কুরআনে অনেক জায়গায় মহান আল্লাহ তাআলা নিজের ক্ষেত্রে আমরা (বহুবচন) শব্দ ব্যবহার করার কারণ

পবিত্র কুরআনে একাধিক স্থানে মহান আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে বোঝাতে আমরা (বহুবচন) শব্দ ব্যবহার করেছেন এই বিষয়টি শুধু অমুসলিম নয়, অনেক মুসলিমের কাছেও স্পষ্ট নয়। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। প্রথমত সবার জানা উচিত যে, ইসলামী শরীআতের কোন বিধানের কারণ তালাশ করা অন্যায়। বরং নির্বিবাদে মেনে নেওয়ার মধ্যেই বান্দার কল্যাণ নিহিত রয়েছে, মুমিন তো তারাই যারা বলে আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। (সূরা বাকারা ২/২৮৫)। তাছাড়া প্রত্যেক মুমিনকে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাআলার প্রত্যেকটি কাজে বিরাট হিকমত এবং প্রশংসনীয় উদ্দেশ্য রয়েছে। আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তা স্পষ্ট হওয়া জরূরী নয়। এটি এক প্রকার পরীক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম।’ (সূরা মূলক ৬৭/২)।
.
শব্দকে তার নিজস্ব অর্থে ব্যবহার না করে ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করা হলে বাড়তি মর্ম পাওয়া যায়। এটি ভাষার একটি স্বীকৃত বিষয়। শের বা বাঘ শব্দটি গঠিত হয়েছে বনের একটি জন্তুর নাম হিসেবে। বন্য সেই জন্তুকে বুঝানো হলো এর নিজস্ব অর্থ। কিন্তু যখন শব্দটি এই অর্থে ব্যবহার না হয়ে মানুষকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয় ‘শেরে বাংলা’ বা বাংলার বাঘ বলে, তখন বাড়তি যে মর্ম তাতে যোগ হয় তা হল মানুষটির ভেতরে রয়েছে শক্তি ও সাহসিকতা। আরবী ভাষায় নাহনু (نحن) মানে আমরা। এটি দুইজন বা একাধিকজনের জন্য গঠিত একটি সর্বনাম। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে একে নিজস্ব অর্থ থেকে সরিয়ে এক বচনের জন্য যখন ব্যবহার করা হয় তখন বাড়তি যে মর্ম তাতে স্থান করে নেয় তাহল, ব্যক্তির মর্যাদাবান ও সম্মানিত হওয়া। বিখ্যাত আরবী অভিধান ‘আল-মুজামুল ওয়াসীত’ এর লেখক বলেন, ‘সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বহু বচনের শব্দকে এক জনের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সম্মানের প্রশ্নে মহান আল্লাহ তাআলা হলেন সবার চেয়ে অগ্রগামী। তিনি একক, লা শরীকা লাহু তথা অংশীদারবিহীন। পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াতে তাঁর জন্য বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হওয়ার একটি প্রধান কারণ এটি সম্মান, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি প্রদর্শন।
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে আমরা শব্দের ব্যাখ্যয় বলেছেন, “আরবি সাহিত্যের একটি বৈশিষ্ট্য হল, কোন ব্যক্তি নিজের সম্মান বা গৌরব বুঝাতে নিজেকে নাহনু (আমরা) সর্বনাম দিয়ে প্রকাশ করতে পারেন। আবার তিনি একত্ব বুঝাতে আনা (আমি) অথবা তৃতীয় পুরুষ হুয়া (সে) সর্বনামগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। আল্লাহ আরবদের যখন তাদের ভাষাতেই সম্বোধন করছেন, তিনি কুরআনে এই তিন ধরনের স্টাইলই ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেকে কিংবা নিজের নাম এবং গুণসমূহ প্রকাশ করার জন্য কখনো একবচন আবার কখনো বহুবচন ব্যবহার করেছেন। যেমন, “নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে এক সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।” (সূরা ফাতহ্; ৪৮:১) বা এধরনের আরো অনেক আয়াত। কিন্তু আল্লাহ কখনোই দ্বৈত বা দ্বিবচন ব্যবহার করেননি। কারণ বহুবচন যেখানে আল্লাহর মর্যাদা, তাঁর নাম এবং গুণসমূহের মাহাত্ম্যকে প্রকাশ করে, দ্বিবচনাত্মক শব্দ সেখানে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাকেই (দুই) নির্দেশ করে, যা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। (আল আকিদাহ আল তাদমুরিয়্যা, পৃষ্ঠা ৭৫)

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, “ইন্না (নিশ্চয়ই আমরা) বা নাহনু (আমরা) এবং বহুবচনাত্মক অন্যান্য শব্দগুলোর বিভিন্ন রূপ যেমন একটি দল বা সমষ্টির পক্ষে একজনের বক্তব্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তেমনি কোন ব্যক্তির সম্মান এবং মর্যাদা প্রকাশেও ব্যবহৃত হয়। যেমন কোন সম্রাট যখন কোন আদেশ জারি করেন, তখন সেখানে বলা হয়, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে’ এক্ষেত্রে যদিও একজন মানুষই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিন্তু তার সম্মানার্থে বহুবচন ব্যবহার করা হচ্ছে। যিনি সবার চেয়ে বেশি সম্মানিত হবার যোগ্য, তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালা। তাই তিনি যখন কুরআনে ইন্না বা নাহনু ব্যবহার করেন তা তাঁর সম্মান আর মর্যাদাকেই প্রকাশ করে, সংখ্যাধিক্যকে নয়। যদি এধরনের কোন আয়াত কারো মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে তাহলে তার উচিত হবে অন্যান্য স্পষ্ট এবং পরিষ্কার আয়াতগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া। যেমন: একজন খৃষ্টান যদি উদাহরণস্বরূপ কুরআনের এই আয়াত সামনে নিয়ে আসে যে, “আমরাই উপদেশ (সম্বলিত কুরআন) নাজিল করেছি এবং আমরাই তার সংরক্ষণকারী। (সূরা হিজর; ১৫:৯)। এখানে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। তাহলে আমরা “বলো, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়।” (সূরা ইখলাস; ১১২:১) এবং এধরনের আরো যেসব সুস্পষ্ট আয়াত রয়েছে সেগুলো দ্বারা এসব যুক্তি খন্ডন করবো, যে আয়াতগুলোর অন্য কোন ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। এর ফলে যে আসলেই সত্যের সন্ধান করছে তার মনের সব সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। প্রতিবার আল্লাহ যখন বহুবচন ব্যবহার করেন, তা তাঁর মহান মর্যাদা আর তাঁর অসংখ্য নাম এবং গুণকেই বুঝায়।” (আল আকিদাহ আল তাদমুরিয়্যা, পৃষ্ঠা ১০৯)
.
শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, পবিত্র কুরআন আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। আরবী ভাষায় বহুবচন শব্দ একবচন শব্দের উপর প্রয়োগ হয়। যেমনি ভাবে একবচন শব্দ একবচনের উপর প্রয়োগ হয়। তবে বহুবচন শব্দ সম্মানের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। আর আল্লাহর চেয়ে সম্মানের অধিকারী কেউ নেই। সুতরাং একক এর অভিব্যক্তিটি প্রমাণ করে যে, এটি অংশীদার ছাড়া এক এবং এর গৌরব প্রমাণ করার জন্য বহুবচন শব্দের প্রবর্তন বা ব্যবহার করা হয়েছে। (শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ, ফাতাওয়া ইসলাম সাওয়াল ওয়া জওয়াব, পৃ. ১৮৪২; প্রশ্ন নং-২০৯০)।
.
এখানে অনেকের মনে যে প্রশ্নটি আসতে পারে তাহল, আল্লাহ তাআলা তো সবসময়ই ও সর্বক্ষেত্রেই সম্মানিত ও ক্ষমতার অধিকারী। কোন ক্ষুদ্রতম সময়ের জন্যও তাঁর মর্যাদা ও ক্ষমতা বিলুপ্ত হয় না, হবার মত নয়। তাহলে কেন কুরআনে সর্বদাই তাঁর জন্য আমরা বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হতে দেখি না? বরং কোথাও বহুবচন আর কোথাও একবচনের শব্দ ব্যবহৃত হতে দেখি। যেখানে একবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয় সেখানে কি তাঁর সম্মান-মর্যাদা ও প্রতিপত্তি থাকে না? কোথায় একবচনের শব্দ আর কোথায় বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয় আল্লাহর জন্য? এটি বুঝার জন্য সহজ একটি মূলনীতি মাথায় রাখা যেতে পারে তাহল, মহান আল্লাহ তাআলা নিজের পরিচয় সংক্রান্ত আলোচনাতে সবসময় এক বচনের শব্দ ব্যবহার করেন। কেননা মূলত পরিচয়ের প্রশ্নে তিনি একক সত্তা। সেখানে কোন শরীক নেই। তাঁর কোন ছেলে-মেয়ে বা মা-বাবা নেই। তিনি যেমন কারো থেকে জন্ম নেননি, তেমনি কাউকে জন্মও দেননি। তাই এই ক্ষেত্রে একবচন উল্লেখ করাই যথার্থতার দাবি। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে, إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا“নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।” পক্ষান্তরে যেখানে তিনি স্বীয় কর্মের কথা উল্লেখ করেন সেখানে সাধারণত বহুবচনের শব্দ উল্লেখ করেন। যেন তাঁর মর্যাদা, ক্ষমতা ও জালালত প্রকাশ পায়। যেমন-وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعًا شِدَادًا“এবং আমরা (আমি) তোমাদের ওপর মজবুত সাতটি আসমান নির্মাণ করেছি।” (সূরা নাবা: ১২)। আবার মর্যাদা, সম্মান, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, বড়ত্ব, মহানুভবতা, দয়া, দান ইত্যাদি ক্ষেত্রে একবচন ও বহুবচন দুইটিই ব্যবহার করা হয়। কারণ এই কর্মগুলো দুই ধরনের:

▪️১. যা সম্পাদনার ক্ষেত্রে আল্লাহই একমাত্র সত্তা। তিনি এটি নিজেই সম্পাদন করেন। এর সাথে অন্য কেউ সম্পৃক্ত হয় না। যেমন: ক্ষমা করা, দুআ কবুল করা, অদৃশ্যের সংবাদ জানা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ জায়গায় একবচন ব্যবহার করা হয়। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِمَنْ تَابَ“এবং নিশ্চয়ই আমি যারা তওবা করে তাদেরকে বারবার ক্ষমা করি।” (সূরা ত্বহা: ৮২)। وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ “এবং তোমাদের রব বলেছেন, আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।” (গফির: ৬০)। তবে এই জাতীয় কর্মের ক্ষেত্রেও মাহাত্ম্য-বড়ত্ত্ব ও মহানুভবতা বুঝানোর জন্য বহুবচনের শব্দ আসতে পারে; কিন্তু সেটা তুলনামূলক কম। যেমন- فَاسْتَجَبْنا لَهُ وَوَهَبْنالَهُ يَحْيى وَأَصْلَحْنا لَهُ زَوْجَهُ “অতপর আমরা (আমি) তাঁর দুআ কবুল করলাম, তাকে দান করলাম ইয়াহয়াকে এবং তাঁর স্ত্রীকে করে দিলাম সুস্থ।” (সূরা আম্বিয়াঞ: ৯০)

▪️২. যা মূলত আল্লাহ তাআলা সম্পাদন করলেও তিনি সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব অন্য কাউকে দান করেন। তাঁর নির্দেশনা অনুপাতে তারা সেটি করে থাকে। কিংবা কোন বস্তুর মাধ্যমে তিনি কাজের বাস্তবায়ন ঘটান। এসব কাজের বাস্তব রূপায়নে অন্যদের অংশগ্রহণ থাকলেও মূল ভূমিকা আল্লাহরই এবং তাঁর নির্দেশনামা মেনেই অন্যরা সেগুলো পালন করে। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ জায়গায় বহুবচন ব্যবহার করা হয়। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ “নিশ্চয়ই আমরা (আমি) কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরাই (আমিই) তাকে হিফাজত করব।” (সূরা হিজর: ০৯)। তবে এই জাতীয় কর্ম যেহেতু মূলত আল্লাহই ঘটান সেটা বুঝানোর জন্য একবচনের শব্দেও আসতে পারে; কিন্তু সেটা তুলনামূলক কম। যেমন- ذَرْنِي وَمَنْ خَلَقْتُ وَحِيدًا “আমাকে ও আমি এককভাবে যা সৃষ্টি করেছি তাকে ছেড়ে দাও।” (সূরা মুদ্দাসসির: ১১)। আল্লাহর পরিচয়, ইবাদাতের নির্দেশনা, তাওহীদ সাব্যস্ত করা, শিরককে নাকচ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বদা একবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়। কারণ এই বিষয়গুলোর এটিই যথার্থ দাবি। যেমন- لاَ تُشْرِكْ بِي شَيْئاً “তোমরা আমার সাথে কাউকে শরীক করো না।” (সূরা হজ: ২৬ )। ومَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإِنْسَ إِلاَ لِيَعْبُدُونِ “এবং আমি মানুষ ও জিনকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদাত করার জন্য।” (যারিয়াত: ৫৬)
.
তবে একটি বিষয় স্মরণ রাখতে হবে। তাহল, বিভিন্ন উপযোগিতার বিবেচনায় যদিও নানান আয়াতে আল্লাহর জন্য বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এর আগে-পরে সাধারণত এমন কোন কিছু থাকে, যা আল্লাহর একক হওয়ার প্রমাণ বহন করে। যেমন সূরা কাউসারে আল্লাহ তাআলা বলছেন- إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ “নিশ্চয়ই আমরা (আমি)আপনাকে কাউসার দান করেছি। সুতরাং আপনি আপনার রবের জন্য সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।” (সূরা কাউসার: ১-২) এই আয়াতে প্রথমে বহুবচনে দান করার কথা বলা হলেও পরক্ষণেই এক বচনে ‘রব’ শব্দ আনা হয়েছে। যার দ্বারা আগের আয়াতে আলোচিত দাতাকেই উদ্দেশ্য নেওয়া হচ্ছে। ফলে আর কোন সংশয় থাকে না যে, উক্ত দাতা একক সত্তা, একাধিকজন নন। এমনই আরেকটি উদাহরণ সূরা ফাতহের এই আয়াত থেকেও দেখা যেতে পারে, মহান আল্লাহ বলে,নিশ্চয়ই আমরা (আমি) আপনাকে স্পষ্ট বিজয় দান করেছি, যেন আল্লাহ আপনার আগে-পরের সকল পাপ মাফ করে দেন এবং আপনার ওপর তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণ করেন ও আপনাকে সঠিক পথ দেখান। (সূরা ফাতহ: ১-২)। [উপরোক্ত দুটি পয়েন্ট সংগ্রহীত]
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! আমরা এই সম্মানসূচক বহুবচন শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনেই নয় বরং আরবী সাহিত্যে এবং অন্যান্য ভাষায়ও প্রচুর দেখা যায়। যেমন: একজনকে বলা হয় ‘আলাইকা’ কিন্তু আমরা সালামের সময় বলি ‘আলাইকুম’। যার অর্থ ‘আপনাদের ওপর’। তাই পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ যেভাবে বলেছেন সেভাবেই করা কর্তব্য। যেখানে আল্লাহ নিজেকে ‘আমি’ বলেছেন, সেখানে আমি। যেখানে ‘আমরা’ বলেছেন,সেখানে ‘আমরা’ বলতে হবে। কিন্তু সেটা না করে নিজেদের মনগড়া ভাবে কুরআনের কোন শব্দ বা আয়াতের অর্থ করা যাবে না। ইমাম রাযীন বলেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজ মতামত দ্বারা কুরআনের ব্যাপারে কিছু বলে ভুল করল, সে কুফরী করল। একদা আবু বকর (রাঃ)-কে একটি অক্ষরের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি কিতাবুল্লাহর একটি অক্ষরের ব্যাপারে এরূপ কথা বলি যেরূপ আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল না, তাহলে কোন আসমান আমাকে ছায়া দিবে, কোন যমীন আমাকে বিশ্রামের স্থান দিবে? আমি কোথায় যাবো আর কী করবো? (বিস্তারিত দ্র. তাফসীর কুরতুবী, মুক্বাদ্দামা)। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ স্বীয় সম্মান-মর্যাদা বুঝানোর জন্য এরূপ বহু বচনের শব্দ ব্যবহার করেছেন। সেকারণ ‘পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবীর কাহিনী’ প্রবন্ধে সংশ্লিষ্ট কুরআনের আয়াতে যেখানে বহুবচনের শব্দ এসেছে সেখানে বহুবচনেরই অর্থ করা হয়েছে। মূলতঃ আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব বুঝানোর জন্যই বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। যেটা ভাষার অলংকারের মধ্যেও পড়ে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।