আপনি তো পর্দা করছেন কিন্তু পর্দা হচ্ছে কি আপনার

(১) মহিলাদের লেবাসের শর্তাবলী নিম্নরূপ: লেবাস (পোশাক) যেন দেহের সর্বাঙ্গকে ঢেকে রাখে। দেহের কোন অঙ্গ বা সৌন্দর্য যেন কোন বেগানা (যার সাথে বিবাহ বৈধ) পুরুষের সামনে প্রকাশ না পায়। কেননা, নবী (সা:) বলেন: “মেয়ে মানুষের সবটাই লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে পরিশোভিতা করে তোলে।” (তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ: ৩১০৯) সবটাই যেহেতু লজ্জাস্থান তাই মুখ ঢেকে রাখতে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই, যেহেতু এটাই হাদিসের ভাষ্য তাই এর বিপরীত অর্থাৎ মুখ খুলে রাখা বৈধ নয় সে যেই বৈধ বলুক না কেন। সাহাবাদের মহিলাগণ যখন পথে চলতেন, তখন তাঁদের নিম্নাঙ্গের কাপড়ের শেষ প্রান্ত মাটির উপর ছেঁচড়ে যেত নাপাক জায়গাতে চলার সময়েও তাদের কেউই পায়ের পাতা বের করতেন না। (মিশকাতুল মাসাবীহ: ৫০৪)
(২) যে লেবাস মহিলারা পরিধান করবে সেটা যেন (বেগানা পুরুষের সামনে) সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষী না হয়। যেহেতু মহান আল্লাহ্ বলেন, “সাধারণতঃ যা প্রকাশ হয়ে থাকে তা ছাড়া তারা যেন তাদের অন্যান্য সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা আন নূর, আয়াত: ৩১)
(৩) লেবাস যেন পাতলা না হয়, যাতে কাপড়ের উপর থেকেও ভিতরের চামড়া নজরে আসে। নচেৎ ঢাকা থাকলেও খোলার পর্যায়ভুক্ত। একদা হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান (রা:) পাতলা উড়না পরে হযরত আয়িশা (রা:) এর নিকট গেলে তিনি তার উড়নাকে ছিঁড়ে ফেলে দিলেন এবং তাকে একটি মোটা উড়না পরতে দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবীহ:
৪৩৭৫)
(৪) পোশাক (লেবাস) যেন এমন আঁট-সাঁট (টাইটফিট) না হয়, যাতে দেহের উঁচু-নিচু ব্যক্ত হয়। কারণ এমন ঢাকাও খোলার পর্যায়ভুক্ত এবং দৃষ্টি-আকর্ষী।
(৫) নিজ কক্ষের বাহিরে যেন সুগন্ধি ব্যবহৃত লেবাস না হয়। নবী (সা:) বলেন, “সুগন্ধ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে কোন মহিলা যদি তা ব্যবহার করে অন্য পুরুষের সামনে যায়, তবে সে ব্যভিচারীনী।” (তিরমিযী, মিশকাত ১০৬৫) এমনকি সুগন্ধি ব্যবহার করে মহিলারা মসজিদেও যেতে পারে না। (ইবনে মাজাহ, সিলসিলাহ সহীহা: ১০৩১)
(৬) লেবাস যেন কোন কাফির মহিলার অনুকৃত না হয়। কেননা, নবী (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন (লেবাসে-পোশাকে, চাল-চলনে অনুকরণ) করবে সে তাদেরই দলভুক্ত।” -(সুনানে আবু দাউদ, মিশক , মিসকাাতুল মাসাবীহ: ৪৩৪৭)
(৭) তা যেন পুরুষের লেবাসের অনুরূপ না হয়। কারণ নবী (সা:) সেই নারীদের অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে এবং সেই পুরুষদেরকেও অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে। (আবু দাউদ: ৪০৯৭; ইবনে মাজাহ: ১৯০৪)
(৮) লেবাস যেন জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধজনক না হয়। কারণ এসব পোশাকে পরিধানকারীর মনে অহংকার সৃষ্টি হয় এবং দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই নবী (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধজনক লেবাস পরবে, আল্লাহ্ তাকে কিয়ামত দিবসে লাঞ্চনার লেবাস পরাবেন।” (সুনানে আবু দাউদ, মিশকাতুল মাসাবীহ: ৪৩৪৬) উপরের শর্তাবলী বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যে কোন মহিলার জন্যই যথেষ্ট কঠিন। তবে আমরা (পুরুষেরা) যদি আমাদের স্ত্রী, মেয়ে, মা ও
বোনদের সহযোগীতা করি তবে তা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে (ইনশা আল্লাহ্)। আর মহিলারা যদি পরকালীন সুখের চিন্তাটুকু মাথায় রাখে, তবে এতটুকু কষ্ট খুবই সহজ হয়ে যাবে (ইনশা আল্লাহ) এবং সাথে ফ্রী পেয়ে যাবেন ইহকালীন সম্মান ও নিরাপত্তা (ইন শা আল্লাহ্)। আল্লাহ্ আমাদেরকে বুঝতে ও মানতে সহজ করুন এবং পরকালে সম্মানিত করুন। আমীন।

তথ্যসুত্র: শাইখ আবদুল হামীদ ফাইযী (হা:) রচিত ‘স্বলাতে মুবাশশির’ বই হইতে।