ইসলামী শরীয়তে স্বপ্ন

প্রশ্ন: ইসলামী শরীয়তে স্বপ্নের কোন গুরুত্ব আছে কি? খারাপ স্বপ্ন দেখলে করণীয় কি? বিস্তারিত জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: রাত আল্লাহর সৃষ্টির এক বড় নিদর্শন। (সূরা ইসরা ১৭/১২)। আর রাতের ঘুম আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত।বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ অনুগ্রহ ও দান। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। শারীরিক-মানসিক ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে এই পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা ঘুমকে অন্যতম প্রধান মাধ্যম বানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,نَوْمَكُمْ سُبَاتًا، وَّ جَعَلْنَا الَّیْلَ لِبَاسًا.আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাত্রিকে করেছি আবরণ। (সূরা নাবা, ৯-১০) রাতকে মহান আল্লাহ মানুষের আরাম-আয়েশ ও প্রশান্তির উপায় হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আন‘আম ৬/৯৬; নাহল ১৬/৮৬)। দুনিয়ার জীবনে মানুষকে তার দৈনন্দিন প্রয়োজনের তাগিদে পরিশ্রম করতে হয়। আর দিনভর ক্লান্তিকর চলাফেরার পর মানুষ যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ে; কর্মক্ষম মানুষ অক্ষম হয়ে পড়ে, শক্তিমান মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন এ ঘুমের মত নিয়ামতই হয়ে ওঠে তার একমাত্র অবলম্বন, যার মাধ্যমে সে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। ফিরে পায় পরবর্তী দিবসের জন্যে নতুন প্রাণশক্তি ও নবতর উদ্যম। রাতে মানুষ যখন ঘুমাতে যায় তখন ঘুমের মাঝে মানুষ বিভিন্ন ধরনের স্বপ দেখে থাকে। কখনো আকাশে চলে, আবার কখনো বাঘের সাথে পাঞ্জা লড়ে, কখনো বা ভূত-পেত্নী ইত্যাদি। বর্তমানে কিছু লোক স্বপ্নের অবান্তর কিছু ব্যাখ্যা করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তাই এ বিষয়ে সামান্য কিছু আলোচনা করার প্রয়োজন অনুভব করছি। মানুষ ঘুমের ঘোরে যে সব স্বপ্ন দেখে থাকে, শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে তা তিন প্রকার হতে পারে। যেমন:
(ক) ভাল স্বপ্ন, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ বহন করে।
(খ) দুঃখদানকারী স্বপ্ন, যা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়।
(গ) মনের মধ্যে উদ্ভূত কল্পনা, যা স্বপ্নে দেখা যায়। অতএব কেউ কোন অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে তা অন্যের নিকট যেন না বলে এবং তখনই উঠে যেন সালাত আদায় করে। (সহীহ বুখারী ৭০৪৪, মুসলিম হা/২২৬৩, তিরমিজি ২২৯১, মিশকাত হা/৪৬১২-১৪)।
.
অপর বর্ণনায়,আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়সাল্লাম) বলেন: (ক) যখন কিয়ামাত নিকটবতী (আসন্ন) হবে তখন মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না। (খ) তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সত্যবাদীই অতিসত্য স্বপ্ন দেখতে পাবে। (গ) মুসলিমের স্বপ্ন নবুওতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) আরো বলেন, (ঘ) স্বপ্ন তিন প্রকার। প্রথমতঃ শুভ স্বপ্ন, যা আল্লাহর পক্ষ হতে সুসংবাদ। দ্বিতীয়তঃ শাইত্বানের পক্ষ হতে পেরেশনীমূলক স্বপ্ন। তৃতীয়তঃ মানুষের কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন। (অর্থাৎ, সে দিনে বা জাগ্রত অবস্থায় যা কল্পনা করে স্বপ্নে তা-ই দেখে।) (ঙ) যখন তোমাদের কেউ স্বপ্নে অপ্রীতিকর কিছু দেখে; তখন সে যেন তা কারো নিকট বর্ণনা না করে এবং দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) আরো বলেন, (চ) আমি স্বপ্নে বেড়ি (অর্থাৎ পায়ে বেড়ি পরানো) কে পছন্দ করি এবং শৃঙ্খল (অর্থাৎ গলায় শৃঙ্খল বা বেড়ি পরানো কিংবা হাতকড়া)-কে অপছন্দ করি। (পায়ের) বেড়ি দ্বীনের উপর অটল থাকা বুঝায় (আস-সহীহাহ ৩০১৪, মুসনাদে আহমাদ ২/৫০৭৷ আলবানী (রহঃ) বলেন: হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের শর্তে সহীহ্। সিলসিলা সহিহা হা/১৮)

▪️ভালো স্বপ্ন দেখলে করণীয়: কখনো মানুষ ভালো স্বপ্ন দেখে আবার কখনো খারাপ স্বপ্ন দেখে। ভালো স্বপ্ন সাধারণত আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। এজন্য আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালো স্বপ্ন দেখলে কী করতে হবে তা বলে গেছেন। যেমন:

রাসূল (ﷺ) বলেন, যখন তোমরা কেউ ভালো স্বপ্ন দেখবে, তখন আলহামদুলিল্লাহ পড়বে এবং সে নিজের প্রিয় লোকদের কাছে তা বলতে পারে। [সহীহ বুখারী হা/৬৯৮৫]। এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর কেউ ভালো স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর প্রশংসা করা ও বিজ্ঞ কোনো আলেমের কাছে তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া উচিত। এ হাদীসের টীকায় আল্লামা ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ভালো স্বপ্ন দেখলে বিজ্ঞ আলেমদের নিকট বলা মুস্তাহাব।’ (ফাতহুল বারী ১৫/৪৮২)।

কাযী আবু বকর ইবনুল আরাবী বর্ণনা করেছেন, উত্তম স্বপ্ন দেখলে যাদের নিকট বর্ণনা করা যাবে:

(ক) জ্ঞানী ব্যক্তির নিকটে: তিনি স্বপ্নের ভালো ব্যাখ্যা করবেন যা সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, অথবা নাসীহত করবে বা পরামর্শ দিবে যার দ্বারা তার উপকার হবে।
(খ) বিচক্ষণ ব্যক্তির নিকট: তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানেন, তিনি জানাবেন যা তার ওপর সংঘটিত হবে অথবা চুপ থাকবেন।
(গ) প্রিয় ব্যক্তির নিকট: তিনি যদি ভালো কিছু জানেন তাহলে বলবেন। আর যদি ঐ সম্পর্কে অজানা বা সন্দেহ পোষণ করে থাকেন তাহলে চুপ থাকবেন। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৯৮৪)।

উল্লেখ্য, বিজ্ঞ আলেম যদি স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা জানেন, তাহলে বলবেন, অন্যথা অহেতুক ব্যাখ্যা করা থেকে বিরত থাকবেন। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুমিন ব্যক্তির স্বপ্ন নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের একভাগ। (সহীহুল বুখারী ৬৯৮৩, ৬৯৮৮, ৬৯৯০, ৭০১৭; মুসলিম ২২৬৩, ২২৬৪; তিরমিযী ২২৭০, ২২৯১; আবূ দাঊদ ৫০১৭)। অপর বর্ণনায় মুমিনের স্বপ্ন নবুঅতের ৪০ ভাগের এক ভাগ। স্বপ্নের ব্যাপারে যে পর্যন্ত আলোচনা করা না হয়, সে পর্যন্ত এটা পাখির পায়ে (ঝুলে) থাকা জিনিসের মতো। আলোচনা করার সাথে সাথে তা যেন পা হতে পড়ে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এ কথাও বলেছেন, আর স্বপ্নদ্রষ্টা যেন জ্ঞানী ব্যক্তি অথবা পছন্দীয় ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো নিকট স্বপ্নের আলোচনা না করে।’ (তিরমিযী, হা/২২৭৮, আবু দাউদ ৫০২০ ইবনে মাজাহ ৩৯১৪ হাদীস সহীহ)।
বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছু লোক স্বপ্নের অহেতুক ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তাদের এই হাদীস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

▪️মন্দ স্বপ্ন দেখলে করণীয়: মন্দ স্বপ্ন সাধারণত শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। কারণ শয়তানের কাজই হলো মানুষকে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানির মাঝে রাখা। কেউ যদি অপছন্দনীয় স্বপ্ন দেখে, তাহলে তাকে কী করতে হবে সে সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যখন কেউ এমন কোনো স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে, তবে মনে করবে যে, তা আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এজন্য আল্লাহর শোকর আদায় করে এবং তা বর্ণনা করে। আর যখন এর বিপরীত কোনো স্বপ্ন দেখে, যা সে অপছন্দ করে, মনে করবে তা শয়তানের তরফ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করবে না।’ (সহীহ বুখারী, হা/৭০৪৫)। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী রহ, বলেন, ‘কেউ মন্দ স্বপ্ন দেখলে তাকে পাঁচটি কাজ করতে হবে। ১. আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে, অথাৎ আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বনির রজীম বলবে, ২. বাম দিকে তিনবার থুতু নিক্ষেপ করবে, ৩. পার্শ্ব পরিবর্তন করবে, ৪. সালাত আদায় করবে ও ৫. কারো কাছে তা বর্ণনা করবে না। যদি এই পাঁচটি কাজ করে, তাহলে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (ফাতহুল বারী ১৫/৪৮৩)।

▪️স্বপ্ন বানিয়ে বলার পরিণতি: মানুষের মাঝে মর্যাদার আসন লাভ, আলোচনার পাত্র হওয়া, আর্থিক সুবিধা লাভ কিংবা শত্রুকে ভীতচকিত করার মানসে মিথ্যা স্বপ্ন বলার অভ্যাস কিছু মানুষের আছে। জনসাধারণের অনেকেই স্বপ্নে বিশ্বাসী। স্বপ্নের সাথে তাদের সম্পর্কে খুবই নিবিড়। তারা একে বাস্তাব মনে করে ও এ মিথ্যা স্বপ্ন দ্বারা প্রতারিত হয়। অনেক মানুষ আছে, যারা ঠাট্টা-মশকারাচ্ছলে বা কাউকে হাসানোর উদ্দেশ্যে বানিয়ে স্বপ্ন বলে থাকে; অথচ সে জানে না তার পরিণতি কী হবে। মিথ্যা স্বপ্ন যে বলে বেড়ায় তার জন্য কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সবচেয়ে বড় মনগড়া বা মিথ্যার মধ্যে রয়েছে ঐ ব্যক্তি, যে নিজেকে স্বীয় পিতা ব্যতীত অন্যের সন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করে, যে স্বপ্ন সে দেখেনি তা দেখার দাবী করে এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেন নি তাঁর নামে তা বলে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৫০৯)। অপর বর্ননায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে লোক এমন স্বপ্ন দেখার ভান করল, যা সে দেখেনি তাকে দুটি যবের দানায় গিট দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হবে; অথচ সে তা কখনও পারবে না।’ (সহীহ বুখারী, হা/৭০৪২)। দু’টি চুলে গিরা দেওয়া একটি অসাধ্য কাজ। সুতরাং কাজ যেমন হবে তার ফলও তেমন হবে। প্রিয় পাঠক মানুষকে হাসানোর জন্য কেন আপনি মিথ্যা কথা বলেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি হাদীসে বলেছেন, সেই লোক ধ্বংস হোক, যে মানুষদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক, সে নিপাত যাক। (তিরমিযী হা/২৩১৫, হাদীস হাসান)। অতএব, বানিয়ে মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।

▪️বিবেকবিরোধী স্বপ্ন: কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল ফেরেশতা তাকে মন্দ কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। এক্ষেত্রে এই স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে মন্দ কাজ করা যাবে না। কারণ, ফেরেশতা কখনো মানুষকে মন্দ কাজ করার জন্য আহ্বান জানান না। সুতরাং এটা বিবেকবিরোধী স্বপ্ন, এর উপর আমল করা যাবে না। পাঠকদের প্রতি অনুরোধ রইল, আপনারা স্বপ্নের ব্যাপারে সাবধান হোন! যার তার স্বপ্ন শুনেই তার উপর আমল শুরু করবেন না; বরং দেখবেন স্বপ্নটি শরীআতের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা। যদি সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে এর উপর ভিত্তি করে কোনো কাজ করা যাবে না। আর যদি সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলে বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। মনে রাখবেন, অনেক সময় স্বপ্নে যা দেখা যায়, হুবহু তা বাস্তবে সংঘটিত হয় না; বরং এর ব্যাখ্যা ভিন্ন ধরনের হয়। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য যে, স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা শরীআত সম্মত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেও কিছু স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করতেন। যেমন: লম্বা জামার ব্যাখ্যা করেছেন দ্বীন, দুধ পানের ব্যাখ্যা করেছেন ইলম ইত্যাদী। (মিশকাত, হা/৬০৩০; সহীহ বুখারী, হা/৩৬৮১; মুসলিম, হা/২৩৯০)। তাই সপ্নের ব্যাখ্যা শরীয়ত সম্মত হলেও সব ব্যাখ্যাকে শরীআত মনে করা উচিত নয়। কেননা ব্যাখ্যা ভুলও হতে পারে। যেমনটি আবু বকর সিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর ক্ষেত্রে হয়েছিল। তিনি একটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে চাইলে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, ‘ঠিক আছে তুমি এর ব্যাখ্যা দাও। ব্যাখ্যা করার পর যখন তিনি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সম্বোধন করে বললেন, আচ্ছা আমাকে বলুন, আমি ঠিক ব্যাখ্যা করেছি, না ভুল? নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কিছু ঠিক বলেছ। আর কিছু ভুল বলেছ। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহর কসম! আপনি অবশ্যই আমাকে বলে দিবেন যা আমি ভুল করেছি। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কসম কর না।’ (সহীহ বুখারী, হা/৭০৪৬;সহীহ মুসলিম, হা/২২৬৯)। এ জন্যই ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘ভুল ব্যাখ্যাকারীর ব্যাখ্যাকে প্রথমেই চূড়ান্ত বলে মনে না করা’ মর্মে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন। (অধ্যায় নং ৯১, অনুচ্ছেদ নং ৪৭)।
.
পরিশেষে,জেনে রাখা ভাল যে,স্বপ্নে নিজের বা অন্য কোন মৃত ব্যক্তিকে দেখতে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক্ষণে যদি কেউ স্বপ্নে এরূপ মৃত ব্যক্তিকে ভাল অবস্থায় দেখে বা মৃত ব্যক্তিকে ভাল কোন সংবাদ বা উপদেশ দিতে শুনে, তবে আল্লাহর শুকরিয়া করবে। রাসূল (ﷺ) বলেন, যখন তোমরা কেউ ভালো স্বপ্ন দেখবে, তখন আলহামদুলিল্লাহ পড়বে এবং সে নিজের প্রিয় লোকদের কাছে তা বলতে পারে। (বুখারী হা/৬৯৮৫)। আর যদি মৃত ব্যক্তিকে খারাপ অবস্থায় দেখা যায় বা সে খারাপ সংবাদ প্রদান করে তাহলে বুঝতে হবে যে, এই স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। এক্ষেত্রে রাসূল (ﷺ) এর নির্দেশনা হলো, বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে ‘আ‘ঊযুবিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম’ বলবে এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করবে। (মুসলিম হা/২২৬২, মিশকাত হা/৪৬১৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে দাঁড়িয়ে (দু’রাক‘আত) সালাত আদায় করবে এবং কাউকে বলবে না। কারণ এই স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করে না। (মুসলিম হা/২২৬১-৬৩; বুখারী হা/৭০৪৪; মিশকাত হা/৪৬১২)। কিন্তু সমাজে খারাপ স্বপ্ন দেখলে বা মৃত ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখলে দান-খয়রাত করার যে প্রথা সমাজে চালু আছে তা বিদ‘আত। এগুলো থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। বরং মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের জন্য যেকোন সময় দো‘আ ও সাদাক্বা করা যায়। [সহীহ মুসলিম হা/৯২০, ১৬৩১; বুখারী হা/১৩৮৮; মিশকাত হা/১৬১৯, ১৯৫০] মহান আল্লাহ সবাইকে কোরআন সুন্নাহর পথে অটল থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________
উত্তর প্রদানে:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।