একজন মুমিনের মৃত্যুর পূর্ব সময় থেকে শুরু করে কবরস্থ করার পর পর্যন্ত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে করনীয় ও বর্জনীয় চৌদ্দ তম পর্ব

প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির জন্য বিভিন্ন খতম, কুলখানি সম্পাদন করা কতটুকু সঠিক? এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা:কুরআন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ এলাহী কিতাব।এ কিতাবের মাঝে যেমন মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে, তেমনি এটি তেলাওয়াত করলে এর প্রতিটি বর্ণের বিনিময়ে দশটি করে নেকী পাওয়া যায়।(তিরমিযী হা/২৯১০; মিশকাত হা/২১৩৭; সহীহাহ হা/৩৩২৭।)বিশ্বের এমন কোন গ্রন্থ নেই, যা তেলাওয়াত করলে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সওয়াব অর্জিত হয়।এই পবিত্র গ্রন্থের তেলাওয়াতকারী ও হাফেয জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান লাভ করবে।(আবুদাউদ হা/১৪৬৪; মিশকাত হা/২১৩৪; সহীহাহ হা/২২৪০)।সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে অবস্থান করবে।(বুখারী হা/৪৯৩৭; মুসলিম হা/৭৯৮)।তার সুপারিশ কবুল করা হবে।(হাকেম হা/২০৩৬; মিশকাত হা/১৯৬৩; সহীহু তারগীব হা/৯৮৪)।এর তেলাওয়াতকারী ও তার মা-বাবাকে জান্নাতের রেশমী পোশাক ও তাজ পরিধান করানো হবে।(তিরমিযী হা/২৯১৫; ছহীহাহ হা/২৮২৯)।তাদের উপর আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ নাযিল হয় এবং রহমতের ফেরেশতাগণ তাদের বেষ্টন করে রাখে।(মুসলিম হা/২৬২৯; মিশকাত হা/২০৪)।কিন্তু এ গ্রন্থের বিধি-বিধান জীবিত ব্যক্তির জন্য। কেউ মারা গেলে তার উপরে শরী‘আতের বিধান প্রযোজ্য নয়। কুরআন তেলাওয়াত যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, তেমনি এটি শ্রবণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শ্রবণের এ বিষয়টিও মানুষের জীবদ্দশায় প্রযোজ্য।এ নিবন্ধে জীবিত ও মৃত ব্যক্তির নিকটে কুরআন তেলাওয়াতের বিধান আলোচনা করা হ’ল:-
.
কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পাশে বসে মৃত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে ৪ দিন, ৪০ দিন খাবারের আয়োজন করা,কুরআন তেলোয়াত করা,খতম করা,সূরা ইয়াসিন ও বাকারা পড়া,কবর যিয়ারতের সময় সূরা ফাতেহা, ইখলাস,নাস, ফালাক পড়া এগুলো সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ। কেননা মৃত মানুষের জন্য উপরোক্ত কাজগুলো করতে হয় মর্মে কুরআন-সুন্নাহয় বিশুদ্ধ কোন দলিল নেই।তাছাড়া কুরআন তেলোয়াত শারিরীক ইবাদত যা কেউ কাউকে দিতে পারেনা।কুরআন তেলোয়াত বা ইস্তেগফার পড়লে যিনি পড়েন তার নিজের লাভ হবে, মৃত ব্যাক্তির কোন উপকারে আসবেনা।কারন,মৃত্যুর পরে মানুষ বারযাখী জগতে চলে যায়।‘যার ও দুনিয়ার মাঝে পর্দা পড়ে যায় ক্বিয়ামত পর্যন্ত।’(সূরা:মুমিনূন ১০০)।তাছাড়া পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে জীবিত মানুষের জন্য মৃতদের জন্য নয়।(সূরা ইয়াসিন: ৭০)
.
আমরা জানি রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর একাধিক স্ত্রী ও ছয় সন্তান মৃত্যুবরণ করেছিলেন।কিন্তু তিনি কারো নামে কুরআন তেলাওয়াত করে বখশিয়েছেন মর্মে কোন বর্ণনা নেই। সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের কোন আত্মীয়ের জন্য এমন কাজ করেছেন বলেও জানা যায় না। অতএব হাদীসে যতটুকু বর্ণিত হয়েছে তার উপরেই অটল থাকতে হবে।(শায়খ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৩৪৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৪৩)
.
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,আমাদের মাযহাবের প্রসিদ্ধ মত হ’ল, কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াব মাইয়্যেতের নিকট পৌঁছবে না।’(শরহে নববী আলা মুসলিম ৭/৯০)
.
ইমাম নববী (রহঃ) আরো বলেন,কুরআন তেলাওয়াত করে মাইয়্যেতের জন্য তা বখশানো,তার পক্ষ থেকে সালাত আদায় করা এবং এধরনের দৈহিক ইবাদতের ব্যাপারে শাফেঈ ও জমহুর ওলামায়ে কেরামের মাযহাব হ’ল তা মাইয়্যেতের নিকটে পৌঁছবে না’।(শরহে নববী আলা মুসলিম:৭/৮৫)
.
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াব মৃতের নিকটে পৌঁছা বা না পৌঁছার ব্যাপারে ইমামদের মতপার্থক্যের সমালোচনা করে বলেন,‘সালাফদের এটা নীতি ছিল না যে, যখন তারা নফল সালাত আদায় করতেন,সিয়াম পালন করতেন,হজ্জ সম্পাদন করতেন বা কুরআন তেলাওয়াত করতেন তখন সেগুলোর সওয়াব তাদের মুসলিম মৃত ব্যক্তিগণ বা তাদের নিকটতম ব্যক্তিদের জন্য বখ্শে দিতেন। বরং তাদের নীতি ছিল যেমনটি পূর্বে আলোচিত হয়েছে। সুতরাং মানুষের জন্য সালাফদের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া সমীচীন নয়। কেননা সালাফদের পথই সর্বোত্তম ও পূর্ণাঙ্গ। আল্লাহই সঠিক অবগত।’(মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/৩২৩।)এটি ছিল ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-এর সর্বশেষ আমল ও ফৎওয়া।
.
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,কেউ কারো পক্ষ থেকে সিয়াম রাখতে পারে না বা সালাত আদায় করতে পারে না।(মুওয়াত্ত্বা হা/১০৬৯, পৃ. ৯৪; মিশকাত হা/২০৩৫ সওম’ অধ্যায় ‘ক্বাযা’ অনুচ্ছেদ; বায়হাক্বী হা/৮০০৪, ৪/২৫৪ সনদ জয়ীফ মর্ম সঠিক) কারণ এগুলি দৈহিক ইবাদত। যা জীবদ্দশায় যেমন কাউকে দেওয়া যায় না, মৃত্যুর পরেও তেমনি কাউকে দেওয়া যায় না। বরং আমল যার ফল তার। আল্লাহ বলেন,مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاءَ فَعَلَيْهَا، ‘যে ব্যক্তি নেক আমল করল, সেটি তার নিজের জন্যই করল। আর যে ব্যক্তি মন্দ কর্ম করল, তার পাপ তার উপরেই বর্তাবে।’(সূরা হা-মীম সাজদাহ/ফুছছিলাত ৪১/৪৬)। অতএব অন্যের কোন নেক আমল মাইয়্যেতের আমলনামায় যোগ হবে না। কেবল অতটুকু ব্যতীত,যে বিষয়ে উপরে বর্ণিত হয়েছে।
.
সুতরাং সমাজে প্রচলিত ‘কুরআন ও কলেমাখানী’ অর্থাৎ পুরা কুরআন পাঠ করে ও এক লক্ষ বার কালেমা ত্বাইয়েবা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ে মাইয়্যেতের উপর তার সওয়াব বখ্শে দেওয়া বা ঈসালে সওয়াবের প্রথা ইসলামের নামে একটি বিদ‘আতী প্রথা মাত্র। যাকে এদেশে ‘লাখ কালেমা’ বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের যামানায় এর কোন অস্তিত্ব ছিল না। স্বর্ণযুগের পরে অমুসলিমদের দেখাদেখি এগুলি মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে। অনেকে হজ্জ ও সিয়ামের বিষয়টিকে ঈসালে সওয়াবের দলীল হিসাবে পেশ করে থাকেন। অথচ শরীআতে মাল ‘হেবা’ করার দলীল আছে। কিন্তু সওয়াব ‘হেবা’ করার দলীল নেই। যেমন বদলী হজ্জকারী বলেন, ‘লাববাইক ‘আন ফুলান’(অমুকের পক্ষ হ’তে আমি হাযির)। এখানে যদি কেউ নিজের হজ্জ করার পরে বলে যে, আমার এই হজ্জের নেকী অমুককে দিলাম। তবে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ নিজের হজ্জের নেকী সে নিজে পাবে, অন্যে পাবে না। আর সওয়াব হ’ল আমলের প্রতিদান মাত্র।যেমন আল্লাহ বলেন, جَزَاءً بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ ‘(বান্দাগণ পাবে) তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।’(সূরা সাজদাহ ৩২/১৭)।
.
বস্ত্ততঃ পবিত্র কুরআন এসেছিল জীবিত ব্যক্তিদের পথ দেখানোর জন্য।(সূরা ইয়াসীন ৩৬/৭০)মৃতদের জন্য নয়। আব্দুর রহমান বিন শিবল (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে,‘তোমরা কুরআন পাঠ কর। এতে বাড়াবাড়ি করো না এবং এর তেলাওয়াত থেকে দূরে থেকো না। এর মাধ্যমে তোমরা খেয়ো না ও সম্পদ বৃদ্ধি করো না।'(আহমাদ হা/১৫৫৬৮; সিলসিলা সহীহাহ হা/৩০৫৭)
.
অথচ ‘কুলখানী’ ও ‘কুরআনখানী’ প্রভৃতির মাধ্যমে কুরআন এখন আমাদের খাদ্য ও সম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এতে কুরআন আমাদের জন্য শাফা‘আত করবে না। বরং লা‘নত করবে। এজন্যেই প্রবাদ বাক্য চালু হয়েছে, رُبَّ تَالٍ لِلْقُرْآنِ وَالْقُرْآنُ يَلْعَنُهُ ‘বহু কুরআন তেলাওয়াতকারী আছে, কুরআন যাদের উপর লা‘নত করে থাকে’।(গাযালী, ইহইয়া ২/৩২)
যেমন খারেজী চরমপন্থীদের সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ وَلاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، ‘তারা কুরআন তেলাওয়াত করবে। কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না…’।(সহীহ মুসলিম হা/১০৬৬) অর্থাৎ কুরআনের প্রকৃত মর্ম তারা অনুধাবন করবে না। ফলে কুরআন আগমনের উদ্দেশ্য বিরোধী কাজে তারা কুরআনকে ব্যবহার করবে।(মাওলানা আহমাদ আলী, কোরআন ও কলেমাখানী, সম্পাদনা : মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব,রাজশাহী : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২য় প্রকাশ, নভেম্বর ২০১৬,পৃঃ ৫-৭)
.
আর এ কারণেই রাসূল (ﷺ) বলেছেন,إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِهِ آخَرِينَ، ‘আল্লাহ এই কিতাব দ্বারা বহু দলকে উঁচু করেন ও বহু দলকে নীচু করেন’।(মুসলিম হা/৮১৭; মিশকাত হা/২১১৫)।বর্তমান মুসলিম সমাজে ইসলামের নামে বহু কিছু চালু রয়েছে। যা আদৌ ইসলামী প্রথা নয়। এ বিষয়ে মূলনীতি হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ، ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে নতুন কিছু উদ্ভাবন করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।(মুসলিম হা/১৭১৮; বুখারী হা/২৬৯৭; মিশকাত হা/১৪০)
◾মৃত মানুষের নিকট কুরআন তেলোয়াত সম্পর্কে কয়েকটি জাল-জয়ীফ বর্ণনা:
______________________________________
মুমূর্ষু রোগীর নিকট বা মৃত ব্যাক্তির নিকট কুরআন তেলাওয়াত সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহ যঈফ অথবা জাল। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে সে হাদীস গুলোর দুর্বলতার দিকগুলি এখানে উল্লেখ করা হ’ল।-মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-‘তোমরা তোমাদের মৃতদের কাছে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত কর।’(আবুদাঊদ হা/৩১২১; আহমাদ হা/১৪৬৫৬; মিশকাত হা/১৬২২; যঈফুল জামে‘ হা/১০৭২; যঈফাহ হা/৫৮৬১)।তাহক্বীক:হাদীস দু’টি আমলযোগ্য নয়।কারণ,প্রথমতঃ বর্ণনাটি যঈফ। আর তিনটি কারণে হাদীসটি যঈফ। আবু ওসমান ও তার পিতা অপরিচিত রাবী। তাছাড়া এ বর্ণনায় ‘ইযতিরাব’ রয়েছে।(আলবানী, যঈফাহ হা/৫৮৬১; ইরওয়া হা/৬৮৮; যঈফুল জামে‘ হা/১০৭২)।হাফেয যাহাবী বলেন, আবু ওসমান ও তার পিতা সম্পর্কে কিছু জানা যায় না।(মীযানুল ই‘তিদাল ৭/৩৯৮, ৪/৫৫০, রাবী নং ১০৪০৯)।ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর শিক্ষক আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, আবু ওসমান এমন রাবী যার থেকে সুলায়মান তায়মী ব্যতীত কেউ হাদীস বর্ণনা করেনি। এর সনদ অজ্ঞাত।(মীযানুল ই‘তিদাল ৪/৫৫০ রাবী নং ১০৪০৪)।ইমাম দারাকুৎনী (রহঃ) বলেন, এই হাদীসের সনদ যঈফ, মতন অপরিচিত এবং এ বিষয়ে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি।(ইবনু হাজার, আত-তালখীছ ২/২১৩, হা/৭৩৫)শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পাঠের পক্ষে কোন সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি।(আলবানী, আহকামুল জানায়েয, ১/১১৪, মাসআলা ১৫ দ্রঃ)।শায়খ বিন বায বলেন, প্রচলিত হাদীসটিতে আবু ওসমান নামে একজন অপরিচিত রাবী থাকায় তা যঈফ। অতএব মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা সিদ্ধ নয়।(মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/৯৩-৯৪)
.
অপর বর্ননায় আবুদ্দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘কোন মুমূর্ষু ব্যক্তির কাছে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা হ’লে আল্লাহ সহজে তার জান কবযের ব্যবস্থা করে দেন।’(দায়লামী হা/৬০৯৯; যঈফাহ হা/৫২১৯, ৫৮৬১; ইরওয়া হা/৬৮৮।)।শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,হাদীসটি জাল। উক্ত বর্ণনায় মারওয়ান নামে একজন রাবী আছে, যে হাদীস জাল করত। ইমাম বুখারী, মুসলিম ও আবু হাতেম তার ব্যপারে বলেন,সে মুনকারুল হাদীস। আবু আরূবা হার্রানী বলেন,সে হাদীস জালকারী। সাজী বলেন, সে মিথ্যুক, হাদীস জালকারী।(যঈফা হা/৫২১৯; মীযানুল ই‘তিদাল ৪/৯০, রাবী নং ৮৪২৫)।ইমাম আহমাদ ও ইবনু মাঈন বলেন, মারওয়ান বিশ্বস্ত নয়।(আল-ইলাল ওয়া মা‘রিফাতুর রিজাল ৩/২১০, রাবী নং ৪৯০৯; তারীখু ইবনু মঈন ১/৫৫।)
.
শা‘বী হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,আনসারগণ মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা বাক্বারাহ তেলাওয়াত করতেন’।(ইবনু আবী শায়বাহ হা/১০৯৫৩, ১০৮৪৮; আহকামুল জানায়েয ১/৯৩)।এর সনদে মুজালিদ নামে একজন রাবী আছে,যার ব্যাপারে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, সে শক্তিশালী নয়।(আত-তাক্বরীব ২/২২৯)।ইমাম আহমাদ, ইমাম বুখারী, উকাইলী, ইবনু হিব্বান, ইমাম নাসাঈ, দারাকুৎনী প্রমুখ তাকে যঈফ বলেছেন। আশাজ তাকে শী‘আ বলে অভিহিত করেছেন।(তাহযীবুল কামাল ২৭/২৫; মীযানুল ই‘তিদাল ৩/৪৩৮, রাবী নং ৭০৭০)
পরিশেষে,কুরআন তেলাওয়াত নেকীর কাজ। প্রত্যেকের উচিৎ জেনে বুঝে কুরআন তেলাওয়াত করা। তবে এ কুরআনের বিধান জীবিত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য,মৃত ব্যক্তির জন্য নয়। তবে কেউ যদি জীবিত থাকাবস্থায় কুরআন নিজে শিখে ও অপরকে শেখায় সেটিই তার আমলনামায় যোগ হ’তে থাকবে।
___________________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি