শরীয়তের দৃষ্টিতে ঘোড়ার গোশত খাওয়ার হুকুম

ঘোড়ার গোশত খাওয়া হালাল নাকি হারাম এই বিষয়ে আহালুল আলেমগনের মধ্যে কিছুটা মতানৈক্য থাকলেও অধিকাংশ সাহাবী এবং পরবর্তী প্রজন্মের আলেমদের বিশুদ্ধ মতে ঘোড়ার গোশত হালাল। এই মর্মে একাধিক বিশুদ্ধ দলিল রয়েছে। যেমন: জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের (যুদ্ধের) দিন গৃহপালিত গাধার গোশত হারাম করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত সম্পর্কে অনুমতি দিয়েছেন (সহীহুল বুখারী হা/ ৫৫২০, ৫৫২৪; সহীহ মুসলিম হা/১৯৪১) অপর বর্ননায় আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমরা একটি ঘোড়া নহর করলাম এবং সেটি খেলাম। (সহীহ বুখারী হা/৫৫১৯ আধুনিক প্রকাশনী- ৫১১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০০৯ সহীহ মুসলিম ১৯৪২,নাসায়ী ৪৪২১, ইবনু মাজাহ হা/ ৩১৯০ মুসনাদে আহমাদ হা/২৬৩৭৯) অপর এক বর্ননায় জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সফর করেছিলাম এবং ঘোড়ার গোশত খেতাম এবং তাদের দুধ পান করতাম। (সুনানে দারাকুতনী হা/৩৫৭২ সনদ সহীহ)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,ঘোড়ার গোশত খাওয়ার বৈধতার ব্যাপারে ‘উলামার মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। জামহূর সালাফ এবং তাদের পরবর্তী ‘উলামার মতে তা বৈধ এতে কোন কারাহিয়্যাত বা অপছন্দনীয়তা নেই। আর এটাই ‘আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র, ফাজালাহ্ ইবনু ‘উবায়দ, আনাস ইবনু মালিক, আসমা বিনতু আবূ বকর, সুওয়াইদ ইবনু গাফলাহ্, ‘আলকামাহ্, আসওয়াদ, ‘আত্বা, শুরাইহ, সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র, হাসান বাসরী, ইবরাহীম নাখ‘ঈ, হাম্মাদ ইবনু সুলায়মান, আহমাদ, ইসহক, আবূ সুর, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মাদ দাঊদ (রহিমাহুমুল্লাহ)-সহ জামহূর মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য। তবে ‘উলামার একদল এটাকে মাকরূহ মনে করেন তাদের মধ্যে ইবনু ‘আব্বাস, হাকাম, মালিক ও আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুমুল্লাহ) রয়েছেন। আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ঘোড়ার গোশত খাওয়াতে পাপ হবে, তবে তিনি হারাম উল্লেখ করেননি। তারা দলীল দিয়েছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর, গাধা। (সূরা নাহল ১৬/৮) তারা বলেন এই আয়াতে খাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও তারা খালিদ ইবনু ওয়ালীদ বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া, খচ্চর ও গাধার গোশত এবং প্রত্যেক দাঁতধারী হিংস্র প্রাণীর গোশত খেতে নিষেধ করেছেন- (জয়ীফ আবূ দাঊদ হা/৩৭৯০ নাসাঈ হা/৪৩৩২ সকল মুহাদ্দিসের মতে এ হাদীসটি যঈফ আবার কারো মতে হাদীসটি মানসূখ। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৪১ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং ৭০৩২০)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,আসমা (রাঃ) থেকে হাদীস এসেছে তারা মদিনায় থাকা কালে একটি ঘোড়া যবহ্‌ করেছিলেন পরে তারা সেটি খেয়েছেন। এটি ইঙ্গিত করে যে ঘোড়ার গোশত খাওয়া হালাল এতে কোন ভুল নেই। রাসসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের (যুদ্ধের) দিন গৃহপালিত গাধার গোশত হারাম করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত সম্পর্কে অনুমতি দিয়েছেন। আর যে হাদীসে ঘোড়া,খচ্চর ও গাধা খাওয়া নিষেধ করা হয়েছে, তা দুর্বল সহীহ নয়।(বিন বায অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-১৪৩)
.
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, শরী‘আতের হুকুম অনুযায়ী ঘোড়ার গোশত খাওয়া হালাল। এখন খাওয়া না খাওয়া রুচির ব্যাপার। কারো রুচি হলে খাবে রুচি না হলে নাও খেতে পারে,কিন্তু হালাল জিনিসকে, বিনা দলিলে হারাম বলার কোন সুযোগ নেই। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।