আল্লাহ্‌ তা’আলা সমস্তকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি বলতে কি বুঝানো হয়েছে

মহান আল্লাহর অসংখ্য সুন্দর নামের মধ্যে তিনটি নাম, আল-খালিক, আল-বারী, আল-মুসাওয়ির তিনটি নামের অর্থ: সৃষ্টিকর্তা, সৃষ্টিকারী, নির্মাণকারী, পরিকল্পনাকারী আকৃতি-দানকারী, অর্থাৎ আল-খালিক, আল-বারী, আল-মুসাওয়ির হলেন যিনি সমস্ত সৃষ্টিজগত সৃজন করেছেন, তিনি পূর্ব আকৃতি ব্যতীত এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর হিকমত অনুসারে তিনি সেগুলোকে সুবিন্যস্ত ও সুকাঠামো গঠন করেছেন, তিনি তাঁর প্রজ্ঞা অনুসারে সৃষ্টিজগতকে আকৃতি দান করেন যখন তারা অস্তিত্বে ছিল না। তিনি এ মহান গুণে সর্বদা ছিলেন আছেন এবং থাকবেন। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে মহান আল্লাহ তাআলা জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টির কথা বলেছেন। কোথাও মানুষকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করার কথা বলেছেন। কোথাও বলেছেন, তিনি সৃষ্টি জগতের প্রতিটি বস্তুকেই জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন। যেমন:
.
মহান আল্লাহ বলেন, (وَخَلَقْنَاكُمْ أَزْوَاجًا) অর্থাৎ আমি সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। (সূরা আন-নাবা: ৮)। অপর আয়াতে তিনি বলেন, سُبْحَانَ الَّذِيْ خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنْفُسِهِمْ وَمِمَّا لاَ يَعْلَمُوْنَ ‘মহাপবিত্র তিনি, যিনি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন সবকিছুকে, যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদরাজিকে এবং মানুষকে ও তাদের অজানা সব বস্ত্তকে।’(সূরা ইয়াসীন; ৩৬/৩৬)। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ ‘আমরা প্রত্যেক বস্ত্ত জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পার।’(সূরা যারিয়াত; ৫১/৪৯)।
.
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে যে আরবি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো أزواج,)আজওয়াজ) যার বহুবচন হলো زواج. যার অর্থ: জোড়া, মিল, সঙ্গী ইত্যাদি। أزواج বলতে দুইটি বস্তুর বৈপরিত্য অর্থাৎ, তিনি বিচিত্র ধরনের আকার-আকৃতি ও রঙে-বর্ণে সৃষ্টি করেছেন। যেমন: ধণাত্মকতা-ঋণাত্মকতা এবং এক সৃষ্টির বিভিন্নতার বিষয়ও এখানে চলে আসে। মোটকথা, জোড়ায় জোড়ায় সৃজনের নীতির ভিত্তিতে পৃথিবীর সমস্ত বস্তু সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের মত পৃথিবীর সকল সৃষ্টিকেও আল্লাহ নর ও মাদী করে সৃষ্টি করেছেন। এ ছাড়া আকাশে ও মাটির নিম্নদেশে যে সকল বস্তু তোমাদের অদৃশ্য, যা তোমাদের জ্ঞান-বহির্ভূত, তাদের মাঝেও জোড়া বা নর-মাদীর এই নিয়ম রেখেছি। অতএব, তোমরা সকল সৃষ্টিই জোড়া জোড়া। বৃক্ষাদির মাঝেও নর-মাদার একই নিয়ম আছে। এমনকি পরকালের জীবন ইহকালের জীবনের জোড়া সমতুল্য। আর ইহকালের জীবন পরকালের জীবনের জন্য একটি বিবেক-প্রসূত যুক্তি ও প্রমাণ স্বরূপও। উল্লেখ্য যে, অনেকে মনে করে أزواج (আজওয়াজ) মানে শুধু নারী-পুরুষ অথবা স্বামী স্ত্রীর জোড়া। কিন্তু এটি ভুল। বরং আজওয়াজ বলতে বুঝায় এমন শ্রেণী বা গ্রুপ যারা একে অপরকে পূর্ণ করে। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি। যেমন:

(১). কুফর ও ঈমান,

(২). সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য,

(৩). আলো ও অন্ধকার,

(৪). সূর্য-চন্দ্র,

(৫). রাত্রি ও দিন,

(৬). শীত-গ্ৰীষ্ম,

(৭). আকাশ ও পৃথিবী,

(৮). জিন ও মানব,

(৯). নর ও নারী,

(১০). সুশ্রী-কুশ্রী,

(১১). লম্বা-বেঁটে,

(১২). গৌরবর্ণ-কৃষ্ণবর্ণ,

(১৩). চওড়া ও সরু,

(১৪). স্থল-জল,

(১৫). উচু-নিচু,

(১৫). হালকা -ভারী

(১৬). সাহসী-ভীরু,

(১৭). সুস্থতা-অসুস্থতা,

(১৮). মিষ্টি-তিতা,

(১৯). চক্ষুষ্মান-অন্ধ,

(২০). পজেটিভ বা প্রোটন এবং নেগেটিভ বা ইলেকট্র্ন ইত্যাদি।
.
জেনে রাখা ভাল যে, শুধু উপরোক্ত এগুলিতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং আমাদের জানা-অজানা সকল ক্ষেত্রেই জোড়ার অস্তিত্ব রয়েছে, যা পরস্পরের বিপরীতধর্মী। আর এসব বিপরীতমূখী জোড়া জোড়া সৃষ্টি মহান স্রষ্টা আল্লাহর অনুপম নির্দশন। আর সকল কিছুর বিপরীতে বিজোড় একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার সত্তা। যিনি সৃষ্টি জগতের এই গুণ ও সকল প্রকার ত্রুটি থেকে মুক্ত ও পবিত্র। তিনি একক, অদ্বিতীয়,বিজোড়; তাঁর কোন জোড়া নেই। তাঁর কোন সমকক্ষ, সদৃশ, স্ত্রী, সন্তান,অংশীদার কিছুই নেই। একত্ব তাঁরই মাঝে নিহিত। তাই তিনি পূর্ণতার অধিকারী, অদ্বিতীয়-এক। সুন্দর নামসমূহ,পূর্ণ শ্রেষ্ঠ গুণাবলী এককভাবে শুধুমাত্র তাঁরই। যা আল্লাহ্ ছাড়া আর কারও ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কেননা তিনিই গুণাবলী ও কার্যাবলীতে একমাত্র পরিপূর্ণ সত্তা।মোটকথা, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর সত্তা ও গুণাবলীতে একক, তার কোন সমকক্ষ, শরীক নেই। সমগ্র কুরআন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত এমনকি সকল নবী-রাসূলদের রিসালাতের আগমন হয়েছিলো এ একত্ব ঘোষণা ও প্রতিষ্ঠার জন্যই। আল্লাহ্ ব্যতীত কোন হক মাবুদ বা ইলাহ নেই। (বিস্তারিত সূরা ইখলাস; ১১২/১-৪)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।