মানুষের সর্বশেষ কর্মের উপর সকল আমল নির্ভরশীল সম্পর্কিত হাদীসটির ব্যাখ্যা

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা জাহান্নামীদের আ‘মাল করতে থাকবে, অথচ সে জান্নাতী। এভাবে কেউ জান্নাতীদের আ‘মাল করবে অথচ সে জাহান্নামী। কেননা মানুষের সর্বশেষ কর্মের উপর সকল আমল নির্ভরশীল। (সহীহ বুখারী হা/৬৪৯৩; সহীহ মুসলিম ১১২; আহমাদ ২২৮৩৫; মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৭৯৮; মিশকাতুল মাসাবিহ হা/৮৩)
.
হাদীসটির মর্ম হল: মহান আল্লাহ মানুষকে একটা নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। এই অমূল্য বাণীর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে ইবাদতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য। আর একজন মানুষ দুনিয়াতে ভালো-মন্দ অনেক কাজ করে থাকে৷ কিন্তু পরকালে তার হিসাব হবে ঐ আমলের উপর ভিত্তি করে, যার উপর তার মৃত্যু হবে। হাদীসে এসেছে, জাবির রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত৷ তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, প্রত্যেক বান্দা ঐ অবস্থার উপর পুনরুত্থিত হবে, যে অবস্থার উপর সে মারা যাবে৷ (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭৪১৩; মুসনাদে আহমাদ হাদীস ১৪৫৮৩; মিশকাত হাদীস ৫৩৪৫)
.
বাস্তবে এমনটি হবে যে, অনেক সময় দেখা যাবে কোন মানুষ পাপের কাজ করবে, কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে তার তওবা নসীব হবে সে একনিষ্ঠ ভাবে খাঁটি তওবা করবে। এরপর সে নেক আমল করে জান্নাতবাসী হবে৷ যেমন আমরা হাদীস থেকে জানতে পারি বনি ইসরাঈলদের জনৈক ব্যক্তি একশ’ ব্যক্তিকে হত্যা করে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন (সহীহ বুখারী হা/৩৪৭০; মুসলিম হা/২৭৬৬; মিশকাত হা/২৩২৭)
.
আবার এর বিপরিতে অনেকের অবস্থা এমন হবে যে, দেখা যাবে সে জীবনে অনেক সাওয়াবের কাজ করছে কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে সে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে গুনাহর কাজ করতে শুরু করবে এবং উক্ত গুনাহের উপর মৃত্যু বরন করবে তওবা করার চেষ্টা করবেনা বা সুযোগ পাবেনা সর্বদা পাপের কাজ করতেই থাকবে যার ফলে পাপের কারনে মৃত্যুর পর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, আর ঐসব লোকদের তওবা কবুল হবে না, যারা মন্দ কর্ম করতেই থাকে, যতক্ষণ না তাদের কারু মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং বলে, আমি এখন তওবা করছি (সূরা নিসা ৪/১৮)।
.
ইমাম ইব্নু বাত্তাল রাহিমাহুল্লাহ বলেন, বান্দার শেষ আমল কেমন হবে তা গোপন রাখার মধ্যে রয়েছে বিরাট হিকমত ও সূক্ষ্ম পরিকল্পনা। কারণ সে যদি জানতো যে, সে নাজাতপ্রাপ্ত তবে সে আনন্দিত হত এবং সে সৎ আমল করতে অলসতা করত। আর যদি জানতো যে, সে ধ্বংসপ্রাপ্ত তবে সে অবাধ্যতা ও কুফরীর মাত্রা বাড়িয়ে দিত। (ফাতহুল বারী, বুখারীর ৬৪৯৩ নং হাদীসের ব্যখ্যা দৃষ্টব্য)
.
এজন্য প্রত্যেক মুসলিমের উচিত হবে জীবনের শেষ আমল যেন ভাল হয় সেদিকে খেয়াল রাখা৷ তাছাড়া মানুষের কোন দিনটি শেষ দিন হবে তা কারো জানা নেই৷ হতে পারে আজকের দিনটি তার শেষ দিন অথবা কালকের দিনটি তার শেষ দিন। মানুষের ইহকালীন জীবনে মানুষের কৃতকর্মের মাধ্যমে অর্জিত নেকী পরকালীন জীবনে পরিত্রাণ লাভের অসীলা হবে। তাই দুনিয়াতে অধিক নেক আমলের দ্বারা বেশী বেশী সওয়াব লাভের চেষ্টা করা মুমিনের কর্তব্য। কিন্তু পার্থিব জীবনের মায়াময়তায় জড়িয়ে আমলে সালেহ থেকে দূরে থাকলে পরকালীন জীবনে কষ্টভোগ করতে হবে। এজন্য রাসূল (ﷺ) বলেন, حُلْوَةُ الدُّنْيَا مُرَّةُ الآخِرَةِ وَمُرَّةُ الدُّنْيَا حُلْوَةُ الآخِرَةِ- ‘পৃথিবীর মিষ্টতা পরকালের তিক্ততা। আর পৃথিবীর তিক্ততা পরকালের মিষ্টতা’। (মুসনাদে আহমাদ, ছহীহাহ হা/১৮১৭; সহীহুল জামে হা/৩১৫৫)
.
পরিশেষে উপরোক্ত প্রথম হাদীস থেকে আমরা যে শিক্ষাগুলো নিতে পারি:

(১) আনুগত্যের উপর অটল থাকা এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে সময়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া কেননা যে কোন সময়ের আমলই তার সর্বশেষ আমল হতে পারে।

(২) অনুরূপভাবে ভালো কাজ করতে পেরে আনন্দিত হওয়া ও অহংকার করা থেকে সতর্ক থাকা। কেননা আমরা কেউ যানিনা যে, পরবর্তীতে আমাদের কি ঘটবে।

(৩) এ হাদীস তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট দলীল যে, মানুষ তার নিজ বিষয় নিজেই নির্ধারণ করতে সক্ষম তা ভাল হোক আর মন্দ হোক। অতএব, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উচিত জীবনের প্রতিটি দিন কে গুরুত্ব দেয়া এবং প্রতিটি দিন কে জীবনের শেষ দিন মনে করে আল্লাহর নাফরমানী থেকে দুরে থাকা এবং নিজেকে কল্যাণজনক কাজে নিয়োজিত রাখা৷ এর জন্য আল্লাহর নিকট সবসময় দু‘আ করতে হবে, যাতে আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর পূর্বে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফীক দান করেন৷ (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।