অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা বিক্রয় প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে ইনকাম করা কি জায়েজ

প্রশ্ন: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) কি? অনলাইন ভিত্তিক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা বিক্রয় প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে ইনকাম করা কি জায়েজ?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) হচ্ছে কোন ব্যক্তি কর্তৃক অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা বিক্রি করে দেওয়ার মাধ্যমে কমিশন পাওয়া। আরো বিস্তারিত ভাবে বলতে গেলে, আমরা যখন অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিক্রি করি, তখন সেই প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের বিক্রির উপর কিছু হারে কমিশন আমাদেরকে দিয়ে থাকে, একেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা অনেকেই অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কথাটি শুনে থাকি। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের কাজ হল, অ্যামাজনে বিভিন্ন পণ্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এবং একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের কাজ হলো যেকোনো একটি পণ্য বাছাই করে সেই পণ্যের বিজ্ঞাপন বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করা এবং উক্ত বিজ্ঞাপনের সাথে তার এফিলিয়েট লিংকটি দিয়ে দেওয়া। যদি কোন কাস্টমার তার সেই লিংকের মাধ্যমে অ্যামাজনে প্রবেশ করে এবং যে কোন একটি পণ্য ক্রয় করে তাহলে সেই মার্কেটার যে পন্যটি বিক্রি হয়েছে সে বিক্রির উপর কিছুটা কমিশন ইনকাম করে। এছাড়া অন্যান্য যে এফিলিয়েট মার্কেটিং সাইট আছে সবগুলো প্রায় একই সিস্টেম শুধু কমিশনের হার কম বেশী হয়ে থাকে। (সূত্র বাংলাটার্স.ইনফো)
.
এখন প্রশ্ন হলো, অনলাইন ভিত্তিক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা বিক্রয় প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে কমিশন গ্রহণ করা হালাল নাকি হারাম? জবাব হলো, শরীয়তের দৃষ্টিতে তিনটি শর্তে উক্ত কমিশন গ্রহণ করা জায়েজ রয়েছে ইনশাআল্লাহ। শর্ত তিনটি হলো:

(১). যে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে সেই পণ্যটি হালাল হতে হবে।

(২).গ্রহণকৃত কমিশনটি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবে না (অর্থাৎ কমিশন দেওয়ার জন্য পণ্যটির স্বাভাবিক দামের চেয়ে গ্রাহক থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা)

(৩).পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে গ্রাহককে সততার সাথে সঠিক তথ্য দেওয়া,কোন রকম প্রতারণা না করা। এই তিনটি শর্তে অনলাইন ভিত্তিক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে কমিশন গ্রহণ করা জায়েজ রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীত যদি হারাম পন্য,অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচার করা এবং গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করে অর্থ উপার্জন করা হয় তাহলে সেটি হারাম। কেননা তা অন্যায়, প্রতারণা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও পাপাচারে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,‘তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যধিক কঠোর।’ (সূরা আল-মায়িদাহ; ২)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে আমাদের ধোঁকা দিবে সে আমাদের দলভূক্ত নয়।’(সহীহ মুসলিম হা/১০১; ইবনু মাজাহ হা/২২২৪)। এছাড়াও তিনি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ধোঁকা দিতে সর্ম্পূণভাবে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম হা/১৫১৩; আবু দাউদ হা/৩৩৭৬)।
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ বলেছেন, বিক্রেতা বা ক্রেতা,যা কিছু সম্মত হয়েছে সে অনুযায়ী ন্যায্য ভিত্তিতে দালালের জন্য পন্য দেখানোর বিনিময়ে সম্মত হওয়া মূল্যের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ কমিশন নেওয়া বৈধ এবং সে তা নিতে পারে। (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা ফাতওয়া নং,১৩/১৩১)। তাদেরকে নিম্নলিখিত মর্মে আরো প্রশ্ন করা হয় যে,আমি একজন গ্রাহককে একটি কারখানা বা দোকানে কিছু কিনতে নিয়ে গিয়েছিলাম,পরে কারখানা বা দোকানের মালিক আমাকে গ্রাহক আনার জন্য কিছু টাকা কমিশন দিয়েছিলেন। এই টাকা (কমিশন) কি হালাল? যদি ফ্যাক্টরির মালিক গ্রাহকের প্রতিটি জিনিসের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ যোগ করে এবং আমি এই টাকাটাই গ্রাহক এই পণ্যটি কেনার বিনিময়ে গ্রহণ করি, তাহলে এটি কি জায়েজ হবে? জায়েয না হলে জায়েয কোন ধরনের কমিশন?
.
জবাবে স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন, যদি প্রস্তুতকারক বা ব্যবসায়ী আপনার মাধ্যমে বিক্রি হওয়া প্রতিটি আইটেমের জন্য আপনাকে কিছু টাকা দেয়, যাতে আপনাকে ক্রমাগত গ্রাহকদের সন্ধান করতে উৎসাহিত করা হয় এবং আপনাকে কমিশন দেওয়া এই অর্থ পণ্যের দাম না বাড়ায় এবং অন্যদের কোন ক্ষতি না করে যারা এই পণ্যটি বিক্রি করে, অর্থাৎ এই প্রস্তুতকারক বা ব্যবসায়ী এটিকে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের বিক্রি করা মূল্যে বিক্রি করে তাহলে এটি অনুমোদিত এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি আপনি কারখানা বা দোকানের মালিকের কাছ থেকে এই অর্থ গ্রহণ করেন তা ক্রেতা কর্তৃক প্রদত্ত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে, তবে এটি নেওয়া আপনার জন্য জায়েয নয় এবং বিক্রেতার জন্য এটি করা জায়েয নয়, কারণ এটি তার জন্য দাম বাড়িয়ে ক্রেতার ক্ষতি করছে। (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা ফাতওয়া নং -১৩/১৩০, ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৫০০২৫)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।