ইলম অর্জনের হুকুম কি? ইলম গ্রহণের ক্ষেত্রে সালাফদের মূলনীতি কি ছিল?

প্রশ্ন: ইলম অর্জনের হুকুম কি? ইলম গ্রহণের ক্ষেত্রে সালাফদের মূলনীতি কি ছিল? কোন বিদ্বানের নিকট থেকে ইলম বা ফাতওয়া নেয়া যাবে? কারো নিকট থেকে ফাতওয়া গ্রহণ ও বর্জনের ক্ষেত্রে শারঈ মানদন্ড কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করা সকল মুসলিম নারী-পুরুষ সবার জন্য আবশ্যক। দুনিয়াতে চলার জন্য ও ইবাদত করার জন্য দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করা ফরযে কিফায়া (ইবনে মাজাহ,২২৪)। অপরপক্ষে দ্বীনের খেদমত করার জন্য এবং দ্বীনের প্রচার-প্রসারে জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য। কারণ একজন প্রকৃত আলেম একটি জাতি বা দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। আর কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ইমাম বুখারী (রহঃ) সহীহ বুখারীতে ‘কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান অর্জন করা’ শিরোনামে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এবং তার প্রমাণে কুরআনুল কারীমের নিম্নোক্ত আয়াতটি নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاعْلَمْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ ‘সুতরাং জেনে রেখ, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই।’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯ সহীহ বুখারী পৃঃ ১৬)
মানুষ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারে। এজন্য মহান আল্লাহ যারা জানে এবং যারা জানে না তাদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। তিনি বলেন,বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান’? (সূরা যুমার ৩৯/৯)। যে ব্যক্তি যত বেশী জানবে সে তত বেশী আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করতে সচেষ্ট হবে এবং অহংকার করা থেকে দূরে থাকবে। সাথে সাথে প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহকে বেশী-বেশী ভয় করবে। এটাই একজন আলেমের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ বলেন,আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে; আল্লাহ পরক্রমশালী ক্ষমাশীল।’(সূরা ফাতির ৩৫/২৮)।অপর আয়াতে বলেন,বলুন! অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক হতে পারে?’(সূরা রা‘দ ১৩/১৬)। রাসূল (সাঃ) বলেন,অধিক ইবাদত করার চেয়ে অধিক ইলম অর্জন করা উত্তম।(বায়হাকী,৫৭৫১ মিশকাত হা/২৫৫;সহীহুল জামে‘ হা/১৭২৭)
.
দ্বীনের ইলম অর্জনের হুকুম সম্পর্কে ইবনে উসাইমিন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,শর‘য়ী জ্ঞান অর্জন করা ফরযে কিফায়া,যা যথেষ্ট পরিমাণ ব্যক্তি আদায় করলে অন্যদের বেলায় সুন্নাত হয়ে যায়। আবার কোনো কোনো সময় সকল মানুষের উপর জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক তথা ফরযে আইন হয়ে যায়। যেমন;কোনো মানুষ যদি আল্লাহ তা‘আলার কোন ইবাদত করতে চায়, তাহলে তার উপর জেনে নেওয়া আবশ্যক হয়ে যায় যে, কীভাবে সে আল্লাহ তা‘আলার জন্য এই ইবাদতটি করবে এবং এর মতো আরও (আল্লাহর উদ্দেশ্যে) অন্যান্য ইবাদত করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা আবশ্যক তথা ফরযে আইন। সুতরাং যাকে তার নিজের ও পরিবারের প্রয়োজন-পূরণ শর‘য়ী জ্ঞান অর্জন করা থেকে বিরত রাখে, অথচ সে আবশ্যকীয় ইবাদতের ব্যাপারে যত্নবান, তার ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হল, এটি ওযর বলে গণ্য হবে এবং তার কোন পাপ হবে না। কিন্তু তার জন্য উচিত হবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী শর‘য়ী জ্ঞান অর্জন করা।( ইবনু ‘উসাইমীন ফতোয়া ইসলামীয়া: ১ / ১৭৪)
.
শাইখ সালেহ আল ফাওযান (হাফি.) বলেন: ‘’দাঈ হওয়ার পূর্বশর্ত হলো ইলম অর্জন করা। ইলম অন্বেষণ সবার আগে। বিশেষ করে তাওহীদ-শিরক ও হালাল-হারাম বিষয়ে ইলম থাকা অত্যন্ত জরুরি। কেননা ইলম যদি না থাকে, তাহলে ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহ্বানে সক্ষম হবে না। আর যদি ইলম ছাড়া দাওয়াত দিয়ে থাকে তাহলে সে ভুল করবে।

◾ইলম গ্রহণের ক্ষেত্রে সালাফদের মূলনীতি কি ছিল?
______________________________________
কারো নিকট থেকে ইলম গ্রহনের ক্ষেত্রে সালাফদের
মূলনীতি ছিল—যার কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করা হবে, তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া এবং সে বিশ্বস্ত ও যোগ্য প্রমাণিত হওয়ার পর তার কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করা। আবূ হুরাইরাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “শেষ যুগে কিছু সংখ্যক প্রতারক ও মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের কাছে এমন সব হাদীস বর্ণনা করবে যা কখনও তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা শোনোনি। সুতরাং তাদের থেকে সাবধান থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তারা যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করতে পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনাহ’য় না ফেলতে পারে।”(সহীহ মুসলিম, হা/৭; ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ- ৪ মিশকাত,১৫৪)·
.
ইবরাহীম বিন ‘আব্দুর রাহমান আল-‘উযরী কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,প্রত্যেক আগত দলের মধ্যে সৎকর্মপরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য মানুষ (কিতাব ও সুন্নাহ’র) এই ইলম গ্রহণ করবে। আর তারাই কিতাব ও সুন্নাহ’র ইলমের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘনকারী ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক কৃত রদবদল, বাতিলপন্থিদের মিথ্যাচার এবং জাহিল ব্যক্তিদের ভুল ব্যাখ্যা খণ্ডন করবে।”(বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/২১৪৩৯; ইবনু বাত্বত্বাহ, ইবানাতুল কুবরা, হা/৩৪; মিশকাত, হা/২৪৮; সনদ: সহীহ)
.
ইলম গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রখ্যাত তাবি‘ঈ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১০ হি.] বলেছেন, ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﺩِﻳﻦٌ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮُﻭﺍ ﻋَﻤَّﻦْ ﺗَﺄْﺧُﺬُﻭﻥَ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ “নিশ্চয় এ ‘ইলম হলো দ্বীন। কাজেই কার কাছ থেকে তোমরা দ্বীন গ্রহণ করছ তা যাচাই করে নাও।”[সাহীহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ- ৫]
.
ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অন্য কাউকে অনুকরণ করতে চায়, তাহলে সে যেন যারা মারা গেছেন তাঁদের অনুকরণ করে। আর তাঁরা হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহাবীগণ। তারা এ উম্মতের সবচেয়ে উত্তম লোক; অন্তরের দিক থেকে তারা নেককার, ইলমের দিক থেকে গভীর, কৃত্রিমতা প্রকাশে খুবই কম। তারা এমন এক কাফেলা, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর সাহাবী হিসাবে মনোনীত করেছেন এবং দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চয়ন করেছেন। সুতরাং তোমরা চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে এবং পথ চলার ক্ষেত্রে তাঁদের অনুকরণ কর; কারণ তাঁরা সকলেই ছিলেন সঠিক পথ ও হেদায়াতের উপর।’[ইমাম বাগাভী, শারহুস সুন্নাহ, হা/১০৪, ১/২১৪]
.
ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমাদের কাছে আক্বীদা ও সুন্নাতের মূলনীতি হচ্ছে, রাসূল (ﷺ)-এর সাহাবীগণ যে পথের উপর ছিলেন তা আঁকড়ে থাকা, তাদের অনুসরণ-অনুকরণ করা। কারণ তাঁরা অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। আর বিদ‘আতকে প্রত্যাখ্যান করা। প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। তর্ক-বিতর্ক পরিত্যাগ করা। কেননা তা আহলুস সুন্নাহর বৈশিষ্ট্য নয়। বরং ঝগড়া, তর্ক-বিতর্ক করা বিদ‘আতীদের বৈশিষ্ট্য।’(লালকাঈ, শারহু উছূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাহ, ১১/৫)।

⚫কোন বিদ্বানের নিকট থেকে ইলম বা ফাতওয়া নেয়া যাবে? শরীয়তে ফাতওয়া গ্রহণ ও বর্জনের ক্ষেত্রে শারঈ মানদন্ড কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
কোন আলেমের নিকট থেকে ইলম নিতে হবে মহান আল্লাহ সেই মূলনীতি পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যদি তোমরা না জান তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর দলিল পত্র সহ(সূরা নাহল,১৬/৪৩-৪৪)।উক্ত আয়াতে জ্ঞানী বা আহলে যিকির কারা সেটাও আল্লাহ বলে দিয়েছেন, নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক(সূরা হিযর,১৫/৯)।উক্ত আয়াতে যিকির অর্থ হল ওহী অর্থাৎ পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস। সুতরাং যার কাছে ওহীর জ্ঞান আছে তার কাছে থেকে ইলম নিতে বলেছেন। একজন আলেমের মধ্যে কোন ধরনের বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে তিনি ফাতওয়া দিতে পারবেন এবং তার নিকট থেকে ইলম অর্জন করা বা ফাতওয়া নেয়া যাবে। এমন প্রশ্নের উত্তরে বিগত শতাব্দীর সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ,ফাদ্বীলাতুশ শাইখ-শায়খ ইবনে উসাইমিন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:একজন আলেমের মধ্যে ন্যূনতম নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলে ফাতওয়া দিতে পারবেন এবং তার নিকট থেকে ইলম অর্জন করা বা ফৎওয়া নেওয়া যাবে।যেমন,

◾কোন আলেমের নিকট থেকে ইলম অর্জন করা বা ফাতওয়া নেওয়া যাবে তন্মধ্যে অন্যতম হলো-
_____________________________________
▪️(১)ফতুয়া দানকারী ব্যক্তি আল্লাহভীরু হওয়া।
▪️(২) দলীল সহকারে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান অর্জন করা।
▪️(৩) কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত সিদ্ধান্তের কাছে নিরংকুশভাবে আত্মসমর্পণের মানসিকতা থাকা
▪️(৪) নবী-রাসূলগণের দাওয়াতী নীতির অনুসারী হওয়া।
▪️(৫) সালফে সালেহীনের বুঝ (মানহাজ)অনুযায়ী ফাতওয়া দেওয়া।
▪️(৬) হিকমত বা প্রজ্ঞা থাকা।
▪️(৭) হক-এর উপর দৃঢ় থাকা।
▪️(৮) উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া।
▪️(৯) ইলম অনুযায়ী আমল করা।
▪️(১০) নিজের বিরুদ্ধে হ’লেও সর্বদা ইনসাফের সাথে হক কথা বলা।
▪️(১১) ব্যক্তির মধ্যে ইখলাস থাকা প্রভৃতি।
(দ্র.ইবনে উসাইমিন,লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ৬৪/১৮)

◾কোন কোন বিদ্বানের নিকট থেকে ইলম বা ফাতওয়া নেয়া যাবেনা?
_____________________________________
ইলম আল্লাহ প্রদত্ত এক অফুরন্ত নেয়ামত। যা জ্ঞানী ও
মূর্খদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘বলুন! যারা জানে এবং যারা জানে না তার কি সমান?’ (যুমার ৩৯/৯)। তিনি অন্যত্র বলেন,‘বলুন! অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হ’তে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক হ’তে পারে?’ (রা‘দ ১৩/১৬)।ইলম নিতে হয় আলেমদের থেকে। কিন্তু অনেকে আলেম বা আলেমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখেছেন এমন শায়খদেরকে চেনেন না। এই সুযোগে মিডিয়া ব্যবহার করে একশ্রেণীর অজ্ঞ লোকেরা লোকদের মাঝে “বড় আলেম” সেজে বসে আছে।সুতরাং কুরআন সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে নিম্নলিখিত আক্বীদা মানহাজের ব্যক্তিদের থেকে ইলম বা ফাতাওয়া গ্রহনে বিরত থাকুন।যেমন:-

▪️(১)যে ব্যক্তির আক্বীদা মানহাজ বিশুদ্ধ নয়, বরং শিরক-বিদআত মিশ্রিত।যেমন:মাজারে প্রার্থনাকারী,
তাবীয ব্যাবহারের পক্ষে ওকালতি কারী, পীর-মুরিদী প্রথায় বিশ্বাসী,ঈদে মিলাদুন্নবী পালনকারী, মৃত ব্যক্তির জন্য ৪ দিন, ৪০ দিন,পালনকারী ইত্যাদি ব্যক্তিদের থেকে ইলম নেয়া যাবেনা।(সূরা নিসা,৪৮ মায়েদা,৭২ সহীহ মুসলিম,১৭৭৮ মিশকাত,১৪)

▪️(২).আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) গায়েব সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদা যাদের মধ্যে রয়েছে।যেমন:আল্লাহ্ নিরাকার, সর্বত্র বিরাজমান, রাসূল (ﷺ) নূরের নবী, মাটি থেকে সৃষ্টি নন, সৃষ্টি স্রষ্টার অংশ,অলীরা গায়েব জানেন,
কেয়ামত অমুক সালে হবে, ইমাম মাহাদী অমুক সালে প্রকাশি হবে ইত্যাদি। এরূপ বিশ্বাস যাদের মধ্যে রয়েছে তাদের কাছ থেকে ইলম নেয়া যাবেনা।(সূরা নমল,৬৫ সূরা ত্বহা,৫ সূরা কাহাফ,১১০)

▪️(৩)যে ব্যক্তি শরীয়তের মূল যেমন:আক্বীদা মানহাজ হালাল,হারাম,ফরয,ওযাজিব,সুন্নাত,নফল,মুবাহ,কাফের ফাতওয়া দেয়া সম্পর্কে সালাফদের মানহাজ অনুযায়ী সঠিক জ্ঞান রাখেনা। এমন ব্যাক্তির নিকট থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়।(ইবনে মাজা,২২৪ আবুদাঊদ হা/৩৬৫৭ বায়হাকী,৫৭৫১মিশকাত হা/২৫৫)

▪️(৪)যে আলেমের মধ্যে কুরআন,সহীহ হাদীস,
ফিকহ, উসূলে ফিকহ,নাসিখ এবং মানসূখ ইত্যাদি সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞান নেই,ফলে ইজমা বিরোধী অথবা মানসুখ দলীল বা জাল জয়ীফ হাদীস অনুযায়ী কোন হুকুম দেন। এধরনের ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়।(আবুদাঊদ হা/৩৬৫৭ মিশকাত হা/২৪২)
শায়খ ইবনে উসাইমীন [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যঈফ হাদিসকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না এবং তাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামের সঙ্গে সম্পৃক্তও করা যাবে না…(উসাইমীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, টেপ নং ২৭৬)

▪️(৫).সেই নির্বোধ লোক,যে প্রকাশ্যে মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করে; যদিও সে লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনাকারী বা জাননে ওয়ালা হয়।এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়। (সুরা ত্বাহা, ১২৪ সূরা আহযাব,৫৮ আবূদাঊদ হা/৪৮৮০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৮৪ ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬২)

▪️(৬) সেই বিদ‘আতী, যে তার প্রবৃত্তির দিকে মানুষকে আহ্বান করে। এবং বিদআতে হাসানাহ (উত্তম সৃষ্ট বস্তু) ও বিদআতে সায়্যিআহ (মন্দ সৃষ্ট বস্তু) নামে দুই প্রকার বিদআত আছে বলে বিশ্বাস করে এবং সেটা প্রচার করে।এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়।কেননা শরীয়তে হাসানাহ, সায়্যিআহ নামে কোন ভাল-খারাপ বিদআত নেই।বরং সকল বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম।’(মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১ নাসাঈ হা/১৫৭৮)

▪️(৭) যে ব্যক্তির অন্তরে ইখলাস নেই।যে মানুষের সাথে কথাবার্তায় মিথ্যা বলে, যদিও আমরা তাকে হাদীসের ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী বলে অভিযুক্ত করি না।এমন ব্যক্তির কাছ থেকেও ইলম নেয়া নিরাপদ নয়।(সূরা বাইয়্যিনাহ-৫, সূরা যুমার-১১,সহীহ বুখারী-৩৩) ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) (৭০১-৭৭৪ হি.) বলেন,আল্লাহ তা‘আলা কোন আমল গ্রহণ করেন না, যতক্ষণ না এ দু’টি রুকন তাতে বিদ্যমান থাকে। যথা- (১) শরী‘আতের পদ্ধতি অনুযায়ী হওয়া এবং (২) শিরক মুক্ত অর্থাৎ ইখলাসের সাথে হওয়া’।(তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪০৩।)

▪️(৮) সেই সৎকর্মপরায়ণ ইবাদতগুজার মহৎ বান্দা, যে কুরআনের আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদীস স্মরণে রাখতে পারে না।ফলে কিয়াস করে ভুল ফাতওয়া দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়।(বায়হাকী,৫৭৫১ মিশকাত হা/২৫৫;সহীহুল জামে‘ হা/১৭২৭ ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬২)

▪️(৯) যে হাদীস সহীহ-জয়ীফ যেমন: সনদ, রিজাল প্রভৃতি সম্পর্কে উসূল জানেনা এবং দলীল থেকে বিধি-বিধান বের করার যোগ্যতা রাখেনা,ফলে ইলম বিহীন বিনা দলিলে ফতোয়া দেয়।এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ইলম নেয়া নিরাপদ নয়।মুগীরাহ ইবনু শু‘বা [রাযিয়াল্লাহু আনহু] বলেন, নবী (ﷺ)বলেছেন, ‘আমার পক্ষ হতে যে লোক কোন হাদীস বর্ণনা করে অথচ সে জানে যে, তা মিথ্যা, তাহলে সে মিথ্যুকদের একজন।’(তিরমিযী, হা/২৬৬২; মুসলিম মুক্বাদামাহ্, ইবনু মাজাহ, হা/৪১,আবুদাঊদ হা/৩৬৫৭ প্রভৃতি; মিশকাত হা/২৪২)

▪️(১০)যে ইজতিহাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শারঈ জ্ঞান জানেনা।যেমন: ঘটনার সাথে বিধি-বিধান সম্বলিত আয়াত ও হাদীস সমূহ জানেনা এবং যে সব দলীলের মাধ্যমে হুকুম ভিন্ন হয়ে যায়,তা জানেনা। যেমন: خاص করা,শর্তযুক্ত করা প্রভৃতি। যার ফলে এদের দাবি বিরোধী কোন হুকুম দিয়ে বসেন। এমন ব্যক্তি থেকে ফতোয়া নেয়া নিরাপদ নয়।(সূরা যারিয়াত-১০, তিরমিযী, হা/২৬৬২; মুসলিম মুক্বাদামাহ্, ইবনু মাজাহ, হা/৪১ আবুদাঊদ হা/৩৬৫৭ প্রভৃতি; মিশকাত হা/২৪২)

▪️(১১)যে আক্বীদা মানহাজের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে শুধু আমল বা ফজিলতের আলোচনা করে এবং যে ইখতেলাফি মাসালায় কুরআন সুন্নাহর ইত্তেবা ও প্রসিদ্ধ সালাফদের মতামত প্রাধান্য না দিয়ে তাক্বলীদে শাখছী অর্থাৎ অন্ধ অনুসরণ করে নির্দিষ্ট ইমামের মতামত প্রাধান্য দেয়,এমন ব্যক্তি থেকে ইলম বা ফাতওয়া নেয়া নিরাপদ নয়।(সূরা ফুরকান,২৩ সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৩১৪ সহীহ বুখারী, হা/৫০৬৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০১)

▪️(১২) এমন ব্যক্তি যার আক্বীদা মানহাজ মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়, ফলে কোন মানহাজ অনুযায়ী কথা বলে বুঝা মুসকিল হয়ে যায়।আবার সবার মন জয় করে থাকার জন্য যে দলের কাছে যায় সেটির গুন গায় এবং মাসয়ালার ক্ষেত্রে এটাও ঠিক,ওটাও ঠিক অর্থাৎ শৈথিল্য করে।এমন আলেমদের নিকট থেকে ইলম বা ফাতওয়া নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই।” (ত্বাবারানী ১৪৭৯৫, আহমাদ ২০৬৫৩ হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৮২৩) ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা দ্বীনের ইলম। সুতরাং তোমরা দেখ যে, কাদের নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছ।(ইবনু আব্দুল বার্র, আত-তামহীদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫)।
.
প্রিয় পাঠক,উপরোক্ত ১২টি বৈশিষ্ট্য দেশের কোন কোন আলেমদের মধ্যে রয়েছে সেটা কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফদের মানহাজ দ্বারা যাচাই-বাছাই করলে আপনারা নিজেরাই আমার চেয়ে ভাল জানবেন। তাই নির্দিষ্ট করে কারো নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছিনা। প্রিয় তৌহিদী মুসলিম দ্বীনি ভাই বোন,দুনিয়ার জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত কিন্তু খুবই বিপদজনক একটা সফর। এই সফরে অনেকে সঠিক ট্রেইনে চড়ে বসে, যার ফলে সে তার আসল ঠিকানা জান্নাতে পৌঁছাতে পারে। আবার অনেকে খেল-তামাশায় ব্যস্ত থেকে ট্রেইন ফেইল করে, কিংবা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ভুল ট্রেইনে চড়ে ঠিকানা হারিয়ে দুঃখের সাগরে ভাসে। সুতরাং আখিরাতের জীবনে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হতে হলে দুনিয়াতেই দ্বীনের বিশুদ্ধ ঈমান,আমল ও ইলমের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। কেননা দ্বীনের ইলম একটি সম্পদ,যার মূল দুনিয়ার সাথে তুলনীয় নয়।আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন) ‘‘যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার (মূল্য বা ওজন) থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তার (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।’’(তিরমিযী ২৩২০, ইবনু মাজাহ ৪১১০)মানুষ বাজার থেকে মাছ, আলু,পটল কিনার সময় যাচাই-বাছাই করে কিনে। কিন্তু দ্বীনের ইলম নেয়ার ক্ষেত্রে কোন যাচাই-বাছাই করেনা,যা অত্যন্ত দুঃখজনক।ইয়া আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে হেফাযত করো।
.
শাইখুল ইসলাম হুজ্জাতুল উম্মাহ ইমাম মালিক বিন আনাস (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃত: ১৭৯ হি.)বলেছেন,“চার ধরনের লোক থেকে ‘ইলম গ্রহণ করা যাবে না: (১) সেই নির্বোধ লোক, যে প্রকাশ্যে মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করে; যদিও সে লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনাকারী হয়। (২) সেই বিদ‘আতী, যে তার প্রবৃত্তির দিকে মানুষকে আহ্বান করে। (৩) যে ব্যক্তি মানুষের সাথে কথাবার্তায় মিথ্যা বলে,যদিও আমি তাকে হাদীসের ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী বলে অভিযুক্ত করি না। (৪) সেই সৎকর্মপরায়ণ ইবাদতগুজার মহৎ বান্দা, যে নিজের বর্ণিত হাদীস স্মরণে রাখতে পারে না।” [ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬২; মুআসসাতুর রিসালাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]
.
প্রখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)(মৃত: ৩২ হি.) বলেছেন,“যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীনকে সম্মান করতে পছন্দ করে, সে যেন বিদ‘আতীদের সংস্রব বর্জন করে। কেননা বিদ‘আতীদের সংস্রব খোস-পাঁচড়ার চেয়েও অধিক সংক্রামক।”[(ইমাম ইবনু ওয়াদ্বদ্বাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-বিদা‘উ ওয়ান নাহয়ু ‘আনহা; আসার নং: ১৩১; পৃষ্ঠা: ৯৬; মাকতাবাতু ইবনি তাইমিয়্যাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) (মৃত: ৬৮ হি.) বলেছেন, তোমরা বিদ‘আতীদের মজলিসে বসো না। কেননা তাদের মজলিসসমূহ হৃদয়কে রোগগ্রস্ত করে।’(ইবনুল বাত্তাহ, আল-ইবানাহ আল-কুবরা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩৮)।
.
সালাম ইবনু মুতীঈ বলেন,’জনৈক ব্যক্তি আইয়ূব নামক বিদ‘আতীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হে আবু বকর! আমি কি তোমার নিকট একটি কথা জিজ্ঞেস করব? তিনি বললেন, আইয়ূবকে পরিত্যাগ কর এবং অর্ধেক কথাও নয় অর্ধেক কথাও নয় অর্থাৎ তার কোন কথা শ্রবণ কর না।(আল-ফিরইয়াবী, আল-কাদর, হা/৩৩৫)।
.
আরো পরিষ্কার করে ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা দ্বীনের ইলম। সুতরাং তোমরা দেখ যে, কাদের নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছ।’ (ইবনু আব্দুল বার্র, আত-তামহীদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫)।
.
ইবরাহীম নাখয়ী (রহ.) বলেন, বিদাতীদের নিকট বসো না, তাদের সাথে কথা বলো না। আমি আশংকা করি যে তারা তোমাদের অন্তরকে প্রভাবিত করে ফেলবে। (‘আল-বিদা‘ ওয়ান নাহয়্যু আনহা’’ পৃ. ৫৬, আল-ই‘তিছাম ০১/১৭২)
.
মুহাদ্দিস যায়েদ বিন আসলাম বলেন,‘হাদীস মিথ্যা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও যে তার উপর আমল করে সে শয়তানের খাদেম।’[মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী, তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত বৈরুত : দারুল এহইয়াইত তুরাছ আল-আরাবী, ১৯৯৫/১৪১৫ পৃঃ ৭; ড. ওমর ইবনু হাসান ফালাতাহ, আল-ওয়ায‘উ ফিল হাদীছ দিমাষ্ক : মাকতাবাতুল গাযালী, ১৯৮১/১৪০১ ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৩৩]
.
ইমাম মালেক (রহঃ) দুই-তৃতীয়াংশ ফৎওয়ার ক্ষেত্রে না জানার ওযর পেশ করেছেন। তিনি বলতেন, ‘আলেমের রক্ষাকবচ হ’ল ‘আমি জানি না বলা’। যদি সে এ রক্ষাকবচ ব্যবহারে গাফেল হয়, তাহ’লে সে ধ্বংসে নিক্ষিপ্ত হবে।’[সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/১৬৭]
.
উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক আলেমের কর্তব্য হ’ল জেনে-শুনে যাচাই-বাছাই করে সহীহ দলীলভিত্তিক ফৎওয়া দেওয়া। আর জানা না থাকলে ‘আল্লাহ ভালো জানেন’ বলা।(সহীহ বুখারী,৪৭৭৪ সহীহ মুসলিম,২৭৯৮ মিশকাত হা/২৭২)
.
কুরআন-হাদীসের হালাল-হারাম ও স্পষ্ট বিধান সমূহ সকলের জন্য সহজবোধ্য। কেবল অস্পষ্ট ও গূঢ় বিষয়গুলির জন্য যোগ্য আলেমের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন হয়।এজন্য মাযহাব বা কাউকে অন্ধ অনুসরণ না করে নির্বিশেষে যেকোন বা একাধিক আলেমের নিকট থেকে দলিলসহ মাসআলা জেনে নিবেন। যেভাবে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন সূরা নাহলের ৪৩-৪৪ ও সূরা আম্বিয়ার ৭ নং আয়াতে এবং যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম একটি বিষয়ে একাধিক সাহাবীকে জিজ্ঞেস করতেন এবং পরস্পর দলিল চাইতেন।(দেখুন বিস্তারিত, সূরা নাহল,৪৩-৪৪ সূরা আম্বিয়া,৭ আবুদাঊদ হা/৪৬৯৯, ৩৬৪১ তিরমিযী হা/৩০০০ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১১৫,৩৫৫৪)
.
কোন আলেম যদি জ্ঞান অর্জন ব্যতীত ইচ্ছাকৃত ভাবে দলীলবিহীন ফৎওয়া দেন, তাহ’লে তার দায়িত্ব তার উপরেই। (আবুদাঊদ হা/৩৬৫৭ প্রভৃতি; মিশকাত হা/২৪২)
.
◾আমি বাংলাদেশ এবং ভারতের বাংলাভাষী কয়েকজন বিশুদ্ধ আক্বীদা মানহাজের আলেমের নাম উল্লেখ করছি যাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি।যতটুকু দেখেছি আলহামদুলিল্লাহ আক্বীদা মানহাজে তারা বিশুদ্ধ। দলিল বিহীন মনগড়া কথা বলেন না।অনেকের মধ্য থেকে এমন ১৪ জন আলেমের নাম তুলে ধরছি, যাদের কাছ থেকে ইলম বা ফতোয়া নিতে পারেন ইনশাআল্লাহ।যেমন:
________________________________________
১) শায়খ মতিউর রহমান মাদানী হা’ফিজাহুল্লাহ
(২) শায়খ শহীদুল্লাহ খান মাদানী হা’ফিজাহুল্লাহ
(৩)শায়খ আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া হা’ফিজাহুল্লাহ
(৪) শায়খ আব্দুল হামীদ ফাইযি হা’ফিজাহুল্লাহ
৫) শায়খ ড. আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রহি’মাহুল্লাহ
৬) শায়খ আব্দুল্লাহ আল-কাফি হা’ফিজাহুল্লাহ
(৭) শায়খ সাইফুদ্দিন বেলাল হা’ফিজাহুল্লাহ
(৮) শায়খ আখতারুল আমান হা’ফিজাহুল্লাহ
(৯)শায়খ ড. সাইফুল্লাহ মাদানি হা’ফিজাহুল্লাহ
(১০) শায়খ ড.মনজুরে এলাহী হা’ফিজাহুল্লাহ
(১১)শায়খ আব্দুর রাক্বীব বুখারী হা’ফিজাহুল্লাহ
(১২) শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী হা’ফিজাহুল্লাহ
(১৩)মুফতি ড.ইমান হোসাইন হা’ফিজাহুল্লাহ
(১৪) শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী হা’ফিজাহুল্লাহ প্রমুখ আলেমগণ।এছাড়াও আরো অনেক প্রসিদ্ধ সালাফী আলেম রয়েছেন পোস্ট বড় হয়ে যাবে বিধায় তাদের নাম উল্লেখ করলাম না। উপরোক্ত ১৪ জনের ফেসবুক আইডি কমেন্টে দিয়ে দিব Following দিয়ে রাখতে পারেন।
.
#বিশেষ_দ্রষ্টব্য:একটি বিষয় ভুলে গেলে চলবেনা যে,
কোনো মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নয়।সবাই ভুল করে। (আবুদাউদ মিশকাত হা/২৩৪০) আবার কেউই ইসলামের সবজান্তা নন।আল্লাহ বলেছেন প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর জ্ঞানী রয়েছে(সূরা ইউসুফ,৭৬)।তাই যখনই কারো কোন ফতোয়া কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী বলে প্রমাণিত হবে তখনই নির্দ্বিধায় তা বর্জন করে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক ফতোয়া গ্রহণ করতে হবে। ফতোয়া প্রদানকারী আলিম যত বড় আলেম, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহ ও গবেষক হোন না কেন। কিছু ভুলভ্রান্তির কারণে সুন্নাহপন্থী কোন আলেমের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা জায়েয নেই। বরং তাদের জন্য দুআ করতে হবে এবং কল্যাণ কামনা করতে হবে। এটি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মধ্যমপন্থী নীতি।
.
পরিশেষে, হে আমার প্রিয় ভাই-বোন! প্রিয় নবী রাসূল (ﷺ)-এর যুগেই যখন মানহাজের অনুসরণ ছাড়া বিকল্প কোন পথ ছিল না,তাহলে বর্তমান অসংখ্য ভ্রষ্টতার মাঝে মানহাজের অনুসরণ ছাড়া একজন মুসলিম কিভাবে জান্নাতের পথ খুঁজে পাবে?। যেখানে রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘ইহুদীরা বিভক্ত হয়েছে ৭১ দলে, খ্রীস্টানরা বিভক্ত হয়েছে ৭২ দলে আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ দলে। একটি ব্যতীত সবই জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ঐ জান্নাতী দল কোনটি? তিনি বলেন, আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর আছি, তার উপর যারা থাকবে।’[তিরমিযী, হা/২৬৪১, সনদ সহীহ] অন্য হাদীসে এসেছে, ‘ভ্রান্ত ফের্কাগুলো অসংখ্য বিদ‘আত সৃষ্টি করবে এবং মানুষকে বিপদগামী করবে।’(আবু দাঊদ, হা/৪৫৯৭,সনদ হাসান)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়,

জুয়েল মাহমুদ সালাফী।

রচনাকাল-শনিবার
২৩শে জিলহজ, ১৪৪৩ হিজরি।
৪ঠা শ্রাবণ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ।
২৩ শে জুলাই, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ।