দুনিয়া ও আখিরাতের সকল প্রয়োজনীয় এবং কল্যানকর বিষয়বস্তু চাওয়ার দুআ

ভূমিকা: আজ আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেখানো সুন্দর একটি দু’আয় মাসুরা সম্পর্কে জানান এবং শিখার চেষ্টা করবো। জেনে রাখা ভাল যে, মাসুরা শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে হাদিসে বর্ণিত। সেই হিসাবে হাদীসে বর্ণিত সকল দু’আই মাসুরা। নিদিষ্ট করে দুই একটি দু’আ নয়। আজকের গুরুত্বপূর্ণ এই একটি দু’আ পড়ে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতে যাবতীয় কল্যানকর বিষয় প্রার্থনা করা যায় এবং যাবতীয় অকল্যানকর বিষয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়।এই দু’আটি সালাতে মাসুরা হিসেবে পড়া যাবে। প্রতিদিন অন্তত সকাল-সন্ধ্যা কিংবা রাতে যেকোন নামাযের সালাম ফেরানোর পূর্বে দু’আ মাসুরা হিসেবে একবার পড়া অথবা একাকী মুনাজাতে এই দু’আটা পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলে আশা করা যায়, আল্লাহর পক্ষে থেকে কল্যান ও নিরাপত্তা পাওয়া যাবে ইন শা’ আল্লাহ্‌। হাদীসটি বর্ননা করেছেন,আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৭/৫৮ হি.] তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি নামায পড়ছিলাম। তার কি একটা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমি তাতে বিলম্ব করলাম। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা! তুমি অবশ্যই সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপকার্থক দোয়া করবে। নামায শেষ করে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপকার্থক দোয়া কি? তিনি বলেনঃ তুমি বলো, “

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَاذَ بِهِ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ وَأَسْأَلُكَ أَنْ تَجْعَلَ كُلَّ قَضَاءٍ قَضَيْتَهُ لِي خَيْرًا ‏”‏ ‏.‏

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিনাল খাইরি কুল্লিহি আ’-জিলিহী ওয়া আ-জিলিহী মা আ’লিমতু মিনহু ওয়ামা লাম আ’লাম। ওয়া আ’যুবিকা মিনাশ শাররি কুল্লিহি আ’জিলিহী ওয়া আ-জিলিহী মা আ’লিমতু মিনহু ওয়ামা লাম আ’লাম। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি মা সাআলাকা আ’বদুকা ওয়া নাবিয়্যুকা ওয়া আ’উযুবিকা মিন শাররি মা আ’যাবিহি আ’বদুকা ওয়া নাবিয়্যুকা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা ওয়ামা ক্বাররাবা ইলাইহা মিন ক্বাওলিন আও আ’মাল, ওয়া আ’উযুবিকা মিনান্নারি ওয়ামা ক্বাররাবা ইলাইহা মিন ক্বাওলিন আ­­­­­­ও আ’মাল। ওয়া আসআলুকা আন তাযআ’লা কুল্লা ক্বাযাইন ক্বাযাইতাহুলি খাইর।[আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন না হয় ভুল শিখতে হবে]।
.
অর্থঃ অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সকল কল্যাণ প্রার্থনা করছি সেটা আসন্ন হোক অথবা বিলম্বে হোক, সেটা আমার জানার ভিতরে হোক অথবা আমার অজানা হোক। আর আমি সকল অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। সেটা আসন্ন হোক অথবা বিলম্বে হোক। সেটা আমার জানার ভিতরে হোক অথবা আমার অজানা হোক। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও আপনার নবী আপনার কাছে যেসব কল্যাণ প্রার্থনা করেছেন আমিও সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও নবী আপনার কাছে যেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন আমিও সেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জান্নাতের নৈকট্য অর্জন করিয়ে দিবে এমন কথা ও কাজের প্রার্থনা করছি। আর জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নামে নিয়ে যাবে এমন কথা ও আমল থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আরও প্রার্থনা করছি- আপনি আমার জন্য যে ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটা যেন ভাল হয়।(মুসনাদে আহমাদ হা/২৫৬৩; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬৩৯; ইবনে মাজাহ হা/৩৮৪৬ সিলসিলা সহীহাহ হা/১৫৪২ হাদীসটি সহীহ)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন—
.
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ
(আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিনাল খাইরি কুল্লিহি)

অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে যাবতীয় কল্যাণ প্রার্থনা করছি,
.
عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ
(আ’-জিলিহী ওয়া আ-জিলিহী মা আ’লিমতু মিনহু ওয়ামা লাম আ’লাম)

অর্থ: যা তাড়াতাড়ি আসে এবং যা দেরিতে আসে, যা আমার জানা এবং যা আমার অজানা।
.
وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ
(ওয়া আ’যুবিকা মিনাশ শাররি কুল্লিহি)

অর্থ: আর আমি যাবতীয় অকল্যান থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি,
.
عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ
(আ’জিলিহী ওয়া আ-জিলিহী মা আ’লিমতু মিনহু ওয়ামা লাম আ’লাম)

অর্থ: যা তাড়াতাড়ি আসে এবং যা দেরিতে আসে, যা আমার জানা এবং যা আমার অজানা।
.
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ
(আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি মা সাআলাকা আ’বদুকা ওয়া নাবিয়্যুকা)

অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট সেই কল্যাণ ভিক্ষা করছি যা তোমার বান্দা ও তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার কাছে চেয়েছেন।
.
وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَاذَ بِهِ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ
(ওয়া আ’উযুবিকা মিন শাররি মা আ’যাবিহি আ’বদুকা ওয়া নাবিয়্যুকা)

অর্থ: আর তোমার কাছে ঐসমস্ত অকল্যান থেকে আশ্রয় চাচ্ছি যা হতে তোমার বান্দা ও নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্রয় চেয়েছেন।
.
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ
(আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা ওয়ামা ক্বাররাবা ইলাইহা মিন ক্বাওলিন আও আ’মাল) অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে জান্নাত এবং আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে এমন প্রত্যেকটি কথা ও কাজ প্রার্থনা করছি,
.
وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ
(ওয়া আ’উযুবিকা মিনান্নারি ওয়ামা ক্বাররাবা ইলাইহা মিন ক্বাওলিন আ­­­­­­ও আ’মাল)

অর্থ: আর আমি জাহান্নাম এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী করে এমন প্রত্যেকটি কথা ও কাজ থেকে তোমার কাছে প্রার্থনা করছি।
.
وَأَسْأَلُكَ أَنْ تَجْعَلَ كُلَّ قَضَاءٍ قَضَيْتَهُ لِي خَيْرًا ‏
(ওয়া আসআলুকা আন তাযআ’লা কুল্লা ক্বাযাইন ক্বাযাইতাহুলি খাইর)

অর্থ: আর আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি যে, তুমি আমার জন্য যেসব ফায়সালা করে রেখেছ তা আমার জন্য কল্যাণকর করে দাও।
.
প্রিয় পাঠক! একটু চিন্তা করে দেখুন এর চেয়ে সুন্দর, গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থবহ দু’আ হয়? দু’আটি একটু বড় দেখে ভয়ের কিছু নেই,আপনি যদি দু’আটির প্রতি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন একই বাক্য রিপিট অর্থাৎ একবার কল্যান চাওয়া হয়েছে আবার সামান্য পরিবর্তন করে অকল্যান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে, তাই মনোযোগ দিয়ে চেষ্টা করলে মুখস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।সুতরাং প্রত্যেকের উচিত দু’আটি মুখস্থ করে নেওয়া এবং নিদিষ্ট কোন সময় খাস না করে সকাল-সন্ধ্যায়, নামাজে শেষ বৈঠকে সালাম ফেরানোর পূর্বে, এবং অন্য যেকোনো সময় পাঠ করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। দু‘আটি অর্থের দিকে লক্ষ রেখে আগ্রহ ও আন্তরিকতা নিয়ে পড়বেন এবং পড়ার সময় অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।