। কোন পাখির ডাক বা পশুর আওয়াজ মানুষের জন্য কল্যাণ বা অকল্যাণকর বলে বিবেচিত হতে পারে না, কোন বৈধ কাজ কখনো অশুভ হতে পারে না তা রাত বা দিন যখনই করা হোক না কেন। এটা দেখলে এই হয়..ওটা দেখলে ঐ হয় এগুলো সব কুসংস্কার ও জাহেলিয়াত পূর্ণ বিশ্বাস। ইসলাম এ সব ভ্রান্ত বিশ্বাসের কঠোর বিরোধিতা করেছে।
মূলত: মানুষের তৈরি যুক্তিহীন এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস, কথা, কাজ ও প্রথাকে সহজ বাংলায় কুসংস্কার বলা হয়।
ইসলামের সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অশিক্ষা যাবতীয় কুসংস্কার সৃষ্টির মূল কারণ। মানুষ চরম অন্ধবিশ্বাসে নানা ধরণের কুসংস্কার লালন করে। সাধারণত গ্রামীণ লোকজনের মাঝে কুসংস্কারের প্রভাব ও প্রবণতা একটু বেশি লক্ষ করা যায়। তবে শহুরে লোকজন এসব থেকে মুক্ত নয়। এমনকি বহু নাম করা নায়ক, নায়িকা, গায়ক, গায়িকা, খেলোয়াড়, রাজনৈতিক নেতা, সিলিব্রিটি, লেখক সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন রয়েছে।
বাজারে ‘কী করলে কী হয়’ জাতীয় বই, গণক, ঠাকুর, জ্যোতিষ, হস্তরেখাবিদ, পীর-ফকির ইত্যাদি এসব কুসংস্কার বিস্তার কারী।
আমাদের দেশের মানুষের মাঝে অসংখ্য কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ছড়িয়ে আছে। তবে সম্ভবত: সবচেয়ে বেশি কুসংস্কার রাত কেন্দ্রিক। এসব ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণে মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা অযথা নানা আশঙ্কা ও ভয়-ভীতির মধ্যে থাকে, অনেক সময় ভুল বিশ্বাসের শিকার হয়ে অতি জরুরি কাজও করার সাহস করে না। সর্বোপরি কতিপয় ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণে শিরকের মত ভয়াবহ গুনাহের মাধ্যমে ঈমান হারা হয়। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
তাই আমাদের দায়িত্ব, মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে তওহিদ ও সু্ন্নাহর জ্ঞান প্রচার করা এবং তাদেরকে প্রকৃত শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার মাধ্যম শিরক, বিদআত ও কুসংস্কার পূর্ণ ভ্রান্ত বিশ্বাসের বন্ধন থেকে মুক্ত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
যাহোক নিম্নে কেবল রাত কেন্দ্রিক ২৮টি কুসংস্কার তুলে ধরা হল:
১. রাতে বাঁশ কাটা যাবে না,
২. রাতে গাছের পাতা ছেঁড়া যাবে না
৩. রাতে কোনও প্রকার ফল-ফসল তোলা যাবে না
৪. রাতে নখ, চুল, গোফ ইত্যাদি কাটা যাবে না এতে শরীর রোগ সৃষ্টি হয়।
৫. রাতে কাউকে কোন কিছু ঋণ দেয়া যাবে না। এতে সংসারে দরিদ্রতা নেমে আসে।
৬. রাতে কাউকে আগুন দেয়া যাবে না। এতে ঘরের লক্ষ্মী চলে যায়!
৭. রাতে কাউকে চুন দিতে হলে তখন চুনকে চুন না বলে ‘দই’ বলতে হয়।
৮. রাতে কোনও কিছুর লেনদেন করা অমঙ্গল ডেকে আনে।
৯. রাতে আয়না দেখতে নেই। এতে কঠিন পীড়া হয়।
১০. ঘরের ময়লা পানি রাতে বাইরে ফেললে সংসারে অমঙ্গল হয়।
১১. রাতে কাউকে সুই-সুতা দিতে নেই।
১২. রাতের দোকানে সুই বেচা বা কেনা অমঙ্গলের কারণ।
১৩. রাতে কোনও কিছুর লেনদেন করা ভালো নয়।
১৪. অমাবস্যা ও পূর্ণিমার রাতে স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করতে করতে নাই। এতে না কি স্ত্রী গর্ভবতী হলে গর্ভস্থ সন্তানের উপর তার কুপ্রভাব পড়ে।
১৫. রাতের বেলা কালোজিরার ভর্তা খেলে মায়ের জানাজা পায় না।
১৬. সূর্য ডোবার সাথে সাথে ঘরে সান্ধ্য বাতি না জ্বালালে ঘরে হলে বিপদ নেমে আসে।
১৭. রাতে কাক ডাকলে বিপদ আসে।
১৮. রাতে কুকুর কাঁদা বালা-মসিবতের পূর্বাভাস।
১৯. রাতে প্যাঁচার ডাক বিপদ সংকেত।
২০. গভীর রাতে পেঁচার ডাক ঝগড়া-বিবাদের সংকেত।
২১. শেষ রাতে শিয়ালের ডাক ফসলের ভাল মূল্য পাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
২২. গেঞ্জি ও গামছা ছিঁড়ে গেলে রাতে সেলাই করা অমঙ্গলজনক।
২৩. রাতের বেলা বা সন্ধ্যায় ঝাড়ু দিলে আয়-উন্নতি হয় না।
২৪. রাতে নখ, চুল ইত্যাদি কাটতে নাই। এতে চোখের জ্যোতি কমে যায়!
২৫. রাতে পান খাবার ‘খর’ বিক্রি করতে নেই। এমন কি নামও বলা যাবে না।
২৬. রাতের বেলা মাথায় কাপড় না দিয়ে বাইরে গেলে জিন-ভূত আক্রমণ করে বা অমঙ্গল হয়।
২৭. ঈদের রাতে বা শবে বরাত বা শবে কদরে মৃত আপন জনের আত্মা ঘরে ঘরে দেখা করতে আসে।
২৮. রাতের বেলা রসুন কে রসুন না বলে ধলা (সাদা) গুটা বলতে হয়।
সমাজ থেকে এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করার জন্য আলেম, বক্তা, ইমাম, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, মিডিয়া, সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রশাসন সহ সমাজের প্রতিটি সচেতন ব্যক্তিবর্গ ও দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিৎ। আর কেবল তা সম্ভব ইসলামের সুনির্মল জ্ঞান সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
সংকলন ও গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।