একজন মুমিনের মৃত্যুর পূর্ব সময় থেকে শুরু করে কবরস্থ করার পর পর্যন্ত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে করনীয় ও বর্জনীয় নবম পর্ব

প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির কাফনের হুকুম কী? কাফন সংক্রান্ত মাসায়েল এবং কাফন পরানোর সঠিক পদ্ধতি কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
মাইয়্যেতকে কাফন পরানো ওয়াজিব। আর তা হবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে। যাবতীয় ঋণ,ওসিয়ত এবং মীরাছ বন্টনের আগে কাফনের খরচ তার সম্পত্তি থেকে গ্রহণ করতে হবে।মৃতের সম্পত্তি থেকে যদি কাফনের খরচ না হয় তবে তার পিতা বা ছেলে বা দাদার উপর দায়িত্ব বর্তাবে। যদি এমন কাউকে না পাওয়া যায় তবে বায়তুল মাল থেকে প্রদান করবে। তাও যদি না পাওয়া যায় তবে যে কোন মুসলমান প্রদান করতে পারে।”(সহীহ বুখারী: ১২৬৫-১২৬৮ ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭০)
.
মুমিনের কাফন-দাফন সম্পন্ন করা অত্যন্ত নেকীর কাজ। মুসলমানগণ নেকীর আশায় উক্ত কাজে শরীক হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়্যেতকে গোসল করাল। অতঃপর তার গোপনীয়তাসমূহ গোপন রাখল, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়্যেতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তা ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়্যেতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরাবেন।’(বায়হাক্বী ৩/৩৯৫; হাকেম১/৩৫৪, ৩৬২ ত্বাবারাণী,সহীহ আত-তারগীব হা/৩৪৯২, সনদ ছহীহ)
◾কাফন সংক্রান্ত কয়েকটি মাসায়েল:
_______________________________
▪️(১). কাফনের কাপড় ক্রয় করবে মৃত ব্যক্তির নিজস্ব সম্পদ থেকে। (বুখারী: ৪০৪৭) তবে তার সে অর্থ না থাকলে অভিভাবকেরা তাদের টাকা দিয়ে ক্রয় করে দিতে পারবে।
▪️(২). উত্তমভাবে কাফন পরানো। (মুসলিম: ৯৪৩) আর উত্তম কাফনের অর্থ হলো কাপড়টি পরিষ্কার হওয়া, পুরু বা মোটা হওয়া, সারা শরীর ঢাকা যাবে এমন হওয়া এবং মধ্যম মানের বা মাঝারি মূল্যের হওয়া।
▪️(৩). কোন কারণে কাফনের ঘাটতি থাকলে মাথা ও শরীর ঢেকে পায়ের অংশে যতটুকু বাকি থাকবে সেটুকু শুকনা কোন ঘাস দিয়ে ঢেকে দেবে।(সহীহ বুখারী: ৪০৪৭, ৪০৮২)
▪️(৪). নতুন কাপড় না থাকলে পুরাতন কাপড় বা ব্যবহৃত জামাকাপড় দিয়েও কাফন পরানো জায়েয। তাছাড়া পুরুষের কাপড় দিয়ে নারীদের কাফন চলে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর লুঙ্গি দিয়ে তার কন্যা জয়নাব (রা.)-কে কাফন পরানো হয়েছিল।(বুখারী মুসলিম তিরমিজি,৯৯০)
▪️(৫). জীবদ্দশায় নিজেই নিজের কাফনের কাপড় প্রস্তুত করে রাখতে পারে। এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে একটি জামা চেয়ে নিয়েছিলেন তার কাফনের জন্য এবং এটা দিয়েই তার কাফন পরানো হয়েছিল।(বুখারী: ১২৭৭)।
▪️(৬). কাফনের কাপড়টি পূর্ণ লম্বা হওয়া দরকার। যাতে মাইয়্যেতের সমস্ত শরীর ঢাকা যায়। (আলবানীর আহকামল জানায়িয, মাসআলা নং ৩৫)
▪️(৭).কাফনের কাপড়ে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য থাকা মুস্তাহাব:
▪️(ক) কাপড়টি সাদা হওয়া। (আবু দাউদ: ৩৫২৯, বায়হাকী- ৩/২৪৫)
▪️(খ) হিবারাহ (অর্থাৎ সূতী) কাপড় হওয়া।(আবু দাউদ: ৩১৫০)।
▪️(গ) কাপড় তিন টুকরা হওয়া (বুখারী ও মুসলিম)। রাসূল (সা.)-কে ৩ কাপড়েই কাফন পরানো হয়েছিল। এ জন্য এর চেয়ে বেশি কাপড় ব্যবহার করাকে অনেক ফকীহ নাজায়েয বলেছেন। (আল বানীর আহকামুল জানয়িয, মাসআলা নং ৪২)। তবে কাপড়ের অভাব থাকলে এক বা দুই টুকরা কাপড় দিয়েও কাফন জায়েয আছে। সাহাবী মুসআব ইবনু উমায়ের এবং হামযা (রা.)-এর ক্ষেত্রে এমনটি করা হয়েছিল।
▪️(ঘ) কাপড়ে তিনবার সুগন্ধি লাগানো (ইবনু আবি শাইবা- ৪/৯২) আগরবাতি দিয়ে বা সুগন্ধযুক্ত কাঠ পুড়িয়ে বা গোলাপ পানি দিয়েও সুগন্ধময় করা যায়।
▪️(৮). হজ্জ বা উমরা পালনরত ইহরাম অবস্থায় নিহত ব্যক্তিকে তার পরনের ২ টুকরা ইহরামের কাপড় দিয়েই কাফন পরাবে। (আবু দাউদ: ৩১৩৮) মুহরিম ব্যক্তির দেহে বা কাপড়ে কোন সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করা যায় না।
▪️(৯). আর জিহাদের ময়দানে নিহত শহীদের কাফন হলো তার পরিধেয় বস্ত্র। শহীদের পরনের কাপড় খোলা জায়েয নেই। নিজের রক্তমাখা পোশাকই তার কাফন, এ পোশাকেই তাকে কাফন করাতে হবে। এভাবেই উহুদ যুদ্ধের শহীদদের দাফন করা হয়েছিল। (আহমাদ: ২৩১৪৪)
▪️(১০). কাপড়ের মাপ: মাইয়্যেতের দেহের প্রস্থ ৩০ সেঃ মিঃ হলে কাফনের প্রস্থ ৯০ সেঃ মিঃ হতে হবে। এইভাবে ৪০ সেঃ মিঃ’র ক্ষেত্রে ১২০ সেঃ মিঃ,৫০ সেঃ মিঃ’র ক্ষেত্রে ১৫০ সেঃ মিঃ, ৬০ সেঃ মিঃ’র ক্ষেত্রে ১৮০ সেঃ মিঃ অর্থাৎ ৩ গুণ হবে। মাইয়্যেতের দেহের দৈর্ঘ্য ১৮০ সেঃ মিঃ হলে লেফাফার দৈর্ঘ্য এর চেয়ে ৬০ সেঃ মিঃ অতিরিক্ত হতে হবে। তদনুরূপ ১৫০ সেঃ মিঃ’র ক্ষেত্রে ৫০ সেঃ মিঃ, ১২০ সেঃ মিঃ’র ক্ষেত্রে ৪০ সেঃ মিঃ এবং ৯০ সেঃ মিঃ’র ক্ষেত্রে ৩০ সেঃ মিঃ কাপড় বেশি লম্বা লাগবে। (জানাযা দর্পন, ফাইযী, পৃ. ৫৭)।
◾কাফন পরানোর পদ্ধতি বা কাফন কিভাবে পরাতে হয়?
________________________________________
দুই পদ্ধতির যেকোন একভাবে মৃতের কাফন পরানো যায়।
◾পদ্ধতি নং-১:মাইয়্যেতকে সমান মাপের তিনটি কাপড়ে কাফন পরানো হবে। কাফনদাতা পরস্পর তিনটি কাপড়কে বিছিয়ে দেবে। এর উপর প্রয়োজনে (মলদ্বার হতে নাপাকী বের হতে থাকলে) ১০০০/২৫ সেঃ মিঃ কাপড়কে দুই মাথায় ফেড়ে নিয়ে লেঙ্গট বানিয়ে মাইয়্যেতের মলদ্বারের পিছনে রাখবে। তার উপর মিক, কর্পূর বা অন্য কোন সুগন্ধি মিশ্রিত তুলো রাখবে। ইহরামরত থাকলে সুগন্ধি লাগাবে না। অতঃপর লাশকে পর্দার সাথে এনে তার উপর ধীরভাবে রাখবে। এখানেও কালিমার যিকর নাই। মাইয়্যেতের সিজদার স্থানসমূহে, বগলে, দুইরানের মধ্যবর্তী ইত্যাদি স্থানে আতর লাগিয়ে দেবে। মাইয়্যেতের চোখে সুরমা লাগানোর ব্যাপারে কোন দলীল নাই। সুতরাং তা ব্যবহার না করাই উত্তম। মাইয়্যেতের হাত দুটিকে পাঁজরের পার্শ্বে লম্বালম্বি করে ফেলে রাখবে। (অতঃপর লেঙ্গটটিকে সুবিধামতো উভয় রানের সাথে বেঁধে দেবে।) এরপর ডান দিকের কাপড়ের অংশ ধরে ডান দিকে এবং বাম দিকের অংশ নিয়ে লাশের বাম দিক জড়িয়ে দেবে।(বুখারী হা/১২৫৪; মিশকাত হা/১৬৩৪) এই অবসরে সতর্কতার সাথে লাশের লজ্জাস্থানের উপরে পর্দাটিকে টেনে বার করে নেবে ।
এইভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাপড়টি প্রথমে ডান দিকে তারপর বাম দিকে জড়িয়ে দেবে। অতঃপর মাথার দিকে প্রথম গিটু দেবে। তারপর পায়ের দিকের গিটু দেবে। গিটুগুলো এবং দেহের মাঝে প্রয়োজন মতো ১ থেকে ৫টা গিটু দেবে। গিটুগুলো হবে লাশের বাম দিকে। এতে কবরে লাশ কেবলা মুখী রেখে বাধনগুলি খুলতে সুবিধা হবে। হজ্জ বা উমরা পালনরত মুহরিমের চেহারা ও মাথা ঢাকা যাবে না। কারণ, প্রিয় নবী (সা.) মুহরিমের ব্যাপারে বলেছিলেন, ওর দেহে খোশবু লাগাবে না, ওর মাথা ও চেহারা ঢাকবে না। কারণ, কিয়ামতের দিন তালবিয়্যাহ পড়া অবস্থায় (মুহরিম হয়েই) সেই লোক পুনরুত্থিত হবে। তবে মুহরিম মহিলা হলে কাফনে মাথা অবশ্যই জড়াতে হবে। কিন্তু মুখ না জড়িয়ে সাধারণভাবে উপরে পর্দা করতে হবে।
.
◾পদ্ধতি নং- ২:তিন কাপড়ের একটি হবে লুঙ্গি, একটি কামীস (জামা) এবং অপরটি লেফাফা। প্রথমে লেফাফা, এর উপর কামীস, তার উপর লুঙ্গি বিছাতে হবে। ডবল ভঁজের কাপড় নিয়ে মাঝখানে গোল করে কেটে মাথা প্রবেশ করানোর মতো জায়গা করে কামীসের নিম্নাংশ লুঙ্গির নিচে বিছাবে এবং ঊর্ধ্বাংশ মাথার দিকে গুটিয়ে রেখে নেবে। কামীস ও লুঙ্গি পায়ের গাঁটের উপর পর্যন্ত লম্বা হবে।এর উপর ধীরভাবে লাশ শুইয়ে প্রথম পদ্ধতির মতো সবকিছু করবে। প্রথমে লুঙ্গি জড়াবে তারপর কামীসের ফাঁক দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে কামীসের উপরের দিক লাশের বুক ও পায়ের উপর বিছিয়ে দেবে। অতঃপর লেফাফা জড়িয়ে এভাবে বাঁধ দেবে। এরূপ কাফনের কথা আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে প্রমাণিত।(মুআত্তা মালিক,শারহে যুরকানী ৫২৬)।
তবে ১ম পদ্ধতির কাফন দেওয়াই উত্তম। কারণ, মহানবী (সা.)-কে এভাবেই কাফন পরানো হয়েছিল।
◾মহিলাদের কয় কাপড়ে কাফন দেবে এবং কিভাবে কাফন পরাবে?
_______________________________________
মহিলা ও পুরুষের কাফনের কাপড়ের সংখ্যাগত পার্থক্যের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। অতএব, মহিলাদের কাফনও পুরুষদের মতোই। তবে মহিলাদের পাঁচ কাপড়ের কাফনের ব্যাপারে যে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়, সেটি যয়ীফ।(আবূদাঊদ হা/৩১৫৭,দেখুন ইরওয়াউল গালীল ৭২৩নং, আল মুমতে’ ৫/৩৯৩ ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৮৪৪)
.
তদনুরূপ সাত কাপড়ের হাদীসও যয়ীফ অর্থাৎ দুর্বল। (আহকামুল জানাইয টীকা ৬৪ পৃঃ)।তবে একাধিক বর্ণনা থাকার কারনে যারা পাঁচ কাপড়ের হাদীসটিকে হাসান মনে করেন তাঁরা পাঁচ কাপড় নিমরূপে দেন: কাফনদাতা দুটি লেফাফা সমান মাপে কাটবে। ১টি কামীস এমন মাপে কাটবে; যাতে লাশের কাঁধ থেকে পায়ের গাঁট পর্যন্ত ঢাকা হয়। ডাবল ভাঁজের কাপড় নিয়ে ভঁজের মাঝখানে গোল করে কেটে মাথা প্রবেশ করার মতো জায়গা করে নেবে। ইজার বা লুঙ্গী এমন মাপে কাটবে; যেন লাশের বগল থেকে নিয়ে পা পর্যন্ত আবৃত হয়। খিমার বা ওড়না ৯০ বর্গ সেঃ মিঃ হওয়া বাঞ্ছনীয়। লেফাফা দুটিকে উপরি বিছাবে। কামীসের পিঠের দিকটা বিছিয়ে বুকের দিকটা মাথার দিকে গুটিয়ে রাখবে। এরপর লুঙ্গির কাপড় বিছাবে। ওড়না রাখবে পাশে। লেঙ্গটের প্রয়োজন হলে লুঙ্গির উপর দেবে।এরপর লাশকে পর্দার সাথে এনে কাফনের উপর রেখে তার হাত দুটিকে দুই পাঁজরের পাশে রাখবে। চুলের বেণীগুলো পিঠের নিচে ফেলে রাখবে। উল্লেখ্য যে, বুকের উপর চুল রাখা বিদআত।(আহকামুল জানাইয, আলবানী, বিদআত নং ৩৬)। অতঃপর (প্রয়োজন হলে লেঙ্গট বাঁধবে, তা না হলে) লাশের ডান দিকের লুঙ্গির আঁচল নিয়ে তার ডান দিক এবং বাম দিকের আঁচল নিয়ে বাম দিক জড়িয়ে দেবে। এই সঙ্গে লাশের লজ্জাস্থানে রাখা কাপড়টি সরিয়ে নেবে। অতঃপর গুটিয়ে রাখা কামীসের উপরের অংশটি নিয়ে কাটা অংশের ফাঁকে মাথা প্রবেশ করিয়ে নিয়ে দেহের উপর বিছিয়ে দেবে এবং পাশের বাকি অঙ্গগুলি ডানে ও বামে পাঁজরের নিচে মুড়ে দেবে। তারপর ওড়না নিয়ে মাথা, চুল, মুখমণ্ডল ও বক্ষস্থল ঢেকে দেবে। এরপর লেফাফাদু’টিকে পরস্পর ডান দিক থেকে ও পরে বাম দিক থেকে দেহে জড়িয়ে দেবে। মাথা ও পায়ে বাঁধ দিয়ে মাঝ ১ থেকে ৫টি বাঁধ দেবে।বলাই বাহুল্য যে, যয়ীফ বা দুর্বল হাদীসের উপর আমল শুদ্ধ নয়।মুহাদ্দিছ যায়েদ বিন আসলাম বলেন, ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﺨَﺒْﺮٍ ﺻَﺢَّ ﺃَﻧَّﻪُ ﻛِﺬْﺏٌ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻦْ ﺧَﺪَﻡِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ . ‘হাদীছ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও যে তার উপর আমল করে সে শয়তানের খাদেম’[মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী, তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত [বৈরুত : দারুল এহইয়াইত তুরাছ আল-আরাবী, ১৯৯৫/১৪১৫ পৃঃ ৭; ড. ওমর ইবনু হাসান ফালাতাহ, আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীছ [দিমাষ্ক : মাকতাবাতুল গাযালী, ১৯৮১/১৪০১ ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৩] শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ‘শরী‘আতের কোন বিষয়ে ছহীহ ও হাসান হাদীছ ব্যতীত যঈফ বা দুর্বল হাদিসের উপর নির্ভর করা জায়েয নয়’[মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১/২৫০ পৃ.]শায়খ ইবনে উছাইমীন [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যঈফ হাদিসকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না এবং তাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামের সঙ্গে সম্পৃক্তও করা যাবে না… [উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, টেপ নং ২৭৬] বিদায়ের এই অন্তিম মুহুর্তে, ওয়ারেসীন বা কর্তৃপক্ষের কারো মাইয়্যেতকে ক্ষমা করতে বলার উদ্দেশ্যে সকলের নিকট করজোরে নিবেদন করার কথা শরীয়তে নেই। শরীয়তে আছে তা হল জীবিতাবস্থায় মাইয়্যেত নিজে ক্ষমা চাইবে। যেমন, পুর্বে আলোচিত হয়েছে। অবশ্য সুযোগ না পেলে সে কথা ভিন্ন।
.
এই কাফনানোর সময়েই ঘটা করে মাইয়্যেতের স্ত্রীকে নতুন লাল পেড়ে শাড়ি পরিয়ে লাশের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে তার মোহরের দাবী মাফ করতে বলা বিদআত।
বলাই বাহুল্য যে, দেন মোহর এক প্রদেয় যৌতুক ও হক, যা বিবাহ বন্ধনকালে অথবা জীবিতাবস্থায় আদায় করা জরুরী ছিল। কিন্তু সে ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করে অথবা প্রক্ষেপ না করে অথবা স্ত্রীর অধিকারের ব্যাপারে তাকে সােচ্চার হতে না দিয়ে তা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশেষে সে যখন পরপারের জন্য নব সজ্জায় শীতল জড়পিন্ড হয়ে শায়িত, তখন যেন সে নতুন আলতা পেড়ে শাড়ি পরিহিতা শয্যা-সঙ্গিনীর নিকট অন্তিম বিদায় নেওয়ার মুহূর্তে (সমাজের মুখে) বলছে, ‘ওগো প্রিয়া! এবার আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমার ঋণ পরিশোধে আমি অক্ষম। তোমার মোহরের দাবী মাফ করে দাও। আমাকে হিয়া খোসলে খালাস দাও।” আহা! বেচারা বিরহ বেদনাহত টনটনে ব্যথিত বক্ষে তাই কি মৌখিক ক্ষমা করে থাকতে পারে? কিন্তু কে জানে, হয়তো বা তার অন্তস্তলে এমন দাবী থেকে গেছে, যা সে মুখে প্রকাশ করতে লজ্জা অথবা ভয় করছে।এতো শুধুমাত্র স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার মোহরের কথা। নচেৎ যদি ঐ মৃতব্যক্তি বিবাহের সময় দেওয়ার পরিবর্তে নিজে মোহর, ঘুষ, যৌতুক বা পণ নিয়ে স্ত্রীর অভিভাবককে দগ্ধ করে পথে বসিয়েছে, তাহলে তার বিষয়টা যে কত বড় গুরুতর, তার আন্দাজ সমাজই করবে।পরন্তু যদি মাইয়্যেতের ত্যক্ত সম্পদ থাকে, তবে ওয়ারেসীনরা তার মোহর এবং অন্যান্যের ঋণ আদায় করে দেবে। মাফ করতে অনুরোধ করবে না। সম্পদ না থাকলে এমন অনুরোধ রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রো স্ত্রীরও উচিত, স্বামীকে আন্তরিকভাবে ক্ষমা করা। এতে সে উত্তম বিনিময় পাবে পরকালে।
কাফনানোর সময় কাফনের ভিতরে কুরআনের কোন আয়াত বা দুআ লিখে ভরা, অথবা কাফনের কাপড়ের উপর লিখা, কোন অলীর শাজারা-নামা অথবা পীরের সুপারিশ-নামা (!) কাফনের সঙ্গে দেওয়া এবং আযাব মাফ বা লঘু হওয়ার আশা রাখা মস্ত বড় দুঃসাহসিকতা ও বিদআত।
জানাযার খাট (দোনজা)কে অথবা লাশকে আয়াত বা কালেমা-খচিত চাদর দ্বারা আবৃত করা এবং পুষ্পমন্ডিত করাও বিদআত। শেষােক্তটি বিজাতীয় প্রথা।
.
মাইয়্যেত মহিলা হলেই খাট ঢেকে পর্দা করা প্রয়োজন। কিন্তু হায়! যার সারা জীবন বেপর্দায় এবং পর্দার বিরুদ্ধে হাসাহাসি ও ভ্রকুঞ্চনে কাটল, তাকে আর এ সময় পর্দা করে কতটা লাভ হবে? এর জবাব প্রত্যেক মহিলার পিতা, স্বামী এবং মেয়েরা নিজেই দেবে। এই সময় বা যে কোন সময় স্মৃতি স্বরূপ লাশের কোন স্মারক ছবি তুলা অবৈধ।(নোট ফিকহুল ইবাদত, জানাজা দর্পন পৃ ৫৯-৬০ আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
উপস্থাপনায়ঃ
জুয়েল মাহমুদ সালাফি