ইসলামের দৃষ্টিতে তাবীয ব্যবহারের হুকুম কি

ইসলামের দৃষ্টিতে তাবীয ব্যবহারের হুকুম কি?
জনৈক আলেম বলেছেন শক্তিশালী মত হল পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা তাবীয ব্যবহার করা যাবে‌।
উক্ত আলেমের বক্তব্য কতটুকু সঠিক বিস্তারিত জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
►তাবীযের সংজ্ঞা : ‘তাবীয’ (تَعْوِيْذٌ) আরবী শব্দ। ‘আউযুন’ (عَوْذٌ) মূলধাতু হ’তে উৎপন্ন। এটি একবচন। বহুবচনে ‘তা‘আবীয’ (تَعَاوِيْذٌ)। এর সমার্থক শব্দ হচ্ছে ‘তামীমা’ (تَمِيْمَة)। এর বহুবচন হচ্ছে ‘তামায়েম’ (تَمَائِمٌ)। ‘তাবীয’ বা ‘তামীমা’-এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- রক্ষাকবচ, মাদুলি ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ হলো: যে সব বস্তু তাবিজ-তুমার আকারে (লোহা, তামা,কড়ি,
কাঠ,পাথর ইত্যাদি) বাচ্চাদেরকে বদ নজর হতে রক্ষা করার জন্য গলায় ঝুলানো হয় বা কোথাও বেঁধে রক্ষা-কবচ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দীন ইসলামে এ সব তাবিজ-তুমার নিষিদ্ধ, হারাম এবং বাতিল। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই হেফাযত বা রক্ষা করতে পারে না। (মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব হামিয়াতু তাওহীদ পৃ: ৯০, ৯১)
.
আবু মানছূর (রহঃ) বলেছেন,তামীম দ্বারা তাবীয বুঝানো হয়েছে, যা মানুষ বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য ব্যবহার করে থাকে।এমনিভাবে বিষধর সাপ ইত্যাদি থেকে বাঁচার জন্য যে পুথি জাতীয় জিনিস সূতায় গেঁথে গলায় বেঁধে দেয়া হয়, তাকেও ‘তামীমা’ অর্থাৎ ‘তাবীয’ বলা হয়।[আলী বিন নুফায়ী আল-উলাইয়ানী, অনুবাদ: ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ মুজিবুর রহমান, আক্বীদাহর মানদন্ডে তা’বীজ (ঢাকা : ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংস্থা, রামাযান, ১৪১৭ হিঃ, ১৯৯৭ ইং), পৃঃ ১১)]
.
ইবনে জোনাই (রহঃ) বলেন, অনেকের মতে তাবীয হচ্ছে ঐ জিনিস, যা তাগায় বেঁধে লটকানো হয়। যেমন বলা হয়, আমি শিশুর গলায় তাবীয ঝুলিয়ে দিয়েছি। এক কথায় বলা যায় যে, মানুষের গলায় বা অন্যান্য অঙ্গে বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য যেসব তাবীয ধারণ করা হয়, সেগুলিকেই ‘তামীমা’ বলা হয়।(আলী বিন নুফায়ী আল-উলাইয়ানী,ঢাকা : ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংস্থা, রামাযান, ১৪১৭ হিঃ, ১৯৯৭ ইং,পৃঃ ১১)
.
◾মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের দৃষ্টিতে তাবীয :
মানুষ অসুস্থ হ’লে তাকে সুস্থতা দান করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। এখানে কারো কোন এখতিয়ার নেই। ওষুধ, ডাক্তার বা চিকিৎসা ব্যবস্থা কেবলমাত্র অসীলা বা মাধ্যম। তাই সর্বাবস্থায় বান্দাকে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। স্রেফ ডাক্তার বা ওষুধের উপর আস্থাশীল হ’লে শিরক হবে। যা কাবীরাহ গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,যদি আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী আর কেউ নেই; পক্ষান্তরে তিনি যদি তোমার কল্যাণ দান করেন তবে তিনিই তো সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।’(আন‘আম ৬/১৭)

আল্লাহ যদি তোমাকে কষ্ট দেন, তাহ’লে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই; আর যদি আল্লাহ তোমার মঙ্গল চান তাহ’লে তাঁর অনুগ্রহ রদ করারও কেউ নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি মঙ্গল দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (ইউনুস ১০/১০৭)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমরা যে সমস্ত অনুগ্রহ ভোগ কর তা তো আল্লাহরই নিকট হ’তে, আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদের স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর। আর যখন আল্লাহ তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করেন তখন তোমাদের একদল তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক করে।’ (নাহাল ১৬/৫৩-৫৪)।

তাছাড়া শরীরে তাবীয-কবজ ঝুলানো আল্লাহ্ তাআলার নিম্নের বাণীর পরিপন্থী। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,‘‘হ্যাঁ, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে সমর্পণ করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার প্রভুর কাছে পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবেনা’’।(সূরা বাকারাঃ ১১২)

অতএব আল্লাহ তা‘আলা বান্দার কল্যাণ না করলে কেউ তা করতে পারবে না। আবার তিনি কারো ক্ষতি করলে কেউ তা রোধ করতে পারবে না। অতএব তাবীয বা শরী‘আত পরিপন্থী ঝাড়-ফুঁক মানুষের রোগ নিরাময়ের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নয়। বরং এর দ্বারা পরকালে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হ’তে হবে।

◾রাসুলের সহীহ হাদীসের দৃষ্টিতে তাবীয :রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবীয ব্যবহার করা শিরক বলেছেন।এবং তাবীয ও তাবীয জাতীয় সব কিছুকে তিনি একই শ্রেণীভূক্ত বলে উল্লেখ করেছেন।
.
উকবা ইবনু আমির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি তাবীয লটকালো, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না। আর যে কড়ি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না।’(মুসনাদে আহমাদ হা/১৭৪৪০ মুসতাদরাকু ‘আলাছ সহীহাইন, হা/৭৫০১;সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬০৮৬)
.
উক্ববাহ ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে একদল লোক উপস্থিত হ’ল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দলটির ৯ জনকে বায়‘আত করালেন এবং একজনকে বায়‘আত করালেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ৯ জনকে বায়‘আত করালেন আর একজনকে ছেড়ে দিলেন? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তার সাথে একটি তাবীয রয়েছে। তখন লোকটি হাত ভিতরে ঢুকিয়ে তাবীয ছিড়ে ফেললেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাকেও বায়‘আত করালেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি তাবীয ব্যবহার করল সে শিরক করল’।(আহমাদ হা/১৭৪৫৮, সনদ সহীহ)
উপরোক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায়, তাবীয ব্যবহার করা শিরক এবং জঘন্য অপরাধ। এরূপ ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়‘আত করানো থেকে বিরত থেকেছেন। সেটা যে প্রকারের তাবীয হোক না কেন। তাহ’লে অপরাধের পরিধি কত বেশী তা সহজেই অনুমেয়।
.
অন্য বর্ণনায় রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,‘নিশ্চয়ই ঝাড়-ফুঁক, তাবীয এবং ভালবাসা সৃষ্টি করার জন্য কোন কৌশল অবলম্বন করা শিরক’।(আবুদাঊদ হা/৩৮৮৫; ইবনে মাজাহ হা/৩৫৩০; আহমাদ হা/৩৬১৫; মিশকাত হা/৪৫৫২) এতে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, তাবীয ব্যবহার করা, বাচ্চাদের গলায় বা কোমরে কালো কিংবা সাদা সূতা বাঁধা শিরক।
.
রুওয়াইফা ইবনু ছাবিত (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে রুওয়ায়ফা! হয়ত তুমি আমার পরেও অনেক দিন বেঁচে থাকবে। সুতরাং তুমি লোকদেরকে এ কথা বলে দিও যে, যে ব্যক্তি দাড়িতে গিট দিল (জট পাকাল) অথবা তাবীয জাতীয় বেল্ট বা সূতা (ছেলে-মেয়ের বা প্রাণীর গলায়) পরাল কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইসতেঞ্জা করল, নিশ্চয়ই তার সাথে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন সম্পর্ক নেই। (সুনানে আবুদাঊদ
হা/৩৬; নাসাঈ হা/৫০৬৭; মিশকাত হা/৩৫১, সনদ সহীহ) অন্য বর্ননায় আছে যে ব্যক্তি কোন কিছু ঝুলায় তাকে তার প্রতি সোপর্দ করে দেয়া হয়’।(তিরমিযী হা/২০৭২; আহামাদ হা/১৮৮০৩; মিশকাত হা/৪৫৫৬, সনদ হাসান)
.
ঈসা ইবনু হামযা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনু উকাইমের অসুস্থ অবস্থায় তাকে দেখতে গেলাম। তিনি বিষ ফোঁড়ায় আক্রান্ত ছিলেন। তাবীয-তামীমা ঝুলিয়ে রাখায় আমি বললাম, তাবীয ঝুলিয়ে রেখেছেন কেন? তিনি বললেন,যন্ত্রণা বেশি হওয়ায়(মৃত্যু তো এর চেয়েও নিকটে)। তিনি জবাবে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে লোক কোনকিছু ঝুলিয়ে রাখে তাকে তার উপরই সোপর্দ করা হয়। (তিরমিযী, হা/২০৭২, সনদ সহীহ)
.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর স্ত্রী যয়নাব (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমার স্বামী আব্দুল্লাহ আামর গলায় একটি তাবীয দেখে সেটা ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, কুফরী ঝাড়ফুঁক, তাবীয ও জাদুটোনা শিরকী কাজ। আমি বললাম, আপনি কেন এমন কথা বলছেন। একবার আমার চোখে ব্যাথা হচ্ছিল, মনে হচ্ছে চোখটি বেরিয়ে যাবে। তখন এক ইহুদী তাতে মন্ত্র পড়ে ফুঁক দিলে তখনই ভাল হয়ে গেল। আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, এগুলো সব শয়তানের কাজ। নিজ হাত দ্বারা আঘাত করছিল, আর যখন মন্ত্র পড়া হয়, তখন সে বিরত হয়ে যায়। (আবু দাঊদ, হা/৩৮৮৩, সনদ ছহীহ)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয ঝুলালো সে শিরক করল।’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৫৮; সনদ ছহীহ, সিলসিলা সহীহাহ, হা/৪৯২)।
.
উল্লেখ্য যে কেউ কেউ “আব্দুল্লাহ বিন আমর কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ আতঙ্ক ও ভয়কালে (দুআ স্বরূপ) সাহাবাগণকে কিছু কথা শিখাতেন,বলে দলিল দেন
((أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُون))।
আর আব্দুল্লাহ বিন আমর তাঁর সন্তানদের মধ্যে যারা মুখস্থ করতে পারে, তাদেরকে তা শিখিয়ে দিয়ে রাতে ঘুমাবার আগে পড়তে বলতেন এবং যারা অবোধ শিশু, যাদের মুখস্থ করার ক্ষমতা নেই, তাদের জন্য লিখে তাদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। (আহমাদ ৬৬৯৬, আবূ দাঊদ ৩৮৯৫, তিরমিযী ৩৫২৮, ইবনে আবী শাইবাহ ২৩৫৪৭) উক্ত হাদীস থেকে তাবীয-ব্যবসায়ীরা দলীল পেয়েছেন যে, ক্বুরআনী আয়াত বা হাদীসী দুআর তাবীয লিখে গলায়-হাতে লটকানো যায়।
কিন্তু নিরপেক্ষ মন নিয়ে একবার কয়েকটি বিষয় ভেবে দেখুনঃ-
▪️প্রথমতঃ হাদীসে ক্বুরআনের আয়াতকে তাবীয ক’রে লটকানোর কথা বলা হয়নি।
▪️দ্বিতীয়তঃ অন্য হাদীসে আমভাবে তাবীয লটকাতে নিষেধ করা হয়েছে।(তিরমিযী ২০৭২, হাকেম ৭৫০৩, আহমাদ ১৮৭৮১, সহীহ তারগীব ৩৪৫৬)
▪️তৃতীয়তঃ ক্বুরআনী তাবীয শির্ক না হলেও তা শির্কী তাবীয ব্যবহারের ছিদ্রপথ হতে পারে। পরন্তু তার সঠিক কোন দলীল নেই।
▪️চতুর্থতঃ ক্বুরআনী আয়াত দেহে ধারণ করলে তার অবমাননা হতে পারে। ধারণকারী তা নিয়েই প্রস্রাব-পায়খানা করবে, যৌন-মিলন করবে, অপবিত্রতা ও ঋতুর সময় বেঁধে রাখবে, আর তাতে নিশ্চয় ক্বুরআনী আয়াতের অসম্মান হবে।
▪️পঞ্চমতঃ হাদীসটি আসলে যয়ীফ। কিন্তু দুআর হাদীসটি অন্য সাক্ষী সূত্র থাকার ফলে ‘হাসান’ বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে আব্দুল্লাহ বিন আমরের আমলের ব্যাপারটার কোন সাক্ষী না থাকায় সেটা যয়ীফ।
মুহাদ্দিস আলবানী বলেছেন, ‘আর আব্দুল্লাহ বিন আমর তাঁর সন্তানদের—‘ এ কথা ছাড়া হাদীসটি হাসান।
শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ বলেছেন, ‘আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে উক্ত আষার (শুদ্ধ) প্রমাণিত নয়। কেননা তাতে ইসহাক ‘আন’ শব্দে বর্ণনা করেছেন (এবং তিনি মুদাল্লিস)। কিন্তু এই দুআর কথা অন্য সূত্রে এসেছে যা তার প্রমাণ ও সাক্ষী হতে পারে। কিন্তু আষারটি (শুদ্ধ) প্রমাণিত নয়। পরন্তু তা তাবীয ব্যবহারের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ কর্তৃক নিষেধ হওয়ার হাদীসসমূহের পরিপন্থী। (শারহু সুনানি আবী দাঊদ)
▪️ষষ্ঠতঃ যদিও আষারটিকে ‘হাসান’ ধরে নেওয়া যায়, তবুও তাতে তাবীয বাঁধার দলীল নেই। যেহেতু তাতে এ কথা নেই যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে এ কাজ করতে দেখেছেন এবং তাতে মৌনসম্মতি দিয়েছেন।
▪️সপ্তমতঃ উক্ত হাদীস ও আষার থেকে এ কথা বুঝা যায় যে, দুআ পড়ে জিন-শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং তার জন্য মুখস্থ ক’রে উক্ত দুআটি পড়লে কাজে লাগে। অবশ্য অবোধ শিশু, যার পড়ার বা মুখস্থ করার ক্ষমতা নেই, তার গলায় দুআর তাবীয বানিয়ে লটকানো যায়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি যে, তাবীয-ব্যবসায়ীরা তাকে সর্ব-সাধারণের জন্য জায়েয বানানোর দলীল মনে ক’রে থাকেন। ফলে ব্যাপকভাবে তাঁরা বড়-ছোট, পুরুষ-মহিলা, কাফের-ফাসেক সকলকেই তাবীয বিক্রি ক’রে থাকেন। আর তাতে যে কত বড় খারাবি, তা অনুমেয়।
▪️অষ্টমতঃ উক্ত আমলটি আব্দুল্লাহ বিন আমর (রায্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর একান্ত নিজস্ব। যেহেতু অন্যান্য সাহাবা কর্তৃক প্রমাণিত নেই যে, তাঁদের কেউ তাঁর মতো আমল করেছেন।
কোন কোন সাহাবীর ব্যক্তিগত ইজতিহাদী এমন একক আমল, যার ব্যাপারে উলামাগণ আমলযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন। যেমন ইবনে উমারের সেই সেই জায়গায় নামায পড়া, যে সব জায়গায় নবী ﷺ নামায পড়েছেন। আবূ হুরাইরার উযূতে বগল পর্যন্ত হাত এবং প্রায় হাঁটু পর্যন্ত পা ধোয়া, জাবেরের বুধবারে যোহর ও আসরের মাঝে দুআ কবুল হয় ধারণা করা ইত্যাদি।
সাহাবী আমর বিন আল-আস তাঁর মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন, ‘আমার কবরের পাশে ততক্ষণ অবস্থান করো, যতক্ষণ একটি উঁটনী যবেহ ক’রে তার গোশ্ত ভাগ করতে সময় লাগে। যাতে আমি তোমাদেরকে কাছে পেয়ে আমার আতঙ্ক দূর করতে পারি এবং আমার প্রতিপালকের দূতকে কী জওয়াব দেব, তা ভেবে নিতে পারি।’
এ ব্যাপারে উলামাগণ বলেছেন, এটা ছিল তাঁর নিজস্ব ইজতিহাদ। নচেৎ ঐরূপ বিধেয় হলে অবশ্যই নবী ﷺ তা সকলের জন্য নির্দেশ দিয়ে যেতেন। (দেখুন, আসইলাতুন অআজবিবাতুন আ’ন আলফাযিন অমাফাহীমা ফী মীযানিশ শারীআহ, ইবনে উষাইমীন ২/৬০-৬১)
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইবাদত, বৈধ, ওয়াজেব বা হারামের ব্যাপারে এককভাবে যে আমল কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে, যাতে অন্য কোনও সাহাবীর সহমত নেই; বরং নবী ﷺ থেকে যা প্রমাণিত তা তার পরিপন্থী এবং তার অনুবর্তী নয়, সে ক্ষেত্রে তাঁর সে একক আমল সুন্নাহ নয়, যা মুসলিমদের জন্য পালন করা জরুরী। তাতে বড়জোর এ কথা বলা যায় যে, সেটা এমন বিষয় যাতে ইজতিহাদী মতামত থাকতেই পারে এবং যাতে উম্মাহর মাঝে মতানৈক্য আছে, যা আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া ওয়াজেব।’ (মাজমূউ ফাতাওয়া ১/২৭৯ সূত্র মহাগন্থ আল কুরআন বই থেকে)

◾এবার জনৈক আলেম বলেছেন শক্তিশালী মত হল পবিত্র কুরআনের আয়াত-হাদিসে বর্ণিত দুআ লিখা তাবীয ব্যবহার করা যাবে?উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক
__________________________________
আমাদের জানা প্রয়োজন যে, ইসলামী শরীয়তে তাবীয ব্যবহারে অনুমতি নেই। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে সবধরনের তাবীয ব্যবহারকে শিরক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।সর্বোপরি কথা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও কুরআনের আয়াত ও দুআ লিখে তাবিজ ব্যবহার করেছেন বা কাউকে লিখে তাবীয দিয়েছেন তার কোন প্রমাণ নাই।যেখানে আল্লাহ এবং তার রাসূলের পক্ষ থেকে তাবীয ব্যাবহারের কোন দলিল নেই সেখানে উক্ত আলেমের বক্তব্য কিভাবে সঠিক হতে পারে? আর একথা কারো অজানা নয় যে, তাবীযে বিভিন্ন ধরণের অর্থহীন আঁকিবুঁকি, ইবলিশ শয়তানের নাম, নমরূদ, হামান, ফেরআউন, কারূন ইত্যাদির কাফের মুশরিকদের নাম লেখা হয়।লেখা হয় বিভিন্ন যাদু ও তেলেসমাতী বিষয়। তাবীযে এসব লেখা থাকলে তা ব্যবহার করা শিরক এতে কোন সন্দেহ নাই।তাছাড়া তাবিজে আল্লাহর নাম, আল্লাহর কালাম ইত্যাদি থাকলে তাতে এগুলোর অসম্মান হনানানভাবে। কারণ, মানুষ এগুলো গলায়, বাহু কোমর ইত্যাদি স্থানে পেঁচিয়ে রাখে যার কারণে, অনেক সময় ঘুমের মধ্যে সেগুলো তার শরীরের নিচে চাপা পড়ে, তাবিজ পরা অবস্থায় স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয়, স্বপ্নদোষের মাধ্যমে শরীর নাপাক হয়, এগুলো শরীরে ঝুলা অবস্থায় মানুষ কত শত অশ্লীলতা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়, টয়লেট ও নাপাক স্থানে যায়। ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কুরআন, কুরআন ও হাদিসের দুআ ইত্যাদি দ্বারা তাবিজ ব্যবহার করা হারাম।(কিছুটা নোট আব্দুল হাদী ওস্তাদ থেকে)

সুতরাং কুরআনের আয়াত-হাদীসের দোয়া পড়ে গিট দেয়া হোক আর এমনি তাবীয হোক তা কোনটাই ঝুলানো জায়েয নয় বরং হারাম। ইবনু আবী হাতেম (রাহিমাহুল্লাহ) মাওকূফ সূত্রে হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন। হুযায়ফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দেখলেন, একজনের হাতে জ্বরের কারণে সূতা বাঁধা। দেখেইে তিনি আয়াত পড়লেন- وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُہُمۡ بِاللّٰہِ اِلَّا وَ ہُمۡ مُّشۡرِکُوۡنَ ‘ঈমান আনার পরও অধিকাংশ মানুষই মুশরিক’ (সূরা ইউসুফ : ১০৬)। অর্থাৎ এটা শিরক। (তাফসীর ইবনু কাছীর, ৪/৪১৮ আক্বীদাহর মানদন্ডে তাবীয, পৃঃ ২০)

◾এবার কয়েকজন যুগ শ্রেষ্ঠ স্থান আমাদের মতামত দেখুন:
___________________________________
শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব (রহঃ) বলেনঃ কুরআনের কোনো আয়াত বা কোনো অংশ লিখে যদি ঝুলানো হয়, তাহলে কোনো কোনো সালাফ এটিকে জায়েয বলেছেন। আর কতক সালাফ এর অনুমতি দেন নি। তারা বলেনঃ কুরআন দিয়ে তাবীজ লিখে ঝুলানোও নিষিদ্ধ। যারা কুরআন দিয়ে তাবীজ লিখে ব্যবহার করা নিষেধ বলেছেন, তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু অন্যতম।ইবনে মাসাউদ বলেন পবিত্র কোরআন দিয়ে হোক আর কোরআন ছাড়া হোক যে কোন প্রকার তাবিজ লেখা কে আমরা হারাম মনে করতাম।(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫ খন্ড ১০৩ পৃষ্ঠা ইবন আব্দুল ওয়াহহাব হামিয়াতু তাওহীদ)
.
আবু দাউদ (রহঃ) ঈসা বিন হামযা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: একবার আমি আব্দুল্লাহ্‌ বিন আকিম (রাঃ) এর নিকট প্রবেশ করলাম। তখন তিনি হুমরা (রোগে) আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললাম: আপনি কি তাবিয লটকাবেন না? তিনি বললেন: আমি এর থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন কিছু লটকালো তাকে সে জিনিসের সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়া হয়।(তিরমিযী হা/২০৭২; আহামাদ হা/১৮৮০৩; মিশকাত হা/৪৫৫৬, সনদ হাসান।)
.
শাইখ হাফেয হাকামী বলেন: “যদি এটি (তাবিয-কবচ) কুরআনের আয়াত দিয়ে হয়, অনুরূপভাবে সহিহ সুন্নাহ দিয়ে হয় তাহলে এটি জায়েয হওয়ার ব্যাপারে পূর্বসুরি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাদের পরবর্তী আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সালাফদের কেউ কেউ এটাকে জায়েয বলেছেন। এ ধরণের অভিমত আয়েশা (রাঃ), আবু জাফর মুহাম্মদ বিন আলী ও অন্যান্য সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে। আর তাঁদের কেউ কেউ এগুলো থেকে নিষেধ করেছেন, অপছন্দ করেছেন এবং এটাকে জায়েয মনে করেননি। তাদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুল্লাহ্‌ বিন আকীম (রাঃ), আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর (রাঃ), উকবা বিন আমের (রাঃ), আব্দুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ) এবং তাঁর ছাত্রবর্গ যেমন আসওয়াদ, আলকামা এবং তাদের পরবর্তী ইব্রাহিম নাখায়ী ও অন্যান্য আলেমগণ।আমাদের শাইখগণ তাবিয নিষিদ্ধ হওয়ার মতটি গ্রহণ করেছেন; এমনকি সে তাবিয কুরআন দিয়ে হলেও।

সৌদি স্থায়ী কমিটির ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমার আলোমগণ বলেছেন:“যদি তাবিয-কবচ কুরআন ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে হয় তাহলে এমন তাবিয পরিধান করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ একমত। তবে যদি কুরআন দিয়ে হয় সেক্ষেত্রে তারা মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ তাবিয পরাকে জায়েয বলেছেন; আর কেউ কেউ হারাম বলেছেন। হাদিসগুলোর সামগ্রকিতার দলিল এবং হারামের পথ রূদ্ধ করার দিক বিবেচনা থেকে তাবিয পরা হারাম হওয়ার অভিমতটি অগ্রগণ্য।[শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুল্লাহ্‌ বিন গুদইয়ান, শাইখ আব্দুল্লাহ্‌ বিন কূয়ূদ।(ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা (১/২১২)]
.
শাইখ আলবানী (রহঃ) বলেন: “এখনও এই ভ্রষ্টতা বেদুঈন, কৃষক ও কিছু শহরবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান। অনুরূপ ভ্রষ্টতা হল পুতি; কিছু কিছু ড্রাইভার তাদের গাড়ীর সামনের গ্লাসের সাথে যে পুতিগুলো লটকিয়ে রাখে। কেউ কেউ পুরোনো কোন একটি জুতা তার গাড়ীর সামনের অংশে কিংবা পিছনের অংশে টানিয়ে রাখে। আবার অন্য কেউ কেউ ঘোড়ার জুতা বাড়ীর সম্মুখভাগে কিংবা দোকানের সম্মুখভাগে লটকিয়ে রাখে। তারা দাবী করেন যে, এ সবকিছু বদনজর রোধ করার জন্য করা হয়। তাওহীদের ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে এ ধরণের আরও অনেক কিছুর সয়লাব হয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে শির্ক ও পৌত্তলিকতা; অথচ রাসূলগণকে প্রেরণ করা হয়েছে এবং কিতাবসমূহ নাযিল করা হয়েছে এগুলোকে প্রতিহত ও উৎখাত করার জন্য। আল্লাহ্‌র কাছেই মুসলমানদের অজ্ঞতা ও দ্বীন থেকে তাদের দূরে সরে যাওয়ার অভিযোগ পেশ করছি।(সিলসিলাতুল আহাদিছিস সাহিহা (১/৮৯০, হাদিস নং ৪৯২)
.
আকিদার কিবার উলামাদের অন্যতম, আল্লামা আব্দুর রহমান বিন নাসির আল-বাররাক হাফিযাহুল্লাহ বলেন,
❝রোগীর দেহে কুরআনের আয়াত অথবা দোয়া লিখে চিকিৎসা করার পক্ষে সালাফদের কর্মে একটি দলিলও আছে বলে আমার জানা নেই। সালাফ বলতে আমি বোঝাচ্ছি সাহাবি ও তাবেয়িবর্গের কর্মে। যারা এ কাজ করে, তারা আপনার উল্লিখিত ইবনুল কাইয়্যিম ও শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুমাল্লাহর মতের ওপরই নির্ভর করে থাকে। কিন্তু এ পদ্ধতিতে চিকিৎসার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ থেকে তাঁদের দুজনের কোনো দালিলিক ভিত্তি আমার জানা নেই। এক্ষেত্রে বোঝা যায়, তাঁরা দুজন অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসাবিদ্যার ওপর নির্ভর করেছেন।❞সূত্র: আল-মাকতাবা (al-maktaba) ডট ওর্গ
.
উল্লেখ যে,একদল লোক তাবীয ব্যবহারকে জায়েয করার লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা তাদের মতকে বলিষ্ঠ করার মানসে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এর ব্যাপারে বর্ণিত আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ গ্রন্থ থেকে একটি উদ্ধৃতি পেশ করে প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে, তিনি তাবিজ ব্যবহার করতেন।বর্ননাটি হল, ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) তাবিজের সুতাটি যেটা তিনি উকুনের জন্য ব্যবহার করতেন, তা মৃত্যুর পর ১৫০ দিরহামে বিক্রি হয়! (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১৮/২৯৭)তারা তাদের দাবির পক্ষে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাকে উপস্থাপন করার জন্য অনুবাদে শুভঙ্করের ফাঁকির আশ্রয় নিয়েছেন। উপর্যুক্ত উদ্ধৃতিতে ‘الزئبق যিবাক’ শব্দের তারা অনুবাদ করেছেন ‘তাবিজ’। অথচ উক্ত বক্তব্য ভিত্তিহীন যিবাক ও যিবিক শব্দের অর্থ,পারা বা পারদ;যা দেওবন্দীদের ভিবিন্ন কিতাব থেকেই প্রমানিত হয়। (বিস্তারিত দেখুন মিসবাহুল লুগাত,৩১৭ আল-মানার, পৃ. ৫৭৫)

পরিশেষে, নিঃসন্দেহে তাবিয থেকে বারণ করা গর্হিত আকিদার পথ রূদ্ধ করার ক্ষেত্রে অধিক উপযুক্ত; বিশেষতঃ আমাদের এ যামানায়। কারণ অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীগণ তাঁদের সে পবিত্র যামানাতেই এটাকে অপছন্দ করেছেন; অথচ তাদের অন্তরে ঈমান ছিল পাহাড়ের মত মজবুত। সুতরাং আমাদের এ ফিতনার যামানায় এটাকে অপছন্দ করা অধিক উপযুক্ত ও অধিক যুক্তিযুক্ত। কিভাবে নয়; এ যামানার লোকেরা এ রুখসতকে ব্যবহার করে নিরেট হারাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে এবং ঐ হারামে পৌঁছার জন্য এটাকে তারা একটি মাধ্যমে হিসেবে গ্রহণ করেছে! যেমন তারা তাবিজের মধ্যে একটি আয়াত, একটি সূরা, বিসমিল্লাহ্‌ বা এ জাতীয় কিছু একটা লিখে এরপর এর নীচে শয়তানী নকশাগুলো আঁকে; যারা তাদের বইগুলো পড়েছে তারা ছাড়া অন্যেরা এসব বুঝতে পারে না। যেমন:তারা এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অন্তরকে আল্লাহ্‌র উপরে নির্ভরশীল হওয়ার পরিবর্তে তারা যে তাবিয লিখেছে এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকার দিকে ধাবিত করে। অথচ মহান আল্লাহ বলেন,অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় কর, আমার সাথে কুফরী করো না।(সূরা আল-বাকারা, ২/১৫২) মোটকথা কুরআন, আয়াত, দুআ, আল্লাহর নাম ও সিফাত ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা লিখিত তাবীয সর্বসম্মতিক্রমে শিরক।কিন্তু এগুলো দ্বারা লিখিত তাবীযও অগ্রাধিকার যোগ্য মতানুসারে হারাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ পরিপন্থী কাজ।আর পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় গুনাহ হ’ল শিরক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই শিরক বড় অপরাধ’(লুক্বমান ৩১/১৩)। আর শিরককারীর জন্য জান্নাত হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন এবং তার বাসস্থান হচ্চে জাহান্নাম‌।’(সূরামায়িদাহ ৫/৭২)তাই সব ধরনের তাবীয পরিত্যাগ করে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন সুরা ও বিভিন্ন দুআ পড়ে রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) করা হল সুন্নাহ।যা প্রিয় নবী তার প্রিয় দৌহিত্র দ্বয় তথা হাসান ও হুসাইন রা. কে রুকিয়া করেছেন, তাঁর কন্যা ফাতিহা রা. কে রুকিয়া করতে বলেছেন এবং বিশেষ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজেই উম্মাহকে এরূপ চিকিৎসা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।কুরআনের তাবিজ বৈধ হলে তিনি অবশ্যই নিজে বাস্তবায়ন করতেন এবং সাহাবীদেরকে তার শিক্ষা দিতেন। কিন্তু এমন কোন তথ্য সহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।(বিস্তারিত দেখুন মুসলিম হা/৫৮৬২; আবুদাঊদ হা/৩৮৮৬; মিশকাত হা/৪৫৩০।মুসলিম হা/৫৮৬১; আহমাদ হা/১৪৪২২; মিশকাত হা/৪৫২৯।বুখারী হা/৫৭৩৯; মুসলিম হা/৫৮৫৪; মিশকাত হা/৪৫২৮।বুখারী হা/৫৭৩৮; মুসলিম হা/৫৮৫১; ইবনু মাজাহ হা/৩৫১২; আহমাদ হা/২৪৩৯০; মিশকাত হা/৪৫২৭।তিরমিযী হা/২০৫৯; মিশকাত হা/৪৫৬০, সনদ সহীহ)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।