নফল ছালাতের ফযীলত

সালাত ওযূ করে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলে মানুষের গুনাহ মোচন হয়ে যায়। জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় এবং পরকালে বড় লাভবান হওয়া যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَاسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ ‘তোমরা ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাও’ (বাক্বারাহ ৪৫)। অন্যত্র তিনি আরো বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اسْتَعِيْنُوْا بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাও। আল্লাহ ধৈর্যশীল লোকদের সাথে থাকেন’ (বাক্বারাহ ১৫৩)। ধৈর্য ও নফল ছালাত এদু’টি এমন জিনিস যা দ্বারা মানুষ যে কোন সাফল্য লাভ করতে পারে। নিজেকে অত্যন্ত দৃঢ় ও মযবূত করতে পারে। সত্য ও পুণ্যের পথে চলতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ الصَّلاَةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ- ‘নিশ্চয়ই ছালাত মানুষকে অশ্লীল ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে’ (আনকাবূত ৪৫)। এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যারা আল্লাহর ভয়-ভীতি নিয়ে একনিষ্ঠভাবে ওযূ করে ছালাত আদায় করে, তারা অশ্লীল ও অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকবে বলে আশা করা যায়। قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ ‘সেসব মুমিন সফল হল, যারা ভয় ভীতি নিয়ে ছালাত আদায় করল’ (মুমিনূন ১-২)। আল্লাহর নিকট ক্ষমা পাওয়ার আশায় দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে ক্ষমা প্রার্থনা করা ভাল। গুনাহ করার পর এইভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَالَّذِيْنَ إِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوْا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْ- ‘আর যারা যখন কোন গুনাহের কাজ করে অথবা নিজেদের প্রতি যুলুম করে, তখন তারা আল্লাহকে ডাকে এবং নিজেদের গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে’ (আলে ইমরান ১৩৫)। এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ ক্ষমা করেন।

عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ أَوَّلُ مَا يُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الصَّلاَةُ فَإِنْ صَلُحَتْ صَلُحَ لَهُ سَائِرُ عَمَلِهِ وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ-
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মানুষকে সর্বপ্রথম ছালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। যদি তার ছালাত গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে সমস্ত আমল গ্রহণীয় হবে। আর যদি ছালাত গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে সমস্ত আমলই বাতিল হবে’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৯৮)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ الصَّلاَةُ ثَلاَثَةُ أَثْلاَثٍ الطُّهُوْرُ ثُلُثٌ وَالرُّكُوْعُ ثُلُثٌ وَالسُّجُوْدُ ثُلُثٌ فَمَنْ أَدَّهَا بِحَقِّهَا قُبِلَتْ مِنْهُ وَقُبِلَ مِنْهُ سَائِرُ عَمَلِهِ وَمَنْ رُدَّتْ عَلَيْهِ صَلاَتُهُ رُدَّ عَلَيْهِ سَائِرُ عَمَلِهِ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাতের ছওয়াব তিনভাগে বিভক্ত। একভাগ পবিত্রতার মাধ্যমে দ্বিতীয় ভাগ রুকূর মাধ্যমে তৃতীয়ভাগ সিজদার মাধ্যমে। যে এইগুলি পূর্ণ আদায় করল তার ছালাত গৃহীত হল এবং সমস্ত আমলও গৃহীত হল। আর যার ছালাত গ্রহণ করা হবে না, তার কোন আমলই গ্রহণ করা হবে না’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৪৩)।

عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى سَجْدَتَيْنِ لاَ يَسْهُو فِيْهِمَا غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ-
যায়েদ ইবনু খালেদ জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন ভুল না করে মনোযোগ সহকারে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করল, আল্লাহ তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন’ (আহমাদ, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৫৭৭; বাংলা মিশকাত হা/৫৩০)।

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ছালাত কবুল হওযার জন্য তিনটি কাজ সুন্দর হওয়া যরূরী- ১. ওযূ- ওযূ সুন্দর না হলে ছালাত কবুল হবে না। ২. রুকূ যথাযথ পূর্ণ না হলে ছালাত কবুল হবে না। ৩. সিজদা যথাযথ পূর্ণ না হলে ছালাত কবুল হবে না। আর ছালাত কবুল না হলে সমস্ত আমল বাতিল হবে।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِيْ جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ-
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করল, অতঃপর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকির করল, অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করল, তাহলে তার হজ্জ ও ওমরা পালনের পূর্ণ নেকী হল। রাসূল (ছাঃ) কথাটি তিনবার উচ্চারণ করেছেন’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৭৪৭)। অত্র হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, যারা ফজরের ছালাত আদয়ের পর সেখানে বসে থেকে আল্লাহর যিকির করবে এবং সূর্যোদয়ের পর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, আল্লাহ তাকে এত ছওয়াব দিবেন বৈধ পন্থায় হজ্জ ও ওমরা করে যত ছওয়াব পাওয়া যায়।

عَنْ أَبِيْ مُوْسَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الضُّحَى أَرْبَعًا وَقَبْلَ الأُوْلَى أَرْبَعًا بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ-
আবু মূসা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চাশতের চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে এবং যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করা হয়’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৭৪৫)।