তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ সালাত

প্রশ্ন: তারাবীহ শব্দের অর্থ কি? তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের ফজিলত কি? তারাবীহর সালাতের রাক‘আত সংখ্যা কত? তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের সঠিক নিয়ম কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ‘তারাবীহ’ শব্দের অর্থ বিশ্রাম করা। আর ‘তাহাজ্জুদ’ শব্দের এর অর্থ হল: রাত্রিজাগরণ, ঘুম থেকে ওঠা, রাত্রিকালীন ইবাদত ইত্যাদি। যেহেতু তারাবীহ বহু দীর্ঘায়িত একটি সালাত এবং প্রতি চার রাকআত শেষে যাতে একটু বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে সেজন্য এর নামকরণ করা হয়েছে তারাবীহ। তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, ক্বিয়ামুল লায়ল বা ক্বিয়ামে রামাদান সবগুলোকেই রাতের নফল সালাত বলা হয়। উক্ত সালাত রামাদানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে ‘তারাবীহ’ এবং রামাদান ও অন্যান্য সময়ে শেষরাতে পড়লে তাহাজ্জুদ। পরিভাষায়, তাহাজ্জুদ মূলত ওই সালাতেকে বলা হয়, যা রাতের বেলায় ঘুম থেকে ওঠে আদায় করা হয়৷ ফায়দ্বুল বারিতে এসেছে, ‘ঘুম থেকে জাগার পর যদি সালাত পড়ে, তখন তাকে তাহাজ্জুদ নামে নামকরণ করা হয়৷’ (কাশমিরি, ফায়দ্বুল বারি: ২/৪০৭)
.
▪️তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ সালাতের গুরুত্ব, ফজিলত ও মর্যাদা:
_____________________________________
রাত্রির সালাত বা ‘সালাতুল লায়েল’ নফল হলেও তা খুবই ফযীলতপূর্ণ। এই সালাতের কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সম্বোধন করে বলেন- “রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ সালাত পড়; এ তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে মাকামে মাহ্‌মূদে (প্রশংসিত স্থানে) প্রতিষ্ঠিত করবেন।” (সূরা ইসরা, ১৭/৭৯)। তাহাজ্জুদ আদায়কারীর মর্যাদা তার চেয়ে বেশি, যে তাহাজ্জুদ আদায় করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাতের বেলা সিজদারত থাকে বা (ইবাদতে) দাঁড়ানো থাকে, আখিরাতের ব্যাপারে শঙ্কিত থাকে এবং নিজ রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এমনটি করে না?’’ (সূরা আয-যুমার,৩৯/ ৯)। রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করা রাহমানের বান্দাগণের গুণ। মহান আল্লাহ বলেন, “রাহমানের বান্দা তারা, যারা ভূপৃষ্ঠে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে তখন তারা প্রশান্তভাবে জবাব দেয়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান থেকে রাত্রি অতিবাহিত করে।” (সূরা ফুরকান ২৫/৬৩-৬৪)। হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি রামাদানের রাত্রিতে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রাত্রির সালাত আদায় করে, তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করা হয়।” (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/১২৯৬)। উক্ত হাদীসে ঈমান অবস্থায় অর্থ হল- এমন বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ তাকে এ কাজের বদলা দিবেন এবং ইহিতীসামা অর্থ হলো, এমনভাবে সাওয়াব আশা করবে যে, রাতের এ সালাত আদায় কোন মানুষকে দেখাবার বা শুনাবার জন্য নয় বরং শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য এবং তা শুধুমাত্র আল্লাহরই কাছ থেকে পুরস্কার লাভের আশায়। অপর বর্ণনায় রাসূল (ﷺ) আরো বলেছেন; ফরজ সালাতের পর সর্বশ্রেষ্ঠ সালাত এটি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘ফরজ সালাতের পর সর্বশ্রেষ্ঠ সালাত হল, রাতের সালাত।’’ (ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১১৬৩, ইমাম তিরমিযি;ঞ ৪৩৮)
.
▪️তারাবীহ বা তাহাজ্জুদের সালাতের রাক‘আত সংখ্যা কত?
_______________________________________
প্রথমত আমার পাঠকদের উদ্দেশ্য বলতে চাই, আহালুল আলেমদের ইজতিহাদ নির্ভর মাসয়ালাগুলো নিয়ে কোন মুসলিমের সংবেদনশীল আচরণ করাকে আমরা সমীচীন মনে করি না। যে আচরণের কারণে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ ও ফিতনা সৃষ্টি হয়। তারাবীহ সালাত ৮ রাকআত নাকি ২০ রাকআত এই মাসয়ালার ব্যাপারে দুই পক্ষই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। প্রথম পক্ষের লোকেরা যারা বিতরসহ ১১ রাকাতের বেশি অর্থাৎ ২৩ রাকআত তারাবীহ পড়েন তাদের আমলকে একেবারে অস্বীকার করে এ আমলকে বিদআত আখ্যায়িত করেন। আর দ্বিতীয় পক্ষের লোকেরা যারা শুধু বিতরসহ ১১ রাকাতে সীমাবদ্ধ থাকেন তাদের আমলকে অস্বীকার করে বলেন; তারা ‘ইজমা’ এর খেলাফ করছে। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে দুইপক্ষই ভুলের মধ্যে রয়েছে। কারণ, যারা মনে করেন নির্দিষ্ট করে তারাবীহ ২০ রাকআত আদায় করা সুন্নত, এটি ইজমা দ্বারা প্রমাণিত তাদের এই ধারণা বানোয়াট, মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন কথা। কারণ, ২০ রাকআত তারাবীহ এই মর্মে বিশুদ্ধ কোন হাদীস নেই; যা আছে সবগুলোই জয়ীফ অথবা জাল। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে সুন্নত মনে না করে তারাবীহ বিতরসহ ১১/২৩/৩৭/৩৯ ইত্যাদি রাকআত পড়া জায়েজ। এটিকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এই মর্মে সালাফদের থেকে বহু আসার রয়েছে। অপরদিকে যারা বিতরসহ ১১ রাকআত পড়ে তারা রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহের অনুসরণ করেন। কেননা রাসূল (ﷺ) রামাদান কিংবা রামাদানের বাহিরে এর বেশি পড়েন নি। যারা এটি অস্বীকার করে তারা জাহেল। বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য ফিক্বহী মাজহাবের আলেমগণের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিষ্কার হয় যে, এ বিষয়ে প্রশস্ততা আছে। ১১ রাকাতের অধিক রাকাআত তারাবীহ পড়তে দোষের কিছু নেই। হানাফী মাজহাবের আলেম ইমাম আস সারখাসী বলেন; “আমাদের মতে বিতির ছাড়া তারাবীহ ২০ রাকাআত।”(আল্‌মাবসুত খন্ড:২ পৃষ্ঠা:১৪৫)। হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, “আবু-আবদুল্লাহ অর্থাৎ ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে পছন্দনীয় মত হলো তারাবীহ ২০ রাকাআত। এই মতে আরো রয়েছেন ইমাম সাওরী, ইমাম আবু-হানীফা ও ইমাম শাফেয়ী। আর ইমাম মালেক বলেছেন; “তারবীহ ৩৬ রাকাআত।” (ইবনে কুদামাহ আল মুগনী খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৪৫৭১)। হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] প্রদত্ত ফাতওয়া— বলেছেন- “যিনি ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী ও আহমাদের মাজহাব অনুসারে ২০ রাকাআত তারাবীহ সালাত আদায় করল অথবা ইমাম মালেকের মাজহাব অনুসারে ৩৬ রাকাআত তারাবীহ আদায় করল অথবা ১৩ বা ১১ রাকাআত তারাবীহ আদায় করল প্রত্যেকেই ভাল আমল করল। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে ইমাম আহমাদ এ মতই পোষণ করতেন। তাই তেলাওয়াত দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করার অনুপাত অনুযায়ী রাকআত সংখ্যা বেশি বা কম হবে।” (আল-ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা- ৬৪)। তিনি অপর এক ফাতাওয়ায় বলেছেন, রাসূল (ﷺ) রাত্রির সালাত ১১ বা ১৩ রাকআত আদায় করতেন। পরবর্তীকালে মদীনার লোকেরা দীর্ঘ ক্বিয়ামে দুর্বলতা বোধ করে। ফলে তারা রাক‘আত সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে, যা ৩৯ রাক‘আত পর্যন্ত পৌঁছে যায়।” (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ ফাতাওয়া; ২৩/১১৩)। অতএব তিন রাকআত বিতরসহ ১১ বা ১৩ রাকআত তারাবীহর সালাত আদায় করাই তাক্বওয়াশীল মুমিনের কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন; “সৃষ্টিজগতের প্রতি রহমত স্বরূপ।” (সূরা আম্বিয়া; ২১/১০৭)। ইবনে হাজার হাইসামী বলেছেন; রাসূল (ﷺ)এর কাছ থেকে তারাবীর সালাত ২০ রাকাআত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়নি। আর এই ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, লতা অত্যন্ত জয়ীফ বা দুর্বল। (আল মাওসূ‘আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ খন্ড:২৭ পৃষ্ঠা:১৪২-১৪৫)। এমনকি বহু হানাফি বহু ইমামদের মতে তারাবীহ ৮ রাকাআত। যেমন;(১). ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম হানাফী (রহ.) ৮৬১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি লিখেন- “এতদোক্ত আলোচনা থেকে জানা গেল যে, তারাবীহ’র সালাত বিতর সহ জামাআতে এগারো রাকাআত পড়া সুন্নাত। যা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) পড়েছেন।(ফতহুল ক্বদীর: খন্ড:পৃষ্ঠা: ৪৬৮) (২).ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহ.) ১০১৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বলেন,“অর্থাৎ সঠিক এই যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবীদের নিয়ে আট রাকাআত এবং বিতর পড়েছেন।” (মিরকাত; খন্ড:৪; পৃষ্ঠা:৪৩৫) (৩). শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছে দেহলভী (রহ.) মৃত্যুবরণ করেছেন ১০৫২ হিজরীতে। তিনি বলেন, এখন রইল পবিত্র রমযানে কিয়ামে শব যেটাকে তারাবীহ বলা হয়, সেটার বয়ান রোযার অধ্যায়ে আসবে ইনশাআল্লাহ। আর তাহকীক এই যে, পবিত্র রমযানে হুজুর আকরাম (ﷺ)-এর নামায তাঁর অভ্যাস অনুযায়ীই ছিল। আর সেটা এগারো রাকাআতই ছিল। যেমনিভাবে (রমযানের বাইরে) তাহাজ্জুদে পড়তেন।” (মাদারিজুন নবুওয়ত, গোলাম মুঈনুদ্দিন অনূদিত; খন্ড:১; পৃষ্ঠা: ৪৮০)
.
অতএব, মতানৈক্য এড়াতে রাতের সালাত সম্পর্কে সঠিক কথা হলো রাতের নামাযের কোন নির্দিষ্ট রাকআত সংখ্যা নির্ধারণ না করা। রাসূল (ﷺ) থেকে যা সাব্যস্ত হয়েছে, তা রাতের নামাজের ব্যাপারে প্রশস্ততা প্রমাণ করে এবং এর নির্দিষ্ট রাকাত নির্ধারণ না করা প্রমাণ করে। বরং সুন্নাহসম্মত হচ্ছে, মু’মিন পুরুষ ও নারী দুই দুই রাকাত করে নামাজ পড়বে। প্রত্যেক দুই রাকাত পড়ার পর সালাম ফিরাবে। আর রাসূল (ﷺ) এর সুন্নাহ হিসেবে পড়তে চাইলে তারাবীহ বিতরসহ ১১ রাকআত পড়তে হবে; ২০ রাকআত নয়। ব্যাপারে দলিল হলো বুখারী ও মুসলিমের হাদীস। যেমন:
.
ইবনু উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত হাদীস। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, রাতের সালাত দুই দুই (রাকআত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজর হবার আশঙ্কা করে, সে যেন এক রাকাত সালাত পড়ে নেয়। আর সে যে সালাত পড়ল, তা তার জন্য বিতর হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী, হা/৯৯০; সহীহ মুসলিম, হা/৭৪৯)।এই হাদীসে উক্ত নির্দেশ দেওয়ার সময় তিনি রাতের সালাতের কোন নির্দিষ্ট রাকআত নির্ধারিত করেননি; না রামাদানের এবং না রামাদানের বাহিরে। তাছাড়া খোদ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কখনো কখনো ১৩ রাকআত সালাতও পড়েছেন। আর তা এ কথারই দলীল যে, রাতের সালাতের ব্যাপারে কোন সংকীর্ণতা নেই; অর্থাৎ তার এমন কোন নির্দিষ্ট রাকআত-সংখ্যা নেই যার অন্যথা করা যাবে না। তবে অবশ্য সেই সংখ্যার সালাত পড়তে অভ্যাসী হওয়া অধিক উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ আমল, যে সংখ্যার কথা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাহতে (খোদ আমলে) এসেছে। আম্মাজান আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাতে দশ রাকাত সালাত পড়তেন, প্রত্যেক দুই রাকাতে সালাম ফিরাতেন। এরপর এক রাকাত বিতর পড়ে নিতেন।” (আবু দাঊদ, হা/১৩৩৬; সনদ: সাহীহ)। তাই সুন্নত ও আফযল হল এই সালাত বিতর সহ ১১ রাকআত পড়া এটাই পড়াই উত্তম। দুই দুই রাক‘আত করে চার সালামে ৮ রাক‘আত। অতঃপর এক সালামে মাঝের তাশাহহুদ ছাড়াই তিন রাক‘আত বিতর পড়া। অথবা দুই দুই রাক‘আত করে ৫ সালামে ১০ রাক‘আত। এরপর এক রাক‘আত বিতর আদায় করা। (সহীহ বুখারী, হা/১১৪৭, ৯৯৫, ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৭, ১৭৯৩, ১৭৮২; হাকেম, হা/১১৪০)। আবু সালামা ইবনু আব্দুর রহমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একদা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর রামাদানের রাতের সালাত কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাদান মাসে এবং রামাদানের বাইরে ১১ রাক‘আতের বেশী সালাত আদায় করতেন না। তিনি প্রথমে (২+২) চার রাক‘আত পড়তেন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি (২+২) চার রাক‘আত পড়তেন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি তিন রাক‘আত পড়তেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০১৩, ইফাবা হা/১৮৮৬, পৃষ্ঠা: ৩/২৯৭ .ও ১২৬৯, ‘তারাবীহর সালাত’ অধ্যায়-৩১; সহীহ মুসলিম, হা/৭১৮, পৃষ্ঠা:১/২৫৪)
.
উল্লেখ্য যে, আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে ইজমায়ে সাহাবা কর্তৃক ওমর, উসমান ও আলী (রাঃ)-এর যামানা থেকে ২০ রাক‘আত তারাবীহ সাব্যস্ত বলে যে কথা বাজারে চালু রয়েছে; তার কোন শারঈ ভিত্তি নেই। বরং ২০ রাকাআত সংক্রান্ত সকল বর্ণনাগুলো জয়ীফ অথবা জাল। অপরদিকে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কত রাক‘আত তারাবীহর নির্দেশ দিয়েছিলেন এ মর্মে দুই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি ৮ রাক‘আত এবং অপরটি ২০ রাক‘আত। এর মধ্যে ৮ রাক‘আতের হাদীসগুলো অকাট্য, শক্তিশালী এবং সহীহ। পক্ষান্তরে ২০ রাক‘আতের বর্ণনাগুলো একটিও সহীহ নয়। বরং সর্বসম্মতিক্রমে জয়ীফ। তাই নির্দিষ্ট করে ২০ রাক‘আতের বর্ণনার উপর আমল করা যাবে না। বরং সহীহ হাদীসের আলোকে বিতিরসহ তারাবীহ ১১ বা ১৩ রাক‘আতই পড়া উত্তম কেউ চাইলে বেশীও পড়তে পারে; যা পূর্বে উল্লেখ করেছি। ওমর (রাঃ), উবাই ইবনু কা‘ব এবং তামীম আদ-দারীকে বিতিরসহ ১১ রাকাআত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন বর্ননাটি নিন্মরুপ- আমীরুল মুমিনীন ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব, (রাযিয়াল্লাহু আনহু) উবাই ইবনু কা‘ব এবং তামীম আদ-দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে হুকুম দিয়েছিলেন যে, লোকেদেরকে (রামাদানে রাতের সময়) এগারো রাক‘আত আদায় করাবে। (মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালিক, হা/২৫১, ১ম খণ্ড, পৃ. ১১৫; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৪৩৯২, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৯৬; মিশকাত, হা/১৩০২, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯০, সনদ সহীহ)। উক্ত হাদীসের সকল রাবী অত্যন্ত শক্তিশালী, ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য এবং কোন রাবীর ব্যাপারে সমালোচনা নেই। এছাড়া এই সনদের একটি হাদীস সহীহ বুখারীর কিতাবুল হাজ্জ-এর মধ্যেও বিদ্যমান আছে। (সহীহ বুখারী; হা/১৮৫৮)
.
▪️তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ সালাতকে সুন্দর ও যথার্থ করতে যে বিষয়গুলো জেনে ভালো: _________________________________
(১). তারাবীহর সালাত আদায় করার সময় হল, রামাদানের (চাঁদ দেখার রাত সহ) প্রত্যেক রাত্রে এশার ফরয ও সুন্নত সালাতের পর বিত্র পড়ার আগে। অবশ্য শেষ রাত্রে ফজর উদয় হওয়ার আগে পর্যন্ত এর সময় পড়া যায়।
.
(২). তারাবীহর সালাত জামাআতে অথবা একাকী উভয় অবস্থায় পড়া যায়। তবে উত্তম হলো জামাআতে ইমামের পিছনে শেষ পর্যন্ত পড়া। সাহাবায়ে কিরাম দুই বা তিন রাত্রি রাসূল (ﷺ)-এর ইমামতিতে তারাবীহ পড়েছিলেন। (সহীহ বুখারী হা/২০১২; সহীহ মুসলিম হা/৭৬১)। অপর বর্ণনায় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় সাওয়াবের আশায় রাতে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আদায় করবে, আল্লাহ তাঁর পূর্ববতী (সগীরা) গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। (সহীহ বুখারী হা/৩৭; মুসলিম হা/৭৫৯)। তারাবীহ জামাআতে পড়া উত্তম এই মর্মে প্রায় প্রসিদ্ধ সকল সালাফগণ একমত বিস্তারিত জানতে দেখুন: (ইবনে তাইমিয়া মাজমুউল ফাতাওয়া: খন্ড:২২ পৃষ্ঠা:২৩৪-২৩৫, ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’ খন্ড:৩ পৃষ্ঠা:৫২৬ ইমাম উসাইমীন আল-শারহুল মুমতি’,খন্ড:৪ পৃষ্ঠা:৭৮, ইমাম ইবনে আব্দুল বার আত-তামহীদ: খন্ড :৮ পৃষ্ঠা:১০৮-১০৯)
.
(৩). ফিতনা-ফ্যাসাদের আশঙ্কা না থাকলে মাসজিদে তারাবীহর জামা‘আতে হাজির হওয়া মেয়েদের জন্য জায়েয আছে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ শরীয়াতসম্মত পর্দা করে সুগন্ধি ব্যবহার না করে মসজিদে যাবে। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “তোমরা আল্লাহর বান্দা নারীদেরকে মাসজিদে যেতে নিষেধ করো না।’’ (সহীহ বুখারী হা/৯০০; সহীহ মুসলিম হা/৪৪২)
.
(৪). জামআতে সালাত পড়া অবস্থায় ইমামের উচিত তাড়াহুড়া করে পড়া পরিহার করে বিশুদ্ধ ও ধীরস্থির তিলাওয়াত, রুকু থেকে উঠার পর এবং দু’ সিজদার মাঝে আরো একটু সময়ক্ষেপণ করা, সুন্নাত মোতাবিক ও ধীরস্থিরভাবে রুকু-সিজদাহ ইত্যাদি সুন্দর করে তারাবীহ আদায় করা অত্যাবশ্যক। আর মুক্তাদীর কর্তব্য হল, বিনয়-নম্রতা ও ধীরতা-স্থিরতা অবলম্বন করা, ইমামের ক্বিরাআত মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা, ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকে বাঁধা, সিজদার জায়গায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা ইত্যাদি।মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘সে সালাত আদায়কারীর সালাত যথেষ্ট নয়, যে রুকূ ও সিজদায় তার পিঠ সোজা করে না।’(আবূ দাঊদ হা/ ৮৫৫)তিনি আরো বলেন,‘‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হল সেই ব্যক্তি, যে তার নামায চুরি করে।’’ লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সালাত কিভাবে চুরি করবে?’ বললেন, ‘‘পূর্ণরূপে রুকূ ও সিজদাহ না করে।’ (ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ হা/ ২৯৬০ মুস্তাদ্রাক হাকেম,১/২২৯)
.
(৫). কোন কিশোর, পুরুষ বা মহিলার ইমামতিতে কোন বাড়িতে তারাবীহর সালাতের জন্য মহিলাদের পৃথক জামাআত করা দোষনীয় নয়। আম্মাজান আয়েশার ক্রীতদাস যাকওয়ান রামাদানে কুরআন দেখে তাঁর ইমামতি করতেন।(বুখারী তা’লীকান ১৩৯পৃঃ, ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৭২১৬) অবশ্য এ ক্ষেত্রে শর্ত হল, মহিলা একাকিনী হলে সে ইমাম যেন তার কোন মাহরাম হয় এবং নন মাহরাম না হয়। নতুবা মহিলা যেন একাধিক থাকে এবং তারা পর্দার সাথে থাকে। আর সর্বক্ষেত্রে যেন কোন প্রকার ফিতনার ভয় না থাকে। (ইবনে উসাইমিন আশ্শারহুল মুমতে’ খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ৩৫২) উম্মে অরাকাহ বিন নাওফাল (রাঃ)কে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাঁর পরিবারের মহিলাদের ইমামতি করতে আদেশ করেছিলেন। (আবূ দাঊদ হা/ ৫৯১-৫৯২ সুনানে দারাকুত্বনী,হা/১০৭১, ১৪৯১)
.
(৬). বাড়িতে জামাআতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে মহিলা ইমাম মহিলাদের কাতার ছেড়ে পুরুষের মত সামনে একাকিনী দাঁড়াবে না। বরং কাতারের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে ইমামতি করবে। উম্মে সালামাহ মহিলাদের ইমামতি করার সময় কাতারের মাঝখানেই দাঁড়াতেন। (দারাকুত্বনী, সুনান ১৪৯৩নং, বাইহাকী ৩/১৩১) অনুরূপ বর্ণিত আছে আয়েশা থেকেও। (দারাকুত্বনী,হা/১৪৯২ আব্দুর রায্যাক, মুসান্নাফ, মুহাল্লা ইবনে হাযম ৩/১৭১-১৭৩)
.
(৭). তারাবীহ বা তাহাজ্জুদ সালাতের ক্বিরাআত লম্বা হওয়া বাঞ্ছনীয়। মহানবী (ﷺ) বলেন, “শ্রেষ্ঠ সালাত হল লম্বা কিয়াম।” (সহীহ মুসলিম, মিশকাত ৪৬, ৮০০)। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এক রাতে নবী (ﷺ)-এর সাথে সালাত পড়লাম। তিনি কিয়াম করতেই থাকলেন, পরিশেষে আমি মন্দ ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, সে মন্দ ইচ্ছাটি কি? তিনি বললেন, আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, তাঁকে ছেড়ে দিয়ে বসে যাব!” (সহীহ বুখারী ১১৩৫; মুসলিম ১৮৫১) উমার (রাঃ)-এর যামানায় সালাফগণ তারাবীহর সালাতের ক্বিরাআত লম্বা করে পড়তেন। পূর্ণ সালাতে প্রায় ৩০০টি আয়াত পাঠ করতেন (মালেক, মুওয়াত্তা হা/২৪৯, ২৫১, ২৫২, মিশকাতুল মাসাবীহ ১/৪০৮)
.
(৮). প্রয়োজনে তাহাজ্জুদ বা তারাবীহর মত দীর্ঘ ক্বিরাআত বিশিষ্ট নফল সালাতে দেখে কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করা জায়েয। যেমন; আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর গোলাম যাক্ওয়ান কুরআনুল কারীম দেখে তিলাওয়াত করার মাধ্যমে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর ইমামতি করতেন। (তা‘লীক্ব,সহীহ বুখারী, হা/৬৯২, অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৫৪; মুছান্নাফু ইবনি আবী শাইবাহ, ২/৩৩৮ পৃ.)।
.
(৯). তারাবীহ তাহাজ্জুদের ক্বিরাআত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো সশব্দে কখনো নিঃশব্দে পড়েছেন। রাসূল (ﷺ) বলেন, সরবে ও নীরবে পাঠকারী প্রকাশ্যে ও গোপনে সাদাক্বাকারীর ন্যায়। সুতরাং ক্বিরাআত সশব্দে, নিঃশব্দে উভয় ভাবে পড়া যায়। (আবু দাঊদ হা/২২৬; তিরমিযী হা/৪৪৯; মিশকাত হা/১২০২-০৩)।
.
(১০). একাকী পড়ার ক্ষেত্রে যাদের বড় সূরা মুখস্থ নেই, তারা অনেকগুলো ছোট সূরা প্রতি রাকাতে পড়তে পারেন। তাহলে কিয়াম দীর্ঘ হবে। এ কথা প্রমাণিত যে, এক রাত্রে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) একটি মাত্র আয়াতকে বারবার পাঠ করে ফজর পর্যন্ত কিয়াম করেছেন। সে আয়াতটি হল, হে প্রতিপালক!) যদি তুমি ওদেরকে শাস্তি দাও, তাহলে তারা তো তোমারই বান্দা। আর যদি তুমি ওদেরকে মাফ করে দাও, তাহলে নিশ্চয় তুমি পরাক্রমশালী বিজ্ঞানময়। (কুরআনুল কারীম ৫/১১৮ মিশকাতুল মাসাবীহ হা/১২০৫)
.
(১১). তারাবীহ সালাতে কুরআন খতম করা কোন জরুরী কাজ নয়; এমনকি এতে বিশেষ কোন ফযীলত নেই। বরং জরুরী হল লোকদেরকে তাদের সালাতের ভিতরে ক্বিরাআতের মাধ্যমে বিনয়-নম্রতা সৃষ্টি করে উপকৃত করা। তারাবীহর সালাতে কুরআন খতম করার ব্যাপারে শায়খ ইবনে বায (রঃ) বলেন, এ ব্যাপারে প্রশস্ততা আছে। তবে আমার এমন কোন দলীল জানা নেই, যাকে কেন্দ্র করে বলা যায় যে, তারাবীহর সালাতে কুরআন খতম উত্তম সুতরাং যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, ইমাম তাঁর ক্বিরাআতে বিনয়-নম্রতা অবলম্বন করবেন, ধীর ও শান্তভাবে কুরআন তেলাওয়াত করবেন খতম করতে না পারলেও; বরং অর্ধেক বা দুই-তৃতীয়াংশ পড়তে না পারলেও মুক্তাদীরা যাতে উপকৃত হয় সেই চেষ্টাই করবেন।(সালাতুল-লাইলি অত-তারাবীহ,ইবনে বায পৃষ্ঠা:১১-১২)

(১২). জামআতে তারাবীহর সালাত চলছে। এমতাবস্থায় এশার ফরয সালাত আদায়ের নিয়ত করে তারাবীহর জামা‘আতে শরীক হওয়া যাবে। কারণ, নফল সালাত আদায়কারীর পিছনে ফরয সালাত আদায় করা যায়। (দলিল- মুসনাদু শাফেঈ, হা/২৩৯; বায়হাক্বী, হা/১৫৩৭; দারাকুৎনী, হা/১০৮৫; সহীহ মুসলিম, হা/৪৬৫; মিশকাত, হা/১১৫১, সনদ সহীহ)। তবে ইমাম দুই রাক‘আত পর সালাম ফিরালে মুত্তদী উঠে বাকী রাক‘আত পড়ে নিবে।

(১৩). রুকু-সিজদার তাসবিহ ৩/৫/৭ বার অথবা আরও বেশি করে পড়ে রুকু-সিজদাকে দীর্ঘ করুন। সিজদায় তাসবিহ পাঠের পর আল্লাহর কাছে দু‘আও করতে পারেন। এব্যপারে বহু হাদীস রয়েছে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর রুকূ ও সিজদাহ প্রায় তাঁর কিয়ামের মতই দীর্ঘ হত। আর এত লম্বা সময় ধরে তিনি সিজদায় থাকতেন যে, সেই সময়ে প্রায় ৫০টি আয়াত পাঠ করা যেতে পারে। (সহীহ বুখারী হা/১১২৩)
.
(১৪). তারাবীহর সালাতের প্রতি দুই বা চার রাকআত শেষে মুসল্লীগণ চাইলে তসবীহ, ইস্তিগফার বা দুআ পড়া পড়তে পারেন তবে এ সময় উচ্চস্বরে সে সব পড়া উচিৎ নয়। কারণ, তার কোন দলীল নেই। যেমন: তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ, একবার আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়ামিনকাস সালাম, তাবারক্তা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ ইত্যাদি পড়া যায় (সহীহ মুসলিম হা/১২২১; মিশকাত হা/৯৫৯, ৯৬০ ইবনে মাজাহ, ৯২৮ (বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ খন্ড:২৬ পৃষ্ঠা:৯৮) পক্ষান্তরে অনেকে উঁচু আওয়াযে ‘সুবহানা যিল জাবারূতে ওয়াল মালাকূতে…’ দু‘আটি পাঠ করে থাকেন অথচ এটা স্পষ্ট বিদআত। অনুরূপভাবে অন্য কোনো দু‘আ এক সাথে উঁচু আওয়াযে পাঠ করাও বিদআত। (হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২২১; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৯৭২-এর আলোচনা দ্র.)।
.
(১৫). যদি কোন ব্যক্তি ইমামের সাথে বিতর পড়ার পর শেষ রাতে অতিরিক্ত সালাত পড়ে সবশেষে বিতর পড়ার জন্য ইমামের সালাম ফিরার পর সে সালাম না ফিরে উঠে আর এক রাকআত পড়ে জোড় বানিয়ে নেয়, তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। আর এ ব্যক্তির জন্য বলা যাবে যে, সে ইমামের সাথেই সালাত শেষ করেছে। আর যে এক রাকআত সালাত সে বেশী পড়েছে, তা শরয়ী সবার্থেই; যাতে তার বিতর রাতের সালাতের শেষ সালাত হয়। অতএব তা দোষাবহ নয়। অবশ্য উত্তম হল, ইমামের সঙ্গেই বিতর পড়া, তাঁর সঙ্গেই সালাত শেষ করা এবং তারপর আর তাহাজ্জুদ না পড়া।কারন রাসূল ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাত পড়ে এবং তার সালাত শেষ করা পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকে (ইক্তিদা করে), সেই ব্যক্তির জন্য সারা রাত্রি কিয়াম করার সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়।’(আবূ দাঊদ হা/ ১২২৭,সহীহ তিরমিযী হা/৬৪৬)
.
(১৬). তারাবীহর সালাতের জন্য সুমধুর কণ্ঠবিশিষ্ট হাফেয-ক্বারী ইমাম অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া দোষাবহ নয়। তবে (ক্বারী সাহেবের তরফ থেকে) পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট করা উচিৎ নয়। যেহেতু এক জামাআত সালাফ এ কাজকে অপছন্দ করেছেন। অবশ্য মসজিদের জামাআত যদি অনির্দিষ্ট- ভাবে তাঁকে অনেক কিছু দিয়ে পুরস্কৃত বা সাহায্য করেন, তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই।
.
(১৭). যে ব্যক্তি কোন ওযরবশতঃ রাতের সালাত (তারাবীহ, তাহাজ্জুদ বা কিয়াম) পড়তে সুযোগ না পায়, সে যদি দিনে তা কাযা করে নেয়, তাহলে তা তার জন্য বৈধ এবং তাতে সওয়াব ও ফযীলতও আছে। তবে বিতর সহ সে কাযা তাকে জোড় বানিয়ে পড়তে হবে। বলা বাহুল্য, তার অভ্যাস মত ১১ রাকআত কিয়াম ছুটে গেলে, দিনের বেলায় ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে ১২ রাকআত নামায কাযা পড়বে। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর তাহাজ্জুদ ঘুম বা ব্যথা-বেদনা ইত্যাদি কারণে ছুটে গেলে দিনে ১২ রাকআত কাযা পড়তেন। (সহীহ মুসলিম হা/ ৭৪৬) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।