আত্মীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত

আত্মীয়তার সংজ্ঞা কি? আত্মীয় কত প্রকার ও কি কি? আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার হুকুম, গুরুত্ব ও ফজিলত এবং ছিন্ন করার পরিণতি কি? রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় কারা? আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার পদ্ধতি ও উপায় কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
আত্মীয়ের পরিচয়: ‘আত্মীয়’ শব্দের অর্থ হচ্ছে স্বজন, জ্ঞাতি, কুটুম্ব। এর আরবী প্রতিশব্দ হচ্ছে الرَّحِمُ (আর-রাহিমু) বা ذُو الرَّحِمِ (যুর রাহিমে)। আত্মীয়তা-এর ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে Relationship. ইসলামী পরিভাষায় আত্মীয় হচ্ছে তারা যাদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে, তারা সম্পদের উত্তরাধিকারী হোক বা না হোক, মাহরাম হোক বা না হোক। (আবু ইউসুফ মুহাম্মাদ যায়েদ, তায়্যিবুল কালাম ফী ছিলাতির রাহিম, পৃঃ ১)

▪️আত্মীয়তার সম্পর্কের তাৎপর্য: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার অর্থ ও তাৎপর্য হচ্ছে স্বজন ও আপনজনের সার্বিক খোঁজ-খবর রাখা ও তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা। ইবনুল আসির বলেন, وهي كناية عن الاحسان إلى الأقربين من ذوى النسب والأصهار، والعطف عليهم والرفق لهم والرعاية لأحوالهم وكذلك أن بعدوا وأساءوا- ‘এটা হচ্ছে বংশীয় ও বৈবাহিক সম্পর্কীয় আত্মীয়দের প্রতি অনুগ্রহ-অনুকম্পা প্রদর্শন করা, তাদের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখা, যদিও তারা দূরে চলে যায় এবং খারাপ আচরণ করে। (মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আল-হামদ, কাতীয়াতুর রাহিমে, পৃঃ ৭)

▪️আত্মীয়তার প্রকারভেদ: শরীয়তের দৃষ্টিতে আত্মীয় প্রধানত তিন প্রকার। যথা- (১) রক্ত সম্পর্কীয় বা বংশীয়। (২) বিবাহ সম্পর্কীয় আত্মীয়। (৩)দুগ্ধসম্পর্কীয় আত্মীয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই মানুষকে পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বিবাহগত সম্পর্ক নির্ধারণ করেছেন।’ (সূরা-ফুরক্বান: ২৫/৫৪)। এছাড়া দুগ্ধসম্পর্কীয় আত্মীয়রাও বংশগত আত্মীয়ের ন্যায়। (সূরা নিসা ৪/২৩)। পরিত্যক্ত সম্পদের অধিকারী হওয়ার দিক দিয়ে আত্মীয় দু’প্রকার। (১) উত্তরাধিকারী; যেমন- পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা প্রভৃতি (২) উত্তরাধিকারী নয়; যেমন- চাচা-চাচী, মামা-খালা ইত্যাদি।

▪️আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার হুকুম: আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার হুকুম অবস্থার প্রেক্ষিতে এবং আত্মীয়দের ভিন্নতার কারণে কখনো ফরজ, কখনো সুন্নাত কখনো বৈধ ইত্যাদি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে । তবে সাধারণভাবে সবার সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা ওয়াজিব এবং সম্পর্ক ছিন্ন করা সকলের ঐক্যমতে হারাম। তবে কারো কারো নিকটে কবীরা গোনাহ।

(১) ফরজ: পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা ফরজ। কেননা আল্লাহ বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً ‘আমরা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।’ (সূরা-আনকাবুত: ২৯/৮; সূরা ইসরা: ১৭/২৩-২৪)। পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে হাদীসে অনেক নির্দেশ এসেছে। আর তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করাকে বড় গোনাহ বলা হয়েছে। (সহীহ বুখারী হা/২৬৫৪; মুসলিম হা/৮৭; তিরমিযী হা/১৯০১; বুখারী হা/৬৯২০; আবু দাউদ হা/২৮৭৫)

(২) সুন্নাত: অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা সুন্নাত। যেমন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জনৈক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশকারী আমল সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে বলেন, وَتَصِلُ الرَّحِمَ ‘তুমি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে‌।’ (বুখারী হা/১৩৯৬; মাল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯)

(৩) মানদূব বা বৈধ: কাফির-মুশরিক পিতা-মাতার সাথে সন্তানের সুসম্পর্ক বজায় রাখা বৈধ। যেমন: আল্লাহ বলেন, وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوْفًا ‘তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে।’ (সূরা- লোক্বমান: ৩১/১৫)। আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুগে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট আসলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ফৎওয়া জিজ্ঞেস করলাম, আমার মা আমার নিকটে এসেছেন, তিনি আমার প্রতি (ভাল ব্যবহার পেতে) খুবই আগ্রহী, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সদাচরণ কর‌। (সহীহ বুখারী হা/২৬২০; সহীহ মুসলিম হা/১০০৩)

▪️আত্মীয়দের মাঝে মর্যাদা বা স্তরের ভিন্নতা:
_______________________________________
আত্মীয় নিকটত্ব ও দূরত্বের ভিত্তিতে এবং বংশ ও স্থানের দূরত্বের দৃষ্টিকোণে ভিন্নতর হয়ে থাকে। সুতরাং বংশীয় দিক দিয়ে নিকটাত্মীয় হচ্ছেন পিতা-মাতা। তবে এর মধ্যে মায়ের স্তর ঊর্ধ্বে। (সূরা-লোক্বমান: ৩১/১৪)। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকটে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা।’ (সহীহ বুখারী হা/৫৯৭১; মুসলিম হা/২৫৪৮ সহীহ বুখারী হা/২৪০৮; মুসলিম হা/২৫৯৩)
.
নিকটাত্মীয়ের মধ্যে ভাই-বোনও অন্তর্ভুক্ত। তবে ভাই-বোন বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় হয়ে থাকে। আবার সম্পর্কের কারণে তারা দূরবর্তীও হয়। যেমন: চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাই। আবার স্থানের দূরত্বের কারণেও স্তরের ভিন্নতা হয়। যেমন নিজ মহল্লা ও নিজ শহরে বসবাসকারী আত্মীয় নিকটের। পক্ষান্তরে ভিন্ন মহল্লায় ও ভিন্ন শহরে বসবাসকারী আত্মীয় দূরের অন্তর্ভুক্ত। তবে রক্ত বা বংশ সম্পর্কিত আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা জরূরী অন্যদের অপেক্ষা। এখানে সময়ের কোন নির্ধারিত সীমা নেই। আজীবন এ সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।

▪️আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ফজিলত:
_______________________________________
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

(১). আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে জীবন ও জীবিকায় বরকত হয়। (সহীহ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৮)।

(২). আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা ঈমানের বহিঃপ্রকাশ‌। (সহীহ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৪৩)।

(৩). আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম। (সহীহ বুখারী হা/৪৯; মুসলিম হা/১৩)।

(৪). আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষায় দ্রুত সওয়াব লাভ হয় (ইবনু হিব্বান হা/৪৪০; সহীহাহ হা/৯৭৮)।

(৫). আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯২২)।

(৬). আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি প্রাপ্ত হবে‌। (আবু দাঊদ হা/৪৯০২; সহীহাহ হা/৯১৮) ইত্যাদি।

▪️আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার অর্থ এবং হুকুম:
_______________________________________
আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্ট ও ছিন্ন হওয়ার অর্থ ও তাৎপর্য হচ্ছে জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর সাথে দুর্ব্যবহার করা, তাদের প্রতি অনুগ্রহ, অনুকম্পা পরিহার করা, পূর্ববর্তী আত্মীয়দের বংশধরদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা, শারঈ ওযর ব্যতীত তাদের প্রতি ইহসান না করা, কারো প্রতি আত্মীয়তার সম্পর্ক বিনষ্ট করার দোষ চাপানো ইত্যাদি।(মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম আল-হামদ, কাতী‘আতুর রাহিম, পৃঃ ২) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা কবীরা গোনাহ। (ফাতাওয়া লাজনা আদ-দায়িমাহ ২৫/২৪৭) কেননা আল্লাহ আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করতে এবং তাদের হক যথাযথভাবে আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (নিসা ৪/৩৬; বানী ইসরাঈল ১৭/২৬-২৭) তাই আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা অতি বড় গোনাহের কাজ। এর ফলে পারস্পরিক বন্ধন নষ্ট হয়, বংশীয় সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ হয়, শত্রুতা ও বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়, বিচ্ছিন্নতা ও একে অপরকে পরিত্যাগ করা অবধারিত হয়। এটা পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, হৃদ্যতা ও ভালবাসা দূর করে, অভিশাপ ও শাস্তি ত্বরান্বিত করে, জান্নাতে প্রবেশের পথকে বাধাগ্রস্ত করে, হীনতা ও লাঞ্ছনা আবশ্যক করে। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন (সহীহ বুখারী হা/১৩৯৬) এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না বলে উল্লেখ করেছেন।(আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬৪) বিশেষ করে পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম।(সহীহ বুখারী হা/২৪০৮; মুসলিম হা/২৫৯৩) রাসূল ﷺ বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন এবং বিদ্রোহের মত দুনিয়াতেই ত্বরিৎ শাস্তির উপযুক্ত আর কোন পাপ নেই। পরকালে তার জন্য যে শাস্তি সঞ্চিত রাখা হবে, তা তো আছেই’ (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬৭) যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে মহান আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন (আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৫০ ও ৫৩)

▪️রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় কারা?
____________________________________
ইসলামে রক্ত সম্পর্কীয় বা নিকট আত্মীয়তার সম্পর্ক বলতে বুঝায়, মা ও বাবার দিক থেকে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দেরকে। যেমন পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, ভাইবোন, চাচা-চাচী, মামা-খালা ইত্যাদি।

রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় কারা এমন প্রশ্নের জবাবে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,‘আত্মীয়তার সম্পর্ক বলতে বুঝায়, মা ও বাবার দিক থেকে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দেরকে। তারা হলেন- মা, নানী, নানীর মা, দাদী, দাদীর মা এবং তাদের ঊর্ধ্বতন নারীগণ। দাদা, দাদার পিতা, নানা, নানার পিতা এবং তাদের ঊর্ধ্বতন পুরুষগণ। ছেলে, মেয়ে, তাদের সন্তান-সন্ততি এবং তাদের অধস্তন ব্যক্তিবর্গ। ভাই, বোন, তাদের সন্তান-সন্ততি এবং তাদের ঊর্ধ্ব ব্যক্তিবর্গ। চাচা, ফুফু, মামা, খালা এবং তাদের সন্তানগণ।’ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৯৫)। এদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اُولُوا الۡاَرۡحَامِ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلٰی بِبَعۡضٍ‘বস্তুত যারা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় (আল্লাহর বিধান মতে) তারা পরস্পর বেশি হকদার।’ (সূরা আল-আনফাল: ৭৫)। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহীহ বুখারী, হা/৫৯৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৬)। এছাড়াও এ মর্মে বহু হাদীস রয়েছে।
.
জেনে রাখা ভালো যে, স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় নয় যেমন: শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকা ইত্যাদি তারা একে অপরের রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় নন। শায়খ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্ত্রীর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়গণ স্বামীর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় নয়। তবে তারা তার স্ত্রীর সন্তান-সন্ততির রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়।’ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৯৫)

তবে স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় হিসাবে পরিগণিত না হলেও উভয়ে উভয়ের নিকট আত্মীয়দেরকে সাহায্য-সহেযাগিতা করা এবং তাদের সাথে সদাচরণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিনা কারণে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৯২২)। তবে দ্বীনী কারণে সাময়িকভাবে কাউকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে। (সহীহ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭০১)

▪️আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার পদ্ধতি ও উপায় কি:
_______________________________________
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কতিপয় কাজ করা জরূরী। সেগুলো হচ্ছে:

(১). তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা, তাদের অবস্থা সম্পর্কে লক্ষ্য রাখা এবং তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া। তাদেরকে উপহার-উপঢৌকন প্রদান করা, তাদের যথাযথ সম্মান করা ও মর্যাদা দেওয়া। তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র তাদেরকে দান করা।

(২). আত্মীয়-স্বজন বাড়ীতে আসলে তাদেরকে সানন্দে গ্রহণ করা ও যথাসাধ্য আপ্যায়ন করা এবং মাঝেমধ্যে বাড়ীতে আমন্ত্রণ করা। তাদের কোন অভিযোগ থাকলে তা শোনা ও দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি তাদের মর্যাদাকে সবার উপরে স্থান দেওয়া।

(৩). তাদের সুসংবাদে শরীক হওয়া এবং দুঃসংবাদে সহমর্মী ও সমব্যথী হওয়া। তাদের নিরাপত্তা ও সংশোধনের জন্য দো‘আ করা। বিবাদমান বিষয় দ্রুত মীমাংসা করা এবং সম্পর্কোন্নয়ন ও মযবুত করণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

(৪). আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া এবং সাধ্যমত তার সেবা-শুশ্রূষা করা। কোন আত্মীয় দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত কবুল করা।

(৫). আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, তাদের হেদায়াতের চেষ্টা করা, সঠিক পথের দিকে তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া। সেই সাথে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা, বাধা দেওয়া। আত্মীয়-স্বজন সৎ কর্মশীল হলে এবং সঠিক পথে থাকলে এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। পক্ষান্তরে আত্মীয়-স্বজন কাফের বা পাপাচারী হলে তাদেরকে উপদেশ দেওয়া এবং তাদের হেদায়াতের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

(৬).যদি কোন আত্মীয়ের মধ্যে অহংকার, আত্মগৌরব, শত্রুতা ও বিরোধীভাব পরিলক্ষিত হয় অথবা কেউ যদি এই আশংকা করে যে, তার কোন আত্মীয় তাকে প্রত্যাখ্যান করবে ও তার সাথে বাড়াবাড়ি করবে, তাহলে তার সাথে নম্রতা অবলম্বন করা অথবা তাদের থেকে এমনভাবে দূরত্ব বজায় রাখা যে, সেটা যেন তাদের কোন কষ্টের কারণ না হয়। আর তাদের জন্য অধিক দোআ করা, যাতে আল্লাহ তাদের হেদায়াত করেন। আত্মীয়দের কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযায় শরীক হওয়া।

(৭). সর্বোপরি আত্মীয়-স্বজনের সাথে নম্র ব্যবহার এবং তাদের সাথে সদ্ভাব-সম্প্রীতি স্থাপন ও পরস্পর ভালবাসার সৃষ্টির মাধ্যমে এ সম্পর্ক অটুট রাখা যায়।

পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা এবং ঐ সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ ও অটুট রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা সবার জন্য আবশ্যক। যে ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পর্ক বজায় রাখলে ইহকালীন ও পরকালীন ফায়দা রয়েছে। আবার এ সম্পর্ক ছিন্ন করলে পরকালে শাস্তি রয়েছে। তাই আত্মীয়তার সম্পর্ক সংরক্ষণে আমাদেরকে যথা সম্ভব সচেষ্ট হতে হবে।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।