বাতিল ফিরকা যাদের আক্বীদা মানহাজে সমস্যা আছেন এমন সকল দল বা ব্যাক্তিদের নিকট থেকে ইলম নেয়া এবং তাদের বই-পুস্তক পড়া থেকে বিরত থাকুন

ভ্রান্ত মতাদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ভ্রান্ত মতাদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন বাতিল ফিরকা যাদের আক্বীদা মানহাজে সমস্যা আছে,এমন সকল দল বা ব্যাক্তিদের নিকট থেকে ইলম নেয়া এবং তাদের বই-পুস্তক পড়া থেকে বিরত থাকুন।
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
যে আদর্শের উপর সাহাবায়ে কিরাম,তাবিঈগণ ও তাবি‘-তাবিঈগণ ছিলেন এবং দ্বীনের সেই ইমামগণ, যাদের ইমাম হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষী প্রদান করা হয়েছে, দ্বীনে তাঁদের বিশাল মর্যাদা বিদিত হয়েছে এবং তাঁদের বাণীকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল যুগের যে সকল আলেমগন সাদরে গ্রহণ করেছে এমন সকল সালাফ এবং সালাফি আলেমগন ব্যতীত অন্যান্য সকল বাতিল ফিরকা যেমন:খাওয়ারিজ,রাওয়াফিয, ক্বাদারিয়্যাহ, মুরজিআহ, জাবারিয়্যাহ, জাহমিয়্যাহ, মুতাযিলাহ, কারামিয়্যাহ,শী’য়া প্রভৃতি সম্প্রদায় সাথে পরবর্তী আশ‘আরী(যাদের আক্বীদা মানহাজ বিশুদ্ধ তারা ব্যাতিত) মাতুরিদী,ব্রেলভী,সুফি,মোজাদ্দেদিয়া,
নক্সাবন্দিয়া,চিশতীয়া,হেজবুত তাওহীদ,শির্কী বিদআতী আক্বীদা পোষণকারী,এবং সালাফি মানহাজ ব্যতিরেকে অন্যান্য দলের অনুসারী এমন যত মতাদর্শ দল-উপদল আছে তাদের সকলের নিকট থেকে ইলম নেওয়া সাথে তাদের বই-পুস্তক ও পড়া তাদের আলোচনা লেকচার ক্লিপস শোনা থেকে কমপক্ষে ১ হাজার হাত ধুরে থাকুন।
.
সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না তার কর্তব্য হল, দ্বীনি মাসআলা সম্পর্কে বিজ্ঞ সালাফি
আলেমদেরকে সহীহ দলীলসহ জিজ্ঞেস করবেন এবং তদনুযায়ী আমল করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ اِنۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ‘অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে’ (সূরা আন-নাহল : ৪৩)। আল্লামা শানকীত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘অত্র আয়াতটি দ্বারা তাক্বলীদ করা প্রমাণিত হয় না। যেমনটি অনেকে মনে করেন যে, শুধু একজন ব্যক্তির সমস্ত মতামতকেই গ্রহণ করা আবশ্যক এবং অন্যের সব কথা বর্জনীয়। আর أَهْلُ الذِّكْرِ দ্বারা أَهْلُ الوحى বা ওয়াহীর অনুসারী উদ্দেশ্য। যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত বিধান সম্বন্ধে জানেন। অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর পণ্ডিতগণ (সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৩; আযওয়াউল বায়ান ফী ইযাহিল কুরআন বিল কুরআন, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩২৪)।
.
◾পথভ্রষ্ট ভ্রান্ত ফেরকা ও বিদআতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের থেকে ইলম নেয়া তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে কয়েকজন যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামদের ফাতওয়া:
_________________________________
শাইখুল ইসলাম ইমাম মুওয়াফফাক্বুদ দীন ইবনু ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা এবং বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের কথা শোনা বাদ দেওয়া। আর দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হল বিদ‘আত।” [ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ৩৩; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪]
.
শাইখুল ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম আবুল মুযাফফর সাম‘আনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘আমরা সুন্নাতের অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং বিদ‘আত হতে আমাদেরকে নিষেধ ও তিরস্কার করা হয়েছে। সুতরাং আহলুস সুন্নাহর প্রতীক হল, সালাফে ছালিহীনের অনুসরণ করা এবং প্রত্যেক নব উদ্ভূত ও বিদ‘আতকে বর্জন করা’ (ছাওনুল মানত্বিত্ব, পৃ. ১৫৮)।

ভারতবর্ষের প্রখ্যাত মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩০৭ হি./১৮৯০ খ্রি.] বলেছেন,সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা; আর দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হলো বিদ‘আত। এছাড়াও বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং দ্বীনের মৌলিক ও শাখাগত বিষয়ে তাদের কথাবার্তা শোনা বাদ দেওয়া সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত। যেমন: রাফিদ্বী সম্প্রদায়, খারিজী সম্প্রদায়, জাহমী সম্প্রদায়, ক্বাদারী সম্প্রদায়, মুরজিয়া সম্প্রদায়, কাররামী সম্প্রদায়, মু‘তাযিলী সম্প্রদায়; এগুলো পথভ্রষ্ট ফিরক্বাহ এবং বিদ‘আতী ত্বরীক্বাহ।” [ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান (রাহিমাহুল্লাহ), ক্বাতফুস সামার ফী ‘আক্বীদাতি আহলিল আসার; পৃষ্ঠা: ১৫৭; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৭-৭৮]
.
আসমা বিন ‘উবাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,দুজন বিদ‘আতী ইবনু সীরীনের [মৃত: ১১০ হি.] নিকট প্রবেশ করে বলল, ‘হে আবূ বাকার, আমরা আপনার কাছে একটি হাদীস বর্ণনা করি?’ তিনি বললেন, ‘না।’ তখন তারা দুজন বলল, ‘তাহলে আমরা আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাই?’ তিনি বললেন, ‘না; হয় তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে চলে যাবে, অথবা আমি উঠে চলে যাব।’ বর্ণনাকারী বলছেন, তারা দুজন প্রস্থান করল। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, ‘হে আবূ বাকার, আপনার কী (ক্ষতি) হতো, যদি তারা দুজন আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাত?’ তিনি (ইবনু সীরীন) বললেন, ‘নিশ্চয় আমি আশঙ্কা করেছি যে, তারা দুজন আমার কাছে একটি আয়াত পড়বে, অতঃপর তারা সে আয়াতে বিকৃতি (তাহরীফ) সাধন করবে, ফলে তা আমার অন্তরে গেঁথে যাবে’।” [দারিমী, হা/৪১১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: হুসাইন সালীম আসাদ); ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৩৯৮; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৪২; আজুর্রী, আশ-শারী‘আহ; আসার নং: ৬২]
.
বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,বিদ‘আতীদের বর্জন করার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাদের বইপুস্তকের মাধ্যমে ফিতনাহগ্রস্ত হওয়া এবং সেগুলো মানুষের মধ্যে প্রচলিত হওয়ার আশঙ্কায় তা না পড়া। ভ্রষ্টতার জায়গাসমূহ থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব। যেহেতু নাবী ﷺ দাজ্জালের ব্যাপারে বলেছেন, “কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহ’র কসম, যে কোনো ব্যক্তি তার নিকট এলে সে অবশ্যই মনে করবে যে, সে ঈমানদার। অতঃপর সে দাজ্জাল কর্তৃক তার মধ্যে জাগরিত সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে তার (দাজ্জালের) অনুসরণ করবে।” আবূ দাঊদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন (হা/৪৩১৯)। আলবানী বলেছেন, ‘হাদীসটির সনদ সাহীহ (বিশুদ্ধ)’। কিন্তু তাদের বইপুস্তক পড়ার পিছনে যদি তাদের বিদ‘আতগুলো জানার উদ্দেশ্য থাকে, যাতে করে তাদের রদ করা যায়, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই। আর এটা (রদ) ওই ব্যক্তির জন্য, যার নিজেকে সুরক্ষিত করার মতো বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ আছে এবং যে তাদেরকে রদ করতে সক্ষম। বরং কখনো কখনো এই কাজ ওয়াজিব। কেননা বিদ‘আতকে রদ করা ওয়াজিব। আর যা ব্যতীত ওয়াজিব পূর্ণ হয়না, সেটাও ওয়াজিব।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু লুম‘আতিল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ১১১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ (বৈরুত) ও মাকতাবাতুর রুশদ (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে যে ব্যক্তি তাদেরকে রদ করতে চায় এবং তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করতে চায়, তার জন্য জায়েজ আছে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭০; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)] (ফাতওয়া অনুবাদ মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ মৃধা ভাই)
.
পরিশেষে,প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১০ হি.] বলেছেন, ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﺩِﻳﻦٌ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮُﻭﺍ ﻋَﻤَّﻦْ ﺗَﺄْﺧُﺬُﻭﻥَ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ “নিশ্চয় এ ‘ইলম হলো দ্বীন। কাজেই কার কাছ থেকে তোমরা দ্বীন গ্রহণ করছ তা যাচাই করে নাও।” [সাহীহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ- ৫] (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
যে আদর্শের উপর সাহাবায়ে কিরাম,তাবিঈগণ ও তাবি‘-তাবিঈগণ ছিলেন এবং দ্বীনের সেই ইমামগণ, যাদের ইমাম হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষী প্রদান করা হয়েছে, দ্বীনে তাঁদের বিশাল মর্যাদা বিদিত হয়েছে এবং তাঁদের বাণীকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল যুগের যে সকল আলেমগন সাদরে গ্রহণ করেছে এমন সকল সালাফ এবং সালাফি আলেমগন ব্যতীত অন্যান্য সকল বাতিল ফিরকা যেমন:খাওয়ারিজ,রাওয়াফিয, ক্বাদারিয়্যাহ, মুরজিআহ, জাবারিয়্যাহ, জাহমিয়্যাহ, মুতাযিলাহ, কারামিয়্যাহ,শী’য়া প্রভৃতি সম্প্রদায় সাথে পরবর্তী আশ‘আরী(যাদের আক্বীদা মানহাজ বিশুদ্ধ তারা ব্যাতিত) মাতুরিদী,ব্রেলভী,সুফি,মোজাদ্দেদিয়া,
নক্সাবন্দিয়া,চিশতীয়া,হেজবুত তাওহীদ,শির্কী বিদআতী আক্বীদা পোষণকারী,এবং সালাফি মানহাজ ব্যতিরেকে অন্যান্য দলের অনুসারী এমন যত মতাদর্শ দল-উপদল আছে তাদের সকলের নিকট থেকে ইলম নেওয়া সাথে তাদের বই-পুস্তক ও পড়া তাদের আলোচনা লেকচার ক্লিপস শোনা থেকে কমপক্ষে ১ হাজার হাত ধুরে থাকুন।
.
সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না তার কর্তব্য হল, দ্বীনি মাসআলা সম্পর্কে বিজ্ঞ সালাফি
আলেমদেরকে সহীহ দলীলসহ জিজ্ঞেস করবেন এবং তদনুযায়ী আমল করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ اِنۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ‘অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে’ (সূরা আন-নাহল : ৪৩)। আল্লামা শানকীত্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘অত্র আয়াতটি দ্বারা তাক্বলীদ করা প্রমাণিত হয় না। যেমনটি অনেকে মনে করেন যে, শুধু একজন ব্যক্তির সমস্ত মতামতকেই গ্রহণ করা আবশ্যক এবং অন্যের সব কথা বর্জনীয়। আর أَهْلُ الذِّكْرِ দ্বারা أَهْلُ الوحى বা ওয়াহীর অনুসারী উদ্দেশ্য। যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত বিধান সম্বন্ধে জানেন। অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর পণ্ডিতগণ (সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৩; আযওয়াউল বায়ান ফী ইযাহিল কুরআন বিল কুরআন, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩২৪)।
.
◾পথভ্রষ্ট ভ্রান্ত ফেরকা ও বিদআতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের থেকে ইলম নেয়া তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে কয়েকজন যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামদের ফাতওয়া:
_________________________________
শাইখুল ইসলাম ইমাম মুওয়াফফাক্বুদ দীন ইবনু ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা এবং বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের কথা শোনা বাদ দেওয়া। আর দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হল বিদ‘আত।” [ইমাম ইবনু ক্বুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), লুম‘আতুল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ৩৩; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৪]
.
শাইখুল ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম আবুল মুযাফফর সাম‘আনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘আমরা সুন্নাতের অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং বিদ‘আত হতে আমাদেরকে নিষেধ ও তিরস্কার করা হয়েছে। সুতরাং আহলুস সুন্নাহর প্রতীক হল, সালাফে ছালিহীনের অনুসরণ করা এবং প্রত্যেক নব উদ্ভূত ও বিদ‘আতকে বর্জন করা’ (ছাওনুল মানত্বিত্ব, পৃ. ১৫৮)।

ভারতবর্ষের প্রখ্যাত মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান খান ভূপালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩০৭ হি./১৮৯০ খ্রি.] বলেছেন,সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বিদ‘আতীদের বর্জন করা, তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক পরিত্যাগ করা; আর দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নবআবিষ্কৃত বিষয়ই হলো বিদ‘আত। এছাড়াও বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং দ্বীনের মৌলিক ও শাখাগত বিষয়ে তাদের কথাবার্তা শোনা বাদ দেওয়া সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত। যেমন: রাফিদ্বী সম্প্রদায়, খারিজী সম্প্রদায়, জাহমী সম্প্রদায়, ক্বাদারী সম্প্রদায়, মুরজিয়া সম্প্রদায়, কাররামী সম্প্রদায়, মু‘তাযিলী সম্প্রদায়; এগুলো পথভ্রষ্ট ফিরক্বাহ এবং বিদ‘আতী ত্বরীক্বাহ।” [ইমাম সিদ্দীক্ব হাসান (রাহিমাহুল্লাহ), ক্বাতফুস সামার ফী ‘আক্বীদাতি আহলিল আসার; পৃষ্ঠা: ১৫৭; গৃহীত: ইজমা‘উল ‘উলামা ‘আলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৭৭-৭৮]
.
আসমা বিন ‘উবাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,দুজন বিদ‘আতী ইবনু সীরীনের [মৃত: ১১০ হি.] নিকট প্রবেশ করে বলল, ‘হে আবূ বাকার, আমরা আপনার কাছে একটি হাদীস বর্ণনা করি?’ তিনি বললেন, ‘না।’ তখন তারা দুজন বলল, ‘তাহলে আমরা আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাই?’ তিনি বললেন, ‘না; হয় তোমরা আমার নিকট থেকে উঠে চলে যাবে, অথবা আমি উঠে চলে যাব।’ বর্ণনাকারী বলছেন, তারা দুজন প্রস্থান করল। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, ‘হে আবূ বাকার, আপনার কী (ক্ষতি) হতো, যদি তারা দুজন আপনাকে আল্লাহ’র কিতাব থেকে একটি আয়াত পড়ে শোনাত?’ তিনি (ইবনু সীরীন) বললেন, ‘নিশ্চয় আমি আশঙ্কা করেছি যে, তারা দুজন আমার কাছে একটি আয়াত পড়বে, অতঃপর তারা সে আয়াতে বিকৃতি (তাহরীফ) সাধন করবে, ফলে তা আমার অন্তরে গেঁথে যাবে’।” [দারিমী, হা/৪১১; সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: হুসাইন সালীম আসাদ); ইবনু বাত্বত্বাহ, আল-ইবানাহ; আসার নং: ৩৯৮; লালাকাঈ, শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ২৪২; আজুর্রী, আশ-শারী‘আহ; আসার নং: ৬২]
.
বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া ও তাদের লেকচার ক্লিপস শোনার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,বিদ‘আতীদের বর্জন করার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে তাদের বইপুস্তকের মাধ্যমে ফিতনাহগ্রস্ত হওয়া এবং সেগুলো মানুষের মধ্যে প্রচলিত হওয়ার আশঙ্কায় তা না পড়া। ভ্রষ্টতার জায়গাসমূহ থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব। যেহেতু নাবী ﷺ দাজ্জালের ব্যাপারে বলেছেন, “কেউ দাজ্জালের আবির্ভাবের কথা শুনলে সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়। আল্লাহ’র কসম, যে কোনো ব্যক্তি তার নিকট এলে সে অবশ্যই মনে করবে যে, সে ঈমানদার। অতঃপর সে দাজ্জাল কর্তৃক তার মধ্যে জাগরিত সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে তার (দাজ্জালের) অনুসরণ করবে।” আবূ দাঊদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন (হা/৪৩১৯)। আলবানী বলেছেন, ‘হাদীসটির সনদ সাহীহ (বিশুদ্ধ)’। কিন্তু তাদের বইপুস্তক পড়ার পিছনে যদি তাদের বিদ‘আতগুলো জানার উদ্দেশ্য থাকে, যাতে করে তাদের রদ করা যায়, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই। আর এটা (রদ) ওই ব্যক্তির জন্য, যার নিজেকে সুরক্ষিত করার মতো বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ আছে এবং যে তাদেরকে রদ করতে সক্ষম। বরং কখনো কখনো এই কাজ ওয়াজিব। কেননা বিদ‘আতকে রদ করা ওয়াজিব। আর যা ব্যতীত ওয়াজিব পূর্ণ হয়না, সেটাও ওয়াজিব।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), শারহু লুম‘আতিল ই‘তিক্বাদ; পৃষ্ঠা: ১১১; মুআসসাসাতুর রিসালাহ (বৈরুত) ও মাকতাবাতুর রুশদ (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—বিদ‘আতীদের বইপুস্তক পড়া এবং তাদের লেকচার ক্লিপস শোনা জায়েজ নয়। তবে যে ব্যক্তি তাদেরকে রদ করতে চায় এবং তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনা করতে চায়, তার জন্য জায়েজ আছে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ), আল-আজউয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ; পৃষ্ঠা: ৭০; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৪ হিজরী (৩য় প্রকাশ)] (ফাতওয়া অনুবাদ মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ মৃধা ভাই)
.
পরিশেষে,প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১০ হি.] বলেছেন, ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﺩِﻳﻦٌ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮُﻭﺍ ﻋَﻤَّﻦْ ﺗَﺄْﺧُﺬُﻭﻥَ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ “নিশ্চয় এ ‘ইলম হলো দ্বীন। কাজেই কার কাছ থেকে তোমরা দ্বীন গ্রহণ করছ তা যাচাই করে নাও।” [সাহীহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ- ৫] (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।