আক্বীদার স্পর্শকাতরতা এবং তা অনুধাবনে আমাদের অক্ষমতা

মূলঃ আব্দুর রাকীব বুখারীমাদানী

ডাউনলোড করে পড়ুন

 

আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ:

সম্মানিত পাঠকমন্ডলী! মুসলিম জীবনে ‘আক্বীদা’ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার সারমর্ম হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের এমন কিছু বিষয় যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরি। অর্থাৎ ইসলামের বিশ্বাসগত বিষয়াদিকে আক্বীদা বলা হয়, যা মূলত: ছয়টি বিষয়ের সমষ্টিঃ 

    ১- মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস।
    ২-মহান আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস।
    ৩-মহান আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ গ্রন্থাদির প্রতি বিশ্বাস।
    ৪-মহান আল্লাহ প্রদত্ত রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
    ৫-শেষ দিন তথা কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস।
    ৬-ভাগ্য এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস এবং এ সবের আনুসাঙ্গীক বিষয়াদির প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের নাম হচ্ছে আক্বীদা।

 

আক্বীদার সম্পর্ক অন্তরের সাথে যা, দেখার বা মাপ করার বাহ্যত কোন যন্ত্র নেই। তবে মানুষ যা বিশ্বাস করে, যা আস্থা রাখে, তার ফলাফল সাধারণত: তার কথা ও কাজে ফুটে উঠে। তাই মানব সমাজ যাকে উপাস্য বিশ্বাস করে, সে তার উপাসনা করে। অর্থাৎ তার এই বিশ্বাসটি যদিও তার অন্তরের ব্যাপার কিন্তু তার ফলাফল তার উপাসনার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

 

এই বিশ্বাসের কারণেই কিন্তু জগতের মানুষ মুমিন এবং মুশরিক দুই দলে বিভক্ত। এই বিশ্বাসের কারণেই কিন্তু জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। এই বিশ্বাসের কারণেই কিন্তু মানুষ ভাল ও মন্দ দুই ভাগে বিভক্ত। মানব সমাজ বাহ্যত দেখতে একই রকমের হলেও এই বিশ্বাসের কারণেই কিন্তু জগতবাসীর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিরাজমান।

 

 

আক্বীদার স্পর্শকাতরতার উদাহারণ:

               

 

                 ১ – ইসলামী আক্বীদার মৌলিক বিষয়াদির একটি হচ্ছে, আল্লাহর প্রেরিত রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এর বহু দিক রয়েছে, তন্মধ্যে ধরুন: যে সব নবীগণের নাম কুরআনে উল্লেখ হয়েছে সে সমস্ত নবীগণকে তাঁদের নাম সহ বিশ্বাস করা। এ মর্মে যে, তারা সকলে নবী এবং রাসূল ছিলেন। আর যে সব নবীদের নাম বর্ণনা হয়নি সে সব নবীগণকে সাধারণভাবে বিশ্বাস করা যে, কুরআনে উল্লেখিত নবীগণ ছাড়াও আরোও যে সমস্ত নবী এই ধরাধামে এসেছিলেন আমরা তাঁঁদেরকেও নবী হিসাবে বিশ্বাস করি। অত:পর তাঁঁদের প্রথম ছিলেন আদম আলাইহিস সালাম এবং তাদেঁর শেষ হচ্ছেন প্রিয়নবী মুহাম্মদ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এখন যদি কেউ বলে, আমি এ সকল নবীগণের প্রতি বিশ্বাস রাখি শুধু এতটুকু ছাড়া যে, শেষ নবী মুহাম্মদ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি শেষ নবী আমি এটা বিশ্বাস করি না; বরং শেষ নবী আরো কেউ হতে পারে, তাহলে সে আর মুসলিম হতে পারে না। এটাই ইসলামের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এখানে আক্বীদার স্পর্শকাতরতা লক্ষণীয়। সে সবকিছুর প্রতি বিশ্বাস রাখার পর শুধু এই বিশ্বাস পরিত্যাগ করাতেই ইসলামের গন্ডী থেকে বের হয়ে গেল। এমন নয় যে, সে অন্য কোনো পাপ করল কিন্তু এটিই অমার্জনীয় একটি অপরাধ।

এখানে এতটুকু আক্বীদার বিচ্যুতিতে বহু বড় বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে বাধ্য যা ইসলামের মূল উদ্দেশ্যে আঘাত হানবে এবং ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন এই বিচ্যুতির ফলে আরো নবীর আগমণের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এবং নবী মুহাম্মদ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর নবুওতের ভন্ড দাবীদার প্রকাশ পাবে। তাদেরও অনেকে নবী হিসাবে স্বীকার করবে। তারাও কিছু বাণী তথা বিধান প্রনয়ণ করবে এবং সে সবকে আল্লাহর বাণী আখ্যা দিবে অথচ তা হবে ডাহা মিথ্যা। এভাবে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ হয়ে মূল উদ্দেশ্য ধ্বংস হবে। আর জগতবাসী পথহারা হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়বে। যে উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ নবী ও রাসূলগণ প্রেরণ করেছিলেন তাই ধ্বংস হয়ে যাবে।

               

 

                  ২ – ইসলামী আক্বীদার মৌলিক বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এ মর্মে বিশ্বাস রাখা যে তিনি এক। তিনিই একমাত্র সত্য উপাস্য। তিনি ছাড়া অন্যের উপাসনা নিষিদ্ধ। তিনি জগতের পরিচালক, ব্যবস্থাপক এবং নিয়ন্ত্রক। তিনি যা চান তাই হয় আর যা চান না তা হয় না। তাঁর বহু নাম ও গুণ রয়েছে যেমন তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক, ক্ষমতাবান, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা ইত্যাদি। এখন যদি কেউ বলে, আমি আল্লাহর সমস্ত গুণ স্বীকার করি কিন্তু এটা বিশ্বাস করি না যে, তিনি বাক্যালাপ করেন, কথা বলেন। এই গুণ আমি মানি না। আমি এটা বিশ্বাস করি না। তাহলে সে আর মুসলিম থাকতে পারে না।

প্রশ্ন করতে পারেন: কেন সে আর মুসলিম থাকতে পারে না? কারণ ইসলামী বিশ্বাসে তার এতটুকু বিচ্যুতির ফলে বহু বড় বড় সমস্যা সৃষ্টি হবে। যেমন, মহান আল্লাহ যদি বাক্যালাপের গুণে গুণান্বিত না হন, তাহলে কুরআন আল্লাহর বাণী বা আল্লাহর কথা সাব্যস্ত হতে পারে না। আর তা না হলে কুরআন অকাট্ট প্রমাণ হতে পারে না এমনকি মর্যাদাবান গ্রন্থ ও হতে পারে না। তার তিলাওয়াতে অক্ষরে অক্ষরে সওয়াবও হতে পারে না, তা পড়তে পাক-পবিত্রতারও প্রয়োজন হতে পারে না। নবী-রাসূলদের প্রতি প্রদত্ত অহী গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে কারণ তা তাদের নিজের বাণী আল্লাহর নয়, ইত্যদি।

আর এখানেই রয়েছে আক্বীদার স্পর্শকাতরতা, যা আমরা অনেকে বুঝি না বা বুঝতে চাই না।

উল্লেখ্য, আক্বীদা ত্বহাভিয়ার ব্যাখ্যায় জাআদ বিন দিরহাম নামক এক জাহমী ব্যক্তির হত্যার ঘটনা উল্লেখ হয়েছে। সে মহান আল্লাহর বাক্যালাপ করা অস্বীকার করলে ইরাক এবং পূর্ব প্রদেশের গভর্ণর খালেদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাসরী তাকে মৃত্যুদন্ড দেন। কুরবানীর দিনে গভর্ণর প্রথমে খুত্ববা দেন। তারপর বলেন: “হে লোকেরা তোমরা কুরবানী করো, আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের কুরবানী কবুল করুক। আর আমি কুরবানী করতে যাচ্ছি জাআদ বিন দিরহামকে। সে বিশ্বাস করে যে, মহান আল্লাহ নবী ইবরাহীম আ: কে খলীল অর্থাৎ পরম বন্ধু বানান নি এবং তিনি মুসা আ: এর সাথে বাক্যালাপ করেন নি। একথা বলার পর তিনি মেম্মাবর থেকে নেমে সেই ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দেন। এই দন্ড সেই সময়কার তাবেঈনদের বড় বড় উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়”।[১]

               

 

                   ৩ – সহীহ মুসলিমে ইয়াহইয়া বিন ইয়া’মুর এবং হুমাইদ বিন আব্দুর রহমান হিময়ারী দুই জন তাবে’ঈর একটি সুন্দর ঘটনা এসেছে। তারা উভয়ে হজ্জ কিংবা উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা রওয়ানা দেন। সে সময় বাসরায় তক্বদীর অস্বীকারকারী লোক প্রকাশ পেয়েছিল। তারা দুজনে মক্কায় পৌঁছানোর পর রাসূলুল্লাহর কোনো সাথী অর্থাৎ সাহাবীর সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা করেন, যেন এই কাদারী সম্প্রদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। ইতিমধ্যে উমার বিন খাত্তাবের পুত্র আব্দুল্লাহর সাথে তাদের মসজিদে সাক্ষাৎ ঘটে। তারা অধীর আগ্রহের সাথে তাঁর সান্নিধ্যে বসে প্রশ্ন করেন: হে আবু আব্দুর রহমান! (আব্দুল্লার উপনাম) আমাদের দিকে কিছু এমন লোকের আবির্ভাব ঘটেছে যারা কুরআন পড়ে এবং শরীয়তের খুব সুক্ষ্ম বিষয়গুলির অনুসন্ধান করে। অত:পর বললেন: তারা মনে করে তকদীর বলে কোনো কিছু নেই। বিষয়াদি এমনি এমনি হয়ে থাকে। তখন আব্দুল্লাহ তাদের বললেন: ওদের সাথে সাক্ষাৎ ঘটলে তাদের বলে দিবে: আমি তাদের থেকে সম্পর্ক বিচ্ছেদের ঘোষণা করছি এবং তাদের সম্পর্ক আমার থেকে বিচ্ছিন্ন। উমারের পুত্র আব্দুল্লাহ কসম খাচ্ছে, তাদের কারো নিকট যদি উহুদ পর্বত সমতুল্য স্বর্ণ থাকে আর সে তা আল্লাহর রাহে খরচ করে দেয়, তবুও আল্লাহ তার কোনো দান কবুল করবেন না; যতক্ষণে সে ভাগ্যের প্রতি ঈমান না আনে। অত:পর তিনি তাদের হাদীসে জিবরীল বয়ান করেন।[২]

এখানে আক্বীদার স্পর্শকাতরতা লক্ষ্য করুন, ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের অঙ্গ। আর তা অস্বীকারকারী রাসূলের যুগে ছিল না। তাবেঈদের যুগে বাসরায় এর প্রথম প্রকাশ ঘটে। এর ফলে সেখানকার লোকেরা কত চিন্তিত ছিলেন যে, তারা মক্কায় এসে সাহাবীয়ে রাসূল খোঁজ করেন এবং সাক্ষাৎ হলে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। অত:পর সাহাবীর উত্তর এবং উত্তরের কঠোরতা লক্ষ্য করুন। কি ভাষায় এই ভ্রান্ত আক্বীদার তিনি কঠোর খন্ডন করেন এবং হুশিয়ারি দেন।

               

 

                   ৪ – মুসলিম জামাআত হতে প্রথম বিচ্ছিন্ন ফেরকার নাম হচ্ছে, খাওয়ারিজ। তাদের বিশ্বাস যে, কাউকে ততক্ষণে মুমিন বলা যেতে পারে না, যতক্ষণে সে ইসলামের সমস্ত ওয়াজিব কাজ না করে এবং সমস্ত বড় পাপ থেকে দূরে না থাকে। তাই যদি কেউ কোনো একটি বড় পাপ করে ফেলে তাহলে সে তৎক্ষণাত ঈমান হতে বের হয়ে যায়। তাদের মন্তব্যসমূহের সারাংশ হচ্ছে, আল্লাহ এবং তাঁঁর রাসূল যা আদেশ করেছেন তার সমষ্টির নাম ঈমান তা বিভক্তযোগ্য নয়। যদি ঈমানের কিছু অংশ চলে যায় তাহলে সম্পূর্ণ ঈমান নষ্ট হয়ে যায় এবং সে ব্যক্তি কাফেরে পরিণত হয়।[৩]

উল্লেখ্য, এটিও একটি আক্বীদা কিন্তু তা ভ্রান্ত আক্বীদা। এর ফলাফল এত মারাত্বক যে, কালিমা পাঠকারী এবং বিভিন্ন আমলকারী এক জন মুসলিমকে তারা কোনো একটি বড় পাপের ফলে ইসলাম হতে বিচ্ছিন্ন মনে করে এবং তাকে কাফির গণ্য করে।

এই আক্বীদা কত স্পর্শকাতর বিষয় তা খারেজীদের এই আক্বীদা থেকে অনুমান করা যেতে পারে।

                 

                   ৫ – ইসলামের নামে উৎপন্ন আরেক ফেরকার নাম হচ্ছে, মুরজিয়া ফেরকা। তারা মনে করে, ঈমান কেবল আল্লাহকে বিশ্বাস করার নাম বা তার পরিচয় লাভ করার নাম। আর তাদের কেউ কেউ আবার এমনও বলেছে যে, ঈমান কেবল আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকার করার নাম। এর সাথে সাথে আমল করার দরকার নেই। অর্থাৎ তারা ঈমান কেবল মুখে স্বীকার করাকে মনে করে, আমল করাকে ঈমানের অংশ মনে করে না।[৪]

এটি হলো সেই ভ্রান্ত দলের আক্বীদা। আপনি এখানে আক্বীদার স্পর্শকাতরতা অনুধাবন করুন – যদি শুধু আল্লাহর পরিচয় লাভ করা কিংবা আল্লাহকে অন্তরে স্বীকার করার নাম ঈমান হয়, তাহলে এর ফলাফল দাঁড়ায় যে, ইবলিশ শয়ত্বান এবং আল্লাহর বড় শত্রু ফিরআউনও মুমিন; কারণ ইবলিশ আল্লাহকে স্বীকার করে এবং ফেরাউন উপরে উপরে আল্লাহকে অস্বীকার করলেও অন্তরে সে আল্লাহকে বিশ্বাস করতো যেমনটি আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন।[৫] এমনকি মক্কার মুশরিকরা এবং এ যুগের হিন্দু বৌদ্ধ ও অন্যান্য গোষ্ঠিরাও মুমিন কারণ এরা সকলে আল্লাহকে স্বীকার করে, তাঁকে অন্তরে মানে। তাইতো তারা কোনো না কোনোরূপে ঈশ্বরের আরাধনা করে।

অন্তরে আল্লাহর পরিচয় এবং মুখে তা স্বীকার করাই যদি ঈমান হয়ে যায়, তাহলে সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত সহ ইসলামের বহু মৌলিক বিধানের কোনো প্রয়োজন থাকে না!

                 

 

                    ৬ – এবার বর্তমান যুগের কিছু লোকের আক্বীদার একটি উদাহরণ পেশ করবো। অনেকে বলে থাকে: “আল্লাহর নূরে নবী সৃষ্টি আর নবীর নূরে সারা জগত সৃষ্টি”। অর্থাৎ তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহান আল্লাহর নূর বিশ্বাস করেন। এখন আক্বীদার স্পর্শকাতরতা অনুধাবন করুন। যদি মহান আল্লাহর নূরে নবী সৃষ্টি হন, তাহলে নূরী নবী আল্লাহর অংশ হয়ে যান। অত:পর যদি নবীর নূরে সারা জগৎ সৃষ্টি হয়, তাহলে যমিন-আসমান, গাছ-গছালি, পশু-পাখি এমনকি মানব সম্প্রদায়ও নবীর নূরে সৃষ্টি হবে। ফলে কাফের মুশরিক, গরু ছাগল, কুকুর-বেড়াল এমনকি শুকরও নবীর নূরের অংশ গণ্য হবে। আর গভীরভাবে চিন্তা করলে স্পষ্ট হবে যে, পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর অংশ। কারণ আল্লাহর নূরে নবী সৃষ্টি আর নবীর নূরে জগত সৃষ্টি। ফলাফল স্বরূপ মহান আল্লাহর সত্ত্বা আর একক অদ্বিতীয় থাকে না; বরং তাঁর সত্ত্বা হতে সবকিছু সৃষ্টি হলে তাঁর সত্ত্বায় অংশী করা হয়। আর এর চেয়েও জঘন্য ফলাফল দাঁড়ায় যে, জগতের সবকিছু আল্লাহর অংশ আর এটিই তো সর্বেশ্বরবাদের কুফরি আক্বীদা!

                 

                     ৭ – ইসলামের মৌলিক আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, মহান আল্লাহ জ্বিন ও মানব সম্প্রদায়কে তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

“আমি জ্বিন এবং ইনসানকে কেবল আমার ইবাদতের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি।” [৬]

অনুরূপ ইসলামে এটিও একটি মৌল আক্বীদা যে, মহান আল্লাহ সমস্ত নবী ও রাসূলগণকে এ কারণে প্রেরণ করেছিলেন যেন, তাঁঁরা জগতবাসীকে কেবল তাঁর ইবাদত করার জন্য আহব্বান করে। মহান আল্লাহ বলেন:

وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِىٓ إِلَيْهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَاعْبُدُونِ

“আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই  ইবাদত কর।” [৭]

এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহব্বান হচ্ছে, তাওহীদের আহব্বান এবং একমাত্র তাঁর ইবাদত করা হচ্ছে তাওহীদ বাস্তবায়ন করা।

এখন যদি কেউ এমন বিশ্বাস করে যে, নবী এবং রাসূলগণ পৃথিবীতে তাওহীদ নয় বরং ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করতে এসেছিলেন এবং এই কাজটিই ছিল তাদের বড় দায়িত্ব। আর এটিই হচ্ছে, সব ফরযের বড় ফরয। যেমন জনকৈ লেখক বলেছেন: “সব ফরযের বড় ফরয হিসেবে ইক্বামতে দ্বীনের দায়িত্বকে বুঝবার পর কারো পক্ষেই ইসলামের কতক মূল্যবান খেদমত করেই সন্তুষ্ট থাকা সম্ভব নয়”।[৮]তাহলে এটা আক্বীদায় বিচ্যুতি নয় কি? নবী এবং রাসূলগণের প্রেরণের উদ্দেশ্যের অপব্যাখ্যা নয় কি? এটা স্পর্শকাতর বিষয় নয় কি?  তাই এই আক্বীদারও কিছু স্পর্শকাতর দিক রয়েছে যেমন উপরোল্লিখিত বিভিন্ন আক্বীদার স্পর্শকাতর দিকের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। নিম্নে এই বিচ্যুত আক্বীদার স্পর্শকাতর দিকগুলি অবলোকন করুন:

 

    ক – এই আক্বীদার ফলে নবী ও রাসূলগণের মিশন তাওহীদ তথা এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করা না হয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়ে যায় এবং তাঁঁদের প্রেরণের মুখ্য উদ্দেশ্য তাওহীদ না হয়ে ইসলামী হুকুমত কায়েম করা হয়ে যায়  যা, উপরোল্লিখিত কুরআনের আয়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান এবং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসে বিচ্যুতি।

 

    খ – অত:পর রাসূলগণ যদি হুকুমতে ইসলামিয়া কায়েমের জন্য এসে থাকেন, তাহলে তাদের রাষ্ট্র তৈরির জন্য প্রচেষ্টা করা হবে মুখ্য দায়িত্ব আর বাকি বিধান প্রচারের প্রচেষ্টা হয়ে পড়বে গৌণ কাজ। ফলে যে সমস্ত নবীগণ মৃত্যু পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতা পান নি, তাঁঁদের মিশনের ফলাফল দাঁড়াবে, তাঁরা তাঁদের প্রধান দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং তাঁঁদের অধিকাংশই কেবল গৌণ দায়িত্ব পালনকারী ছিলেন; অথচ সম্মানিত নাবী ও রাসূলগণের ক্ষেত্রে এমন ব্যাখ্যা একটি গর্হিত অপরাধ। আমাদের বিশ্বাস হবে যে, তাঁঁরা তাঁঁদের দায়িত্বে কোনো ঘাটতি করেন নি।

 

    গ – একজন সাধারণ মুসলিম যখন সে তার পরিসরে দ্বীনের কাজ করে, যেমন সালাত আদায় করে, সাউম পালন করে, যাকাত দেয়, কুরআন শিখে ও শিক্ষা দেয়, মানুষকে শিরক থেকে সতর্ক করে তাওহীদের আহব্বান করে, সন্তানদের ইসলামী তরবিয়ত দেয়, পিতা-মাতার সেবা করে, বিভিন্ন দ্বীনের কাজ করে, তখন সে যেন একগুচ্ছ দ্বীনের গৌণ কাজ করে কিন্তু মৌলিক কাজ ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের কোনো প্রচেষ্টা তার জীবনে নেই বলে তার এসব কাজ উপরোক্ত আক্বীদা পোষণকারীদের দৃষ্টিতে শুধু মাত্র দ্বীনের সেবা করা হিসাবে গণ্য হয়, ইকামতে দ্বীন হয় না। জনৈক লেখক বলেন: “একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, মাদ্রাসা, ওয়ায, খানকাহ ও তাবলীগ দ্বারা দ্বীনের বড় বড় খেদমত হচ্ছে। এসব খেদমতই ইকামতে দ্বীনের জন্য বিশেষ সহায়ক। কিন্তু খেদমতগুলো দ্বারা আপনা আপনিই দ্বীন কায়েম হতে পারে না”।[ইকামতে দ্বীন পৃ: ৩০]

 

    ঘ – সব ফরযের বড় ফরয যদি ইকামতে দ্বীন বা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা হয়, তাহলে বলা সঙ্গত হবে যে, আক্বীদার মূলনীতিতে বর্ণিত হয়েছে, মুসলিম ব্যক্তি তখন পূর্ণ মুমিন হয়, যখন সে ইসলামের ফরজ-ওয়াজিব ও মুস্তাহাব কাজসমূহ সম্পাদন করে এবং হারাম ও মাকরুহ কাজগুলি পরিত্যাগ করে। কিন্তু এই প্রকার লোকেরাও তাদের দৃষ্টিতে পূর্ণ মুমিন নয়; কারণ সে সব ফরযের বড় ফরয ইকামতে দ্বীনের কাজ করে নি। ফলে, তাদের সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে তাদের কাজ-কর্ম না করলে পৃথিবীতে কেউ পাকা মুমিন হতেই পারে না!

 

    ঙ – বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম এবং অমুসলিম দেশে বসবাসকারী মুসলিমগণ যদি তারা ইকামতে দ্বীন ছাড়া বাকি ইসলামের সকল বিধান পালন করে মারা যান; তারপরেও হয়তো তারা জান্নাতবাসী হতে পারবেন না; কারণ তারা সব ফরযের বড় ফরয ইকামতে দ্বীন পরিত্যাগকারী। আর বড় ফরযই যদি ছুটে যায়, তাহলে কেবল ছোট ফরয পালনকারী কি করে জান্নাতে যেতে পারে??

 

    চ – তাওহীদ নয় বরং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে দ্বীনের প্রকৃত উদ্দেশ্য। এই ভ্রান্ত আক্বীদারই প্রভাব হচ্ছে, একজন নিষ্ঠাবান দাঈ যখন সে তার সমাজে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এবং নবী-রাসূলগণের মহৎ কাজ তাওহীদের প্রচার করে এবং সবচেয়ে বড় পাপ শিরক থেকে সতর্ক করে তখন, তার এই মহান কাজসমূহ ছোট কাজে পরিণত হয়। এমনকি এসব কাজকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়; কারণ সে গৌণ কাজ করছে, সব ফরযের বড় ফরয পালন করছে না। হয়তো এ কারণেই পৃথিবীর বহু প্রান্তে এবং বিশেষ করে সউদী আরবে যে সমস্ত দাওয়াতী অফিসের মাধ্যমে সম্মানিত দাঈগণ দ্বীনের তাবলীগ বিশেষ করে তাওহীদের প্রচার এবং শির্ক ও বিদআত হতে সমাজকে সতর্ক করার দায়িত্বে নিয়োজিত, তাদের এমন মহৎ কাজকে তারা গুরুত্ব দেয় না আর তাদের সম্পূর্ণ সমর্থনও করে না। বরং ভিন্নভাবে তারা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের সংগঠন করে এবং নিজ কাজকে প্রাধান্য দেয়। আর কখনও কিছুটা সমর্থন দেখা গেলে সেটা হয় সেই নিজ ইকামতে দ্বীনের সংগঠনের স্বার্থে। [এটা আমি আমার ১২ বছরের অভিজ্ঞতায় বিনা কোনো সংকোচে বলতে পারি]

 

    ছ – ইসলামের মূল কথা, একমাত্র মহান আল্লাহর ইবাদত নয় বরং তা হচ্ছে, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা। এই বিচ্যুত আক্বীদার কারণে এই প্রকার লোকদের দৃষ্টি কেবল সরকারী কার্যকলাপ এবং রাজনীতির উপর থাকে। উঠতে বসতে, চলতে ফিরতে, দোকান পাটে, অফিস আদালতে এমনকি রাস্তা-ঘাটেও শুধু সরকারের সমালোচনা চলে। কারণ এমন করার মাধ্যমে তাদের মতে ইসলামী হকুমতের রাস্তা প্রশস্ত হয়। শুধু তাই নয় বরং এমন করাটা তারা ইবাদত মনে করে কারণ তাদের মতে তারা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের প্রচেষ্টা করছে। আর এটা তাদের সেই আক্বীদারই প্রভাব- “সব ফরযের বড় ফরয- ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা।”

 

    জ – একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে মিটিং, মিছিল, হরতাল, বিদ্রোহ ইত্যাদি করা বড় ইবাদত হয়ে যায়। কারণ তারা সবচেয়ে বড় ফরযের জন্য আন্দোলনকারী। এ কারণেই হয়তো তারা এসব কার্যকলাপে নিহত ব্যক্তিকে শহীদী মর্যাদা প্রদান করে; কারণ সে বড় ইবাদত করতে করতে মৃত্যু বরণ করেছে!

 

    ঝ – আল্লাহর রাহে খরচ করা মানে তাদের দৃষ্টিতে এক পর্যায়ে কেবল ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমকারী সংগঠনের যাবতীয় কার্যকলাপের জন্য খরচ করা হয়ে পড়ে। মিটিং, মিছিল, হরতাল এবং এসব করতে গিয়ে যেমন গাড়ি ভাড়া, চা-নাস্তা করার খরচ, ব্যানার লেখার খরচ, দেয়াল লিখনে খরচ, হোটেলের বিল, স্টেজ সাজানোর খরচ ইত্যাদি কাজে ব্যয় করা আল্লাহর রাহে খরচ করার সমতুল্য হয়ে যায়। কারণ যদি একটি ফকির কিংবা মিসকিনকে দান করা ইবাদত হয়, তাহলে বড় ফরয রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য খরচ করা ইবাদত হবে না কেন? তাই এই প্রকার ভাইয়েরা সংগঠনের জন্য মাসিক চাঁদা দিতে যত আগ্রহী মসজিদ, মাদ্রাসা এবং গরিব-দু:খীকে দিতে তত আগ্রহী নয়।

 

    ঞ – ইসলামে দাওয়াতী নীতি, ইসলাহী নীতি এবং পরিশুদ্ধির নীতি হচ্ছে, নিজেকে দিয়ে শুরু করা। অত:পর নিজ পরিবার। তারপর স্থান, কাল এবং পাত্র ভেদে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে পরিসর বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কারো আক্বীদা যদি এই হয় যে, সবচেয়ে বড় ফরয ও বড় দায়িত্ব হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা, তাহলে নিজ, নিজ পরিবার এবং নিজ পাড়া প্রতিবেশীর উপর দ্বীন কায়েম করার তুলনায় দেশে দ্বীন কায়েমের চিন্তা-ফিকির বেশী হয়। আর সে কারণে আমরা এমন ভাইদের দেখতে পাই তারা নিজ দেহে এবং নিজ পরিবারে এখনও দ্বীন কায়েম করেনি কিন্তু সে দেশে ইসলাম কায়েম নিয়ে চিন্তা করছে; বরং সারা বিশ্বে ইসলাম কায়েম নিয়ে চিন্তিত রয়েছে!

 

 

 

সুচিন্তাশীল পাঠক মহোদয়! হয়তো আপনারা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, আক্বীদার বিষয় কতখানি স্পর্শকাতর বিষয় এবং এর প্রভাব কত গভীর এবং গম্ভীর। ইসলামের ইতিহাসে খারেজী, রাফেযী, কাদারী, মুরজিয়া, মুতাযেলী বিভিন্ন বিদআতী ফেরকার আবির্ভাব আক্বীদার কোনো একটি মৌলিক বিষয়কে কেন্দ্র করে হয়েছিল। এর ফলেই তারা ইসলামী পন্ডিতগণের নিকট বিদআতী দল হিসাবে পরিচিত। আজও যদি কেউ ইসলামের মৌলিক আক্বীদা তাওহীদ তথা এক আল্লাহর ইবাদতের আক্বীদার অপব্যাখা দিয়ে দল ও সংগঠণ তৈরি করে, আর সেই দলের নবাবিষ্কৃত আক্বীদার কুপ্রভাব যদি সঠিক আক্বীদা ও আমলের উপর পড়ে এবং প্রকৃত ইসলামকে কলুষিত করে, তাহলে তারা পূর্বের ফেরকাদের মত বিদআতী ফেরকার অন্তর্ভুক্ত হবে না কি? তাদের সেই ভ্রান্ত নীতি থেকে সতর্ক করা এবং সতর্ক থাকা জরুরি নয় কি? মনে রাখা উচিৎ, আমলগত বিদআতের প্রভাব এবং আক্বীদাগত বিদআতের প্রভাব এক নয়। যেটা হয়তো অনেকটা আপনারা এই লেখায় উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

এ ক্ষেত্রে এমন বিচ্যুত আক্বীদার দলের সাধারণ সমর্থকদের তুলনায় এই আক্বীদার প্রবর্তক ও পন্ডিতদের দোষ অনেক বেশি। ইবনু আবিল ইয্ আল্ হানাফী বলেন: “কিছু সংখ্যক সালাফ বলেছেন: বিচ্যুত উলামাদের মাঝে ঈহুদীদের ধরণ রয়েছে। আর বিচ্যুত আবেদগণের মধ্যে খৃষ্টানদের ধরণ রয়েছে। একারণে অধিকাংশ যুক্তিবাদী দল যেমন মুতাযিলা ইত্যাদির মধ্যে ঈহুদীদের সাদৃশ্য রয়েছে। তাই ঈহুদী পন্ডিতরা মুতাযিলা পন্ডিতদের গ্রন্থ পড়ে এবং তাদের প্রশংসা করে। এভাবে মুতাযেলী পন্ডিতরা ঈহুদীদের সমর্থন করে এবং তাদের খৃষ্টানদের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর অধিকাংশ আবেদ, সূফী ইত্যাদির মধ্যে খৃষ্টানদের সাদৃশ্য রয়েছে। একারণে তারা সন্যাসবাদ, সর্বেশ্বরবাদ এবং অনুপ্রবেশবাদের দিকে আকৃষ্ট। এদের পন্ডিতরা যুক্তিবাদীদের অপছন্দ করে। আর তাদের পন্ডিতরা এদের নিয়ম-নীতিকে অপছন্দ করে এবং বৈরাগ্যবাদ, সামা, ওয়াজদ (সূফী সাধকদের এক প্রকার গান নাচ) ইত্যদির নিন্দায় গ্রন্থ রচনা করে যা এই সম্প্রদায় আবিষ্কার করেছে”।[৯]

লেখার শেষে একটি আবশ্যিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া জরুরি মনে করছি। প্রশ্নটি হল, তাহলে আমরা কি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করবো না? এর বিধান কি ইসলামে নেই?

আমরা বলবো, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন কায়েম করাকে দ্বীনের মৌল বিষয় মনে করা এবং দ্বীনের পরিপুরক বিষয় মনে করা দুটি ভিন্ন যিনিস। এটি দ্বীনের মূল বিষয় নয় বরং পরিপূরক বিষয়। আপনি তা কায়েমের চেষ্টা করবেন কিন্তু তাওহীদ ও ইসলামের স্তম্ভগুলি সর্বাধিক প্রাধান্য পাবে। আর এর ধরণ হবে, আপনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে প্রথমে নিজের মধ্যে, অত:পর নিজ পরিবারের মধ্যে অর্থাৎ নিজ পরিসরে তা কায়েম করার চেষ্টা করবেন। যেমনটি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছিলেন। আর এভাবে সবাই নিজ পরিসরে দায়িত্ব পালন করলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে ইন শা’আল্লাহ।

ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ তাসলীমান মাযীদা।

 

পাদটীকা

[১] শারহুল আক্বীদা আত্বহাবিয়্যাহ, আলী ইবন আবিল ই’যয আল হানাফী,  ১/২৭৩
[২] সহীহ মুসলিম, মুসলিম বিন হাজ্জাজ আন নাইসাবূরী, ঈমান অধ্যায়, হাদীস নং ৯৩
[৩] মাওসু’আতুল ফিরাক আল মুনতাসাবাহ লিল ইসলাম,৩/৫৩, https://shamela.ws/index.php/book/32150 (https://dorar.net/firq)
[৪] আল কাদারিয়া ওয়াল মুরজিয়া, নাসের আল আক্বল, পৃ: ৭৭
[৫] সূরা নামল; আয়াতঃ ১৪
[৬] সূরা যারিয়াত; আয়াতঃ ৫৬
[৭] সূরা আম্বিয়া; আয়াতঃ ২৫
[৮] ইকামতে দ্বীন, অধ্যাপক গোলাম আযম পৃ: ৩০
[৯] শারহুল আক্বীদা আতত্বহাবিয়্যাহ,  আলী ইবন আবিল ই’যয আল হানাফী, ২/৮০১

 

স্বত্বাধিকারী © www.darhadith.com।