দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনার দুআ

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। গুরুত্বপূর্ণ একটি দুআ।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: ক্বিয়ামতের আলামত সমূহের অন্যতম হ’ল দাজ্জালের আবির্ভাব। সে ক্বিয়ামতের পূর্বে বের হয়ে আসবে। হাদীসে তার সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ উল্লিখিত হয়েছে। সকল নবীই স্ব স্ব উম্মতকে দাজ্জালের ব্যাপারে সাবধান করে গেছেন।আমাদের রাসূল (ﷺ) নিজে সর্বদা দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। তিনি স্বীয় উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়ার দু‘আ শিখিয়েছেন। রাসূল (ﷺ) ক্বিয়ামতের ব্যাপারে সর্বদা ভীত থাকতেন বলেই দাজ্জালের ফিতনা থেকে পানাহ চাইতেন। যেমন একদা সূর্যগ্রহণ শুরু হলে তিনি ক্বিয়ামত শুরু হয়েছে মনে করে ভীত হয়ে দাঁড়িয়ে যান। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭৬৮] অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৯] সূরা কাহাফের প্রথম ১০ টি আয়াত মুখস্থ করা খুব কঠিন না। একটু চেষ্টা করলেই সম্ভব, ইনশাআল্লাহ্। শিখে নিন। নামাজে কিরাতটা লম্বা করতে পারবেন। আজকের পর্বে আমরা রাসূল (ﷺ) এর শিখানো দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার সুন্দর একটি দু’আ শিখবো ইনশাআল্লাহ। হাদীসটি বর্ননা করেছেন, প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৫৯ হি.] তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যখন তোমাদের কেউ তাশাহ্‌হুদ পড়ে শেষ করবে তখন যেন চারটি জিনিস থেকে আল্লাহ্‌র নিকট পানাহ চায়- (তা হলো) :

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ

মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন ‘আযাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন ‘আযাবিল কাব্‌রি, ওয়া মিন ফিত্‌নাতিল মাহয়া ওয়াল মামাতি, অয়া মিন শার্‌রি ফিত্‌নাতিল মাসীহিদ-দাজ্জাল।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, অন্যথায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে)।
.
অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জাহান্নামের শাস্তি থেকে, কবরের শাস্তি থেকে, জীবন ও মরণের ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে।(সহীহুল বুখারী হা/১৩৭৭,সহীহ মুসলিম হা/ ৫৮৮, তিরমিযী হা/ ৩৬০৪, নাসায়ী হা/ ১৩১০, ৫৫০৫, আবূ দাউদ ৯৮৩, ইবনু মাজাহ হা/৯০৯)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
اَللّٰهُمَّ
(আল্লা-হুম্মা) অর্থ: হে আল্লাহ!
.
إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ،
(ইন্নী আ’উযুবিকা মিন ‘আযাবি জাহান্নামা) অর্থ: আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জাহান্নামের শাস্তি থেকে,
.
وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ،
(ওয়া মিন ‘আযাবিল কাবর)

অর্থ: আর কবরের শাস্তি থেকে,
.
وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ،
(ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহয়া ওয়াল মামাতি) অর্থ: আর জীবন ও মরণের ফিতনা থেকে,
.
وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
(অয়া মিন শার্‌রি ফিত্‌নাতিল মাসীহিদ-দাজ্জাল)

অর্থ: এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে।
.
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত দু’আটি খুবই চমৎকার ও অর্থবহ। দু’আটিতে চারটি জিনিস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে এই চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তিনি আমাদেরকে সালাতে তাশাহহুদের সময় উক্ত চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। চারটি জিনিস হলো, কবরের আযাব থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে, দুনিয়ার লোভ-লালসা ও সন্দেহযুক্ত জিনিস থেকে ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। মৃত্যুর ফিতনা থেকে আশ্রয় চাওয়ার কারণ হলো এটি অত্যন্ত ভয়ংকর। কবরের ফিতনা বলতে যেসব কাজ কবরের আযাবের কারণ সেগুলো থেকে আশ্রয় চাওয়া। আর জীবনের ফিতনা বলতে দাজ্জালদের ফিতনা যারা মানুষের কাছে মিথ্যার মুখোশ পরে সত্যরূপে প্রকাশ পাওয়ার চেষ্টা করবে। আর সবচেয়ে বড় ফিতনা হল, শেষ যমানায় যার বের হওয়ার ব্যাপারে একাধিক সহীহ হাদীস প্রমাণিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে মাসীহে দাজ্জাল। এ কারণেই তাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই সবাই গুরুত্বপূর্ণ এই দু’আটি মুখস্ত করে সালাতের শেষ বৈঠকে বসে প্রথমে তাশাহুদ তারপর দুরুদ তারপর এই দু’আটি এবং চাইলে সাথে অন্য দু’আ পড়তে পারেন।এমনকি এই দু’আটি নামাজের সিজদায়, দু‘আ কবুলের বিশেষ সময়ে কিংবা যেকোনো দু‘আর মধ্যে পড়তে পারি। আনুষ্ঠানিক দু‘আ ছাড়াও সাধারণভাবে এসব বাক্য পড়তে পারি। নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন দু’আ পড়ার সময় অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখবেন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।