একজন মুমিনের মৃত্যুর পূর্ব সময় থেকে শুরু করে কবরস্থ করার পর পর্যন্ত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে করনীয় ও বর্জনীয় দশম পর্ব

প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির জানাযা বহন করার সময় কী কী নিয়ম-নীতি মেনে চলা আবশ্যক? জানাযার সালাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
▪️মৃত ব্যক্তির জানাযা (কাঁধে) বহন করা এবং দাফনের জন্য তার সঙ্গে যাওয়া ওয়াজিব (ফর্যে কিফায়াহ)।এটি মুসলমানের একটি হক বা অধিকার; যা আদায় করা জরুরী।নবী (ﷺ) বলেন,একজন“
মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের অধিকার হল ৬টি এর মধ্যে একটি হক হল,জানাযার অনুগমন করা।(সহীহ মুলিম ২১৬২,আহমাদ ৮৮৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৯০৯, শু‘আবুল ঈমান ৮৭৩৭ মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৫২৫) নবী (ﷺ)
আরো বলেন,“তোমরা রোগীকে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসাবাদ কর এবং জানাযার অনুসরণ কর (দাফন কার্যের জন্য যাও); তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেবে।” জানাযার সাথে যাওয়া বা তার অনুগমন করার দুটি পর্যায় রয়েছে; প্রথমতঃ মরাবাড়ি হতে জানাযার নামায পড়া পর্যন্ত। দ্বিতীয়তঃ মরাবাড়ি থেকে দাফন বা লাশ কবরস্থ করা পর্যন্ত। এই উভয় প্রকার আমলই মহানবী (ﷺ) কর্তৃক প্রমাণিত আছে। (দেখুন মাওয়ারিদুয যামআন ৭৫৩নং, হাকেম ১/৩৫৩, ৩৬৪,৬৫, বাইহাকী ৪/৭৪)।তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মরাবাড়ি থেকে নিয়ে দাফন কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত জানাযার অনুগমন করাটা কেবল জানাযা পড়ে ফিরে আসার চেয়ে বহুগুণে উত্তম। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি মরাবাড়ি থেকেই ঈমানের সাথে এবং নেকী লাভের আশায় জানাযার অনুগমন করে নামায পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার জন্য রয়েছে এক কীরাত সওয়াব। আর যে ব্যক্তি তার দাফন হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকে, তার জন্য রয়েছে দুই কীরাত সওয়াব।তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, ২ কীরাত পরিমাপ কেমন? উত্তরে তিনি বললেন,“দুটি বড় বড় পর্বতের মত।”অন্য বর্ণনায় তিনি বললেন, “প্রত্যেক কীরাত উহুদ পাহাড়ের সমান।”(সহীহ বুখারী ৪৫ ১২৪০মুসলিম ১৫৭০, ১৫৭১ নাসাঈ ৪৯৪৬)অবশ্য এই সওয়াব শুধুমাত্র পুরুষের জন্য; মহিলাদের জন্য নয়। কারণ, মহিলারা কোন জানাযার অনুগমন করতে পারে না। মহানবী (ﷺ) মহিলাদেরকে জানাযায় অনুগমন করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী ৩০২ মুসলিম ১৫৫৫)
.
মৃতের লাশ কাঁধে বহন করা সুন্নাহ।(সহীহ বুখারী, মিশকাত হা/১৬৪৬-৪৭)লাশ বহন করার সময় মাথাটা কোন দিকে থাকতে হবে তার কোন সিদ্ধান্ত শরীয়তে নেই তবে এ সময় মাথা সম্মুখ দিকে রাখা উত্তম।(মাজমূ‘ ফাতাওয়া উসাইমন রহঃ১৭/১৬৬ পৃঃ)।লাশ বহনে প্রথম হকদার হল মৃতের পরিবারের লোকেরা ও নিকটাত্মীয়গণ ।আরনএ দায়িত্ব শুধুমাত্র পুরুষদের, মেয়েদের নয়। জানাযার পিছে পিছে মেয়েদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ নয়। এই সময় সরবে কান্নাকাটি করা যাবে না। ধূপ-ধুনা ইত্যাদি অগ্নিযুক্ত সুগন্ধি বহন করা যাবে না। রাসূল করীম (ﷺ) বলেন, “শব্দ বা আগুন নিয়ে জানাযায় অনুগমন করোনা।”(আবু দাউদ ২৭৫৭ আহমাদ ৯১৫০, হাদীসটি যয়ীফ হলেও এর সমার্থক আরো অন্যান্য হাদীস ও আসার রয়েছে। দেখুন আহকামুল জানায়েয ৭০ পৃ) সরবে যিকর, তাকবীর ও তেলাওয়াত বা অনর্থক পার্থিব কথাবার্তা ইত্যাদি ঠিক নয়। ক্বাইস বিন উবাদ বলেন, নবী (ﷺ) এর সাহাবাগণ জানাযার সময়ে উচ্চস্বরকে অপছন্দ করতেন। (বাইহাকী ৪/৭৪)।বরং মৃত্যুর চিন্তা করতে করতে চুপচাপ ভাবগম্ভীরভাবে মধ্যম গতিতে মাইয়্যেতের পিছে পিছে কবরের দিকে এগিয়ে যাবে। আমর বিন আস (রাঃ) তাঁর অসিয়তে বলেছিলেন, ‘আমি মারা গেলে আমার লাশের সাথে যেন কোন মাতমকারিণী ও আগুন না যায়।(মুসলিম ১৭৩,আহমাদ ১৭১১২)।আবু হুরাইরা (রাঃ) মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন, ‘আমার উপর তোমরা তাবু লাগিয়ো না। আর কোন (সুগন্ধ কাঠের) ধুয়ো দেওয়ার পাত্র (ধুনুচি) বা আগুন নিয়ে আমার জানাযার অনুগমন করো না।” (আহমাদ ৭৫৭৩, ৯৭৫৩) জানাযা নিয়ে চলা অবস্থায় রাস্তায় (বিনা প্রয়োজনে) বসা যাবে না।(মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৪৮) জানাযা দেখে খাড়া হওয়া এবং লাশ মাটিতে না রাখা পর্যন্ত অনুগামীদের দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ মনসুখ (রহিত)। আলী (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল (ﷺ) জানাযা দেখে দাঁড়িয়েছেন, আমরাও দাঁড়িয়েছি। অতঃপর তিনি বসেছেন, আমরাও বসেছি।’ (মুসলিম ১৫৯৯, ইবনে মাযাহ ১৫৩৩ আহমাদ ১০৪০) জানাযায় আগে ও পিছে উভয় ধরনের চলাই নবী (ﷺ) কর্তৃক প্রমাণিত। যেমন, আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আবু বাকার ও উমার জানাযার সামনেও হাঁটতেন এবং পশ্চাতেও।’ (ত্বহাবী ১/২৭৮)তবে মাইয়্যেতের পিছনে কাছাকাছি চলাই উত্তম।প্রয়োজনে সম্মুখে ও ডানে-বামে চলা যাবে। কেউ গাড়ীতে গেলে তাকে পিছে পিছেই যেতে হবে।(আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৬৬৭) গাড়ী ইত্যাদিতে সওয়ার হয়ে জানাযার অনুগমন বৈধ। তবে পায়ে হেঁটে যাওয়াটাই উত্তম। কারণ, এটাই ছিল নবী (ﷺ) এর আমল। তাছাড়া এ কথাও প্রমাণিত নেই যে, তিনি কিছুতে সওয়ার হয়ে জানাযার সাথে গেছেন। বরং সওবান (রাঃ) বলেন, ‘একদা আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কোন জানাযার সাথে যাচ্ছিলেন। তার নিকট এক সওয়ারী পেশ করা হলে তিনি তাতে চড়তে রাজী হলেন না। অতঃপর ফেরার পথে সওয়ারী পেশ করা হলে তিনি তাতে সওয়ার হলেন। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, “ফিরিশ্তাবর্গ পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাই তাঁরা পায়ে হেঁটে যাবেন আর আমি সওয়ার হয়ে যাব তা চাইলাম না। অতঃপর তারা ফিরে গেলে সওয়ার হলাম।” (আবু দাউদ ২৭৬৩ক, হাকেম ১/৩৫৫, বাইহাকী ৪/২৩)
জানাযা বহন করার কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি যেমন, পাল্টে পাল্টে খাটের চারটি পায়া ধারণ করে বহন ইত্যাদির ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি। সুতরাং এরূপ করাটা বিদআত। (ঐ, বিদআত নং ৫০) মাইয়্যেত যদি ভালো লোক হয় তবে তাকে ভালো প্রতিদানের দিকে আগিয়ে দিতে এবং যদি মন্দ লোক হয় তবে নিজেদের দায় খালাস করতে শীঘ্র করা ওয়াজিব। সুতরাং জানাযা নিয়ে চলার সময় দ্রুতপদে চলা উচিত। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা জানাযা নিয়ে তাড়াতাড়ি চল। কেননা, সে যদি নেককার হয় তবে তো ভালো; ভালোকে তোমরা তাড়াতাড়ি তার ভালো ফলের দিকে পৌঁছে দেবে। আর যদি এর অন্যথা হয়, তবে সে খারাপ, খারাপকে তোমরা তোমাদের ঘাড় থেকে নামিয়ে দেবে।” (বুখারী ১২৩১ক, মুসলিম ১৫৬৮ক, তিরমিযী ৯৩৬) তবে যেন লাশের উপর কোন প্রকার ঝাঁকুনি না আসে,সে কথাও খেয়াল রাখা দরকার।উল্লেখ্য যে, মাইয়্যেত ভালো লোক হলে তার লাশের ওজন হাল্কা হবে এমন ধারণা ভিত্তিহীন ও বিদআত। (আলবানী আহকামুল জানাইয)যে ব্যক্তি জানাযা বহন করে তার জন্য ওযু করা মুস্তাহাব। যেমন নবী (ﷺ) এর হাদীস পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি মাইয়্যেতকে গোসল দেয় সে যেন, গোসল করে এবং যে বহন করে সে যেন ওযু করে।”
◾জানাযার সালাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতি –
____________________________________
ক).জানাযার সালাত ফরযে কেফায়া। ফরযে কেফায়া হলো এমন ফরয যা কিছু লোক আমল করলে বাকি লোকেরা দায় মুক্ত হয়ে যায়। আর যদি কেউই আমল না করে থাকে তাহলে সকলেই গুনাহগার হয়। আদায়ের সঠিক নিয়ম হল, জানাযার নামাযের জন্য আযান-ইকামত নেই।জানাযার নামায ৪, ৫, ৬, ৭, ও ৯ তাকবীরে পড়া যায় সুতরাং যে কোন একটি হাদীসের উপর আমল করলে সুন্নত পালন হয়ে যায়।
.
উক্ত সালাত আদায়ের নিয়ম হল প্রথমে ওযু করে সতর ঢেকে কিবলামুখী হয়ে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে ইমাম পুরুষের মাথা বরাবর দাঁড়াবে। আর মহিলার মধ্যবর্তী স্থান বরাবর দাঁড়াবে।অন্তরে নিয়ত করে ইমাম মুক্তাদী আল্লা-হু আকবার” বলে তকবীর দেবে। অতঃপর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর স্থাপন করবে।।(তিরমিযী ১৯৭নং, সহীহ তিরমিযী ৮৫৯)
(খ).১ম তাকবীরের পর ‘আউযু বিল্লাহ, বিসমিল্লাহ’ পড়ে নিরবে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে (তিরমিজিঃ১০২৬,মিশকাতঃ১৬৭৩)।(সূরা ফাতিহা বাদ দিয়ে সানা পড়ার প্রচলিত নিয়মের কোন দলিল নেই, এটি সুন্নত পরিপন্থী)।জানাযার সালাতের ক্বিরাআত ও দু‘আ অধিকাংশ বিদ্বান নীরবে পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন।(শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, আল-ফাতাওয়াউল কুবরা, ৩/২২-২৩ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, অবশ্যই জানাযার ক্বিরাআত ও দু‘আ সবই চুপি চুপি হবে; স্বশব্দে নয়। তবে স্বশব্দে পড়ার কারণে যদি নিকটের লোকজন শুনতে পায়, তাহলে কোন ক্ষতি নেই।(ইবনু বায, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব, ১৪/১৫ পৃ.; মাওসূ‘আতুল ফাতাওয়া, মুশাহাদাত নং-৪৯১৪;)
(গ).২য় তাকবীরের পর দরুদ পাঠ করবে।(দেখুন, বাইহাকী ৪/৩৯, ইবনুল জারূদ ২৬৫)।(যা সালাতের শেষ তাশাহুদে পাঠ করা হয়)।
(ঘ).৩য় তাকবীরের পর জানাযার বিশেষ দুআ পাঠ করবে। (ইবনে মাজাঃ১৪৯৭ আবু দাউদঃ৩১৯৯ মিসকাতঃ১৬৭৪) একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দোয়ার মধ্যে একটি সুন্নাহ সম্মত দোয়া হলঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ ، وَنَقِّهِ مِنْ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنْ الدَّنَسِ ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ ، وَأَهْلًا خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ ، وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ ، وَقِهِ فِتْنَةَ الْقَبْرِ وَعَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মাগফির লাহু অরহামহু অআ-ফিহী অ’ফু আনহু অআকরিম নুযুলাহু অঅসসি’ মুদখালাহু, অগসিলহু বিলমা-ই অসসালজি অল-বারাদ। অনাক্বিহী মিনাল খাত্বায়্যা কামা য়ুনাক্কাস সাউবুল আবয়্যাযু মিনাদ দানাস। অ আবদিলহু দা-রান খাইরাম মিন দা-রিহী অ আহলান খাইরাম মিন আহলিহী অযাওজান খাইরাম মিন যাওজিহ। অ আদখিলহুল জান্নাতা অ আইযহু মিন আযা-বিল ক্বাবরি অ আযা-বিন্নার।
অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি ওকে ক্ষমা করে দাও এবং ওকে রহম কর। ওকে নিরাপত্তা দাও এবং মার্জনা করে দাও, ওর মেহেমানী সম্মানজনক কর এবং ওর প্রবেশস্থল প্রশস্ত কর। ওকে তুমি পানি, বরফ ও শিলাবৃষ্টি দ্বারা ধৌত করে দাও এবং ওকে গোনাহ থেকে এমন পরিষ্কার কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। আর ওকে তুমি ওর ঘর অপেক্ষা উৎকৃষ্ট ঘর, ওর পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবার, ওর জুড়ী অপেক্ষা উৎকৃষ্ট জুড়ী দান কর। ওকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং কবর ও জাহান্নামের আযাব থেকে রেহাই দাও।বর্ণনাকারী সাহাবী আউফ বিন মালেক বলেন, (আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে যখন এই দুআ বলতে শুনলাম) তখন আমি এই কামনা করলাম যে, যদি আমি এই মাইয়্যেত হতাম! (সহীহ মুসলিম ১৬০০ক, তিরমিযী ৯৪৬ ইবনে মাজাহ ১৪৮১ আহমাদ ২২৮৫০
প্রকাশ থাকে যে, উক্ত দুআটি পুরুষ মাইয়্যেতের জন্য ব্যবহৃত। কারণ, নবী (ﷺ) পুরুষের জন্যই পড়েছিলেন। মহিলার জন্যও পড়া বৈধ। তবে এ ক্ষেত্রে যদি তার স্বামী বেদ্বীন হয় তবেই পূর্ণ দুআ বলা যাবে। নচেৎ “অযাউজান খাইরাম মিন যাওজিহ” (অর্থাৎ ওর পার্থিব জুড়ি অপেক্ষা উৎকৃষ্ট জুড়ি দান কর) বাক্যটি বাদ দিয়ে পড়তে হবে। কারণ, স্বামী নেক হলে এবং উভয়ে জান্নাতে গেলে স্ত্রী উক্ত স্বামীরই অধিকারে থাকবে। (আল-বিজাযাহ)
(ঙ)এবং ৪র্থ তাকবীরের পর সালাম ফেরানো।[ইবনে মাজাঃ১৫০৩-৪ মুসনাদে আহমেদঃ১৮৬৫৯]
মাইয়্যেত শিশু হলে প্রথমোক্ত দুআ করবে। কারণ, তা সকলের জন্য সাধারণ। তবে কিছু সালফে সালেহীন শিশুর জানাযায় নিম্নের দুআ পাঠ করতেনঃ
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَـنَا فَرَطَاً، وَسَلَفاً، وَأَجْراً
উচ্চারণঃ-আল্লা-হুম্মাজআলহু লানা ফারাত্নাউ অ সালাফাউ অ আজরা।
অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি ওকে আমাদের জন্য অগ্রগামী (জান্নাতে পূর্বপ্রস্তুতিস্বরূপ ব্যবস্থাকারী) এবং সওয়াব বানাও। (শরহুস সুন্নাহ ৫/৩৫৭, বাইহাকী বুখারী বিনা সনদে ফাতহুল বারী ৩/২৪২, নাইলুল আউতার ৪/৬৪)।
অবশ্য শিশুর জন্য দুআ করার সময় তার পিতা-মাতার জন্যও ক্ষমা ও রহমতের দুআ করা বিধেয়। (সহীহ আবু দাউদ ২৭২৩)
মাইয়্যেত মহিলা হলে দুআর শব্দগুলিতে ‘হু’ সর্বনামের স্থলে ‘হা’ আবদ’ এর স্থলে ‘আমাহ’ ‘বিন’ এর স্থলে ‘বিনত’, ‘ফুলান’ এর স্থলে ‘ফুলানাহ’, ব্যবহার করতে হবে। একাধিক মাইয়্যেত হলে ঐ শব্দগুলির বহুবচন ব্যবহারই ভাষার দাবী। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথমোক্ত দুআটির প্রয়োগ যথাবিহিত। (আলমুমতে, ইবনে উষাইমীন ৫/৪১৪, আল বিজাযাহ ৯২পৃঃ)।
দুআ শেষ হলে (হাত তুলে) চতুর্থ তকবীর দিয়ে বুকে হাত রাখবে। অতঃপর নীরব থেকে একটু অপেক্ষা করবে।অবশ্য এ তকবীরের পরেও দুআ পড়ার কথা প্রমাণিত।(দেখুন, বাইহাকী ৪/৩৫, হাকেম ১/৩৬০, আহমাদ ৪/৩৮৩, ইবনে মাজাহ ১৫০৩নং, সহীহ ইবনে মাজাহ ১২২০)
জানাযার নামাযে কেউ মসবুক হলে (অর্থাৎ, দেরীতে পৌছে ২/১ তকবীর ছুটে গেলে) ইমামের সাথে জামাআতে শামিল হবে। যতটা পাবে ততটা পড়ে নিয়ে বাকী কাযা করতে হবে। কারণ, মহানবী (ﷺ) এর সাধারণ হাদীস এই যে, “তোমরা জামাআতের সাথে যেটুকু নামায পাও তা পড়ে নাও এবং যতটুকু ছুটে যায় ততটুকু পুরো করে নাও।” (সহীহ বুখারী ৬৩৫ মুসলিম ৬০২) সুতরাং ইমাম সালাম ফিরে দিলে এবং লাশ তোলা না হলে বাকী তকবীর পুরো করে নেবে। নচেৎ লাশ তুলে নেওয়ার আশঙ্কা থাকলে পুরো করতেও পারে নতুবা ইমামের সাথেই সালাম ফিরাতে পারে। (ফিকহুস সুন্নাহ ১/৪৬৫, সাবউনা সুআলান ১৩ঃ) যেমন যদি ইমামের তৃতীয় তাকবীরে পায় তাহলে সে তাকবীর বলে সূরা আল-ফাতিহা পড়বে, ইমাম যখন চতুর্থ তাকবীর বলবে, তখন সে তৃতীয় তাকবীর বলে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ পড়বে। আর ইমাম যখন সালাম ফিরাবে, তখন সে তৃতীয় তাকবীর বলে দু’আ পড়বে অতঃপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরাবে। উল্লেখ্য, ছুটে যাওয়া আংশিক ছালাত আদায়ের আগেই যদি লাশ তুলে নেয়া হয়, তাহলে অবশিষ্ট সালাত আদায় করতে হবে।ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫২৮)
.
উল্লেখ্য যে,মৃত ব্যক্তির রক্ত সম্পর্কিত কেউ জানাযা দিলে তার সওয়াব বেশি” ইসলামী শরিয়তে এমন কিছু আছে বলে আমাের জানা নাই। তবে কোন ব্যক্তি যখন নিজের রক্ত সম্পর্কীয় ব্যক্তির জানাযা আদায় করবে তখন স্বভাবতই তার আন্তরিকতা বেশি থাকে। কারণ তারা তার রক্ত সম্পর্কীয় প্রিয়জন। আর যে ইবাদতে যত বেশি আন্তরিকতা থাকে তা ততই উত্তম। ইখলাস বা আন্তরিকতাপূর্ণ দুআ কবুলের সম্ভাবনাও বেশি থাকে জানাযা মসজিদে হলে ইমামতি করবেন মসজিদের ইমাম সাহেব। অবশ্য তার অনুমতিক্রমে অন্য কেউ পড়তে পারে। কিন্তু মৃতব্যক্তি জীবিতকালে যদি তার জানাযা পড়তে কাউকে অসিয়ত করে যায়, তাহলে অসী ব্যক্তিই ইমামতি করবে। জানাযায় আমীর উপস্থিত না থাকলে অথবা জানাযা মসজিদে না হলে এবং সব দিকে উপযুক্ত হলে তবেই কোন আত্মীয় ইমামতি করবে।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_____________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি